পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত বিজ্ঞান এর জাদুকরী জগতটাকে নানাভাবে ভ্রমণ ও বিচার বিশ্লেষণ করে চলেছে। বিজ্ঞানীদের চিন্তা -ধারায় ছিল নিজের জ্ঞানের ভান্ডারকে বিস্তৃত করে মানুষের কল্যাণ সাধন করা। বিজ্ঞানীরা তাদের চিন্তা ও উদ্ভাবনী দক্ষতাকে বিশ্লেষণ করে পৃথিবীটাকে বদলে দিয়েছে। এমনই একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন ।
তিনি বিবর্তনবাদ ও প্রাকৃতিক নির্বাচন সংক্রান্ত মতবাদ দিয়ে জগতের ধারণাকে পাল্টে দিয়েছেন। কালজয়ী এই বিজ্ঞানীর জন্ম ১৮০৯ সালের ১২ ই ফেব্রুয়ারী মাউন্ট হাউজ শ্রুসবেরি, ইংল্যান্ড। তিনিই প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রথম বিবর্তন বাদের ধারণা দেন।
তিনিই প্রথম উপলব্ধি করেন সকল প্রজাতিই তাদের পূর্ব পুরুষ হতে উদ্ভূত এবং এটি তিনি সাক্ষ্য প্রমাণ দিয়ে প্রমাণিত করেন। বিবর্তনবাদর এই বিবিধ শাখা -প্রশাখায় ভাগ হবার বিন্যাসকে তিনি প্রাকৃতিক নির্বাচন হিসেবে অবিহিত করেন। ১৮৩০-১৮৫০ সালের মধ্যে বিকশিত আধুনিক বিবর্তনিক সংশ্লেষণের মাধ্যমে বিবর্তন প্রক্রিযায় প্রাকৃতিক নির্বাচন এর গুরুত্ব পুর্নরুপে তিনি অনুধাবন করেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় জীব বৈচিত্র্যের ব্যাখা প্রদান করেন।
আমরা জানি একটি প্রাণী সময়ের সাথে সাথে প্রকৃতির সাথে খাপ খাওয়ানোর প্রয়োজনে পরিবর্তিত হতে থাকে আর এটিকেই বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন বিবর্তন হিসেবে অবিহিত করেন। এখানে একটি উদাহরণ আমরা উল্লেখ করতে পারি ডাইনোসর এর কথা আমরা সবাই কম -বেশি শুনেছি এই ডাইনোসর এক সময়ের বিধ্বংসী প্রাণী ছিল কিন্তু কালের পরিক্রমায় পৃথিবী বিবর্তনের সাথে সাথে খাপ খাওয়াতে না পারায় প্রায় ২০০ বছর পূর্বে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বিজ্ঞানী ডারউইন শুধু তার প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ ও বিবর্তন মতবাদ দিয়েই ক্ষান্ত হন নি তিনি এই যুগান্তকারী তও্বের স্বপক্ষে মাইলফলক সৃষ্টিকারী তথ্য উপস্থাপন করেছেন এবং সেটা করার জন্য পাঁচ বছর ধরে “HMS Beagle ” নামের একটি নৌ জাহাজে গবেষণায় কাটিয়েছেন। তিনি এই জাহাজে করে বিভিন্ন জনবহুল ও জনশূন্য দ্বীপে ভ্রমণ করেন।
সমুদ্রযাএায় তিনি ব্রাজিল, চিলি, অস্ট্রেলিয়া, ফকল্যান্ড দ্বীপে ভ্রমণ করে প্রমাণ, যুক্তি, তথ্য সংগ্রহ করেন। ছোটবেলা থেকেই ডারউইনের প্রকৃতির উপর গভীর আগ্রহ ছিল তাই তিনি এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি মনোযোগী ছিলেন না। বরং তিনি সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী নিয়ে গবেষণা করতেন।
আরও পড়ুনঃ বিজ্ঞানের চেতনায় বাংলার ধ্র্রুবতারা জামাল নজরুল ইসলাম
অতঃপর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় প্রজাতির ট্রান্সমিউটেশন নিয়ে গবেষণা করেন। ১৮৫৮ সালে প্রাকৃতিক নির্বাচন নিয়ে ডারউইন ও আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস এর গবেষণালব্ধ তও্ব যৌথভাবে প্রকাশিত হয়। ১৮৫৯ সালের ২৪ শে নভেম্বর “Origin of species by means of natural selection” বইটি প্রকাশিত করেন।
এই বইয়ে তিনি বিবর্তনবাদের সম্পূর্ণ ধারণা দেন। মাএ কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ১২৫০ টি বই বিক্রি হয়। এই বইটি ইউরোপ তথা সমগ্র পৃথিবীতে এক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ বই ছিল যেন এক পৃথিবী আবিষ্কার যা এই পৃথিবীতে মাইলফলক হয়ে রইবে।
তার অন্যান্য কৃতি হচ্ছে ইমোশন ইন ম্যান অ্যান্ড অ্যানিমেলস, দ্যা ডিসেন্ট অব ম্যান, দ্যা পাওয়ার অব মুভমেন্ট এন্ড প্ল্যান্টস। তিনি ১৯ শে এপ্রিল ১৮৮২ সালে ৭৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
সর্বোপরি, বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন শুধু যে বড় বিজ্ঞানী ছিলেন তাই নয় তিনি বড় মাপের মানুষ ও ছিলেন। তিনি যেমন বিজ্ঞান নিয়ে ভাবতেন তেমন সমাজের মানুষ নিয়ে ও ভাবতেন তাইতো মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত দাস প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
মন্তব্য লিখুন