বাঙালি জাতির একটি বিশেষ দিন হিসেবে পহেলা বৈশাখ অতি গুরুত্বের সাথে যুগের পর যুগ ধরে পালিত হচ্ছে। কিন্তু এ জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হলো মুসলিম জাতি। আর মুসলিম জাতির কাছে রমজান মাস বছরের শ্রেষ্ঠ মাস হিসেবে সমগ্র বিশ্বে রোজা বা সিয়াম পালন করা হয়। রমজান ও পহেলা বৈশাখ দুটোই যেহেতু বাঙালি জাতির কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাঙালিরা দুটোই গুরুত্বের সাথে পালন করে থাকে। কিন্তু একদিকে যেমন সংস্কৃতি ও অন্য দিকে তেমন ধর্মীয় নৈতিকতার বিধান, দুটোই যদি একই দিনে হয়ে যায়৷ তবে ওহে আমার বঙালি জাতি কোনদিকে যাবেন?
ইসলাম একটি স্বয়ংসস্পূর্ন জীবন বিধান, এখানে অপসংস্কৃতির কোন স্থান কখনোই ছিল না, থাকতে পারে না৷ পহেলা বৈশাখ আমাদের দেশে যে ভাবে উৎযাপন করা হয়ে থাকে৷ তা মুসলিম জাতির জন্য কখনোই সংস্কৃতির অংশ হিসেবে গ্রহনযোগ্য নয়৷ তাই তো সব ইসলামিক স্কলারগণ কথিত এই পহেলা বৈশাখ উৎযাপন শরিয়তের আলোকে হারাম বা জায়েজ নয় বলে ফাতোয়া দিয়েছেন।
এবছর ১৪ এপ্রিল ২০২১ সালে রমজান ও পহেলা বৈশাখ একই দিনে শুরু হয়েছে, তাই আমাদের জন্য এটা কিসের ইঙ্গিত প্রমান করতে যাচ্ছে? এই দুই বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য ও শরিয়তে কেন আলেমগণ পহেলা বৈশাখ পালন করা হারাম বলেছেন? আজ এসব বিষয় নিয়ে একটি পর্যালোচনা তুলে ধরতে চাই৷ আশা করি আপনাদের মাঝে বিষয়টি কিছুটা হলেও স্পষ্ট করতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।
ইসলামি শরিয়তের মূলভিক্তি হলো আল-কুরআন ও সহিহ হাদিস। মহান আল্লাহ তায়া’লা মানবজাতির হিদায়েতের জন্য এই মহাপবিত্র গ্রন্থ প্রেরণ করেছেন। আর বিশ্বনবী (সা.) আমাদের তা থেকে প্রাকটিকাল শিক্ষা দিয়েছেন, যা এখন হাদিস হিসেবে গৃহীত।
অন্যায় অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা ইসলামে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে৷ কোনরূপ অশ্লীলতার স্থান ইসলামে গ্রহনযোগ্য হওয়া প্রশ্নই আসে না।
মহান আল্লাহ তায়া’লা পবিত্র কুরআন এ বিষয় অসংখ্য আয়াত নাজিল করেছেন৷
যেমন মহান আল্লাহ বলেন-
“বলুন, নিশ্চয়ই আমার রব হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা” (সূরা আরাফ: ৩৩)
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে; এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে; আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তবে যা সাধারণত প্রকাশ হয়ে থাকে তা ব্যতিত। আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে।” (সূরা নুরঃ ৩০-৩১)
পহেলা বৈশাখের নামে আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য পাপের এক বিস্তরমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যুবক-যুবতীরা সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে বেহায়াপনা ও অশ্লীলতায় লিপ্ত হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে যায়। যেমন, যুবতীরা লাল-হলুদ শাড়ী, যুবকরা রঙিন পাঞ্জাবি পরিধান করে দর্শনীয় সকল স্থান গুলোতে ঘুরতে যায়৷ তথা কথিত গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড নিয়ে আড্ডা ও অশ্লীল পর্দাবিহীন আমোদ-প্রমোদে মেতে উঠে।
যেখানে ইসলামি শরিয়তের ফরজ পালনীয় হিজাবে বা পর্দার বিন্দু মাত্র চিহ্ন পর্যন্ত থাকে না। ইসলামি শরিয়তে প্রয়োজনে নারীদের শুধুমাত্র হাতে কব্জি ও মুখমণ্ডল খোলা রাখা যাবে বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা পহেলা বৈশাখে কি দেখতে পাচ্ছি!! সেখানে নারী-পুরুষ একে অপরকে আকর্ষণীয় ভাবে উৎযাপন করে থাকে। যা অশ্লীলতা ও অপকর্ম উস্কে দেয় এবং তা হয়েও থাকে। তাই ইসলামি শরিয়তে এসব অপসংস্কৃতি কিভাবে হালাল হতে পারে বলুন? যেখানে মহান আল্লাহর তায়া’লা শারঈ বিধান পালনে আদেশ করেছেন।
এবছর ২০২১ সালে রমজান ও পহেলা বৈশাখ একই দিনে শুরু হয়েছে, তাই তথা কথিত অনেক মানবাধিকার কর্মীরা চিন্তায় পরে গিয়েছে। কি করবে তারা? আমরা দেখেছি পহেলা বৈশাখের নামে জীব-জন্তুর নানা ধরনের ছবি-ভাস্কর্য বা মূর্তি তৈরি করে কথিত মঙ্গলশোভা যাত্রা করা হয়ে থাকে। যা ইসলামে কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মে কোন জীবজন্তুর বা প্রানীর ছবি, ভাস্কর্য বা মূর্তি তৈরি করা স্পষ্ট হারাম৷
আমরা আরো দেখতে পাই, পহেলা বৈশাখের নামে আরো একটি মারাত্মক অপসংস্কৃতি প্রচলিত হয়েছে৷ আর সেটা হলো বৈশাখের প্রথম দিন সকালে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার হিকির বা রেওয়াজ। বিশেষ করে মনে হয় যেন, ধনী মহলের মানুষদের এই দিনে পান্তা-ইলিশ খাওয়া বাধ্যতামূলক এবং তাদের একটি বিশেষ দিনও বলা যেতে পারে। ইসলামে খাওয়া-দওয়াকে তো নিষেধ করা হয়নি। নিষেধ করা হয়ে খাওয়া ও উৎসবের নামে অপচয় এবং এমন সব কাজ যা ধনী লোকের জন্য খুশির অথচ তার প্রতিবেশি সাধারণ মানুষ তাদের হক থেকে বঞ্চিত।
যেমন মহান আল্লাহ তায়া’লা বলেন-
“হে বনী আদম! প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা সুন্দর পোশাক গ্রহণ কর। আর খাও এবং পান কর কিন্তু অপচয় কর না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের কে পছন্দ করেন না।”(সূরা আরাফঃ ৩১)
পহেলা বৈশাখের নামে পান্তা-ইলিশ অধিক মূল্যের বিনিময়ে হলেও ক্রয় করে খাওয়ার যে সংস্কৃতি, তা মূলত একটি ব্যক্তিগত ও জাতীয় অপচয়। আর পান্তা-ইলিশ এটি কখনোই বাঙালির সংস্কৃতির অংশ ছিল না৷ পহেলা বৈশাখের নামে এটি মাত্র কয়েক দশকের নব্য রেওয়াজ বলা চলে। এখন আলেমগণ এই পান্তা-ইলিশের উৎসব কেন নিষেধ করেছেন? এর অনেকগুলো কারণ করেছে। যেমন, পহেলা বৈশাখের এই রেওয়াজের জন্য দরিদ্র মানুষ তারা বাজার থেকে মাছ কিনতেই পারে না ধনীেদর জন্য, কেননা এই মাছের মূল্য তখন দরিদ্রের হাতের নাগাল পার হয়ে যায়৷ ফলে সমাজে এটি একটি অসমতার কারণ হয়ে দাড়ায়৷
এছাড়াও পান্তা-ইলিশের উৎসবের নামে অতিরিক্ত মূল আদায়, রেস্টুরেন্টে যুবক-যুবতীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়ে যায়৷ এর জন্য অবৈধ-অশ্লীল প্রেম ভালোবাসার আদান প্রদানও জগন্য একটি রূপ নিয়েছে। ফলে প্রেমিক-প্রেমিকার তথা কথিত ভালোবাসার নামে সমাজে ইসলাম সম্পর্কে চরম নৈতিকতার অবক্ষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ এছাড়াও এই পহেলা বৈশাখ নামে যে সংস্কৃতির কথা আমরা উল্লেখ করে থাকি, তা মূলত অন্যধর্মের অনুষ্ঠান থেকেই আবির্ভাব হয়েছে। তাই ইসলামি শরিয়তে এর কোন ভিক্তি নেই৷ সুতরাং ইহা নিষিদ্ধ ও নাজায়েজ কাজ।
বাংলাদেশের প্রায় ৯০% মানুষ মুসলিম হওয়া সত্যেও পহেলা বৈশাখের নামে অপসংস্কৃতি কখনোই থেমে যায়নি। কিন্তু এবছরের পরিবেশ একদমি ভিন্ন হবে। কেননা রমজানের পবিত্রতা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না৷ তাই বৈশাখে পান্তা-ইলিশের নামে অপসংস্কৃতি, যুবক-যুবতীদের রঙিন সাজগোজ, গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড তথা প্রেমিক- প্রেমিকার অশ্লীল পর্দাবিহীন চলাফেরা এবার নেই বললেই চলে।
তাছাড়া যারা মুসলিম আছে তারা বেশিরভাগই নৈতিকতার প্রমান সরূপ, সবাই সব রোজাগুলো না রাখলেও রমজানের প্রথম দিকের রোজা গুলো সবাই রাখার চেষ্টা করে। যদিও তাদের সবার উপরই রমজান মাসের সবগুলো রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে৷ তাই যারা পহেলা বৈশাখে নামে অপসংস্কৃতির বেহায়াপনায় লিপ্ত হতো। তারাও এবার রমজান ও পহেলা বৈশাখ একই দিনে হওয়ায়, সবাই কিছুটা হলেও এসকল হারাম কাজ সম্পর্কে অবহিত হবে।
সুতারাং সর্বশেষ একটি কথাই বলতে চাই, যারা পহেলা বৈশাখের নামে কথিত মঙ্গল শোভাযাত্রা ও পান্তা ইলিশের লোভ দিয়ে যুবক-যুবতীদের বেপর্দায় ও অশ্লীলতায় ডাক দিতেন। আজ তারা বিবেকের কাছে ধর্মীয় নৈতিকতা ও সংস্কৃতির প্রশ্নে বন্দী হয়ে গেছেন।
তাই এবছর রমজান ও পহেলা বৈশাখ একই দিনে হওয়া স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে, শরিয়তের আলোকে কেন পহেলা বৈশাখের নামে অপসংস্কৃতি হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এবার বলুন আপনারও ধর্মীয় নৈতিকতা ও সংস্কৃতির প্রশ্নে বিবেকের উত্তর, কোন দিকে জোরাল ভুমিকা রাখবে?
মহান আল্লাহর তায়া’লা আমাদের সকল প্রকার ফিতনা থেকে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করার তৌফিক দান করুক, আমিন।
মন্তব্য লিখুন