কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে স্থায়ী চুক্তিবদ্ধ না হয়ে স্বাধীনভাবে চুক্তিভিত্তিক কাজ করা হলো ফ্রিল্যান্সিং। এটা অনলাইনেও হতে পারে অথবা অফলাইনেও হতে পারে। যারা ফ্রিল্যান্সিং করে তাদের বলা হয় ফ্রিল্যান্সার। ছাত্রজীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে টাকা উপার্জন করা বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে সাধারণ ঘটনা।
“ছাত্রজীবন সুখের জীবন যদি না থাকে পরীক্ষা” –এরকম একটা প্রবাদ লোকমুখে শোনা যায়। সত্যি তাই, পরীক্ষা না থাকলে কোন পড়াশোনা করা লাগত না। ছাত্রজীবন অনেক সুখের হতো সবার জন্য। কিন্তু, ছাত্রজীবন মানে কি শুধুই পরীক্ষা আর পড়াশোনা?
আপনার চারপাশের অনেকেই দেখবেন ছাত্রজীবন থেকেই ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে টাকা উপার্জন শুরু করে দেয়। ভবিষ্যত গোছানোর সর্বোত্তম সময় ছাত্রজীবন।
আপনি সঞ্চয়ী মনোভাবাপন্ন হিসেবে নিজেকে ছাত্রজীবন থেকে যদি গড়ে তুলতে পারেন, ব্যক্তিগত জীবনে আপনি একজন সফল সঞ্চয়কারী হতে পারবেন।
সাধারণত ছাত্র-ছাত্রীদের টাকা উপার্জনের কথা বললেই তাঁদের মাথায় টিউশনের কথা ঘুরপাক খেতে থাকে। অথচ, এটা ছাড়াও অনেক কাজের ক্ষেত্র রয়েছে আমাদের দেশে।
আজকে কথা বলবো কিভাবে আপনি পড়াশোনার পাশাপাশি অল্প অল্প করে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে টাকা উপার্জন করতে পারেন এবং সঞ্চয় করতে পারেন সেই বিষয়ে।
ছাত্রজীবনে উপার্জনের হাজারটা উপায় রয়েছে। তার মধ্যে সহজ এবং কম কষ্টসাধ্য কয়েকটি বিষয় নিজে আজকে কথা বলা যাক।
শুনতে অদ্ভূত লাগলেও এটা সত্য যে প্রতিবছর ফ্রিল্যান্সিং কাজের সবচেয়ে বড় ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসটা ট্রান্সলেশন প্রজেক্টই ধরে রেখেছে।
পৃথিবীতে এত এত ভাষা রয়েছে যে প্রতিদিনই এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় অনুবাদের জন্য প্রচুর কাজ পাওয়া যায়। এখন কথা হচ্ছে আমরা তো বাঙালি।
সাধারণত বাংলা এবং ইংরেজি এই দুইটা ভাষায় দক্ষ হয়ে থাকি আমরা। অন্য ভাষায় দক্ষতা থাকলে আপনাকে অভিনন্দন। আপনার কাজের ক্ষেত্র আরেকটু বেড়ে গেলো।
যাদের দক্ষতা নেই, চিন্তার কোনো কারণ নেই। ইংরেজি থেকে বাংলা ট্রান্সলেশনের অনেক প্রজেক্ট আপনি খুঁজে পাবেন। এর জন্য রয়েছে অসংখ্য ফ্রিল্যান্সিং সাইট।
এছাড়া দেশি বিভিন্ন ব্লগে আপনি অনুবাদকের কাজ করে ভালো সম্মানী পেতে পারেন। একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। যারা ভাবছেন গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে খুব সহজেই কাজগুলো করে ফেলতে পারবেন, তাদের জন্য সমবেদনা।
গুগল ট্রান্সলেটর আপনাকে শুধুমাত্র আক্ষরিক অনুবাদ কর দিতে সক্ষম, ভাবানুবাদ নয়। ট্রান্সলেশন প্রজেক্টের মূল কাজই হলো ভাবানুবাদ করা যেটা শুধুমাত্র যে ভাষায় অনুবাদ করা হবে,সে ভাষায় দক্ষ স্থানীয় ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব কিংবা অনেক দক্ষ ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব।
বাংলাদেশ বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ। এই দেশে বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষ্যে মেলা লেগেই থাকে। খোঁজ রাখুন সেসব মেলার ব্যপারে।
বাংলাদেশের রাজধানীর কর্মঠ ছাত্র-ছাত্রীরা বাণিজ্য মেলা, বৈশাখি মেলা সহ নানা রকমের মেলার সময় স্টলে পার্ট টাইম সেলারের কাজ করে বড় অংকের টাকা উপার্জনের সুযোগ পান।
এই কাজে যেমন আনন্দ রয়েছে,দেশ বিদেশের নানা স্থানের মানুষের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের সুযোগ রয়েছে,একই সাথে রয়েছে আপনার যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধির অমূল্য সুযোগ।
এছাড়া বিভিন্ন প্রোডাক্টের প্রাইস লাইন আপ সম্পর্কে শক্ত ধারণা সৃষ্টি হবে আপনার মধ্যে যেটা ভবিষ্যত জীবনে কাজে লাগবে।
প্রতিবছর বিভিন্ন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান, সেটা হোক সরকারি বা বেসরকারি বছরব্যপী জরিপের কাজ করে থাকে। আর এই জরিপের কাজ করার জন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
তবে, অন্য সব কাজের তুলনায় এই কাজে পরিশ্রম বেশি কারণ এই ধরণের কাজ ফিল্ড ওয়ার্কের আওতায় পড়ে। আপনি জরিপ কাজে অংশ নিলে মাইক্রোসফট এক্সেলের কাজ শিখে ফেলার সুবর্ণ একটা সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ বাংলা আর্টিকেল লিখে আয় করুন -ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার
এছাড়া, আপনি যে বিষয়ে জরিপ করবেন, সেই বিষয়ে আপনার একটা ধারণা তৈরী হবে খুব সহজেই। জরিপ কাজে অংশ নেওয়ার ফলে আপনার মধ্যে স্থানীয় অবস্থান সংক্রান্ত ভৌগলিক জ্ঞান অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে এবং একটা অন্যরকম যোগাযোগ মাধ্যমে সৃষ্টি হবে।
একই সাথে বোনাস হিসেবে কমিউনিকেশন স্কিল বৃদ্ধি তো আছেই। তবে, এই সব কাজে পরিশ্রম বেশি, টাকা তুলনামূলক কম।
তাই, দেখে শুনে ভালো প্রতিষ্ঠান কিংবা কোম্পানির জরিপ কাজ হলে তখনই অংশ নেওয়া উত্তম। অন্যথায় পরিশ্রমের তুলনায় উপার্জন অনেক কম হতে পারে।
বর্তমান যুগ অনলাইনের যুগ বললে খুব একটা ভুল হবেনা। অনলাইন নির্ভরতার প্রমাণ আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের দিকে তাকালেই দেখতে পাবো আমরা।
মানুষ দিন দিন প্রচলিত ই-কমার্স অ্যাপ বা সাইটগুলোর উপর নির্ভর হলেও ফেসবুক সহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেও বর্তমানে মানুষ এক ধরণের ই-কমার্স সাইট হিসেবে ব্যবহার করছে।
ফেসবুকে গ্রুপ বা পেইজ ক্রিয়েট করে খুব সহজেই আপনি আপনার প্রোডাক্ট সেল করতে পারেন।এতে আপনি যে সুবিধাগুলো পাবেন-
এবার আসা যাক কি সেল করবেন সে বিষয়ে। আপনি যদি ভালো রান্না পারেন, হোম মেড খাবার অনলাইন শপের মাধ্যমে ডেলিভারি দিতে পারেন।
আপনি ইলেকট্রনিক্স আইটেমের ব্যবসা করতে পারেন।শীতকালে সিজনাল হুডির ব্যবসা এবং গরমের সময় টি শার্টের ব্যবসা করতে পারেন।
আপনার হস্তশিল্প কেনো শুধু আপনার শো কেসেই আটকে থাকবে? বেশি বেশি করে তৈরী করে বিক্রির মাধ্যমে ভালো অংকের টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
আপনি অনলাইনে যেকোনো জিনিস ই বিক্রি করতে পারেন কারণ এটা সম্পূর্ণ মুক্ত একটি প্লাটফর্ম। লেনদেনের ব্যপারে একটু সতর্ক থাকতে হবে এক্ষেত্রে,নহলে প্রতারক কাস্টমারারের খপ্পড়ে পড়লে প্রতারিত হওয়ার একটা সম্ভবানা থেকে যায়।
প্রত্যেকটি পণ্যের ব্রান্ডের অসংখ্য শো রুম থাকে শহরগুলোতে।আপনি জুতা বলেন,মোবাইল ফোন বলেন, ড্রেস বলেন সব আইটেমর জন্যই প্রত্যেকটি শহরে অসংখ্য আউটলেট রয়েছে।এসব আউটলেটে তারা বিক্রয়কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে ভালো বেতনের বিনিময়ে।
আপনি এসব শো রুমে বিক্রির মাধ্যমে অতিরিক্ত কমিশন প্রাপ্তির সুযোগ পেয়ে যাবেন। সেই সাথে শো রুমে কাজ করার সময় আপনার নাস্তার খরচ,ড্রেস আপের খরচ ও কোম্পানি বহন করবে।
রেস্টুরেন্টের সংখ্যার কথা বিবেচনা করলে আমরা চাইলে প্রত্যেকেই কিন্তু রেস্টুরেন্টে কাজ করতে পারি। অনেকের ভিতর একটা সংকোচ কাজ করে আমি সমাজের ভালো পরিবারের ছেলে হয়ে কেনো রেস্টুরেন্টে কাজ করবো?
রেস্টুরেন্টে কাজ করলে আপনি ওয়েটার হিসেবে কাজ করতে পারেন। ভালো অংকের বেতনের পাশাপাশি কাস্টমারদের কাছ থেকে টিপস পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।
আপনি যদি বিনয়ী স্বভাবের হয়ে থাকেন, নরম সুরে হাসির রেখা টেনে কথা বলার দারুণ ক্ষমতা থাকে, রেস্টুরেন্টে কাজ করা আপনার জন্য একদম পার্ফেক্ট। অনেকে ফিল্ড ওয়ার্কের চেয়ে এইসব কাজে বেশি অগ্রাধিকার প্রদান করে কারণ কায়িক পরিশ্রম যথেষ্ট কম এখানে।
বিভিন্ন ই কমার্স সাইট, কুরিয়ার ইত্যাদির ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কাজ করতে পারেন। ঢাকার ভিতরের ছাত্রদের জন্য দারুণ একটা কাজের সুযোগ এটা।
বাংলাদেশের অনেক মানুষ এখন হোম ডেলিভারি নিচ্ছে। সেজন্য প্রচুর ডেলিভারি ম্যান প্রয়োজন হয়।আপনি গ্রাহকের কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি ঘরের দরজায় পৌঁছে দিয়ে একজন সফল ডেলিভারি ম্যান হয়ে উঠতে পারেন এবং সেই সাথে উপার্জন করতে পারেন ভালো অংকের টাকা।
আপনি যদি আরামপ্রিয় হন, ঘরে বসে কাজ করতে পছন্দ করেন, তাহলে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য পার্ফেক্ট জব। আমি সবার প্রথমে ট্রান্সলেশন প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলে ফেলেছি।
এটা ছাড়াও আরও অসংখ্য ফ্রিল্যান্সিং কাজ রয়েছে। আপনি আপনার ফিউচার প্রফেশন রিলেটেড অসংখ্য কাজ ফ্রিল্যান্সিং সাইট গুলোতে খুঁজলে পেয়ে যাবেন।
Upwork, fiverr এবং freelancer হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। এখানে কাজ শুরু করা সত্যি খুব কঠিন,কিন্তু কাজ শুরু করার পর কোয়ালিটি ধরে রাখতে পারলে আপনি সফল হতে পারবেন এবং দিন দিন উপার্জন অনেক বেড়ে যাবে।
বিভিন্ন স্টেশনারি শপে,প্রকাশনা সংস্থায় প্রচুর টাইপিস্টের প্রয়োজন হয়।আপনি টাইপিং এ যদি ভালো হয়ে থাকেন,স্পিড যদি মোটামোটি হয়,তাহলে টাইপিং এর মাধ্যমে বেশ ভালো ইনকাম করতে পারবেন আপনি।
বিভিন্ন স্টেশনারি শপে চাকরির আবেদন ফর্ম, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ফর্ম পূরণের মাধ্যমে আপনি প্রুচর ইনকাম করতে পারেন।এসব কাজের জন্য চটপটে লোকের খুব অভাব।আপনি চটপটে স্বভাবের হলে,ইংরেজিতে মোটামোটি দক্ষতা থাকলে এসব কাজ করার মাধ্যমে বেশ ভালো রকমের ইনকামের রাস্তা খুলে যেতে পারে।
এছাড়াও আপনি একটু নজর রাখলেই দেখতে পারবেন চারপাশে কাজ করার অসংখ্য ক্ষেত্র রয়েছে।আপনি পড়াশোনার পাশাপাশি সময় বের করে সেসব কাজে মনোনিবেশ করে অল্প অল্প করে টাকা উপার্জন করতে পারেন।
মনে রাখবেন,
“ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল।”
মন্তব্য লিখুন