ইসলাম ধর্ম পূর্নাঙ্গ জীবন বিধান। ইসলামে আয় ও ব্যয় এর সুস্পষ্ট নিয়ম কানুন বা নীতিমালা রয়েছে। ইসলামের মধ্যে রয়েছে আল্লাহর রব্বুল আলামীন প্রেরিত ও নবী করীম(সঃ) প্রদর্শিত এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) অনুসৃত পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা।
ইসলাম যেহেতু পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা সেহেতু মুসলমানদের জন্য রয়েছে ব্যক্তি জীবন, সামাজিক জীবন, আচার আচারন, আয়-ব্যয় কিভাবে হবে সবকিছুর সুন্দর সমাধান, এককথায় জীবন পরিচালনার সুস্পষ্ট নীতিমালা।
মানুষের জীবন পরিচালনা করার জন্য সম্পদ সংগ্রহ ও বন্টন অপরিহার্য একটি বিষয়। এই সম্পদ আয় ও ব্যয় এর জন্য ইসলামে রয়েছে সুস্পষ্ট বিধি-বিধান। সঠিক পন্থায় অর্থ উপার্জন ও ব্যয় মনোনিবেশ করা মুসলিমদের জন্য অত্যাবশ্যক।
স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআন সূরা জুমাআর ৯-১০ নম্বরে আয়াতে বলেন।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে দ্রুত আসো এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম, যদি তোমরা বুঝ।
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
.অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
অর্থ উপার্জন শুধুমাত্র করলেই হবে না উপার্জন হতে হবে হালাল উপায়ে,
হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল এবং উত্তম পবিত্র। তোমরা তাই খাও- ভোগ করো। তবে শয়তানের পদাংক অনুসরণ করোনা। (সূরা ০২ : ১৬৮)
তাহলে বুঝা যায় যে নিজ পরিবার কে নিয়ে সুন্দর জীবন যাপনের জন্য অর্থ উপার্জন প্রত্যেকটি মানুষের জন্য অপরিহার্য কিন্তু তা হতে হবে কোরআন সুন্নাহ অনুযায়ী ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়।
যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কর্মপদ্ধতি ইসলামী আকিদা অনুযায়ী পরিচালিত হয় তাকে ইসলামী অর্থনীতি বলে।
১. সম্পদ হালাল ও পবিত্র হতে হবে।
হারাম উপার্জন কারীর ক্ষেত্রে নবী করীম (সাঃ) বলেন যার শরীরের রক্ত ও মাংস হারামের দ্বারা উৎপন্ন, সে জান্নাতে যাবে না, জাহান্নামের আগুনই তার জন্য উপযুক্ত(শুআবুল ঈমান ও মুসনাদে আহমদ)
২. হারাম মাকরুহ সন্দেহম্পূর্ণ পন্থায় সম্পদ উপার্জন করা থেকে বিরত থাকতে হবে, অর্থাৎ যে সকল সম্পদ জায়েজ বা নাজায়েজ হওয়ার দিকটি পরিস্কার নয় এমন সম্পদ উপার্জন থেকে বিরত থাকা।
আরও পড়ুনঃ বাছইকৃত ২০টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস যা জানা জরুরী
৩. সম্পদ উপার্জনের কাজে লিপ্ত হ়য়ে কোন ফরজ বা ওয়াজিব বা সুন্নাত কাজে কোন বিঘ্ন ঘটতে পারবে না।
৪. সম্পদ উপার্জন করতে হবে নিজের দায়িত্ব পালন ও সওয়াব অর্জনের কাজে ব্যয় করার নিয়তে, তবে এটা ইবাদত বলে গণ্য হবে।
(তথ্যসূত্রঃ আহকামে যিন্দেগী, মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন)
১. সম্পদের উপর শরীয়াত যেসকল আইন বা দায়িত্ব বাধ্যতামূলক করেছে সম্পূর্ণ ইখলাসে সাথে তা আদায় করা। যেমন যাকাত, ফেতরা, কুরবানী ইত্যাদি।
তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং রাসূলের আজ্ঞাপালন কর, যাতে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়।’-সূরা আন-নূর : আয়াত নং ৫৬
২. নিজের এবং নিজের পরিবারের ভরণপোষণ ও অন্যান্য হক আদায়ের জন্য সম্পদ ব্যয় করা।
সওয়াবের আশায় কোন মুসলিম যখন তার পরিবার-পরিজনের প্রতি ব্যয় করে, তা তার সদকা হিসাবে গণ্য হয়। [৩১] (মুসলিম ১২/১৪ হাঃ ১০০২, আহমাদ ১৭০৮১) (আ.প্র. ৪৯৫১, ই.ফা. ৪৮৪৭)
৩. আত্মীয়- স্বজন, প্রতিবেশী, মেহমান, মুসাফির, এতিম-মিসকিন, বিধবা প্রভৃতি শ্রেণীর অভাবী লোকদের সাধ্যানুযায়ী দান করা।
তাদের (বিত্তবানদের) অর্থ সম্পদে অধিকার রয়েছে সাহায্যপ্রার্থী এবং বঞ্চিতদের। (সূরা ৫১ আয্ যারিয়াত : আয়াত ২৯)।
আল্লাহ জনপদবাসীদের থেকে তাঁর রসূলকে যা (যে সম্পদ) দিয়েছেন- তা আল্লাহর, আল্লাহর রসূলের, রসূলের স্বজনদের, এতিমদের, অভাবীদের এবং পথচারীদের জন্যে।
এর উদ্দেশ্য হলো, অর্থ সম্পদ যেনো কেবল তোমাদের মধ্যকার বিত্তবানদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়। (সূরা ৫৯ আল হাশর: আয়াতাংশ ৭)
৪. অপব্যয় না করা অর্থাৎ যেসকল পন্থায় বা স্থানে সম্পদ ব্যয় করতে শরী়য়াত নিষেধ করছেন সে সকল স্থানে বা পন্থায় সম্পদ ব্যয় না করা।
আত্মীয় স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দাও এবং অভাবী ও পথিকদের দাও তাদের প্রাপ্য। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই অপব্যয় করোনা। কারণ অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। (সূরা ১৭ ইসরা : আয়াত ২৬-২৭)
হে আদম সন্তান! সালাত আদায়কালে তোমাদের উত্তম পবিত্র পোশাক পরে সৌন্দর্য গ্রহণ করো। আর আহার করো, পান করো, কিন্তু অপচয় করোনা। আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। (সূরা ৭ আল আ’রাফ: আয়াত ৩১)
৫. অমিত ব্যয় ও কার্পন্য না করা। বৈধ পন্থায় ও বৈধ স্থানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় না করা। প্রয়োজনের অতিরিক্ত আয় ও ব্যয় ইসলামে নিষিদ্ধ। বৈধ প্রয়োজনে ব্যয়ের ক্ষেত্রে কার্পণ্য না করা।
হালাল প্রয়োজনের স্থানে প্রয়োজন অনুপাতে কম ব্যয় করাকে বুখল বা কার্পণ্য বলে। যা ইসলামে নিন্দনীয়। তুমি (কার্পণ্য করে) নিজের হাতকে গলায় বেঁধে রেখোনা, আবার (উজাড় করে খরচ করে ফেলার জন্যে) তা সম্পূর্ণ প্রসারিত করেও দিওনা।
এমনটি করলে তিরস্কৃত হবে এবং খালি হাতে বসে পড়বে। (সূরা ১৭ ইসরা : আয়াত ২৯)
৬. ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা উত্তম।
ব্যয় করার ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা ব্যাক্তির বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ (মুসনাদে আহমাদ)।
৭. দ্বীন ইসলামের হেফাজত এবং ধর্ম প্রচারের কাজে আন্তরিকভাবে সাধ্যানুযায়ী ব্যয় করা।
আল্লাহ তোমাকে যে অর্থ সম্পদ দিয়েছেন তার দ্বারা আখিরাতের আবাস (জান্নাত) অনুসন্ধান করো এবং পার্থিব জীবনে তোমার বৈধ (ভোগের) অংশও ভুলে থেকোনা।
(মানুষের) কল্যাণ করো, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আর (অর্থ সম্পদ দ্বারা) দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করোনা। বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন না। (সূরা ২৮ আল কাসাস : আয়াত ৭৭)
৮. সাধারণ অবস্থায় আই এর চেয়ে ব্যয় বৃদ্ধি করা অনুচিত।
(তথ্যসূত্রঃ আহকামে যিন্দেগী, মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন)
ইসলামে আয় ও ব্যয় কি বিস্তারিত বিধি বিধান রয়েছে। ইসলাম কখনো হারাম অথবা জবরদস্তিমূলক আয়ের খাতকে অনুমোদন দেয় না, হারাম খাতে ব্যয় এবং সুদ ভিত্তিক লেনদেন সমর্থন করে না।
ব্যবসাভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যস্থাকে ইসলাম পূর্ন সমর্থন দেয়। তাই মুসলমান সমাজের উচিত ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আদলে ব্যক্তিজীবন ও সামাজিক জীবনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা। এবং ইসলামে আয় ও ব্যয় এর নীতিমালা মেনে চলা।
আমার নাম মোঃ মেসবাহ। আমি এক জন স্টুডেন্ট। তাই আমি আপনার কাছে এই আবেদন করতেছি যে, আমি আপনার কাছে একটা চাকরি চাইতেছি। আমি যেই চাকরির আবেদন করছি সেটি হলো ইসলামের ভেতর। আশা করি আপনি আমাকে দেবেন চাকরি।