ট্রোজান ভাইরাস বা ট্রোজান হর্স হলো একধরনের ম্যালওয়্যার যা আপনার কম্পিউটার সিস্টেমে সাধারণত বৈধ বা স্বাভাবিক সফটওয়্যার হিসেবে আচারন করে । নরমাল সফটওয়্যারের মতো ছদ্মবেশ ধরে বলে ইউজার সহজেই এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন। এধরনের ভাইরাস সবসময় হ্যাকার কিংবা সাইবার থিফ দ্বারা পরিচালিত হয় । যাতে করে সহজেই ইউজার কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারে। ইউজার বৈধ বা স্বাভাবিক সফটওয়্যার ভেবে কম্পিউটারে এটিকে ইন্সটল করেন। অনেক সময় অন্য পপুলার সফটওয়্যারের নাম ভাঙিয়ে ট্রোজান ভাইরাস ইন্টারনেটে আপলোড করা হয়। তাই অফিশিয়াল কিংবা পপুলার ওয়েবসাইট ছাড়া অন্য কোনো ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড এবং ইন্সটল করা ঠিক নয়।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
ট্রোজান ভাইরাস যখনি আপনার কম্পিউটারে অ্যাক্টিভ হয় তখন সাইবার ক্রিমিনাল আপনার কম্পিউটারে নজর রাখতে পারে, আপনার গুরুত্বপূর্ণ ডেটা চুরি করতে পারে কিংবা গোপন কৌশলে আপনার সিস্টেম হ্যাক করতে পারে। এসবের মধ্যে রয়েছে
কম্পিউটার ভাইরাসের মতো ট্রোজান ভাইরাস নিজের প্রতিরূপ তৈরি করতে পারে না। ইউজার কম্পিউটারকে দূর থেকে সাইবার ক্রিমিনালরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। একবার ট্রোজান ভাইরাস এর দ্বারা আক্রান্ত হলে ভিক্টিমের কম্পিউটারে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। আপনার কম্পিউটারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হ্যাকারের কাছে চলে যায়। ফলে আপনার অজান্তেই আপনার গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট , ফাইল হাতিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ওয়েবসাইটে আপনকে বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে কৌশলে আপনাকে ট্রোজান হর্স ভাইরাস ইন্সটল করাতে পারে। তাই সন্দেহজনক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা উচিত নয় ।
গ্রিক মিথোলজিতে ট্রয় নগরী ধ্বংস হওয়ার কথা মনে আছে? ট্রোজান মানে প্রাচীন ট্রয় নগর-সম্বন্ধীয় কিংবা প্রাচীন ট্রয়নগরবাসী । ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিস গ্রিসের স্পার্টা নগরীর রাজার স্ত্রী হেলেনাকে প্রলুব্ধু করে নিজ বাসভূমিতে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর তাদের ভালবাসার কারনেই বেঁধে যায় বিপত্তি । স্পার্টা নগরীর সেনারা ট্রয় নগরী আক্রমন করে । যখন স্পার্টার সেনারা প্রায় হারতে বসেছিল তখন একটি কাঠের তৈরি ঘোড়া বানিয়ে রেখে যায়। ট্রয় নগরীর রাজা সেটিকে জয়ের পুরস্কার হিসেবে মনে করে রাজপ্রাসাদে নিয়ে যান। কিন্তু তিনি ধারনা করতে পারেননি যে ওই সামান্য কাঠের ঘোড়ায় ওত পেতে বসেছিল স্পার্টার সৈন্যরা ।
এরপর রাতে অতর্কিত আক্রমনে শুধু ভালবাসার কারনে ধ্বংস হয়ে যায় ট্রয় নগরী! ট্রোজান হর্স ভাইরাস এইরকমি । আপনি বৈধ সফটওয়্যার ভেবে কম্পিউটারে ইন্সটল করবেন কিন্তু পরে দেখবেন আপনার সিস্টেম হ্যাক হয়ে গেছে। এজন্যই এই ভাইরাস কে এই নাম দেয়া হয়েছে।
ট্রোজান ভাইরাস কম্পিউটারে কি কি ক্রিয়াকালাপ সম্পাদন করবে সে অনুসরে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। বিভিন্ন ট্রোজান ভাইরাস ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশে আলাদা আলাদা ভাবে কোডিং করা হয়। নিচে কয়েটি ট্রোজান ভাইরাস দিয়ে দেয়া হলো
ব্যাকডোরঃ
আক্রন্ত হওয়া কম্পিউটারে রিমোট কন্ট্রোল অ্যাক্সেস দেয় ব্যাকডোর ভাইরাস। ফলে হ্যাকার দূর থেকে যা খুশি আক্রান্ত কম্পিউটারে করতে পারে। তারা চাইলে ডেটা ডিলিট, সেন্ডিং, রিসিভিং, কোন সফটওয়্যার খোলা কিংবা বন্ধ করা, কম্পিউটার রিবুট করানো যেকোনো কিছু করতে পারবে। ব্যাকডোর সাধারণত অনেক গুলো ভিক্টিম কম্পিউটারকে যুক্ত করে গ্রুপ হিসেবে বটনেট বা জম্বি নেটওয়ার্ক তৈরি করে।
এক্সপ্লিটঃ
এক্সপ্লিট ভাইরাস এমনভাবে কোড করা হয় যাতে করে কম্পিউটারে যে সফটওয়্যার রান করছে তার দুর্বলতা খুঁজে তাকে আক্রান্ত করা যায়।
রুটকিটঃ
রুটকিট কম্পিউটার সিস্টেমের নির্দিষ্ট কিছু করতে বাঁধা দেয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো যাতে করে সিস্টেমে ক্ষতিকর ভাইরাস রান করতে পারে । সিস্টেম বাঁধাগ্রস্থ হয় বলে অ্যান্টিভাইরাস সহজে এগুলকে ডিটেক্ট করতে পারে না।
ট্রোজান-ব্যাংকারঃ
ট্রোজান-ব্যাংকারের উদ্দেশ্য হলো অনলাইন ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্টের ডেটা চুরি করে নেয়া। ডেভিত কার্ড অথবা ক্রেডিট কার্ড ইনফেক্টেড করা।
ট্রোজান-ডিডসঃ
DOS মানে হচ্ছে ডিনাইয়াল অফ সার্ভিস। এটি আক্রান্ত কম্পিউটার থেকে কোন ওয়েবসাইট অ্যাড্রেসে অনেকগুলো রিকুয়েস্ট একসাথে দেয় । ফলে একই সময়ে অনেকগুলো ডেটা রিকুয়েস্ট পেয়ে ওই কম্পিউটারের জন্য সার্ভার সার্ভিস প্রত্যাখ্যান করে দেয়।
ট্রোজান-ডাউনলোডারঃ
এটি আক্রান্ত কম্পিউটারে অ্যাডওয়্যার কিংবা নতুন ভার্সনের ট্রোজান ভাইরাস ডাউনলোড করে ।
ট্রোজান-ড্রপারঃ
ক্ষতিকর ভাইরাস কিংবা ট্রোজান ইন্সটল করতে হ্যাকার কর্তৃক ব্যবহার করা হয়। সব ধরণের অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার এগুলোকে সনাক্ত করতে পারে না।
ট্রোজান-ফেক এভিঃ
এই ধরণের ট্রোজান ভাইরাস অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম হিসেবে আচারন করে। ভুয়া থ্রেট সনাক্ত এবং রিমুভের জন্য আপনার কাছ থেকে টাকা দাবি করে। অনেকে একে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার মনে করে ইন্সটল করেন এবং মিথ্যা ভাইরাস শনাক্ত এবং রিমুভের জন্য পে করে থাকেন।
ট্রোজান-গেমথিফঃ
এই ধরণের ট্রোজান অনলাইন গেমারদের অ্যাকাউন্ট ডেটা চুরি করে নিয়ে যায়। ফলে গেমার যে গেমটি টাকা খরচ করে কিনেছেন তার ক্রেডেন্সিয়াল সহজেই নিয়ে নিতে পারে।
ট্রোজান-আইএমঃ
এ ধরণের ট্রোজান ভাইরাস আপনার মেসেনজিং প্রোগ্রাম থেকে লগইন এবং পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নিয়ে যায়।
ট্রোজান-রান্সমঃ
এটি কম্পিউটার সিস্টেমকে আক্রন্ত করে থাকে । ফলে ইউজার সঠিক ভাবে সিস্টেম রান করতে পারেন না। এমনকি কিছু কিছু ডেটা আটকে রাখে। একটি বিটকয়েন অ্যাড্রেস দিয়ে ইউজারকে সেখানে টাকা পাঠাতে বলা হয়। যদি ইউজার সেখানে টাকা পাঠিয়ে দেয় তবে সেটা রিমুভ করে দেয়া হয়। সিস্টেমের পারফর্ম্যন্স পুনরায় ফিরে আসে এবং ইউজার তার ডেটা ফিরে পান।
ট্রোজান-এসএমএসঃ
এটা আপনার ফোন থেকে অটোমেটিক ভাবে অন্য ফোন নাম্বারে এসএমএস করতে থাকে যাতে করে আপনার টাকা খরচ হয়ে যায়।
ট্রোজান-স্পাইঃ
ট্রোজান স্পাই আপনার কম্পিউটারে নজরদারি রাখতে পারে। আপনি কি করছেন , কীবোর্ডে কি টাইপ করছেন কিংবা স্ক্রীনশর্ট নিচ্ছেন কিনা বা কি কি সফটওয়ার ব্যবহার করছেন এসব কিছুতে নজর রাখে। কীবোর্ডে কি টাইপ করলেন তা নজরে রেখে আপনার গুরুত্বপূর্ণ পাসওয়ার্ড খুব সহজে হাতিয়ে নিতে পারে।
ট্রোজান-মেইলফাইন্ডারঃ
এই ট্রোজান ভাইরাস আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস সংগ্রহ করে নিতে পারে। ফলে ইউজার তার কম্পিউটারে বা ইন্টারনেটে কি কি ইমেল ব্যবহার করছেন তা জেনে যেতে পারে। যা আসলে পরে ইমেইল স্পামিং ঘটাতে পারে।
অন্যান্য কিছু ট্রোজান ভাইরাসঃ
ট্রোজান ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকতে হলে অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম কম্পিউটারে ইন্সটল করে রাখা উচিত। এমন কোন ওয়েবসাইটে ব্রাউজ করা উচিত না যেটি ক্ষতিকর হতে পারে। সবসময় চেক করবেন ওয়েবসাইট অ্যাড্রেসে https লেখা আছে কিনা । যদি http লেখা থাকে তার মানে এটি সিকিউর কানেকশন নয়। এখানে অতিরিক্ত S এর মানে হচ্ছে Secure কানেকশন। ব্রাউজারে অ্যাড ব্লক করে এমন এক্সটেনশন ইন্সটল করে রাখুন অথবা অ্যাড ব্লক করে (যেমন ফায়ারফক্স) এমন ব্রাউজার ব্যবহার করুন।
অনেক সময় উইন্ডোজ ডিফেন্ডার ট্রোজান ভাইরাস এর বিরুদ্ধে ভালো প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে না। তাই বিটডিফেন্ডার বা ক্যাচপারস্কাই ব্যবহার করুন। এই দুটি অ্যান্টিভাইরাসের ফ্রী ভার্সন রয়েছে। আপনি চাইলে এগুলোর ফ্রী ভার্সনও ব্যবহার করতে পারেন। বিটডিফেন্ডার বা ক্যাচপারস্কাই দুটিই ট্রোজান ইনফেকশন থেকে আপনার কম্পিউটারকে রক্ষা করতে সক্ষম। ৯৯% এভি টেস্ট রেজাল্ট এসেছে এ দুটি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার থেকে । অ্যাভাস্ট এবং এভিজি অ্যান্টিভাইরাস এর পরে অবস্থান করছে। অ্যাভাস্ট অথবা এভিজি ও ট্রোজান ভাইরাস থেকে ভালো প্রোটেকশন দিতে পারে । ট্রোজান থেকে রক্ষা পেতে হলে ভালো মানের অ্যান্টইভাইরাস ইন্সটল করে রাখা জরুরি না হলে ডেটা চুরি হয়ে যাওয়ার আশংকা থেকেই যায়।
https://www.kaspersky.com/resource-center/threats/trojans
ছবিঃ সংগৃহীত
thanks.I feel n0w 5ecure fr0m trozon h0r5e
amr ay somporker jana cilo na …ata teke aktu bujte parci…. onk sundor post cilo……