বর্তমানে বিজ্ঞাপন এবং বিপণনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে কপি রাইটিং। ইন্টানেটের কল্যাণে কপিরাইটিং জব এর পরিধি এখন আরও প্রসারিত হয়েছে। এ সম্পর্কে আগেই শুনেছেন। হয়তো, পরিষ্কার ধারনা নেই কীভাবে কপিরাইটিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে আয় করা যায়। চলুন জেনে নেয়া যাক কপিরাইটিং কি? কেন ও কীভাবে কপিরাইটিং জবের মাধ্যমে আয় করতে হয়?
“কপিরাইটিং” ও “কপিরাইট” শব্দ দুইটি শুনতে একই মনে হলেও কোনোভাবেই একটি আকেটির সাথে সম্পর্কিত নয়। দুইটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। কপিরাইট হলো একটি আইনি শব্দ যা মৌলিক সৃষ্টকর্মের মালিকনাকে বুঝায়। আর কপিরাইটিং হলো ব্যবসা, ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রমোশনাল কন্টেন্ট তৈরির যাবতীয় প্রক্রিয়া।
কপিরাইটিং ও কপিরাইটার
নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে জ্ঞান ও ভাষার সর্বোত্তম ব্যবহার করে ব্যবসায়ীদের জন্য প্রমোশনাল কন্টেন্ট তৈরি করার যাবতীয় কার্যক্রমই হলো কপিরাইটিং। এটি অনুপ্রেরণামূলক শব্দ ব্যবহার করে লেখার একটি ছন্দময় প্রক্রিয়া যা পাঠককে একটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে। যেমন- কোন পন্য বা সেবা ক্রয় করা, কোন লিংকে ক্লিক করা, ডোনেট করা ইত্যাদি।
সেলস লেটার গুরু হার্শেল গর্ডন লুইস একে, “ফোর্স কমিউনিকেশন” হিসেবে বর্ননা করেছেন।
কপিরাইটিং জব যারা করে তাদেরকেই বলা হয় কপিরাইটার। কপিরাইটার এমন একজন ব্যক্তি যিনি একটি ব্যবসা, ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রমোশনাল কন্টেন্ট তৈরি করেন যা ভোক্তাদের পণ্য বা সেবা ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করে।
উদাহরণ স্বরুপ- আমরা যখন একটি বই পড়ি, তখন একজন লেখকের কাজ পড়ি।
আমরা যখন কোনো ব্যবসা, প্রতিষ্ঠান, পন্য, সেবা অথবা ব্র্যান্ড সস্পর্কে লিখিত কন্টেন্ট পড়ি, তখন আমরা একজন কপিরাইটারের কাজ পড়ছি।
সহজে বলা যায়, কপিরাইটার হলো যে বা যারা লেখনীর মাধ্যমে পাঠকদের পন্য বা সেবা ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করে।
কপিরাইটারের কাজ কি?
কপিরাইটিং হলো বিজ্ঞাপন বা বিপণনের উদ্দেশ্যে কন্টেন্ট লেখার কাজ বা পেশা। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে “কপি” হলো একটি লিখিত কনটেন্ট, যার লক্ষ্য ব্র্যান্ড সচেনতা বৃদ্ধি করে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে একটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করা। কপিরাইটাররা গবেষনার মাধ্যমে এই লিখিত কন্টেন্ট তৈরি করে।
কপিরাইটার যে কাজ করেন তা মধ্যে বিজ্ঞাপন লেখা, প্রোডাক্ট রিভিউ কন্টেন্ট, স্লোগান ও ট্যাগলাইন লেখা, ল্যান্ডিং পেজ লেখা, ইমেইল ক্যাম্পেইনের জন্য ইমেইল লেখা, টিভি বা রেডিওর বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট লেখা, কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রেস বিজ্ঞপ্তি লেখা, ক্যাটালগ, বিলবোর্ড, ব্রুশিওর, ভিডিও বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট লেখা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে ফ্রিল্যান্স কপিরাইটার এর কাজের পরিধি আরও প্রসাররিত হয়েছে। যেমন- ল্যান্ডিং পেইজ, ওয়েব কন্টেন্ট, অনলাইন বিজ্ঞাপন, ইমেল, ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্ট ইত্যাদি।
একজন কপিরাইটার কত উপার্জন করে?
কন্টেন্ট রাইটিং জগতে কপিরাইটাররাই সর্বোচ্চ উপার্জন করে থাকে। Salary.com এর 29 আগস্ট, 2022 সালের তথ্য অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইন্টামেডিয়েট লেভলের একজন কপিরাইটার গড়ে $69,000 মার্কিন ডলার আয় করে। কিন্তু এর পরিসীমা সাধারণত $60,100 থেকে $78,700 এর মধ্যে পড়ে।
শিক্ষানবিস ফ্রিল্যান্স কপিরাইটার সাধারণত প্রতি ঘন্টায় প্রায় $20 অর্থাৎ বছরে প্রায় $42000 মার্কিন ডলার উপার্জন করে। অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্স কপিরাইটাররা প্রতি ঘন্টায় $50-$75 বছরে প্রায় $120000 ইউএস ডলার উপার্জন করতে পারে।
শিক্ষা, সার্টিফিকেশন, অতিরিক্ত দক্ষতা, আপনার পেশায় আপনি কত বছর অতিবাহিত করেছেন সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর নির্ভর করে আয়ের পরিসর ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।
কপিরাইটিং ও কন্টেন্ট রাইটিংয়ের পার্থক্য কী?
কপিরাইটিং ও কন্টেন্ট রাইটিং এর মধ্যে অনেক সাদৃশ্য থাকলেও দুইটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভিন্ন। একজন কন্টেন্ট রাইটার তার লেখার মাধ্যমে পাঠককে তথ্য সরবারহ করে। এর মাধ্যমে সে কোন কিছু জানান, শেখান ও বিনোদন দেন।
অপরদিকে, একজন কপিরাইটার সৃজনশীল ও ছন্দময় আকর্ষনীয় লেখার মাধ্যমে ভোক্তাদের কোন পণ্য বা সেবার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবারহ করে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে প্ররোচিত বা উদ্বদ্ধু করে। কপিরাইটিং এর প্রধান উদ্দেশ্যে হলো টার্গেট অডিয়েন্স বা ক্রেতার কাছে কোন পন্য বা সেবা বিক্রি করা। একজন কপিরাইটারকে কন্টেন্ট রাইটার বলা যায়। কিন্তু একজন কন্টেন্ট রাইটার কপিরাইটার নাও হতে পারে।
কপিরাইটার হতে কি কি যোগ্যতা প্রয়োজন?
সাধারনত কপিরাইটার হওয়ার জন্য স্নাতক ডিগ্রী -কে শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে ধরা হয়। এজেন্সির কপিরাইটারদের ক্ষেত্রে এটি এখনও আছে।
কিন্তু ফ্রিল্যান্স কপিরাইটাররা এখন কপিরাইটিং কোর্স করে শিখতে পারে। ক্লায়েন্ট একাডেমিক সার্টিফিকেট এর চেয়ে কপিরাইটিং নমুনাগুলিকে বেশি গুরুত্ব দেয়।
শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াও কপিরাইটিং পেশার জন্য সবচেয়ে বড় যে যোগ্যতা প্রয়োজন, তা হলো-
ক. শব্দ, বাক্য ও ভাষার সর্বোত্তম ছন্দময় ব্যবহার
খ. কীওয়ার্ড, বিষয়বস্তু এবং ব্র্যান্ডের তথ্য খোঁজার জন্য গবেষণার দক্ষতা
গ. লেখা, সম্পাদনা, সংশোধন এবং প্রকাশনা জড়িত দক্ষতা
ঘ. সম্ভাব্য ভোক্তাদের চাহিদা ও বোঝার ক্ষমতা সম্পর্কে সম্যক অভিজ্ঞতা।
কিভাবে কপিরাইটিং শিখবেন?
কপিরাইটিং ফ্রি ও পেইড দুই ভাবেই শেখা যেতে পারে। আপনি যদি কপিরাইটিং করে আয় করতে চান? প্রাথমিকভাবে শেখার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ইন্টারনেট।
গুগল ও ইউটিউবে সার্চ দিলে কপিরাইটিং এর-ভিডিও টিউটোরিয়াল, ফ্রি-কোর্স, ই-বুক ইত্যাদি পাওয়া যায়। ইউটিউবের ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে ও গুগল থেকে কপিরাইটিং সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা নিয়ে শিখতে পারবেন। আপনার যদি নিজে নিজে শেখার অভ্যাস থাকে তাহলে চেয়ে ভালো উপায় আর কি হতে পারে?
পেইড পদ্ধতি হলো আপনাকে শেখার জন্য পে করে করতে হবে। অনলাইনে ও অফলাইনে কপি রাইটিং এর উপর প্রচুর পেইড কোর্স রয়েছে। অনলাইন লার্নিং প্লাটফর্ম অথবা ট্রেনিং সেন্টারগুলো থেকে কোর্স করে শিখতে পারেন। নিজে নিজে গুগল ও ইউটিউব থেকে শিখলে প্রচুর সময় অপচয় হয়। পেইড কোর্সের মাধ্যমে শিখলে অল্পসময়ে আপনি একটি চমৎকার গাইডলাইন পাবেন।
কীভাবে কপি রাইটিং স্কিল প্রয়োগ করে বিভিন্ন মার্কেট প্লেস থেকে অনলাইনে আয় করা যায়? সে সস্পর্কেও প্রাকটিক্যাল দেখানো হয় কপিরাইটিং পেইড কোর্স গুলোতে। তবে প্রাথমিকভাবে ইন্টারনেট থেকে ধারনা নিয়েই শুরু করা ভালো। পববর্তীতে এই সেক্টরে ভালো করলে পেইড কোর্স করে নেয়া যেতে পারে।
কপিরাইটিং শিখে যেভাবে আয় করবেন
কপিরাইটিং শেখা হয়ে গেলেই কাজ শেষ নয়। পরিপূর্ণ দক্ষতা অর্জন করতে হলে প্রয়োজন শুধু অনুশীলন, অনুশীলন এবং অনুশীলন।
Copy writing শেখার পর প্রাথমিকভাবে যে কোন আইটি প্রতিষ্ঠান, বিজ্ঞাপন ও বিপপন এজেন্সিতে জুনিয়র কপিরাইটার হিসেবে জব পাওয়া যায়। এই কাজের দক্ষতা বাড়ার সাথে সাথে আপনার পদোন্নতি এবং উপার্জনও বাড়তে থাকবে। তাছাড়া, বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস থেকে ফ্রিল্যান্স কপিরাইটার হিসেবে আয় করা যায়।
বর্তমানে কপিরাইটাররা বেশির ভাগ উপার্জন করছে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস থেকে। ফ্রিল্যান্সিং সাইটে প্রচুর পরিমানে ফ্রিল্যান্স কপিরাইটিংয়ের কাজ পাওয়া যায়। জনপ্রিয় সাইটগুলোর মধ্যে রয়েছে-Fiverr.com, Freelancer.com, Upwork.com, Guru.com, Peopleperhour.com, linkedin.com, FlexJobs, BloggingPro, Craigslist ইত্যাদি। এছাড়াও কপিরাইটিং জব এর অথেনটিক অনেক সাইট রয়েছে যেগুলো গুগলে সার্চ করলে পাওয়া যাবে।
উপরোক্ত সাইটগুলোতে প্রথমে নিবন্ধন করে সুন্দর, আকর্ষনীয় ও তথ্যবহুল পোর্টফোলিও (ব্যক্তিগত ওয়েব পেইজ) সাজাতে হবে। যাতে বায়ার দেখলে বুঝতে পারে আপনি একজন প্রফেশনাল কপিরাইটার। এজন্য ডেমো কন্টেন্ট তৈরি করে রাখা যেতে পারে। ডেমো কন্টেন্ট বায়ারের কাছে আপনার কপিরাইটিং দক্ষতাকে প্রেজেন্ট করবে।
কপিরাইটার পোর্টফোলিও ব্লগ বা ওয়েবসাইট
কপিরাইটিং -কে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চাইলে প্রয়োজন একটি পোর্টফোলিও ওয়েবপেইজ। ব্যক্তিগত ওয়েব পেইজ তৈরির আগে google থেকে ধারনা নেয়া যেতে পারে। Copy writer portfolio examples লিখে সার্চ দিলে গুগলে এর উপর অসংখ্য বাস্তব উদাহরণ দেখতে পাবেন। অনলােইনে শীর্ষ স্থানীয় কপিরাইটাররা তাদের পোর্টফলিও ব্লগ বা ওয়েবসাইট কীভাবে উপস্থাপন করে জানা যাবে। নিচে চিত্রে আমরা একটি কপিরাইটার পোর্টফোলিও পারসোনাল ব্লগ সাইট দেখছি। এ রকম হাজার হাজার কপিরাইটার পোর্টফোলিও সাইট পাওয়া যাবে গুগল করলে।
রাইটিং শেখার পর প্রাথমিকভাবে পোর্টফোলিও সাইটের জন্য অর্থ বিনিয়োগ না করলেও চলবে। ফ্রিতে পোর্টফোলিও সাইট তৈরি করে নেয়া যাবে। এক্ষেত্রে WordPress, Google Blogger, Site.google ইত্যাদি ফ্রি হোস্টিং প্লাটফর্মগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
কীভাবে ফ্রিতে পোর্টফোলিও ব্লগ সাইট তৈরি করা যায় (How to create free portfolio site) লিখে ইউটিউবে সার্চ দিলে এর উপর অসংখ্য লাইভ টিউটোরিয়াল পাওয়া যাবে। টিউটোরিয়াল ভিডিও দেখে আপনি নিজেই তৈরি করতে পারেন। অথবা ওয়েবসাইট ডিজাইন সার্ভিস প্রদান করে এমন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নিকট থেকে তৈরি করে নেয়া যেতে পারে। এই লিংকে ক্লিক করে পোর্টফলিও ব্লগ সাইটের কিছু ডেমো দেখে নিতে পারেন।
Copy Writing Proposal কীভবে তৈরি করবেন?
মনে রাখবেন, আপনি যদি প্রজেক্টের সাথে মানানসই করে আপনার বিড তৈরি করতে সময় নেন, তাহলে ফ্রিল্যান্স কপিরাইটার হিসেবে ভিড় থেকে বেরিয়ে আসতে আপনার কোন সমস্যা হবে না।
প্রতিটি ক্লায়েন্ট জানতে চায় কেন তারা আপনাকে বেছে নেবে। আপনি যদি ভিড়ের মধ্যে আলাদা হয়ে দাঁড়াতে চান, তাহলে একটি আকর্ষনীয় অফার লেটার প্রয়োজন হতে পারে।
সেক্ষত্রে কীভাবে Copy writing Proposal লিখত হবে তা ভালোভাবে জানতে হবে। নিচে আপওয়ার্ক রিসোর্স থেকে কপিরাইটিং প্রোপাজালের তিনটি উদাহরণ দেয়া হলো। তবে এগুলো হুবাহু কপি করে মার্কেটপ্লেসে এপ্লাই করা যাবে না। এগুলো থেকে আইডিয়া নিয়ে ইউনিক প্রপোজাল তৈরি করতে হবে।
এখানে ক্লিক করে (How to Create a Proposal That Wins Jobs) আপওয়ার্কে কপিরাইটিং প্রপোজাল লেখার নিয়ম সস্পর্কিত আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন।
অনলাইন বিজনেসে ”কন্টেন্ট হলো কিং” কথাটি বলেছেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস আজ থেকে প্রায় ২৬ বছর আগে। বর্তমান ডিজিটাল যুগে একটি ইউনিক কন্টেন্টের গুরুত্ব আমরা অনুধাবন করতে পারছি। সুতরাং বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট রাইটিং যা ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য প্রয়োজন সে সম্পর্কে আমাদের পরিপূর্ণ ধারনা রাখতে হবে। কপিরাইটিং শিখলে আপনি বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কন্টেন্ট রাইটিং জব ছাড়াও আরো অনেক ভাবে আয় করা সহজ হবে। কপিরাইটং জানা থাকলে রিভিউ কন্টেন্ট লিখে এফিলিয়েট মার্কেটিং করেও আয় করা যায়। এছাড়াও নিজের কোন ব্যবসা থাকলে অনলাইনে নিজের পন্য সেল করেও বিজনেস ডেফলপ করা সহজ হবে।