নেভাডা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণে লাস ভেগাস হতে ১২০ মাইল উত্তরপশ্চিমে এবং ইউএস স্টেট হাইওয়ে ৩৭৫ (US State Highway 375) বা এক্সট্রাটেরিস্ট্রিয়াল হাইওয়ে থেকে ৩০ মাইল দক্ষিণপশ্চিমে নেভাডা টেস্ট সাইটের পাশে অবস্থিত এরিয়া-৫১ পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত ও গোপনীয় ঘাটি, যেটি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বেষ্টনী ঘেরা।
অত্যাধুনিক সকল ধরনের ডিভাইসে মুড়ানো একমাত্র স্থান, এরিয়া-৫১। নেভাডার মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত গ্রুম হ্রদের পাশের এই আয়তকার বিশাল এরিয়াটি বছরের পর বছর অজস্র জল্পনা কল্পনার তত্ত্বের হারিকেন হয়ে আবর্তন করে আসছে জনমনে।
সেই সব তত্ত্বের নেই কোন প্রতিষ্ঠিত প্রমাণাধি। প্রথম পর্বে এর পরিচিত ও আদ্যপান্ত জেনে ছিলাম। আর এ পর্বে জানবো উত্থাপিত সেসব কল্পনা মিশ্রিত ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সম্পূর্ণ বর্ণনা এবং সবশেষে জানবো এরিয়া-৫১ এর ভেতরে চলমান প্রকৃত কর্মকাণ্ড।
চলুন আর দেরি না করে লোকমুখে চর্চিত ও রুচিত হট কেক কন্সপিরেসি থিওরি গুলো নিয়ে শুরুতেই আলোচনা করা যাক। চর্চিত কন্সপাইরেসি থিওরি সমূহ অধিকাংশই এক্সট্রাটেরিস্ট্রিয়াল বা বহিঃজাগতিক প্রাণী তথা এলিয়েন কেন্দ্রিক।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
ডিসকাভারি চ্যানেল,অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স অফিসার রিক ডটি (Rick Doty) যিনি মার্কিন বিমান বাহিনীর স্পেশাল ইনভেস্টিগেশনের হয়ে কাজ করতেন।
রিক ডটি তার কাজ সম্পর্কে বলেন,
“আমি মূলত এরিয়া-৫১ এ চলমান প্রোগ্রামকে গোপনীয় করার কাজে নিয়োজিত ছিলাম। কোন একজন বহিরাগত ব্যক্তি যখন এরিয়া-৫১ এর আশেপাশে কোন অজ্ঞাত এয়ারক্রাফট দেখতো,তখন আমাদের আসল কাজ ছিল ঐ ব্যক্তিকে কনভিন্স করা তথা বুঝানো যে, আপনি হয়তো ইউএফও(UFO) দেখেছেন।”
এ বিষয়টিই আমি প্রথম পর্বে বলেছিলাম, যে এরিয়া-৫১ এর মধ্যে চলমান বিষয়কে দামা চাপা দেওয়ার জন্য এলিয়েন সম্পর্কীয় বিভিন্ন গুজব এরিয়া-৫১ কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত প্রচার করে আসছে।
তবে আর যায় হোক বহিঃজাগতিক বিভিন্ন অদ্ভুত প্রযুক্তি নিয়ে এরিয়া-৫১ মধ্যে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলমান যে সেটা নিশ্চিত। কেননা ঐ সাক্ষাৎকারে রিক ডটি একটি ডিভাইসের কথা জানান।যেটি ছিল একধরনের কঠিন পদার্থের ক্রিস্টাল কাঠামোর আয়তকার এনার্জি ডিভাইস, যার দৈর্ঘ্য প্রস্থের অনুপাত ছিল ১৮×২৪ ইঞ্চি। তিনি দাবী করেন এই এনার্জি ডিভাইসটি আমেরিকার নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের রসওয়েল নামক স্থানে ১৯৪৭ সালে একটি ফ্লায়িং অবজেক্ট ক্রাশের সময় পাওয়া গিয়েছিল।
ডিভাইসটির ওজন প্রায় ৪ পাউন্ড (১.৮ কেজি), তিনি জানান। রিক ডটি আরো জানান, এই ডিভাইসটি বাতি থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ একটি আস্ত বড় পাওয়ার প্লান্টেও তড়িৎ শক্তি সরবরাহ করতে পারে। যার মানে দাড়ায় এই ডিভাইসটি দিয়ে ভিনগ্রহের প্রাণীরা তাদের উড়োযানে হয়তবা পাওয়ার সাপ্লাই করে। রিক ডটি এটাও বলেন যে, এই ক্রিস্টাল এনার্জি ডিভাইসটি এলিয়েন আর্টিফেক্ট (Artifact-হস্তনির্মিত বস্তু) এবং তাদের থেকেই এসেছে।
অর্থাৎ এটি এমন একটি ডিভাইস যেটি শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। অবিশ্বাস্য! ভাবা যায়।বিষয়টি অন্য কোন ব্যক্তি থেকে যদি উঠে আসতো তবে সম্পূর্ণ মিথ্যা হিসেবে বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যেতো। কিন্তু খুঁত মার্কিন বিমান বাহিনীর প্রয়াত ইন্টেলিজেন্স কর্মকর্তা থেকে এমন বিষয় উঠে আসলে একটু নড়েচড়ে বসতে হয়। সত্যি কি এমন ভিভাইসের অস্তিত্ব আছে! তবে রিক ডটির মতে আছে! তবে সেটা অগোচরে থেকে যাবে, কখনো প্রকাশিত করা হবে না জনসাধারণের কাছে।
এছাড়াও সবচেয়ে ভয়ংকর অবিশ্বাস্য যে বিষয়টি সর্বশেষে তিনি বলেন,
“আমি সিকিউরিটি অফিসে ছিলাম, যে কর্মকর্তারা ঐ অফিসের তত্বাবধানে ছিল, তারা আমাকে জানান এবং CCTV নিয়ন্ত্রিত এলিয়েন অধিষ্ঠিত স্থানের ফুটেজ চালু করে দেখান।আমি তখন আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।সেখানে একটা রুমের মধ্যে আমি চার ফুট লম্বা ধুসর রঙের বহিঃজাগতিক প্রাণীকে দেখি।ঐ প্রাণিটির হাতে কোন তালু ছিল না,লম্বাটে আঙ্গুল ছিল বটে।”
তাকে পরবর্তীতে জিজ্ঞেস করা হয় আপনি কি ১৯৫০ এর দশকে তোলা সমালোচিত স্কিনি বব ভিডিও ফুটেজের ঐরূপ এলিয়েনের কথা বলছেন। তখন রিক ডটি উত্তর দেন, “That’s exactly what there were.”
এরিয়া-৫১ বিভিন্ন ধরনের ওয়েপন তৈরির কারখানা হিসেবে লোকমুখে চর্চিত হয়ে আসছে। মার্কিন সরকার এই ঘাটিকে ব্যবহার করে উন্নত অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করছে।
পৃথিবীর সর্বোচ্চ শক্তিশালী দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে যেসব প্রযুক্তি,গ্যাজেট প্রয়োজন সবই নাকি এই বেজমেন্টে তৈরি করছে ইউএস সরকার। মানুষকে নিমিষেই বাষ্পীভূত করতে পারে এমন ভয়ংকর লেজার থেকে শুরু করে, বিভিন্ন ধরনের বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে নেওয়ার মতো সামরিক ডিভাইস, এমনকি টাইমমেশিন পর্যন্ত তৈরি করা হচ্ছে এ ঘাটিতে এমনটি মনে করা হয়।
মানুষের চিন্তা শক্তির বাইরে, এমন অদ্ভুত ও ভয়ংকর বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ও প্রযুক্তি সামগ্রী বানানো ও নিরীক্ষণীয় পরীক্ষা চালানো হচ্ছে এ ঘাটিতে। এমনটাই পৃথিবীর ক্ষমতাধর দেশগুলো এবং বিভিন্ন দেশের গুপ্তচরেরা বিশ্বাস করে।
যদিও এ ধরনের আদৌ কোন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ হচ্ছে তার কোন প্রমাণাদি কারও কাছে নেই। থাকবেই বা কেন! এরিয়া-৫১ যে সর্বোচ্চ সংরক্ষিত ও গোপনীয় ঘাঁটি, যেখানের অভ্যন্তরের সকল কর্মযজ্ঞের গন্ধ ঘাটির বেড়া অতিক্রম করতে পারে না। ভেতরকার চলমান সকল কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বহিরাগত কেউই জানে না।
১৯৪৭ সালে আমেরিকার নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের রসওয়েল শহরের কাছে একটা উড়ন্ত বস্তু (ফ্লাইং অবজেক্ট) মাটিতে ক্রাশ করে ধ্বংস হয়ে যায়। যেটি রসওয়েল ক্রাশ হিসেবে পরিচিত। ঐ দুর্ঘটনায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঐ ফ্লাইং অবজেক্টের অবিশিষ্টাংশ মার্কিন বিমান বাহিনী কব্জা করে এবং এটা ধারণা করা হয় ঐ ধ্বংস হসে যাওয়া উড়ন্ত বস্তু এরিয়া-৫১ এ স্থানান্তরিত করা হয় এবং সেখানে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে ঐ আনআইডেন্টিফাইড ফ্লায়িং অবজেক্ট সারানো হচ্ছে।
এ বিষয়টি উঠে আসে যখন এরিয়া-৫১ ঘাটির একটি নির্দিষ্ট বেজমেন্ট এস-৪ এ কাজ করা বব ল্যাজার (Bob Lazar) নামে একজন ফিজিসিস্ট ১৯৮০ দশকে একটি বিতর্কিত সাক্ষাৎকার দেন।
১৯৮৯ সালের মে মাসে লাস ভেগাস কেন্দ্রীক টেলিভিশন স্টেশন কেএলএএস (KLAS) এর জর্জ ন্যাপকে (George Knapp) দেয়া সাক্ষাৎকারে বব ল্যাজার দাবী করেন তিনি এস-৪ বেজমেন্টে এলিয়েন এয়ারক্রাফট নিয়ে কাজ করেছিলেন এবং তার কাজ ছিল এলিয়েন এয়ারক্রাফট গুলোর রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং।
এস-৪ সাইটটি এতটাই সংরক্ষিত যে ঐ স্থানটিতে গাড়িতে যাওয়া আসার সময় বব ল্যাজার ও তার সহকর্মীরা বাইরে কিছুই দেখতে পারতেন না।কেননা গাড়ির জানালা বন্ধ ছিল,যাতে করে এস-৪ সাইটের যাতায়াতের পথ সম্পর্কে কারও কোন ধারণা না থাকে।
বব ল্যাজার বিস্ফোরক দাবীটি ছিল এই, তিনি সেখানে এন্টিম্যাটার রিএক্টরের মাধ্যমে পরিচালিত বহিঃজাগতিক উড়োযান নিয়ে কাজ করেছিলেন। এই এক্সট্রাটেরিস্ট্রিয়াল এয়ারক্রাফট একধরনের লালচে কমলা বর্ণের পদার্থ যার নাম এলিমেন্ট-১১৫ এর তৈরি জ্বালানি ব্যবহার করে চালানো হয়েছিল।
এই স্পেসশীপ গুলো তিনটি এন্টিগ্র্যাভাটি সিলিন্ডার ব্যবহার করে, যেগুলো শীপের উপরের দিকে থাকে। যখন শীপ চালু করা হয় তখন এই সিলিন্ডার তিনটি হতে এন্টি গ্র্যাভিটি ওয়েব তৈরি হয় রিয়েক্টরের মাধ্যমে, এবং এই গ্র্যাভিটি ওয়েব এতটাই শক্তিশালী অতি উচ্চগতিতে এর দিকে কোন বস্তু ছুড়লেও সেটাও বাউন্স করে।
গ্র্যাভিটি ওয়েব স্পেসশীপকে যেকোনো দিকে উড়াতে সাহায্য করে। বব ল্যাজারের এমন মন্তব্য সারা পৃথিবীতে এলিয়েন কন্সপিরেসি থিওরিস্টদের কাছে তাকে পূজনীয় ব্যক্তি করে দেয়।যদিও তার দাবী করা তথ্যের কোন বাস্তবিক প্রমাণ নেই। তবে এলিমেন্ট-১১৫ অস্তিত্ব নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। রাশিয়ান বিজ্ঞানীর এই পদার্থটি ২০০৪ সালে সংশ্লেষণ করেন,যার নাম দেন মসকোবিয়াম (Moscovium)। কিন্তু আদো পর্যন্ত এই পদার্থের কোন স্থায়ী গঠন তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
কন্সপাইরেসি থিওরিস্টদের মতে, মার্কিন নিয়ন্ত্রিত কিউবার অবস্থিত গুয়ানতানামু প্রিজন ক্যাম্পের সাথে এরিয়া-৫১ সম্পর্কিত। পার্থক্য শুধু এরিয়া-৫১ এ বহিঃজাগতিক প্রাণের ইন্টারোগেশন করা হয় আর গুয়ানতানামু ক্যাম্পে মানুষের।
এলিয়েনদের সওয়াল-জবাব কেন্দ্রের এই কাহিনীটিও উত্থাপিত হয় বব ল্যাজারের বলা দাবীর মাধ্যমে। এস-৪ সাইটে কাজ করার সময় ঐ সাইটের কোন এক হলওয়ে ধরে বব ল্যাজার যাচ্ছিলেন, তিনি মুহূর্তের মধ্যে একটা রুমের ছোট্ট জানালা দিয়ে উঁকি দিলেন।
সেখানে তিনি যা দেখতে পেলেন তা দেখে বব ল্যাজারের চক্ষু ছানা বড়। তিনি সেখানে দুজন কোট পরিহিত লোকের মাঝে ধূসর রঙ্গের ভিনগ্রহের প্রাণীকে দাড়িয়ে থাকতে দেখেন। পরে অবশ্য গার্ডরা সেখান থেকে দ্রুতই তাকে উঁকিঝুঁকি মারা বন্ধ করতে এবং কেটে পড়তে বলেন।
বব ল্যাজারের পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে ঠিক একই ধরনের দাবী করে ভিক্টর নামে আরেক ব্যক্তি বোমা ফাটান।তিনি ভিনগ্রহের প্রাণীদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন এবং একটি ঝাপসা ভিডিও তিনি প্রমাণ হিসেবে দেখান যেখানে দেখা যায় একজন এরিয়া-৫১ এ কর্মরত অফিসার, ইউএস মিলিটারি কর্তৃক গুলিবিদ্ধ এক এলিয়েন পাইলটের সাথে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে।
কন্সপাইরেসি থিওরিস্টরা এলিয়েনদের উড়ন্ত যান তথা ইউএফও, এলিয়েনদের অস্তিত্ব, তাদের এক্সোটিক টেকনোলজি থেকে সবশেষে তাদের নিয়ে মানুষের জিজ্ঞাসাবাদ এসবে ক্ষান্ত থাকেনি, তারা এটাও দাবী করে এরিয়া-৫১ এ ভিনগ্রহের প্রাণীদের নাকি পোস্টমর্টেমও করা হয়।
এই কন্সপাইরেসি থিওরিটা উদ্ভুত হতে শুরু করে,৯০ দশকের মাঝামাঝি থেকে। যখন একটি ১৭ মিনিটের সাদা-কালো ভিডিও টেপ প্রকাশিত হয়,যেখানে কিছু মানুষের একটি দল বায়ো-হ্যাজার্ড প্রটেকশন স্যুট পরিহিত হয়ে একটি ছোট্ট এলিয়েন ডেড বডির বিভিন্ন অঙ্গের কাটা ছেড়া করা হচ্ছে।
যদিও পরবর্তীতে ভিডিওটি বুয়া হিসেবে প্রমাণিত হয়। বছর খানেক পর ভিডিও ফিল্মটির প্রডিউসার আরও একটি সিকুয়েল ডকুমেন্টারি ভিডিও রিলিজ করেন, এবং সেখানে তারা স্বীকার করেন, তারা মিথ্যা পোস্টমর্টেম ভিডিও তৈরি করেছিল। তারা এটাও বলেন সেখানে সত্যিই এলিয়েনের পোস্টমর্টেম করা হয়েছিল, কিন্তু মূল ভিডিও ফুটেজ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
আপনি যদি কন্সপাইরেসি থিওরির পাড় ভক্ত হয়ে থাকেন তবে এখানেই শেষ নয়, আপনার অতি উৎসাহিত মনকে চাঙ্গা করার জন্য বলি, এলিয়েনের ময়নাতদন্ত সংক্রান্ত আরো অনেক ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। ২০১২ সালে “Alien from Area-51: The Alien Autopsy Footage Revealed” নামে একটি ভিডিও মুক্তি পায়,যাতে সতর্কতা বাণী হিসেবে লেখা ছিল “Warning: Graphic Material”। সবশেষে ২০১৪ সালে যে অটোপসি ভিডিওটি রিলিজ হয়েছিল তাতে ৪ ফুট লম্বা একটি এলিয়েনের জন্তুর সদৃশ ছিন্ন মাথা দেখা গেছিল।
১৯৪৭ সালে রসওয়েল ইন্সিডেন্ট এর সময় তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান (Harry Truman) একটি সুপার সিক্রেটিভ গ্রুপ কে রসওয়েল দুর্ঘটনায় ঘটা সকল বিষয়াদি স্টাডিজ করার জন্য নিয়োগ দেন, যেই গ্রুপটি ম্যাজিস্টিক-১২ নামে পরিচিত। বিজ্ঞানী, মিলিটারি লিডার, রাজনীতিবিদ ও ইন্টেলেকচুয়াল সিভিলিয়ানদের সমন্বয়ে এই গ্রুপটি তৈরি।
সবার ধারণা এরিয়া-৫১ হচ্ছে ম্যাজিস্টিক-১২ এর বর্তমান সদরদপ্তর। এই গ্রুপটি নাকি এমন একটি ওয়ান ওয়াল্ড গবর্নমেন্ট তৈরির জন্য প্রায় ছয় দশকের বেশি সময় ধরে আড়ালে নির্জনে কাজ করে যাচ্ছে, যেখানে প্ল্যানেট একযোগে মনুষ্য ও বহিঃজাগতিক প্রাণী দ্বারা শাসিত করা হবে।এবং এটাও বলা হয়ে থাকে যে, ম্যাজিস্টিক-১২ কোন না কোনভাবে এলিয়েনদের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছে । যার ফলশ্রুতিতে নাকি মার্কিন সরকার বহিঃজাগতিক প্রযুক্তি হাতে পেয়েছে এবং বিপরীতে এলিয়েনরা মানুষের উপর অদ্ভুত পরীক্ষা করার অধিকার পেয়েছে।
চাঁদে অবতরণ করা প্রথম মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং, ঘটনাটি এখন বিশ্ব ইতিহাসের পাতায়। এপেলো-১১ স্পেসশীপ দিয়ে চাঁদে অবতরণ একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য ঘটনা হিসেবে জানে সবায়। কিন্তু কন্সপাইরেসি থিওরিস্টদের মতে এটা একটা ধোঁকাবাজি ছাড়া কিছুই না।
চাঁদে অবতরণ একটি স্রেফ মিথ্যা নাটক এই দৃশ্যপটটি তুলে ধরেন কন্সপাইরেসি লেখক বিল ক্যাসিং( Bill Kaysing)। তার মতে, ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে নাসা বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন চাঁদের মাটিতে মহাকাশচারী অবতরণ সম্ভব নয়,কারণ তারা সেখানে তীব্র তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ঝুঁকি লক্ষ্য করেন।
কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে চলমান মুন ল্যান্ডিং প্রোজেক্ট এভাবে চোখের সামনে ব্যার্থ হবে, তা খুবই লজ্জাজনক। তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় মানুষকে আমরা সফল হয়েছি তা বুঝানোর জন্য একটি ভাঁওতাবাজির আশ্রয় নেয়।এবং তারা ক্যামেরার সামনে এপোলো-১১ ও নিল আর্মস্ট্রং ও বুজ আল্ড্রিন কে নিয়ে এরিয়া-৫১ এ মুন ল্যান্ডিং এর ভিডিও ফুটেজ তৈরি করে। এরপর সেটা নাসার পক্ষ থেকে সারা বিশ্বে প্রচার করা হয়।ভাবা যায়! কন্সপাইরেসি থিওরিস্টদের দোড় কি আদৌ থামবে।সর্বশেষ কোথায় গিয়ে ঠেকে সেটা দেখার পালা।
দশকের পর দশক ধরে মার্কিন সরকার এরিয়া-৫১ এর অভ্যন্তরে কি তৈরি করা হয়েছে সেটার তথ্যাদি দামাচাপা দিয়েছে। এছাড়াও ১৯৭৪ সালে মার্কিন স্পেসস্টেশন স্কাইল্যাব কর্তৃক রিলিজ হওয়া এরিয়া-৫১ এর অর্বিটাল ফটোও ব্লক করা হয়েছে।
এরিয়া-৫১ এর আর্কিটেকচারাল কাঠামো সম্পর্কীয় নির্ভরযোগ্য তথ্যের সল্পতার কারণে কন্সপাইরেসি থিওরিস্টদের ধারণার করার সীমা অসীমে পাড়ি দিয়েছে। অনেকের মতে এই এরিয়ার মধ্যে মাটির গভীরে বড় বড় বিল্ডিং লুকায়িত রয়েছে, যেখানে আছে ল্যাব ফ্যাসিলিটি, বাঙ্কার আরো কত কী!
এটাও চর্চিত হতে থাকে যে ৪০ তলা উঁচু ভবনও মাটির অভ্যন্তরে রয়েছে, যেখানে আস্ত বড় বড় স্পেসক্রাপ্ট,স্পেসশীপ তৈরি ও পরীক্ষা করা হয়।এমনকি এই বাঙ্কার গুলোর রয়েছে বিশাল আকারের প্রবেশ পথ, রয়েছে বড় বড় দরজা।কিন্তু দরজা গুলোকে পাহাড় পর্বতের সাথে মিল রেখে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে উপর থেকে দেখলে চেনার কোন উপায় নেই যে আদো সেখানে কোন প্রবেশ পথ আছে! না আছে কোন লুকায়িত সুউচ্চ বিল্ডিং।
চিন্তা করুন তো সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে হটাৎ তীব্র গতিতে হারিকেন আঁচড়ে পড়ছে, ঘূর্ণীঝড় ঘন্টায় ২০০ কিলোমিটারের উপরে ধেয়ে আসছে,এমন সময় যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলোকে থামিয়ে দেয়া যেতো। অথবা দুর্যোগ আঘাত হানার কয়েকদিন পূর্বেই আবহাওয়া কন্ট্রোল করা মাধ্যমে সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ ধ্বংস করে দেওয়া যেতো।
মনে করুণ মরুভূমিতে প্রাকৃতিক ভাবে বৃষ্টি আনায়ন করা যেতো।মানুষের যখন যা ইচ্ছা আবহাওয়া নিয়ে তাই করতে পারতো,এমন যদি হতো বিষয়টি কি অবিশ্বাস্য ও দারুণ হতো তাই না!
ঠিক এটাই নাকি করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে এরিয়া-৫১। মার্কিন বিজ্ঞানীরা এক ধরনের ওয়েদার কন্ট্রোল ওয়েপন তৈরি করছে এই ঘাটিতে,যেটাকে ব্যবহার করে পৃথিবীর অ্যাটমস্ফিয়ার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়া যায়।
মার্কিন ন্যাশনাল সায়ন্স ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে মার্কিন মিলিটারি এ ধরনের আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কীয় একটি প্রজেক্ট পরিচালনা করেছিল যার নাম “প্রজেক্ট সাইরাস”। ১৯৫০ এর দশকের শুরুতে পরিচালিত উক্ত প্রজেক্টে তারা এমন একটি সিস্টেম নিয়ে গবেষণা ও পরীক্ষা চালিয়েছিল, যাতে মেঘ ও বৃষ্টিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
পরবর্তীতে ১৯৬২ থেকে ১৯৮৩ সালের মাঝামাঝি, ন্যাশনাল ওশিয়ানিক এন্ড অ্যাটমস্ফোরিক এডমিনিস্ট্রেশন কর্তৃক “প্রজেক্ট স্টর্মফিউরি” নামে আরো একটি ওয়েদার কন্ট্রোল পরিচালিত হয়। যাতে হারিকেনের গতিবেগকে ক্লাউড সিডিংয়ের মাধ্যমে ধীর করে দেওয়া যায় এমন গবেষণা চলেছিল।যদিও বা সেটা পরবর্তীতে ফলপ্রসূ হয়নি।
এই থিওরিটা কন্সপাইরেসি থিওরিস্টদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে, এলিয়েন অস্তিত্ব, এলিয়েনদের পোস্টমর্টেম সব হজম করার মতো ছিল। তাই বলে মানুষ এলিয়েন সংকর।
হুম এই থিওরিটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন ও প্রচার করেন এমন অনেক লোক আছেন, তারা আছেন বলেই তো আজ এ কন্সপাইরেসি থিওরির উৎপত্তি। অ
নেকের ধারণা মতে এরিয়া-৫১ এর লুকায়িত বিশেষ ল্যাবরেটরিতে মার্কিন বিজ্ঞানীরা এলিয়েনদের সাথে একযোগে কাজ করছে, তারা মানুষ ও এলিয়েনের মধ্যকার সংকরায়ন করে একধরনের হাইব্রিড প্রাণের সৃষ্টি করার গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
তাহলে কি ভাবছেন আপনি? এরিয়া ৫১ এ কি আদো এমন কিছু ঘটে । এরিয়া ৫১ কে নিয়ে উন্মাদনা কি থামবে কখনো? এরিয়া ৫১ নিয়ে এত রহস্য কল্পনার জটলা কখনো খুলবে? আমাদেরকে এসব উত্তর পাওয়ার জন্য ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। এরিয়া ৫১ কে অজানা সব কন্সপাইরেসি থিওরি জেনে আপনাদের মতামত জানাবেন। সময় গড়িয়ে যাবে কিন্তু এ স্থানটিকে নিয়ে মানুষের আগ্রহ কমবে না।
আরও পড়ুনঃ ‘এরিয়া-৫১’ রহস্যে মুড়ানো দুর্বোধ্য ঘাটির আত্মকথন! (পর্ব-১)
ছবিঃ সংগৃহীত
তথ্যসূত্রঃ
মন্তব্য লিখুন