কম্পিউটার ভাইরাস হল এক ধরণের ক্ষতিকারক সফ্টওয়্যার প্রোগ্রাম যা ব্যবহারকারীর ধারনা বা অনুমতি ছাড়াই ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে লোড করা হয় এবং কম্পিউটার সিস্টেম বা ব্যবহারকারীর সংগ্রহ করা বিভিন্ন তথ্যের ক্ষতি সাধন করে ।
“কম্পিউটার ভাইরাস” শব্দটি সর্বপ্রথম ফ্রেড কোহেন ১৯৮৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সংজ্ঞায়িত করেন।
কম্পিউটার ভাইরাস সর্বদা মানুষ দ্বারা প্ররোচিত হয়। এটি কম্পিউটারে প্রবেশের পরে নিজেকে অন্য প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত করে প্রোগ্রামটিকে সংক্রমিত করে ফেলে । এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে । কিছু কিছু ধ্বংসাত্মক ভাইরাস আছে যেগুলো কম্পিউটারে প্রবেশের পর পরই সিস্টেম কে মডিফাই করে এমন কি সিস্টেমকে একেবারে নষ্ট পর্যন্ত করে দিতে পারে।আজ আমরা সর্বকালের সেরা এমন ৫টি ধ্বংসাত্মক ভাইরাস সম্পর্কে জানবো ।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
এটিই সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ভাইরাস। এই ভাইরাস ফিলিপিনো প্রোগ্রামার রিওনেল রেমোনেজ (Reonel Ramones) এবং অনেল ডা গুজম্যান (Onel de Guzman) তৈরি করেন । এই ভাইরাসটি ইমেলের মাধ্যমে কম্পিউটারে সংক্রামিত হয় । ইমেইলটি প্রেম পত্রের মতো এবং এর সাথে ভাইরাসটি সংযুক্ত থাকে ।
ব্যবহারকারী একবার ভাইরাসে ক্লিক করলেই এটি ব্যবহারকারীর কম্পিউটারকে সংক্রমন করে এবং তাৎক্ষনিকভাবেই ব্যবহারকারীর ইমেল তালিকার প্রত্যেকের কাছেই ইমেইল প্রেরণ করে, পাশাপাশি ফাইলগুলি ওভাররাইট করে কম্পিউটার সিস্টেমকে সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে ফেলে ।এই ভাইরাস মাত্র ১০ দিনে ৫০ মিলিয়ন কম্পিউটারে ছড়িয়ে পরে যার কারনে প্রায় ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয় ।
মেলিসা ভাইরাসটি একটি ইমেইল ভাইরাস ছিল যা ২৬ শে মার্চ, ১৯৯৯ এ প্রথম প্রকাশিত হয় । ভাইরাসটি নিজে নিজেই এতো তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পরেছিল যে ইমেইল সিস্টেমগুলো ওভারলোড হয়েছিল । এটিই আজ পর্যন্ত সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস । এই ভাইরাসটি তৈরি করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড এল স্মিথ (David L. Smith)।
মেলিসা ভাইরাসটিকে ইমেইলের সাথে সংযুক্ত করে পাঠানো হয় । ব্যবহারকারী ক্লিক করলেই ভাইরাসটি কম্পিউটারকে সংক্রমিত করে এবং মাইক্রোসফটওয়ার্ড ৯৭ ও মাইক্রোসফটওয়ার্ড ২০০০ এ সংযুক্ত থাকা ফাইলগুলোর মাধ্যমে অন্য ইমেইলে ছড়িয়ে পরে ।এটি অনুমান করা হয় যে ভাইরাসটি কয়েক ঘন্টার মধ্যে কয়েক হাজার কম্পিউটারকে সংক্রমিত করে এবং মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ৮০ মিলিয়ন ডলার ।
কোড রেড একটি কম্পিউটার ওয়ার্ম (worm) ভাইরাস যা ২০০১ সালের ১৫ই জুলাই-এ ইন্টারনেটে প্রথম প্রকাশ পায় ।এটি মাইক্রোসফ্টের আইআইএস ওয়েব সার্ভার (Microsoft’s IIS web server) চালিত কম্পিউটারগুলোতে আক্রমণ করেছিল ।
কোড রেড প্রথমে ইআই ডিজিটাল সিকিউরিটি (eEye Digital Security) সংস্থার কর্মচারী মার্ক মাইফ্রেট (Marc Maiffret) এবং রায়ান পারমেহ (Ryan Permeh) আবিষ্কার করেন।
আরও পড়ুনঃ জীবনকে সহজ করবে যে ৫টি অ্যাপস
তারা এটিকে “কোড রেড” নাম দিয়েছে কারণ তারা তখন মাউন্টেইন ডিউ কোড রেড (Mountain Dew Code Red) পান করছিলেন । কোড রেড ভাইরাসটি ২০০১ এর গ্রীষ্মে কয়েক মিলিয়ন ডলার ক্ষতি করতে পেরেছিল । সংক্রমিত কম্পিউটারগুলোর মাধ্যমে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করার হয় “Hacked by Chinese!” লেখাটি প্রদর্শিত হত ।
সোবিগ ওয়ার্ম ভাইরাসটি সর্বপ্রথম ১৮ই আগস্ট ২০০৩ সালে পাওয়া যায়। এটি ইন্টারনেট সংযুক্ত উইন্ডোজ ভিত্তিক কম্পিউটারগুলোকে আক্রমন করে । এটি মূলত একটি ইমেইল ভিত্তিক ভাইরাস। সোবিগ ভাইরাসটি আক্রান্ত কম্পিটারের সিস্টেম ফাইলের win32 ফাইলটিকে সংক্রমন করে যার ফলে কম্পিউটারের উইন্ডোজ নষ্ট হয়ে যায়।
ধারনা করা হয় যে, প্রায় ২ মিলিয়ন কম্পিউটার এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়।
৫ টি শীর্ষ কম্পিউটার ভাইরাসগুলির মধ্যে বৃহত্তম এবং কম ক্ষতিকারক ভাইরাস হিসেবে ৫ম স্থানটি মাইডুমেরই প্রাপ্য ।
মাইডুম ওয়ার্ম ভাইরাসটি মূলত ইমেইলের মাধ্যমে প্রেরিত ভাইরাস যা মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ভিত্তিক কম্পিউটারগুলোকে সংক্রমিত করেছিল ।
ভাইরাসটিকে ইমেইলের সাথে সংযুক্ত করে পাঠানো হয়। ব্যবহারকারী ভাইরাসে ক্লিক করলেই এটি ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে ডাউনলোড হয়ে যায় । মাইডুম মূলত “ILOVEYOU” ভাইরাসের মতো । এই ভাইরাসটি এতো দ্রুত ছড়িয়ে পরেছিল যে এটি ইন্টারনেট সার্ভারের গতিকে ১০ ভাগ কমিয়ে দিয়েছিল । এছাড়াও প্রায় ২মিলিয়ন কম্পিউটারকে এটি সংক্রমন করে এবং মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ৩৮ বিলিয়ন ডলার ।
এই ভাইরাসগুলো থেকে ব্যবহারকারীর ডিভাইস রক্ষা করার উপায় আপনার অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার আপডেট করুন । আপনার গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ্লিকেশন এবং অ্যান্টিভাইরাস / অ্যান্টিমালওয়্যার প্রোগ্রামগুলির জন্য স্বয়ংক্রিয় আপডেট চালু করুন । সন্দেহজনক ইমেলে লিংক বা সংযুক্তি ফাইলগুলোতে ক্লিক করবেন না।
মানুষ অসাবধানতাবশত অপরিচিত ইমেইলের লিংক কিংবা সংযুক্ত ফাইলে ক্লিক করে এতে ব্যবহারকারীর ডিভাইস ভাইরাসে আক্রান্ত হয় । এটি ফিশিং হিসাবে পরিচিত এবং এটি অনেক লোকের ক্ষেত্রে ঘটে। এটি হ্যাকারদের আপনার আর্থিক তথ্য এবং অন্যান্য সংবেদনশীল ডেটা চুরি করতে দেয়।
পাবলিক হটস্পটগুলিতে সাবধানতা অবলম্বন করুন। কারন একই পাবলিক হটস্পটে হ্যাকার সংযুক্ত হয়ে ব্যবহারকারীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করতে পারে সেই সাথে ব্যবহারকারীর ডিভাইসে ভাইরাস প্রেরণ করতে পারে। সন্দেহজনক সাইটগুলি থেকে পাইরেটেড ফাইলগুলি ডাউনলোড করবেন না। টরেন্ট সাইটগুলিতে খুব সাবধানতা অবলম্বন করুন ।
মন্তব্য লিখুন