টাইম ট্রাভেল -বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনুসারে আপনি যদি কোন স্পেসে বসে আলোর বেগে ভ্রমণ করেন তাহলে আপনার জমজ ভাইয়ের বয়সের চেয়ে আপনার বয়স খুব ধীর গতিতে বাড়বে।
আলোর বেগে ভ্রমণ করার দরুণই আপনার বয়স আপনার ভাইয়ের চেয়ে কম বাড়বে। আবার টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে মুভি দেখার পর অনেকের মনে হয়, আমি যদি ভবিষ্যতে গিয়ে নিজের অবস্থা জানতে পারতাম! এই সবের ঘটনাই টাইম ট্রাভেল।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
টাইম ট্রাভেল সহজ ভাবে বলতে গেলে একটি নির্দিষ্ট সময় থেকে অতীত বা ভবিষ্যৎ এ যাওয়াকে টাইম ট্রাভেল বলে। পৃথিবীতে অনেক বিজ্ঞানী আছে যারা টাইম ট্রাভেল বিশ্বাস করে, আবার অনেক বিজ্ঞানী আছে যারা টাইম ট্রাভেল বিশ্বাস করে না। কিন্তু এই জগতে এমন কিছু ঘটনা ঘটে গেছে যা দেখে টাইম ট্রাভেল অবিশ্বাস করার মত কিছু নেই।
টাইম ট্রাভেল সম্ভব কি সম্ভব নয় এই নিয়ে মানুষের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। তবে টাইম ট্রাভেল সম্ভব কি-না এই বিষয়টি নির্ভর করে করছে ভবিষ্যতের উপরে।
টাইম ট্রাভেল নিয়ে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন। টাইম ট্রাভেল এখন সম্ভব না হলেও টাইম ট্রাভেল ভবিষ্যতে সম্ভব হতে পারে। কল্পনা থেকেই উদ্ভব, উদ্ভব থেকেই সৃষ্টি। হয়ত একদিন সম্ভব হবে টাইম ট্রাভেল।
ভাবুন তো ৫০০ বছর আগে কোন লোক যদি বলতো মানুষ আকাশে উড়বে, তখনকার মানুষ হয়তো তখন তাকে নির্ঘাত পাগল ভাবত। কিন্তু তারা কি কখনও ভেবেছিল যে মানুষ আকাশে উড়বে।
শুধু আকাশেই নয়, বরঞ্চ মানুষ এখনো মহাকাশেও পাড়ি দিচ্ছে। অনেক বছর আগেই মানুষ চাঁদের বুকে পা রেখেছে আর এখন মঙ্গল গ্রহে বসতি স্থাপনের কাজ চলছে। টাইম ট্রাভেল এখনও মানুষের ধরা ছোয়ার বাইরে, কিন্তু কোন এক সময় টাইম ট্রাভেল সম্ভব হতে পারে।
বিংশ শতাব্দীর জিনিয়াস বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব আমাদের এটা বুঝতে সাহায্য করে যে, কোন বস্তুর টাইম ট্রাভেল করা সম্ভব হবে।
যদি তার বেগ আলোর বেগের সমান হয় অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে তার বেগ তিন লক্ষ কিলোমিটার হবে। সময় বস্তুর ভরের উপরও নির্ভর করে। কোন বস্তুর ভর কম হলে সময় কে ধীর করে দেয়। এখন আমরা টাইম ট্রাভেলের দুটি উপায় সম্পর্কে জানব,
(১) আপেক্ষিতার তত্ব আমাদের এটা বলে যে আপনি যদি কোন স্পেসে আলোর সমান বেগে পরিভ্রমণ করেন তাহলে আপনার জন্য সময় ধীর গতিতে চলবে এবং এর অনুভব আপনি তখনই বুঝতে পারবেন যখন আপনি পৃথিবীতে ফিরে আসবেন।
আরও পড়ুনঃ ব্ল্যাক হোল -মহাজাগতিক বস্তুর এক বিস্ময়কর জগৎ
মনে করুন আপনার বয়স ১৫ বছর এবং আপনি একটি স্পেসে আলোর বেগে সমান ট্রাভেল করছেন। তাহলে আপনি সেই স্পেসে যতক্ষণ পাঁচ বছর কাটিয়ে পৃথিবীতে ফেরত আসবেন তখন আপনার বয়স হবে কুড়ি বছর। যেখানে আপনার বন্ধুরা যারা আপনার বয়সের ছিল। তারা প্রায় ক্যালকুলেশন অনুযায়ী ৫০ বছর সময় কাটিয়ে ফেলবে এবং যখন আপনার বয়স ২০ বছর তখন তাদের বয়স ৬৫ বছর। এর প্রধান কারণ হলো আলোর বেগে ট্রাভেল করার জন্য আপনার জন্য সময় ধীর গতিতে গিয়েছে।
(২) দ্বিতীয় পদ্ধতি হল ওয়ার্মহোল। এটিকে আইনস্টাইন-রোজেন ব্রীজও বলা হয়। ১৯৩৫ সালে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ও ম্যাথেন রোজেন ওয়ার্মহোলের কথা বলেন। কিন্তু আমরা মানুষেরা এখনও কোন ওয়ার্মহোল কে দেখি নি।
এই ওয়ার্মহোল সম্পর্কে অনেক বিজ্ঞানী ব্যাখ্যা করেছেন। এদের মধ্যে দুইজন প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী হলেন স্টিফেন হকিং এবং কিপ থ্রোন। বড় বড় বিজ্ঞানীরা ওয়ার্মহোলকে সাপোর্ট করে। কিপ থ্রোন ১৯৮০ সালে বলেছিলেন যে ওয়ার্মহোলকে টাইম মেশিনের মত ব্যবহার করা যেতে পারে।
অনেক বিজ্ঞানীর মতে অতীতে হয়ত টাইম ট্রাভেল করা সম্ভব হবে না। কারণ এর সাথে একটি প্যারাডক্স অর্থাৎ সত্য বিরোধী মত জুড়ে আছে। যা ইউনিভার্সে অনেক ব্যাসিক ন্যাচারকে লঙ্গন করে।
একটি সহজ উদাহরণের সাহায্যে বোঝার চেষ্টা করি, মনে করুন কোন বিজ্ঞানী এমন কোন ওয়ার্মহোল বানাতে সক্ষম হল, যার সাহায্যে সে সময়ের পেছনে যেতে পারে এবং সময়ের পেছনে গিয়ে নিজেকে নিজেই গুলি করে মেরে দেয়। তাহলে এখানেই প্রশ্ন থেকে যায় যে ভবিষ্যৎ থেকে আসা মানুষ অতীতেই মারা গিয়েছে।
অতীততে টাইম ট্রাভেল করাকে কেন্দ্র করে এমন অনেক প্যারাডক্সের সৃষ্টি হয় যেটি ইউনিভার্সেল ব্যাসিক ন্যাচার কে অবমাননা করে। এই কারণে কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন যে আমরা অতীতে টাইম ট্রাভেল হয়তো কখনো করতে পারব না।
কিন্তু অসম্ভবও নয়। এমন অনেক তত্ব আছে যেটি বলে ভবিষ্যতে টাইম ট্রাভেল করা সম্ভব। কিন্তু কিছু প্যারাডক্সের কারণে ভবিষ্যতের তুলনায় অতীতে টাইম ট্রাভেল করা অনেক বেশি জটিল।
আপেক্ষিকতার তত্ত্ব আমাদের এটাও বলে যে কোন বস্তুর গ্রাভিটি সময়কে দ্রুত বা ধীর করতে পারে কোন। কোনবস্তুর ভর আয়তনের তুলনায় বেশি হলে সেটার গ্রাভিটি অনেক বেশি হবে এবং সময়কে অনেক বেশি ধীর করে দেয়। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি ব্ল্যাক হোল।
যার গ্রাভিটি সময়কেও ধীর করে দেয়। আমরা ধীরে ধীরে ব্ল্যাকহোলের যতটা কাছে যাব, সময় আমাদের জন্য ততটা স্লো হয়ে যাবে। আপনি যদি ক্রিস্টোফার নোলানের ইন্টারস্টেলার মুভি দেখে থাকেন তাহলে আপনি এটাকে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
যেখানে অস্ট্রলার কুপার নিজের টিমের সাথে একটি প্লেনেট যায়। যার গ্রাভিটি পৃথিবীর তুলনায় ১৩০ শতাংশ বেশি হয়। যেটি একটি সুপার্মাসিভ ব্লাক হলের অনেক কাছাকাছি অবস্থিত থেকে সেটিকে প্রদক্ষিণ করছিল ।
সেখানে সেই ব্ল্যাকহোলের ভরটি ১০০ মিলিয়ন সূর্যের ভরের সমান ছিল। এবং যখন সেই প্লানেটটিতে অস্টনেট কুপার সেখানে নিজের টিমের সাথে প্রায় তিন ঘন্টা কাটিয়ে পুনরায় নিজের স্পেসশিপে ফিরে আসলেন তখন স্পেসশিপে বন্ধুর বয়স ২৩ বছর পার হয়ে গিয়েছিল।
ক্যালকুলেশন হিসেবে অনুযায়ী স্পেসশিপের সাপেক্ষে ঐ প্লানেটটিতে সময় ৬১০০ গুণ স্লো হয়েছিল। অর্থাৎ ঐ প্লানেটটিতে ১ ঘণ্টা কাটানো মানে স্পেসশিপটিতে ৭ বছর কাটানো।
আলোর গতিতে ভ্রমণ করলে সময় আপনার জন্য ধীরগতিতে যাবে এই ঘটনাকে বলা হয় টাইম ডাইলেশন। টাইম ডাইলেশনের সহজ একটি উদাহরণে আমরা বলতে পারি আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন।
এটি পৃথিবীতে অনেক তেজ গতিতে ভ্রমণ করছে। পৃথিবীর তুলনায় সময় এখানে সময় কিছু ন্যানো সেকেন্ড কম অতিবাহিত হয়। তাই আমরা বলতে পারি, আন্তর্জাতিক স্পেসে থাকা লোক গুলো এক প্রকার টাইম ট্রাভেলার।
২৮ জানুয়ারি ২০০৩ সালে নিউইয়র্ক পুলিশ অ্যান্ড্রিউ কারসন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেন। তার ওপর অভিযোগ ছিল যে সে আইন বিরুদ্ধ উপায়ে শেয়ার মার্কেট থেকে মুনাফা লুটেছে।
অ্যান্ডিউ কারসন শেয়ার মার্কেটে ৮০০ ডলার দিয়ে শুরু করেছিল এবং সে ১২৬ টি খুব বিপদজনক চাল খেলে ছিল যার ফলে সে মাত্র দুই সপ্তাহে ৩৫ কোটি ডলার কামিয়ে ছিল এর জন্যই অ্যান্ডিউ কারসন গোয়েন্দাদের নজরে আসে।
কেননা খুব ভালো ভালো শেয়ার কারবারিরাও এত কম সময়ে এত মুনাফা কামাতে পারেনি।গোয়েন্দারা মানতে নারাজ ছিল যে অ্যান্ড্রিউ কারসনের সাথে যা হচ্ছে তা শুধুমাত্র একটা কাকতালীয়ভাবে। তাই তাকে গ্রেপ্তার করে তদন্তের জন্য আনা হয়।
অ্যান্ড্রিউ কারসনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন ইনভেস্টিগেটররা এটা আশা করছিলেন যে তার সূত্র ধরে একটা বড় শেয়ার ইনসাইডার ট্রেডিং গ্রুপের পর্দাফাস করতে পারবেন। কিন্তু ঘটল অন্য ঘটনা, হয়রান করে দেওয়ার মত তথ্য উঠে আসলো।
অ্যান্ডিউ কারসন তার ৪ ঘন্টার বয়ানে স্বীকার করেছিল যে, সে ২২৫৬ সাল থেকে বর্তমান সময় এসেছে। সে আরো জানায় যে,সেই ইতিহাসের বইয়ে পড়েছিল ২০০৩ সালে শেয়ার বাজারে বিশাল উতাল পাতাল হয়েছিল।
এর সাহায্যে সে জানতে পেরেছিল যে কোন কোন শেয়ার এই বছর ভালো ফল করেছিল তাই সে বেছে বেছে সেই শেয়ারগুলি কিনেছিল আর সবকিছু যাতে স্বাভাবিক মনে হয় সেজন্যই সে কয়েকটি শেয়ার ইচ্ছা করে ছেড়ে দিয়েছিল। যাতে তার উপর কেউ সন্দেহ না করে।
পুলিশের জালে ধরা পরল অ্যান্ডিউ কাররসন পুলিশের সাথে একটা সমঝোতা করার চেষ্টা করেন। সে বলে যদি তাকে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে সে তাদের জানিয়ে দেবে যে ওসামা বিন লাদেন কোথায় লুকিয়ে আছে এবং এইডস এর চিকিৎসা কিভাবে করা সম্ভব! পুলিশ ও গোয়েন্দারা তার ওপর একটুও বিশ্বাস করলে না এবং তাকে পাগল ভাবতে লাগলেন।
কিন্তু যখনই তাকে জামিনে ছাড়া হল সে চিরকালের জন্য হঠাৎ কোথায় গায়েব হয়ে গেল এবং তার পর তার আর কোন খোঁজ মেলেনি এই ঘটনা কতটা সত্যি এটা বলা সম্ভব নয় তবে সেই সময় এই ঘটনাটি নিউ ইয়র্কের অনেক নিউজ পেপার ঘটনাটি প্রকাশ করেছিল। অ্যান্ড্রিউ কারসন আমেরিকার দ্বারা ইরাকের উপর হামলার তারিখের একদম সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন।
ছবিঃ সংগৃহীত
মন্তব্য লিখুন