আলহামদুলিল্লাহ। ইসলামে নারী জাতির অধিকার সম্পর্কে ১ম পর্বে আমরা নারী জাতির সম্মান, মর্যদা ও প্রথম ধর্মীয় অধিকার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আজ ২য় ও শেষ পর্বে, ইসলামে নারী জাতির অধিকার সম্পর্কে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকারের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।
কোনো সন্দেহ নেই, ইসলামে নারী জাতির অধিকার সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। পৃথিবীতে নারী জাতিকে পূর্নাঙ্গ সকল প্রকার পারিবারিক ও সামাজিক অধিকার একমাত্র ইসলাম দিয়েছে৷ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখতে পাবেন, ইসলামের পূর্বে নারী জাতিকে পারিবারিক বা সামাজিক সকল প্রকার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। মেয়ে সন্তানকে মনে করা হতো অপয়া ও পরিবারের বোঝা। যেমনটি কোরআনেও বর্ননা করা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করেন-
“আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যেত। আর সে থাকত দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাকে যে সংবাদ দেয়া হয়েছে, সে দুঃখে সে জাতির কাছ থেকে আত্মগোপন করে। অপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে, না জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলবে? জেনে রেখো, তারা যা সিদ্ধান্ত নেয়, তা কতই না মন্দ!” (সুরা নাহল : আয়াত ৫৮-৫৯)
বিশ্বাস করুন প্রিয় পাঠকগণ- আপনারা পবিত্র কুরআনের এ আয়াতের তাফসীর পড়ে দেখেন, কোনো নারী কিন্বা পুরুষ কেউ চোখের পানি আটকে রাখতে পারবেন না। ছি! তাদের কতই না নিকৃষ্ট ভাবনা ছিলো নারী জাত সম্পর্কে। কিন্তু আজ আমাদের বোনেরা তাদের পূর্ব ইতিহাস ভুলে গেছে। অথচ প্রত্যেকটা নারীর চিন্তা করা উচিত ছিল, কেন সে সমাজে আজও এতো সম্মান নিয়ে বেঁচে আছে?
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পূর্বে এবং তাঁর অনেক পরেও অনেক দেশে নারীদের বেঁচে থাকার অধিকারও তো ছিল না। এমনকি বর্তমানেও ভারত ও চীন সহ অন্যান্য অনেক দেশে জন্মের আগে বা পরে কন্যা শিশুকে হত্যা করার প্রবনতা রয়ে গেছে।
আজ থেকে প্রায় দেড়শো বছর আগেও স্বামীর মৃত্যুর সাথেই, স্ত্রী তার বেঁচে থাকার অধিকার হারাতো এবং স্বামীর চিতায় স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়ে মেরে ফেলা হতো। হয় আফসোস! কি ভয়ংকরই না ছিল সেই করুন আর্তনাদ।
তখন শিক্ষা, কর্ম, চাকরী, বিবাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও নারীকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। এমনকি তার মতামতের সামান্য কোনাে মূল্য পর্যন্ত ছিল না। বর্তমান প্রচলিত বাইবেলেও নারীর শিক্ষার অধিকার সীমিত করা হয়েছে। তাদেরকে কেবলমাত্র স্বামীর নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাইবেলে বলা হয়েছে-
“স্ত্রীলােকেরা মণ্ডলীতে নীরব থাকুক, কেননা কথা কহিবার অনুমতি তাহাদিগকে দেওয়া যায় না, বরং যেমন ব্যবস্থাও (তাওরাত বা শরীয়ত) বলে,তাহারা বশীভূতা হইয়া থাকুক।আর যদি তাহারা কিছু শিখিতে চায়,তবে নিজ নিজ স্বামীকে ঘরে জিজ্ঞাসা করুক।” (বাইবেল)
পক্ষান্তরে ইসলামে কন্যাশিশুকে প্রতিপালন ও উপযুক্ত শিক্ষা দানের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেন –
“যার দুটি বা তিনটি কন্যাসন্তান আছে এবং তাদের উত্তম শিক্ষায় সুশিক্ষিত ও প্রতিপালিত করে সৎ পাত্রস্থ করবে। সে জান্নাতে আমার সঙ্গে সহাবস্থান করবে।” (সহিহ মুসলিম)
সকল মুসলিমের জ্ঞান অর্জন করাকে আল্লাহ তায়ালা ফরজ করে দিয়েছেন। তাই প্রত্যেক নর-নারী শিক্ষা বা জ্ঞান অর্জনে ইসলামে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
ইসলামে নারী জাতির অধিকার সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশ প্রদান করে, পারিবারিক ও সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, পুরুষ নারী উভয়ের পানাহার, শিক্ষা, দীক্ষা, উপহার, আচরণ সকল ক্ষেত্রে সমান আচরণ ও সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
ইসলামে বিবাহ ও পরিবার গঠনে পুরুষ ও নারী উভয়ের পছন্দ ও মতামতকে সমান অধিকার প্রদান করা হয়েছে। পারিবারিক জীবনে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে প্রাকৃতিক পার্থক্য ও দায়িত্বের ভারসাম্য রক্ষা করে একে অপরের প্রতি সমান অধিকার নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আমরা জেনেছি , রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর আগমনের পূর্বে এবং তার পরেও শুধু মাত্র ইসলাম ব্যতিত, প্রায় সব সংস্কৃতি ও ধর্মে প্রায় ১৩ শত বৎসর পর্যন্ত নারীরা প্রায় সকল প্রকার অর্থনৈতিক অধিকার নারীরা বঞ্চিত হয়েছিল।
পিতা, স্বামী, ভ্রাতা বা পুত্রের সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার লাভের তেমন কোনাে ব্যবস্থাই ছিল না। তারা নিজের পক্ষ থেকে কোনাে সম্পদ উপার্জন করতে পারলেও বিবাহের সাথে সাথে স্ত্রীর সম্পত্তি স্বামীর মালিকানাধীন হয়ে যেত।
উনবিংশ শতাব্দির মধ্যভাগ থেকে অর্থাৎ প্রায় দেড় শত বছর যাবৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরােপের বিভিন্ন দেশে ক্রমান্বয়ে আইনের সংশোধন করা হয়েছে। তখন নারীর পৃথক সম্পতির মালিকানা লাভ করা, স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্বাধীনভাবে ব্যবসা করার, বাণিজ্য ও চুক্তি ইত্যাদি সম্পাদনের অধিকার দেওয়া হয় ।
পক্ষান্তরে ইসলামে নারী জাতির অধিকার নিশ্চিতে প্রথম থেকেই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকার প্রদান করা হয়েছে। বিবাহিত ও অবিবাহিত সকল অবস্থায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের মত একইভাবে ব্যবসা, বাণিজ, চুক্তি, সম্পদ অর্জন, সম্পদ ক্রয়বিক্রয় ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে সমান অধিকার রাখে।
তবে ইসলামে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সাধারণত নারীকে পুরুষের অর্ধেক উত্তরাধিকার প্রদান করা হয়েছে। ইসলামী সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞতা বা ইসলাম বিদ্বেষের কারণে অনেকে আল্লাহর এরূপ বিধানকে নারীর প্রতি বৈষম্য বলে দাবি বা প্রচার করেন।
আফসোস, কতটা অজ্ঞ ও মুর্খ হলে তারা তাদের স্রষ্টার ভুল ধরতে পারে ভেবে দেখুন!! বস্তুত সকল ক্ষেত্রে সমান অধিকারের নামে, নারীকে পুরুষের সমান অধিকার ও দায়িত্ব প্রদান করেই নারীর প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে যা বিদ্বেষিরা দেখতে পায় না।
আমরা আগেই জেনেছি, শুধু নিজের জন্য বেঁচে থাকতে নারী ও পুরুষকে সৃষ্টি করা হয় নি। বরং নিজের বেঁচে থাকা ও অধিকার বুঝে নেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সমৃদ্ধ পৃথিবীর জন্য তৈরি করা মানুষের অন্যতম দায়িত্ব। আর এ দায়িত্ব পালনের জন্যই নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য দিয়েছে সুন্দর এক প্রকৃতি। যা মাত্র দৃষ্টি সম্পন্ন শিক্ষিত ব্যক্তিরা স্পষ্ট দেখতে পাবে।
ইসলামে নারী জাতির অধিকার নিশ্চিতে উত্তরাধিকারে পুরুষের অর্ধেক সম্পদ দেওয়ার জন্য একটি সুক্ষ্ম কারন রয়েছে। বরং মহান আল্লাহ তায়ালা এই সুক্ষ্ম ব্যবস্থার মাধ্যমেই উভয়ে প্রতি সমান অধিকার নিশ্চিত করেছেন৷ একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি সম্পূর্ন পরিষ্কার করা যায়। যেমন-
মনে করুন, একজন পিতা ১০ লক্ষ টাকার সম্পদ, এক ছেলে ও এক মেয়ের জন্য রেখে গেলেন । ইসলামি সমাজ ব্যবস্থায় পুত্র সাড়ে ৬ লাখ টাকা ও কন্যা সাড়ে তিন লাখ টাকার সম্পদ লাভ করবে । বিবাহের সময় পুত্র আনুমানিক এক লক্ষ টাকা মােহর তার স্ত্রীকে দিবে এবং কন্যা ১ লক্ষ টাকা তার স্বামী থেকে মোহরানা হিসেবে লাভ করবে।
ফলে পুত্রের সাড়ে ৫ লাখ ও কন্যার সাড়ে ৪ লাখ টাকার সম্পদ থাকবে। একটি ছােট্ট পরিবারের স্বাভাবিক ব্যয়ভার মাসিক ৫ হাজার টাকা হলে, পুত্রকে তার সাড়ে ৫ লাখ টাকা থেকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। পক্ষান্তরে কন্যাকে একটি পয়সাও খরচ করতে হবে না। কারণ ইসলামী ব্যবস্থায় স্ত্রী ও সন্তানদের যাবতীয় খরচ বহনের দায়িত্ব স্বামীর।
তবে কখনাে সেই নারী বিধবা হলে, শুধু তার নিজের ব্যয়ভার তাকে বহন করতে হবে। তার সন্তানদের খরচের দায়িত্ব স্বামীর পরিবার বা রাষ্ট্রের উপর ন্যস্ত হবে। এভাবে আমরা দেখছি যে, ইসলামে নারী জাতির অধিকার নিশ্চিতে নারীকে পুরুষের প্রায় সমান অর্থনৈতিক অধিকার প্রদান করা হয়েছে।
কিন্তু সকল অর্থনৈতিক দায়িত্ব থেকে নারীকে মুক্ত রাখা হয়েছে। এভাবে পারিবারিক অর্থ ব্যবস্থায় নারীকে বিশেষ অধিকার ও অতিরিক্ত সুযােগ প্রদান করা হয়েছে। যা পুরুষকে দেওয়া হয়নি।
বস্তুত মহান আল্লাহ আয়ালার সুক্ষ্ম হিসেব সম্পর্কে
আমরা গাফেল রয়েছি। ইসলামে অনেক বিষয় রয়েছে যা আমরা বাহ্যিক ভাবে ভুল বুঝে থাকি৷ কিন্তু মহান আল্লাহ তার মধ্যেই আমাদের জন্য কল্যান নিহিত করেছেন। অথচ আমরা আল্লাহর নিয়ামত নিয়ে একটু চিন্তা পর্যন্ত করতে সময় পাই না৷
এরপরও যদি কোনাে নারী তার অমানবিক অধিকার আদায়ে আন্দোলনে করে। নিজের পরিবার ও সন্তানদের সেবায় নিজেকে নিয়ােজিত না করে নিজের উচ্ছলতা, স্বাধীনতা ইত্যাদির নামে চাকরী, সমাজ, গল্প ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তবে তা নিঃসন্দেহে ভয়ঙ্কর খিয়ানত বলে গণ্য হবে। যে জন্য তাকে দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে আল্লাহর শাস্তির মুখােমুখি হতে হবে।
তবে ইসলামে নারী জাতির অধিকার এবং বিধানের মধ্যে থেকে নারীর প্রকৃতির সাথে সুসামঞ্জস্য যে কোনাে কর্ম করতে অনুমতি বা স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু পরিবার ও মানব সভ্যতার প্রতি নারীর প্রাকৃতিক দায়িত্ব পালনের সাথে সঙ্গতি রক্ষার জন্য নারীকে পারিবারিক জীবনে, অর্থনৈতিক দায়িত্ব থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। নারীর সকল প্রয়ােজন মেটাতে তার স্বামীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তাই একজন নারীর পরিবারের প্রয়ােজন ছাড়া চাকরী বা কর্ম করার অর্থ হলাে সন্তান ও পরিবারের দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা ত্রুটি করা। অর্থাৎ এখানে তার অধিকার বা সাম্যতার অপব্যবহার করা হবে।
ইসলামে নারী জাতির অধিকার নিশ্চিত করায় অন্যান্য অধিকারের ন্যায়, রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রেও নারীকে বৈষম্য করা হয়নি। নারীর রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে মূল বিষয় হলো ২টি- “প্রথমত, রাষ্ট্র পরিচালনায় মতামত ও পরামর্শ প্রদানের সুযােগ এবং দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করা। “
কুরআন কারীমে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, “সকল জাগতিক বিষয়ে পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে কর্ম নির্বাহ করা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য”। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও খুলাফায়ে রাশেদীন বিভিন্ন সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও খলীফা নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়ে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের পরামর্শও গ্রহণ করে থাকতেন।
বর্তমান যুগের মত সার্বজনীন ভােট ব্যবস্থা তখন ছিল না। তবে সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় বিষয়ে নারীদের পরামর্শ নেওয়া হতাে। এ সকল বিষয়ে নারীদের ভােট, পরামর্শ বা মত প্রদানের অধিকার নেই এরূপ কোনাে চিন্তা কখনােই ইসলামে ছিল না।
তবে ইসলামে নারী জাতির অধিকার এর নামে কোনাে নারীকে রাষ্ট্র পরিচালনার বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের একক ক্ষমতা প্রদান করার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সতর্ক করেছেন।
এক হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন-
“যে জনগােষ্ঠী তাদের দায়িত্ব কোনাে নারীর উপর অর্পন করে তারা সফল হয় না।”(বুখারী)
এ হাদীসের আলােকে কোনাে কোনাে ইমাম ও ফকীহ মত প্রকাশ করেছেন যে, নারী রাষ্ট্র প্রধান বা বিচারকের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবে না। কিন্তু অন্যান্য ইমাম ও ফকীহ মত প্রকাশ করেছেন যে, কেবলমাত্র নারীকে স্বৈরতান্ত্রিক বা একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রদান আপত্তিকর। কিন্তু পরামর্শ ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় নারীর রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া আপত্তিকর নয়। এ শর্তে তারা মন্ত্রী, বিচারক ও অন্যান্য সকল দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবেন।
পবিত্র কুরআনে সূরা নামলে (২৯-৩৬) আয়াতে নারী শাসক (বিলকীস) এর প্রশংসা করা হয়েছে। নবী সুলাইমান (আ)-এর সাথে ইয়ামানের সাবা অঞ্চলের রাণী আলােচনায় উক্ত রাণীর (বিলকীস) প্রজ্ঞা ও শাসনের প্রশংসা করা হয়েছে। কারণ, উক্ত রাণী পরিষদের পরামর্শ ছাড়া কোনাে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন না।
পবিত্র কুরআন ও উপরের হাদীসের সমন্বয়ে হাকীমুল উম্মাত আশরাফ আলী থানবী (রাহ) সহ অন্যান্য আলিম উল্লেখ করেছেন যে, “আইনগতভাবে বা ব্যবহারিক ভাবে মন্ত্রী বা পার্লামেন্টের পরামর্শ গ্রহণের ব্যবস্থা থাকলে নারীর জন্য রাষ্ট্রপ্রধানের পদ গ্রহণ করা ইসলামে অবৈধ বা নিষিদ্ধ নয়।”
(০১) ইসলামে নারী জাতির অধিকার এতো নিখুঁত ভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে, যে একমাত্র দীপ্তমান মস্তিষ্ক ও চক্ষুদ্বয় তা দেখতে এবং উপলব্ধি সক্ষম হবে। আপনারা প্রচলিত সভ্যতার দাবিদার দেশগুলোর অন্ততরালে লক্ষ্য করে দেখুন।
সেখানে নারী অধিকারের নামে যৌনতা ও অশ্লীলতা তাদের কাছে এখন সভ্যরূপ ধারন করেছে। যা সেই জাহেলিয়াতের সাথে অনেকটা বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ।
বর্তমানে পুরুষের সাথে পাল্লাদিয়ে কর্মক্ষেত্রে নারীরা জড়িয়ে পড়েছে। ফলে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নারীরা বিয়ে করা ও সন্তান গ্রহন করা, বড় ধরনের ঝামেলা মনে করে থাকে।
এমনকি সরকারি অনুদান দিয়েও নারীদের সন্তানগ্রহনে আগ্রহী করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিবারের অন্যান্য সন্তানরাও মায়ের আদর, যত্নেরও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলপ্রসূত তারা গৃহে বসেই নানা ধরনের জটিল অপরাধ প্রবণতায় জড়িয়ে পড়ছে।
(০২) ইসলামে নারী জাতির অধিকার দেওয়া মানে তাদেরকে ঘরে বন্দি করে রাখা নয়। বরং জাতির শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের দায়িত্বও নারীকে দেওয়া হয়েছে। কেননা একটি সন্তানকে আদর্শ ও সুশিক্ষিত করায় পরিবারের সবচেয়ে মায়ের ভুমিকাই মুখ্য হয়ে থাকে।
শুধু আইন করে, বিচার করে, কোনাে নারীকে ধরে মন্ত্রী বানিয়ে বা কোটার মাধ্যমে কিছু নারীকে চাকরী দিয়ে সমাজে নারী প্রতি বৈষম্য রােধ করা যায় না। বৈষম্য দূর ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইসলামের নির্দেশ অনুযায়ী কন্যা, স্ত্রী ও মাতার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয়।
মহান আল্লাহর তায়ালার নিকট তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে মহা পুরস্কার। তেমনি দায়িত্ব অবহেলার কারনে রয়েছে কঠিন শাস্তি। তাই সকলের কাছে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করাও নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার অন্যতম একটি উপায়।
(০৩) ইসলামে নারী জাতির অধিকার সুস্পষ্ট ভাবে বর্নিত হয়েছে। এখন সমাজ ও রাষ্ট্রে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিজ নিজ অবস্থান থেকে বুঝে নেওয়া আপনার কর্তব্য। বিশেষত নারীত্বের কারণে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করা করতে হবে। দৈহিক বা সামাজিক দুর্বলতার কারণে যেন কোন নারী কখনাে বৈষম্যের শিকার না হয়, তা প্রত্যেক মুসলিম পুরুষের নিশ্চিত করতে হবে।
পাশাপাশি নারী অধিকারের দোহাই দিয়ে নারীকে তার প্রকৃতির বিরুদ্ধ কাজে লিপ্ত করার অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে। নারীকে তার নির্ধারিত কর্ম করতে নিরুৎসাহিত করার মত মানবতা বিধ্বংসী প্রবণতা সমাজ থেকে অবশ্যই দূর করতে হবে।
সম্মানিত পাঠকগণ, ইসলামে নারী জাতির অধিকার এতো সংক্ষেপে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়৷ ফলে লেখাটিতে অনেক সংকীর্ণতা রয়েছে। তাই আপনাদের নিজ দায়িত্বে অবশ্যয়ই পবিত্র কোরআনে ‘সূরা নিসা’ সহ অন্যান্য আয়াতের তাফসীর গুলো ভালো করে অধ্যায়ন করার অনুরোধ রইল।
সুতরাং, আসুন আমরা আমাদের সমাজকে ইসলামের পথে আলোকিত করার চেষ্টা করি। নারী ও পুরুষ একে অপরের পরিপূরক হয়ে শ্রদ্ধাশীলতার পরিচয় দেই। সকলে মিলে একটি আদর্শ সমাজ গঠনে অগ্রণী ভুমিকা পালন করি।
আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক প্রদান করুন। আমীন!!
ছবিঃ সংগ্রহীত
মন্তব্য লিখুন