অনলাইন মার্কেটিং জগতে ইমেইল মার্কেটিং এখন দেশে বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। আমরা নিজেরাও এখন প্রতিদিন বিভিন্ন ধরণের ইমেইল পেয়ে থাকি যা কিনা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচারের উদ্দেশ্যেই আমাদের মেইলে আসে। সারা বিশ্বেই এখন এর মাধ্যমে পণ্য বা সেবা প্রোমোটের পরিধি দ্রুত বাড়ছে। এছাড়া বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেসেও ইমেইল মার্কেটিং এর উপর প্রচুর কাজ পাওয়া যায়। সুতরাং নিজের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা প্রোমোটের পাশাপাশি অনলাইনে আয়ের জন্যও ইমেইল মার্কেটিং গুরুত্বপূর্ণ।
২০২০ সনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০% ইন্টারনেট ব্যবহার করে। যার কারনে অনলাইন মার্কেটিং এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনলাইন মার্কেটিং এর অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে যেমন-
ক) সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং
খ) সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
গ) কন্টেন্ট মার্কেটিং
ঘ) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
ঙ) ইমেইল মার্কেটিং
চ) ভিডিও মার্কেটিং
ইমেইল মার্কেটিং কি?
ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যম গুলোর মধ্যে ইমেইল মার্কেটিং অন্যতম। যে মার্কেটিং বা প্রচারনা ইমেইলের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয় সেটাই ইমেইল মার্কেটিং।
ইমেইল বা ইলেক্ট্রনিক মেইল হলো ডিজিটাল ডিভাইসের মধ্যে বার্তা আদান-প্রদানের একটি পদ্বতি। ইমেইল মার্কেটিং হলো অনলাইন মার্কেটিং এর একটি অংশ, যেখানে ইমেইল যোগাযোগের মাধ্যমে ইন্টারনেট ইউজারদের নিকট পন্য বা সেবার তথ্য পৌছে দেয়া হয়।
ধরুন আপনার একটি বিজনেস আছে, এখন আপনি বিজনেসটিকে মার্কেটিং করতে চান বা প্রচার করতে চান অথবা আপনার বিজনেসের বিশেষ কোন অফার সম্পর্কে সবাইকে জানাতে চান। সেক্ষেত্রে আপনি ইমেইলকে বেছে নিতে পারেন আপনার প্রচার মাধ্যম হিসেবে।
ইমেইলমার্কেটিং এর মাধ্যমে অল্প সময়ে পণ্য বা সেবার ইনফরমেশন ইন্টারনেট ইউজারদের মধ্যে পৌছে দেয়া যায়। প্রয়োজন হয় শুধুমাত্র ইমেইল লিষ্ট ও টেম্পেলেট ডিজাইন।
কেন ইমেইল মার্কেটিং?
বিজনেস বা ওয়েবসাইট, ব্লগ , ম্যাগাজিন, ইবুক থেকে শুরু করে সকল প্রকারের সেবা বা পন্য অল্পসময়ে দ্রুত প্রচার করা সম্ভব ইমেইলের মাধ্যমে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের কোনো কোর্স বা সভা সম্পর্কে কয়েক হাজার থেকে লক্ষ ইন্টারনেট ইউজারকে একসাথে জানানো সম্ভব এই পদ্ধতিতে।
উদাহরণস্বরূপ, আমরা প্রায় সবাই প্রতিদিনই কিছু না কিছু প্রমোশনাল মেইল আমাদের ইনবক্সে পেয়ে থাকি। এগুলো সবই কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্লগের প্রচারের অংশ হিসেবে দিয়ে থাকে। বেশির ভাগই হয়তো আপনি কোনো ওয়েবসাইটের সাবস্ক্রিপশন বক্সে যে মেইলটি দিয়েছিলেন, সেই মেইল এড্রেসে আসে। আপনি মেইলে প্রবেশ করলে হয়ত নতুন অনেক মেইল দেখতে পান এবং পছন্দ হলে এগুলোর পেইজ ঘুরে আসেন বা তাদের পরবর্তী ধাপে সাড়া দেন। নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবার তথ্য ইমেইল টেকনোলজি ব্যবহার করে ইন্টারনেট ইউজারের নিকট পৌছে দেয়া এবং ইমেইল পড়ার পর রিডারকে পরবর্তী একশনে যেতে উদ্বুদ্ধ করার যাবতীয় প্রক্রিয়াই হলো ইমেইল মার্কেটিং।
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়েছে। ওয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, লিংডইন ব্যবহার করেও এখন অনেকে অনলাইন মার্কেটিং করে থাকেন। তাহলে ইমেইল মার্কেটিং কেন?
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সময় দেখা যায় ইউজার আপনার প্রচারমূলক পোস্ট স্কিপ করে চলে যেতে পারেন, বা কিছু মানুষ আছেন যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় অতো একটিভ না। সেক্ষেত্রে এটি হতে পারে একটি ভালো মাধ্যম। মেইল গিয়ে ইমেইল ইউজারের একাউন্টে জমা থাকবে, ফলে ইউজার সুবিধা সময়মতো এটা দেখতে পারবেন।
আবার অনেকে আছেন সোশ্যাল মিডিয়া ও ইমেইল সবরকম ভাবেই তার প্রতিষ্ঠান বা পণ্যের মার্কেটিং করে থাকেন। এটি আরো ভালো। কারন প্রচার বেশি হলে তবেই তো মানুষের কাছে পৌছবে।
আরও পড়ুনঃ
মাইক্রো ফ্রিল্যান্সিং: ঘরে বসে অনলাইনে অর্থ উপার্জন করুন
বাংলা আর্টিকেল লিখে আয় করুন ঘরে বসে -ফ্রিল্যান্সিং
পাঠক ফ্রেইন্ডলি আর্টিকেল রাইটিং টিপস
কিভাবে শুরু করবেন ইমেইল মার্কেটিং?
আমরা কম-বেশি সবাই ইমেইল পাঠাই। কিন্তু সাধারনত একবারে একটা মেইল একজনকেই পাঠানো হয়ে থাকে। তবে কিছুক্ষেত্রে আমাদের এক মেইল একাধিক জনকে পাঠাতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রাপকের স্থানে একাধিক ইমেইল এড্রেস লিখতে হয়।
এবার ধরুন আপনার একটি প্রতিষ্ঠান আছে যার গ্রাহক সংখ্যা পাঁচশতাধিক, আর প্রতিদিন অন্তত ১টা ইমেইল তাদের সবাইকে পাঠাতে হবে। তাহলে কি আপনি পারবেন প্রতিবার পাঁচশতাধিক ইমেইল এড্রেস লিখতে? আর যদি পারেনও তবু প্রতিনিয়িত নতুন গ্রাহক যেখানে যুক্ত হয় সেখানে এগুলো মেইনটেইন করা সম্ভব নয়।
যার কারনে ইমেইল মার্কেটিং এর জন্য ইমেইল সার্ভিস প্রোভাইডার ওয়েবাসাইট রয়েছে। জিমেইল, ইয়াহু বা হটমেইলেও এধরনের কিছু ব্যবস্থা আছে। তবে এই কোম্পানিগুলোর সীমাবদ্ধতা আছে। ইমেইল সার্ভিস প্রোভাইডার ওয়েবসাইট গুলোতে ইমেইল মার্কেটিং এর যাবতীয় সেবা প্রদানের জন্য ফ্রি ও প্রো প্লান রয়েছে। জনপ্রিয় কিছু ইমেইল সার্ভিস প্রোভাইডার হলো- Constant Contact, SendinBlue, Drip, HubSpot, ConvertKit, AWeber, Mailchimp ইত্যাদি।
ইমেইল লিষ্ট ও টেম্পেলেট ডিজাইনঃ
ইমেইল মার্কেটিংএর জন্য দুইটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ইমেইল লিস্ট সংগ্রহ করা এবং টার্গেট মার্কেটের উপর লক্ষ্য রেখে পন্য বা সেবার গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষনীয় তথ্য দিয়ে একটি টেম্পেলেট ডিজাইন করা।
ইমেইল লিস্ট সংগ্রহঃ
আপনার মেইলটা গ্রাহকের কাছে পাঠাতে হলে গ্রাহকের ইমেইল এড্রেসটাও জানা অবশ্যই জরুরি। সেক্ষেত্রে কয়েকটা উপায় আছে। একটি উপায় হচ্ছে মেইল এড্রেস ক্রয় করা। বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে বিভিন্ন দেশের মানুষের মেইল এড্রেসের লিস্ট পাওয়া যায়। যারা ইমেইল মার্কেটিং করেন তারা সাধারনত কিনে নেন।
তবে আরেকটি ভালো উপায় আছে, আর তা হলো নিজের ব্লগ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সংগ্রহ করা। আপনার ব্লগে বা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে আপনি ইমেইল সাবস্ক্রিপশন বক্স দিতে পারেন। সেখান থেকে যারা সাবস্ক্রিপশন করবে, তাদের ইমেইল আপনি কালেকশন করে নিতে পারেন। এরপর গ্রাহকের মেইল এড্রেসগুলি ছক আকারে সেভ করে রাখা হয়।
টেম্পেলেট ডিজাইনঃ
ইমেইলের মাধ্যমে মার্কেটিং এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্ট হলো টেম্পেলেট ডিজাইন করা। তবে টেম্পেলেট ডিজাইনের জন্য ইমেইল সার্ভিস প্রোভাইডার ওয়েবসাইটগুলোতে পর্যাপ্ত টুলস ও গাইডলাইন দেয়া থাকে। আপনি সেখান থেকে আকর্ষনীয় ডিজাইনের রেডি টেম্পেলেট ব্যবহার করতে পারেন অথবা নিজে তৈরি করে নিতে পারেন। ইমেইলমার্কেটিং এর ইউটিউবে ও গুগলে প্রচুর গাউডলাইন ভিডিও ও আর্টিকেল রয়েছে। আপনি সেগুলো অনুশীলন করে শুরু করতে পারেন।
পরিশেষে
বর্তমান সময়ে ইমেইল মার্কেটিং দেশে-বিদেশে খুবই জনপ্রিয়। যাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান আছে তারা তো বটেই বরং যাদের কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসা নেই তারাও অনলাইন মার্কেট প্লেসে এই কাজ করে ভালো অর্থ উপার্জন করছেন। পেশাদার পর্যায়ে কাজটি করতে গেলে অবশ্যই যথেষ্ট দক্ষ হওয়া প্রয়োজন। তবে, তুলনামূলক অল্প সময় ব্যয়ে এবং সহজে যে কেউ রপ্ত করতে পারে বলেই হয়তো এই কাজ এখন এতো বেশি জনপ্রিয়!
খুবই ভালো লিখেছেন
Very good