আজকাল ভিডিও গেমস নিয়ে অনেক অভিভাবক চিন্তিত। তারা এটিকে সময়ের অপচয় বা নেতিবাচক প্রভাব হিসেবে দেখেন। কিন্তু জানেন কি? সঠিকভাবে ব্যবহার করলে ভিডিও গেমস শিশুদের দক্ষতা বিকাশে বড় ভূমিকা রাখতে পারে! আসুন জেনে নিই কীভাবে ভিডিও গেমস শিশুদের দক্ষতা বিকাশে সাহায্য করে-
সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি
ভিডিও গেমসের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চ্যালেঞ্জ থাকে। শিশুরা বিভিন্ন ধাঁধা ও কৌশলগত চিন্তার মধ্য দিয়ে সমাধানের পথ খুঁজে নিতে শিখে।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি গবেষনায় উল্লেখ করে, ভিডিও গেম খেলার ফলে শিশুদের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। গবেষণাটি আট থেকে দশ বছর বয়সী ৪০ জন শিক্ষার্থীর উপর চালানো হয়। এবং দেখা যায় ভিডিও গেমাররা, নন-গেমারদের তুলনায় দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম।
হাত ও চোখের সমন্বয় দক্ষতা
ইউনিভার্সিটি অফ রোচেস্টারের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভিডিও গেইমস খেলার ফলে শিশুদের হাত ও চোখের সমন্বয় দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। ৬০ জন শিশু অংশ নিয়েছিল গবেষণাটিতে। প্রত্যেকের নিয়মিত ভিডিও গেইমস খেলার অভ্যাস ছিল। গবেষণাটি লক্ষ্য করে, গেমার শিশুদের মধ্যে বাস্তব জ্ঞান এবং সমন্বয় দক্ষতার উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
দ্রুত চিন্তা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ
বেশকিছু গেমে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যেমন শুটার গেমস বা রেসিং গেমস। এই ধরনের গেমগুলি শিশুদের তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এবং দ্রুত চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে। দক্ষ গেমারদের ক্ষেত্রে, গতি ও এ্যাকশনের সময়গুলির অভিজ্ঞতা তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে প্রায়ই উপকারী হয়ে থাকে।
সামাজিক দক্ষতা
অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার গেমস শিশুদের সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ ধরনের গেম খেলার সময় শিশুরা দলীয় প্রচেষ্টা, সহযোগিতা এবং যোগাযোগের কৌশল শিখে। যেমন- “ফোর্টনাইট”, ”ফ্রি ফায়ার”, ”পাপজি”, “অ্যামং আস” এর মতো গেমগুলো শিশুকে দলগতভাবে খেলতে শেখায়। অপরাধীদের খুঁজে বের করা এবং দলগত সাফল্য অর্জন করতে সহায়তা করে।
স্ক্র্যাচ ডেভেলপমেন্ট ও কোডিং
কিছু ভিডিও গেমস কোডিং এবং প্রোগ্রামিং শেখার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যেমন “মাইনক্রাফ্ট: এডুকেশন এডিশন”। এই গেমগুলি শিশুদেরকে কোডিং করতে উৎসাহিত করে এবং তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
সৃজনশীলতা বৃদ্ধি
আর্ট ও ডিজাইনের উপর ভিত্তি করে ভিডিও গেমস যেমন “মাইনক্রাফ্ট” শিশুদের সৃজনশীল চিন্তা বাড়াতে সাহায্য করে। তারা তাদের নিজস্ব জগৎ তৈরি করতে এবং বিভিন্ন ডিজাইন নিয়ে কাজ করতে পারে, যা তাদের সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি এবং কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি করে।
শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি
অন্য একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে শিক্ষামূলক ভিডিও গেমস শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করে এবং তাদের মনোযোগের মান উন্নত করে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশন (এপিএ) দ্বারা প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা যায়, শিক্ষামূলক গেমগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রেরণা সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
ভিডিও গেমসের প্রতি শিশুর আগ্রহ আগের থেকে অনেক গুণ বেড়েছে। যদিও অনেকেই চিন্তিত যে ভিডিও গেমস শৈশবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এটি নির্ভর করে সঠিক ব্যবহারের উপর। গবেষণা ও তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে যে, সীমিত সময়ের জন্য গেইমস খেলার মাধ্যমে শিশুদের দক্ষতা বৃদ্ধি পেতে পারে। সুতরাং, আমাদের উচিত ভিডিও গেমসের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে সঠিক ব্যবহারের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।