বই মানব সভ্যতার অন্যতম অপরিহার্য্য একটি উপাদান। অতীতের সাথে বর্তমানের সেতু-বন্ধন রক্ষা এবং পরিকল্পিত ভবিষ্যত বিনির্মাণে বই সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। আবহমান কাল থেকে মানুষের অন্তরে স্থায়ী আসনে অধিষ্ঠিত রয়েছে সত্যিকারের বই বা “পেপার-বুক”, যার মূলে রয়েছে জনপ্রিয় ধারণা, “বই আসলে মলাটের মধ্যে পাতায় পাতায় লুকিয়ে থাকা জ্ঞানের রহস্য ভান্ডার”। এ ধারণাটিতে প্রথম বারের মত ছেদ পড়ে বিংশ শতাব্দির শেষ দশকে “ই-বুক” আবির্ভাবের মাধ্যমে।
ই-বুক প্রচলিত প্রবাদ “বিজ্ঞান কারো জন্য আশির্বাদ, কারো জন্য অভিশাপ” সত্যটাকে আবারো সামনে এনেছে। আমরা জানি স্মার্টফোন প্রযুক্তির অভাবনীয় সুফল লাভের সুযোগ প্রদানের বিপরীতে রেডিও, ক্যামেরা, ক্যালকুলেটর, ল্যান্ড-ফোনের মত অসংখ্য বহুল ব্যবহ্রত জনপ্রিয় যন্ত্রকে অকার্যকর করেছে।
ই-বুকের অসম্ভব জনপ্রিয়তা এবং দ্রুততম সময়ে বিশ্বব্যাপী বিস্তার, বিশেষ করে একে ঘিরে তরুণ ও যুব-সমাজের উন্মাদনা সত্যিকারের বই তথা “পেপার-বুক”-কে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। পেপার-বুকের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, আশংকা দেখা দিয়েছে বিলুপ্তি বা অপমৃত্যু ঘটার।
মানুষ কেন বই পড়ে?
বই জ্ঞানার্জনের অন্যতম কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা লাভেও বই অপরিহার্য্য অনুসঙ্গ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও বিভিন্ন বয়সী জ্ঞান-পিপাসুদের জন্য দেশে দেশে রয়েছে অগণিত লাইব্রেরী। “দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত” জ্ঞানার্জনের যে দীক্ষা মানুষ নেয় তার ভিত্তিমূলে থাকে বই।
বই পাঠে মস্তিষ্কের ব্যায়াম হয়, মানসিক বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটে, যা বিশ্বখ্যাত আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে।
ফলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের জ্ঞানের প্রতি স্বাভাবিক অনীহা আসার বিষয়টি বিলম্বিত হয় অর্থাৎ দীর্ঘদিন জ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকা সম্ভব হয়। ফিকশন সংক্রান্ত বই পাঠকদের “থিউরি অব মাইন্ড” অধিকতর উন্নত করে, যার ফলে অন্যান্যদের প্রতি তাদের আচরণ অধিকতর সহযোগিতাপূর্ণ এবং সহমর্মিতাপূর্ণ হয়ে থাকে।
শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে বই পড়ার বেশ ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে, বিষয়টি Society for Research in Child Development ম্যাগাজিনে প্রকাশিত জমজ শিশুদের উপর পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।
বই মানুষের জ্ঞানের ভিত্তিকে মজবুত করার মাধ্যমে স্মার্ট, আপ-ডেটেড হতে সহায়তা করে। সামগ্রিকভাবে জ্ঞানের বিকাশ ও উন্নয়ন ছাড়াও নিয়মিতভাবে বই পড়ার কিছু সুনির্দিষ্ট উপকারিতা রয়েছে। প্রধান প্রধান কতিপয় উপকারিতা নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
(ক) মস্তিষ্কে উদ্দীপনা তৈরি করাঃ
সুস্বাস্থ্যের জন্য শারীরিক ব্যায়ামের ন্যায় মস্তিষ্কের ব্যায়ামেরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বই পড়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কে উদ্দীপনা তৈরি হয় যা মানসিক বৈকল্য, ডি-ম্যানসিয়ার মত মারাত্মক ব্যাধি প্রতিরোধে সহায়ক হয়।
(খ) মানসিক চাপ নিরসনঃ
মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে অসন্তুষ্টি, অসহায়ত্ব, মানসিক চাপ তৈরি হয়। বই পাঠের মাধ্যমে সাংসারিক বা দাপ্তরিক যে কোন ধরণের মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায়।
(গ) জ্ঞানার্জনঃ
বই মনের চোখ খুলে দেয়, অতীত বর্তমান সম্পর্কে সকল বিষয়াদি জানা যায় এবং ব্যাক্তি/সমাজ কিংবা দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণের মানসিকতা তৈরি হয়।
(ঘ) শব্দ-ভান্ডারের সম্বৃদ্ধিঃ
নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ধরণের বই পড়ার মাধ্যমে নতুন নতুন শব্দের সাথে পরিচিতি ঘটে, যার মাধ্যমে ভাষা সংক্রান্ত দক্ষতা শাণিত হয় এবং শব্দ ভান্ডার সম্বৃদ্ধ হয়।
(ঙ) স্মরণ-শক্তির উন্নয়নঃ
বই পড়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। ফলে মস্তিষ্কের তথ্য ধারণ ক্ষমতা বাড়ে, বিদ্যমান স্মৃতি দীর্ঘস্থায়ী হয়, স্বল্প-মেয়াদী স্মৃতিশক্তি সতেজ হয় এবং মানসিক স্থিতিশীলতার উন্নয়ন হয়।
(চ) বিশ্লেষণী ক্ষমতার উন্নয়নঃ
বই পড়ার মাধ্যমে বিশ্লেষণধর্মী ক্ষমতার উন্নয়ন হয়। রহস্য উপন্যাস পড়ার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার উন্নয়ন এবং সমস্যা-সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
(ছ) ফোকাস বা মনোনিবেশের সক্ষমতা বৃদ্ধিঃ
বই পড়ার মাধ্যমে কোন ঘটনার গভীরে প্রবেশ করা, বিশেষ ঘটনার প্রতি ফোকাস বা মনোনিবেশ করার সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
(জ) লিখার দক্ষতা উন্নয়নঃ
প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে “ভালো লেখক হতে হলে, প্রথমে ভালো পাঠক হতে হবে”। অর্থাৎ লেখক হিসেবে দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বই পড়া আবশ্যক। বই পড়ার মাধ্যমে ভাষাগত দক্ষতার উন্নয়ন, শব্দ সম্ভার সম্বৃদ্ধ করা ছাড়াও উপস্থাপনা কৌশল উন্নয়ন সম্ভব হয়।
(ঝ) মানসিক প্রশান্তিঃ
মানুষের দৈনন্দিন জীবন বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের কারণে জঠিল হয়ে উঠতে পারে। বই পড়ার মাধ্যমে দম-বন্ধ পরিবেশ মাড়িয়ে প্রশান্তি লাভ সম্ভব হয়। বই মানুষের দুঃসময়ে বিশ্বস্থ সাথী হিসেবে মানসিক প্রশান্তি এনে দিতে পারে।
(ঞ) ফ্রি-বিনোদনঃ
মানুষ বিনোদনের জন্য কষ্টার্জিত পয়সা খরচ করে সিনেমা, সঙ্গীতানুষ্ঠান কিংবা বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নেয়। অথচ বিনা খরচে সহজে পছন্দের একটি বই পড়ার মাধ্যমেও চিত্তের বিনোদন লাভ সম্ভব হয়।
ই-বুক এবং পেপার-বুকের ইতিবাচক ও নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যাবলিঃ
মানুষ কোন কিছু পছন্দ কিংবা অপছন্দ করার ক্ষেত্রে ভালো/মন্দ বিষয়গুলি বিবেচনায় নেয়। বই পাঠকেরাও ই-বুক কিংবা পেপার-বুক পছন্দের ক্ষেত্রে ইতিবাচক/নেতিবাচক দিকগুলি বিশ্লেষণ করে থাকে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকগণ ই-বুক এবং পেপার-বুকের কতিপয় বৈশিষ্ট্যাবলী চিহ্নিত করেছেন, যা পাঠকদের বই নির্বাচন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেঃ
পেপার বুকের ইতিবাচক দিকগুলিঃ
- স্পর্শ করা বা ঘ্রাণ নেয়া যায়, ফলে পাঠকের মনে আবেগ বা উচ্ছাস তৈরি হয় পাঠের মাধ্যমে গভীর প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়;
- আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে গ্রাফিক্স, ছবি কিংবা চিত্র অত্যন্ত সুস্পষ্ট হয়, ছাপায় ব্যবহ্রত রং যথাযথভাবে ফুটে উঠে;
পাঠকের চোখের উপর চাপ পড়ে না, অর্থাৎ স্বাস্থ্যসম্মত পাঠের উপযোগী; - ব্যাক্তিত্বের পরিচায়ক; ড্রইং রুমে কিংবা পড়ার ঘরে সাজিয়ে রাখা বই থেকে কারো ব্যাক্তিত্ব সম্পর্কে সহজে ধারণা লাভ সম্ভব;
- নিরবচ্ছিন্ন পড়ার সুবিধা; কেননা বিদ্যুৎ/ইন্টারনেট সংযোগহীনতা কিংবা অনাকাংখিত বিজ্ঞাপন/ইমেইল/পপ-আপ এর উপদ্রব নেই;
- টেকসই কাঁচামালে তৈরি এবং রি-সাইক্লিং বা পূনর্ব্যবহার সুবিধা রয়েছে।
পেপার বুকের নেতিবাচক দিকগুলিঃ
- কখনো কখনো ই-বুকের তুলনায় ব্যায়বহুল;
- একসাথে বেশী বই সংরক্ষণ কিংবা পরিবহন অসুবিধাজনক।
ই-বু্কের ইতিবাচক দিকগুলিঃ
- ই-বুক সাধারণত পেপার বুকের চেয়ে দামে সস্তা।
- পাঠকের পছন্দমত ফন্ট সাইজ এবং স্টাইল পরিবর্তনের সুবিধা;
- পেপার-বুকের ওজনের তুলনায় ই-রিডার অনেক হাল্কা বিধায় ই-বুক সহজে বহনযোগ্য;
- হাজারো ই-বুকের লাইব্রেরীকে সহজে পকেটে নিয়ে ঘোরাঘুরি করা যায়;
- একবার ই-রিডার কেনার পরে অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে এমনকি বিনামূল্যেও বই পড়া সম্ভব।
ই-বু্কের নেতিবাচক দিকগুলিঃ
- ই-বুক পাঠকের চোখের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে;
- প্রায়শঃই বইয়ে ব্যবহ্রত ছবি, গ্রাফিক্স, টেবিল ইত্যাদি অষ্পষ্ট, দূর্বোধ্য হয়;
- ই-রীডার উৎপাদন ব্যয়-বহুল; অকার্যকর কিংবা নষ্ট হলে রি-সাইক্লিং বা পূনর্ব্যবহার করা যায় না।
বৈশ্বিক বই বেচা-কেনায় ই-বুক ও পেপার-বুকের অবস্থান
Bookstore Revenue Statistics এবং Education Book Publishing Companies Statistics মতে ২০২৩ সালে বিশ্ব বাজারে বই বিক্রি থেকে মোট প্রাক্কলিত আয়ের পরিমাণ ৭৮.০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
যার মধ্যে পেপার বুকের আয় ৬৪.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৮২.৪৫%) এবং ই-বুকের আয় ১৩.৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১৭.৫৫%)। একইসূত্রের পূর্বাভাষ মতে ২০২৭ সাল নাগাদ বৈশ্বিক বই বাজারের মোট আয়ের ১৭.২৭% আসতে পারে ই-বুক থেকে। অর্থাৎ ই-বুক থেকে আয় হ্রাসের বিষয়ে আভাষ রয়েছে।
আদৌ কি পেপার-বুকের বিলুপ্তি বা অপমৃত্যু ঘটবে?
ই-বুকের আবির্ভাব এবং অভুতপূর্ব বিস্তারের প্রেক্ষাপটে পেপার বুকের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকের মাঝে সংশয় দেখা দিয়েছে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি কি সত্যিই পেপার বুকের অস্থিত্বের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ?
মোটেও তা নয়, বৈশ্বিক বইয়ের বাজারের গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় সত্যিকারের পেপার-বুক এখনো বাজারে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রয়েছে। ই-বুকের শেয়ার নিতান্তই কম, অদূর ভবিষ্যতেও পেপার-বুকের জন্য শক্ত প্রতিদ্বন্ধীতা তৈরির সামর্থ্য রাখে না।
বিশ্বব্যাপী মার্কেট বিশেষজ্ঞগণ, মনোবিজ্ঞানীগণ বই পাঠকের মনোভাব নিয়ে অসংখ্য গবেষণা, বিশ্লেষণ করেছেন। তাদের মতে কতকগুলি অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে পেপার-বুক কখনো বিলুপ্ত হবে না কিংবা এর অপমৃত্যু ঘটবে না।
নিম্নে কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলঃ
(ক) মালিকানা অর্জনঃ
বই ব্যক্তিত্বের অংশ বিশেষ। পেপার বুকের মালিকানা যে মানসিক তৃপ্তি দেয়, তা কখনো ই-বুক দ্বারা সম্ভব নয়।
(খ) বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভঃ
পেপার বুকের মাধ্যমে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভে দূর্লভ সুযোগ পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে ই-বুকের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অন-লাইনের অন্যান্য অজস্র ডকুমেন্টস এর মত ভার্চ্যুয়াল বা অবাস্তব।
(গ) কপি-রাইট জটিলতাঃ
কপি রাইট সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সকল ওয়েবসাইটে ই-বুকের প্রবেশাধিকার থাকে না, ফলে পাঠক কখনো কখনো জটিলতায় নিপতিত হয়। পেপার-বুকের কপি-রাইট ইস্যুটি অত্যন্ত স্পষ্ট এবং সম্পুর্ণ ঝামেলা মুক্ত।
(ঘ) স্বাস্থ্যসম্মত পড়াঃ
চোখের জন্য ক্ষতিকর নয় বিধায় পেপার বুক পাঠকদের স্বাস্থ্যসম্মত পড়ার নিশ্চয়তা দিতে পারে।
(ঙ) নিরবচ্ছিন্ন পড়ার সুযোগঃ
প্রযুক্তিগত কিংবা বিদ্যুৎ/ইন্টারনেট কানেকশন সংক্রান্ত কোন ধরণের জটিলতার আশংকা না থাকায় পেপার-বুকের পাঠকেরা নির্বিঘ্ন/নিরবচ্ছিন্ন পাঠের আনন্দ লাভ করে।
(চ) স্থায়িত্বঃ
উন্নতমানের শেলফ ব্যবহার করে দীর্ঘকাল পেপার বুক সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। ই-বুকের দীর্ঘ স্থায়িত্ব নিশ্চিত নয়, কেননা ডিজিটাল ডিভাইস অকার্যকর হলে কিংবা কোন কারণে ওয়েবসাইটের ডাটা বিনষ্ট হয়ে গেলে ই-বুক পড়া বাধাগ্রস্ত হয়।
(ছ) প্রযুক্তি পরিবর্তনশীলতাঃ
পেপার বুক প্রযুক্তিনির্ভরশীল না হওয়ায় প্রযুক্তি পরিবর্তনশীলতার কারণে পাঠকেরা সফটওয়ার আপ-ডেট কিংবা নতুনভাবে ইনস্টল করার মত অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় না।
(জ) বই কেনা বেচাঃ
নতুন পেপার বুক কেনার মাধ্যমে বিক্রেতাসহ উপস্থিত অন্যান্য ক্রেতার সাথে মতবিনিময়ের সুযোগ ঘটে। তাছাড়াও স্বল্প মূল্যে ব্যবহ্রত পুরাতন পেপার-বুক কেনার জন্য লাইব্রেরী সুবিধা রয়েছে। ই-বুকের ক্ষেত্রে তেমন সুযোগ নেই।
(ঝ) ব্যয়-সাশ্রয়ীতাঃ
পেপার-বুক পাঠকদের ব্যয়-বহুল ই-রিডার কেনা কিংবা ডিভাইজ পরিচালনা/মেরামত/সংরক্ষণের মত ব্যয়ের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়াও পেপার-বুকের রি-সেল ভ্যালু আছে, যা ই-বুকের ক্ষেত্রে অকল্পনীয়।
(ঞ) অর্জন করার আনন্দঃ
পেপার-বুক পাঠকের মনে এক ধরণের অ্যাডভেঞ্চার কাজ করে কত পাতা পড়া হয়েছে, আর কত পাতা পড়ার মাধ্যমে বইটি পড়া শেষ হবে। ই-বুকের ক্ষেত্রে এ ধরণের অনুভূতি কাজ করে না।
বই মানুষের মনের চোখ খুলে দেয়, আর মনের সাথে জড়িয়ে আছে আবেগ। ই-বুক পাঠকের জ্ঞানের তৃষ্ণা মিটাতে যতটা পারদর্শী, মনের তৃষ্ণা মিটাতে তেমনটি নয়। গ্রাহকের হ্রদয় স্পর্শ করতে পেপার বুক বরাবরই এগিয়ে।
নিঃসন্দেহে ই-বুক পাঠকদের বই পড়াকে সহজ এবং সাশ্রয়ী করে দিয়েছে। কিন্তু পাঠকের মানবিক সম্পৃক্ততাকে সমুন্নত রাখা সম্ভব হয়েছে কি? “দৃষ্টিপাত”এর লেখক যাযাবর-এর ভাষায় “আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ।
তাতে আছে গতির আনন্দ, নেই যতির আয়েস।” আবেগপ্রবণ পাঠকের কাছে পেপার বুকের চাহিদা কখনো নিঃশেষ হওয়ার নয়। এটা সত্য যে, পেপার-বুকের সহযাত্রী হিসেবে ই-বুক নিজের জায়গা করে নিচ্ছে। ই-বুকের অগ্রযাত্রা যতই তীব্র হোক না কেন অদূর ভবিষ্যতে পেপার-বুকের বিলুপ্তি কিংবা অপমৃত্যুর কোন সম্ভাবণা দেখা যায় না।
তথ্যসূত্রঃ
https://www.popsci.com/read-more-books/
https://www.lifehack.org/articles/lifestyle/10-benefits-reading-why-you-should-read-everyday.html
https://wordsrated.com/global-book-sales-statistics/
https://www.qinprinting.com/blog/ebook-or-paperback/
https://penlighten.com/why-ebooks-will-never-replace-real-books