‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স” এর আবির্ভাব বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। মানুষের মধ্যে এমন উচ্চাবিলাসী ধারণা তৈরি হয়েছে যে, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) মানুষের কল্পনাকে মানুষের চেয়েও অধিকতর দক্ষতা এবং সঠিকতার সাথে বাস্তবে রুপ দিতে সক্ষম। তবে এমনতর উৎসাহ ও উদ্দীপনাময় বিপরীতে একটি নেতিবাচক তথা ভয়ংকর জনমতও বিশ্বব্যাপী দানা বেঁধে উঠেছে।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিভিন্ন সেক্টরে মানুষের প্রতিদ্ধন্ধী বা বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে মানব জাতির অস্তিত্বের জন্য মারাত্মক হুমকী হিসেবে দেখা দিতে পারে। বিজ্ঞান কিংবা প্রযুক্তির আবিষ্কার নিয়ে প্রাগৈতিহাহিক যুগ থেকে চলমান বিতর্ক “আশিবার্দ নাকি অভিশাপ” আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স-কে ঘিরে আবারো সামনে এসেছে।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
“আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স” বা “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা” সহজ অর্থে মানুষের বুদ্ধিকে মেশিন তথা কম্পিউটারের মধ্যে সঞ্চালন করে মানুষের ন্যায় বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকান্ড সম্পন্ন করা।
মানুষের জন্মগত কতিপয় বৈশিষ্ট্যাবলী রয়েছে যার দ্বারা উপলব্দি করা, পার্থক্য করা কিংবা ভাল-মন্দ যাচাইয়ের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়। মানুষের ন্যায় বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ করার লক্ষ্যে মেশিনকেও সে সকল বৈশিষ্ট্য অর্জনের প্রয়োজন হয়।
“আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স” প্রোগ্রামিং-এর ক্ষেত্রে তেমনি কতিপয় বৈশিষ্ট্যে বা দক্ষতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়; যেমনঃ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষমতা (Learning), যৌক্তিকতা যাচাই ক্ষমতা (Reasoning), নিজে নিজে সংশোধনের ক্ষমতা (Self-correction), সৃজনশীলতা (Creativity) ইত্যাদি।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন গবেষক, বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিবিদগণ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম এর বহুমাত্রিক প্রকারভেদ/বিভাজন নিয়ে কাজ করেছেন। আমেরিকার মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রফেসর Arend Hintze কার্যক্রমের ভিত্তিতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম এর চারটি টাইপ/শ্রেণী প্রস্তাব করেছেনঃ
টাইপ-১: রি-এক্টিভ মেশিন- বিশেষ কোন কার্যক্রম সম্পাদনে ব্যবহ্রত হয় এবং এর কোন মেমরী থাকে না।
টাইপ-২: লিমিটেড মেমরী- এ সিস্টেমের মেমরী থাকে, ফলে ভবিষ্যত সম্পর্কে ধারণা প্রদান করতে পারে।
টাইপ-৩: থিউরি অব মাইন্ড- এটি সোস্যাল ইন্টেলিজেন্স বা মানবিক গুণাবলী সম্বলিত, ফলে মেশিন মানুষের ন্যায় কাজ করতে পারে।
টাইপ-৪: সেলফ-এওয়ারন্যাস- মেশিন নিজের অবস্থা/অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাবে, এখনো এ সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
দূর্বল আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সঃ সীমিত পরিসরে কিংবা কোন বিশেষ কাজে যেমন- ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট কিংবা ভার্চ্যুয়াল পারসোনাল এসিস্ট্যান্স তৈরিতে এর ব্যবহার হয়।
শক্তিশালী আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স- এ সিস্টেম মূলতঃ Artificial General Intelligence (AGI), নামে পরিচিত, যা মানুষের মস্তিষ্কের ন্যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হয়।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম মূলতঃ বিভিন্ন প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি হয়। আবির্ভাবের পর থেকে নিরন্তর এর উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, ফলে এ সিস্টেমে ব্যবহ্রত প্রযুক্তির তালিকাও দীর্ঘতর হচ্ছে।
সিস্টেমটির বহুল পরিচিত প্রধান প্রধান প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছেঃ অটোমেশন (Automation), মেশিন লার্নিং (Machine learning),মেশিন ভিশন (Machine vision), ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং (Machine vision), রোবোটিক্স (Robotics), সেলফ ড্রাইভিং কার (Self-driving cars), টেক্সট,ইমেজ এবং অডিও জেনারেশন (Text, image and audio generation) ইত্যাদি।
অনেকের মতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Artificial Intelligence-AI) মানবজাতির জন্য আশির্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে দক্ষতা উন্নয়ন, সময় এবং ব্যয় হ্রাসের অফুরান সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এ প্রযুক্তির কল্যাণে কম্পিউটরের দ্বারা অত্যন্ত জটিল এবং কঠিন কাজ সহজে এবং মানুষের চেয়ে অধিকতর নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার বিভিন্ন সেক্টরে ক্রমাগতভাবে বিস্তৃত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে অভাবনীয় সুফল পাওয়া গিয়েছে।
AI in healthcare- IBM Watson এর কল্যাণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দক্ষতার উন্নয়নসহ স্বল্প খরচে নির্ভুলভাবে রোগ-নির্ণয় ও নিরাময় করা সম্ভব হচ্ছে।
AI in business- Chatbots, ChatGPT এর মত আর্টিফিসিয়াল প্রযুক্তিসমূহ Customer Relationship Management (CRM) এর মানোন্নয়নসহ বিজনেস মডেল, প্রোডাক্ট ডিজাইনে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে।
AI in education- ChatGPT, Bard প্রযুক্তিসমূহ ছাত্রদের মূল্যায়ণ পদ্ধতি অটোমেটেড করাসহ শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
AI in finance- Intuit Mint কিংবা TurboTax এর মত পার্সোনাল ফাইনান্স এপ্লিকেশনগুলি গ্রাহক ডাটা সংগ্রহ ও পরামর্শ প্রদানের মত কার্যক্রম দ্বারা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় অভাবনীয় উন্নয়ন সাধন করেছে।
AI in law– ল’ফার্মগুলি মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে অটোমেটেড পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ে এবং স্বল্পতম ব্যয়ে গ্রাহককে উন্নততর সেবা প্রদান করছে।
AI in entertainment and media- টার্গেটেড এডভার্টাইজিং, উন্নতমানের কন্টেন্ট তৈরি, ফ্রড ডিটেকশন, স্ক্রীপ্ট তৈরি কিংবা সিনেমা/ ডকুমেন্টরী তৈরির জন্য আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স অফুরাণ সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
AI in software coding and IT processes– আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স টুলস ব্যবহার করে সহজে এপ্লিকেশন কোড তৈরি এবং বিভিন্ন আই টি প্রসেস অটোমেটেড করা সম্ভব হচ্ছে।
Security aspects of AI – Security Information and Event Management (SIEM) সফটওয়ারে মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।
AI in manufacturing– ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের কঠিন এবং জটিল কাজে robots এবং বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ কাজে cobots ব্যাপক ভূমিকা পালন করে চলেছে।
AI in banking– গ্রাহক সেবা উন্নয়নে chat-bots এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে খরচ হ্রাসে virtual assistants গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
AI in transportation– গ্রাহক সেবা উন্নয়নে chat-bots এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে খরচ হ্রাসে virtual assistants গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের খাত-ভিত্তিক ব্যাপক সম্ভাবনা ছাড়াও কার্যক্রমভিত্তিক বেশ কিছু অনন্য সুবিধা রয়েছে যার কারণে দ্রুততার সাথে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেমন-
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রচারণা মাধ্যম থেকে জানা যায় যে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানবজাতির জন্য অফুরান সম্ভাবনা তৈরির পাশাপাশি ভয়ংকর ঝুঁকি/চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। সূচনালগ্নে সম্ভাবনা বা আলোকিত দিকটি বিশেষভাবে আলোচিত হলেও ঝুঁকি/চ্যালেঞ্জের বিষয়াদি তেমন ফোকাস করা হয়নি।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সবচেয়ে নেতিবাচক দিক হল অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি মানুষের সহায়ক না হয়ে প্রতিযোগী বা প্রতিস্থাপক হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। ফলে মানুষের কর্মক্ষেত্র সংকুচিত/বিলুপ্ত হওয়া ছাড়াও অনেকের মতে ভবিষ্যতে মানব জাতি অস্বিত্ব সংকটে নিপতিত হতে পারে।
স্বচ্ছতার অভাব (Lack of Transparency)- Deep learning models এর মত প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাপ্য সিদ্ধান্তের বিষয়ে মানুষের পক্ষে আগাম ধারণা পাওয়ার সুযোগ না থাকায় প্রযুক্তিটির প্রতিআস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপন খুবই কঠিন ।
পক্ষপাতিত্ব কিংবা বৈষম্য করা (Bias and Discrimination)- পক্ষপাতমূলক ডাটা কিংবা ডিজাইনের মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
গোপণীয়তা (Privacy Concerns)- আর্টিফিসিয়াল প্রযুক্তি বিগ-ডাটা নির্ভর। এক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ ব্যাক্তিগত ডাটার সুরক্ষা কিংবা গোপণীয়তার বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখা দিবে।
নৈতিক দিক (Ethical Dilemmas)- আর্টিফিসিয়াল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যথাযথ নৈতিক অবস্থান নিশ্চিত করা অত্যন্ত দূরহ কাজ।
নিরাপত্তা ঝুঁকি (Security Risks)- জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন হ্যাকার বা ফিশারদের থেকে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের নিরাপত্তা ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ক্ষমতা কেন্দ্রিভূত হওয়া (Concentration of Power)- ব্যয়বহুল আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তির বিশ্বের উন্নত গুটি কয়েক দেশ এবং স্বল্প সংখ্যাক বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
অতি-নির্ভরশীলতা (Dependence on AI)- আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের উপর অতি-নির্ভরশীলতা থেকে মানুষের সৃজনশীলতা ও বিশ্লেষণী সক্ষমতা হ্রাসের আশংকা রয়েছে।
মানুষের চাকরীর সুযোগ নষ্ট হওয়া (Job Displacement)- শিল্প কারখানা ব্যাপক হারে অটোমেশন হলে চাকরীর সুযোগ সংকুচিত হব বিশেষ করে স্বল্প এবং অদক্ষ শ্রম শক্তি বেকার হয়ে পড়বে।
অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি (Economic Inequality)- আর্টিফিসিয়াল প্রযুক্তি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ প্রযুক্তির সুফল ধনীরা ভোগের সুযোগ পেলেও বিশাল দরিদ্র জনগোষ্টি তা থেকে বঞ্চিত থাকবে। ফলে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাবে।
লিগ্যাল এবং রেগুলেটরি চ্যালেঞ্জ (Legal and Regulatory Challenges)- প্রচলিত লিগ্যাল এবং রেগুলেটরি ফ্রেম-ওয়ার্কের মাধ্যমে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বিধায় বিশেষ ফ্রেম-ওয়ার্ক তৈরি করতে হবে।
অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা (AI Arms Race)- বিশ্বে আর্টিফিসিয়াল প্রযুক্তিভিত্তিক অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা তীব্র হবে।
সামাজিক যোগাযোগ বিনষ্ট হওয়া (Loss of Human Connection)- আর্টিফিসিয়াল প্রযুক্তিভিত্তিক যোগাযোগের আগ্রাসনে মানুষের সামাজিক বা পারস্পরিক যোগাযোগ কমে যাবে।
ভুল তথ্য/বানানো তথ্য (Misinformation and Manipulation)- Deep Fakes এর মত প্রযুক্তি ভুল/বানানো তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে সমাজে বিরাট নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
অপ্রত্যাশিত ঘটনা (Unintended Consequences)- মানুষের সুপারভিশনের সুযোগ না থাকায় আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স জটিল বিষয়ে অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত আসতে পারে, যা বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়া (Existential Risks)- ধারনা করা হচ্ছে যে, Artificial General Intelligence (AGI) মানুষের বুদ্ধিমত্তাকেও ছাড়িয়ে যাবে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে মানব জাতির অস্তিত্ব সংকটে পড়ার আশংকা দেখা দিবে।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর নেতিবাচক/ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে বিশ্বব্যাপী সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিবিদ/গবেষকদের মধ্যেও জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বখ্যাত বিজনেস জায়েন্ট Elon Musk সহ বিশ্বের নামীদামি ১০০০ টেক-লীডার, গবেষক এবং প্রযুক্তিবিদের একটি টিম মার্চ/২০২৩ মাসে একটি খোলা চিঠির মাধ্যমে মানব জাতির জন্য আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সম্ভাব্য ঝুঁকি/হুমকী সম্পর্কে সতর্কবার্তা জারি করেছেন।
তাদের মতে ইতোমধ্যে মার্কেটে প্রচলিত আর্টিফিসিয়াল প্রযুক্তির সম্ভাব্য বিরুপ প্রভাব সম্পর্কে ধারণা লাভের পর পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ সমীচীন। এ চিঠিতে অন্ততঃ ০৬ মাসের জন্য আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সংক্রান্ত উদ্ভাবন কার্যক্রম স্থগিত রাখার আহবান জানানো হয়েছে।
স্বল্প-মেয়াদী ঝুঁকি (ভুল/নকল তথ্যাদি সরবরাহ)– মেশিনের ক্ষেত্রে শতভাগ নির্ভুল থাকার গ্যারান্টি দেয়া সম্ভব নয়। কোন কারণে ভুল কিংবা নকল রিপোর্ট/তথ্যাদি ডেলিভারী হলে মারাত্মক নেতিবাচক/ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
মধ্যম-মেয়াদী ঝুঁকি (চাকরী হারানো) -আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি যেমন GPT-4 শ্রমিকের সহায়ক শক্তি হলেও ভবিষ্যৎ Open AI প্রযুক্তি শ্রমিকের বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। ফলে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স “job killers” হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে।
দীর্ঘ-মেয়াদী ঝুঁকি (নিয়ন্ত্রণ হারানো)– আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স অকল্পনীয় ক্ষমতাধর একটি সিস্টেম, যা নিজে নিজে কম্পিউটিং কোড লিখনের সক্ষমতা রাখে। ফলে ভবিষ্যতে তা মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যেতে পারে, যা মানব জাতির অস্তিত্বকে হুমকীর মুখে ঠেলে দিতে পারে।
আর্টিফিশিয়াল সম্পর্কে সবচেয়ে ভয়াবহ বার্তা দিয়েছেন গুগুল এর প্রাক্তন প্রধান বিজনেস অফিসার এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এক্সপার্ট Mo Gawdat। তার মতে মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, যার মাত্রা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিপর্যয়, ভূ-রাজনৈতিক জটিলতা, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, ক্লাইমেট চেঞ্জের চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের আগ্রাসন থেকে অনাগত শিশুদের বাঁচানোর লক্ষ্যে পিতা-মাতাদের আপাতত সন্তান জন্ম না দেয়ার আহবান জানিয়ে বলেছেন-“The risks are so bad, in fact, that when considering all the other threats to humanity, you should hold off from having kids if you are yet to become a parent”.
নতুনভাবে উদ্ভাবিত যেকোন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মুদ্রার এপিট-ওপিটের মত ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলি বিরাজমান থাকে। প্রযুক্তি আশির্বাদ কিংবা অভিশাপ যে কোন রুপে আবির্ভূত হতে পারে। অর্থাৎ সকল প্রযুক্তি সবখানে সমভাবে ইতিবাচক ফলাফল প্রদানে সমর্থ হয় না।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে বিশ্বের ধনী দরিদ্র সকল দেশ বা জনগোস্টি সমভাবে লাভবান হবে তা প্রত্যাশা করা যুক্তিযুক্ত নয়। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মানব জাতির কল্যাণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এর উপযুক্ত এবং যৌক্তিক ব্যবহার অত্যাবশ্যক।
আর্টিফিসিয়াল প্রযুক্তি রোবট ব্যবহার করে ধনী এবং শিল্পোন্নত দেশসমূহ লাভবান হলেও তা স্বল্প-উন্নত বা অনুন্নত দেশসমূহের জন্য মোটেও কল্যাণকর নয়। সে সকল দেশে রোবট ব্যবহার করা হলে শ্রম-নির্ভর শিল্পখাতে কর্মরত বিপুল অদক্ষ/আধা-দক্ষ জনগোস্টি কর্মহীন হওয়ার আশংকা রয়েছে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেস প্রযুক্তির ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় দিক রয়েছে। দক্ষতার সহিত কাজে লাগানো সম্ভব হলে তা হতে পারে আশির্বাদ, অভিশাপ নয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যেকোন নতুন আবির্ভাবে সর্বদা যুগপৎভাবে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক থাকে।আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) প্রযুক্তি এ বিতর্কের উর্ধ্বে নয়। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়নের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে; বিপরীতে বিপুল জনশক্তি কর্মহীন হওয়া, সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি এমনকি মানবজাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশংকাও রয়েছে। সম্ভাবনাময় আরটিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে মানব কল্যাণে আশির্বাদ হিসেবে পাওয়ার জন্য এর উপযুক্ত এবং ব্যবহার যৌক্তিক নিশ্চিত করা অপরিহার্য্য।
তথ্য সূত্রঃ
www.euronews.com
www.techtarget.com
www.nytimes.com
www.forbes.com
Excellent write up, educative and informative.