কন্টেন্ট রাইটিং জব: আপনার যা জানা প্রয়োজন

কন্টেন্ট রাইটিং ও ফ্রিল্যান্সিং

কন্টেন্ট রাইটিং ও ফ্রিল্যান্সিং

কন্টেন্ট হলো এই যুগের ডিজিটাল কারেন্সি। বর্তমানে, মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি থেকে শুরু করে সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে আত্ম প্রকাশের জন্য কন্টেন্ট অপরিহার্য। যার কারনে, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি চাহিদা সম্পন্ন চাকরি হিসেবে কন্টেন্ট রাইটিং জব আবির্ভূত হয়েছে।

ই-কমার্স কোম্পানি, মার্কেটিং এজেন্সি, ডিজিটাল প্রতিষ্ঠান, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসসহ অন্যন্যা স্টার্টআপের জন্য উচ্চ মানের কন্টেন্ট অনলাইনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ইন্টারনেট যেমন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, তেমনি কন্টেন্টও অনলাইন ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছানোর, তাদের আকৃষ্ট করার এবং অনলাইনে বিক্রয় করার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পরিনত হয়েছে।

কন্টেন্ট রাইটাররা কাস্টম এসইও কন্টেন্ট লেখার মাধ্যমে, ব্র্যান্ডগুলিকে তাদের স্বতন্ত্র পরিচয় নির্ধারণে সহায়তা করছে। তাছাড়া ভোক্তাদের উপর সোশ্যাল মিডিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রভাব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলিকে কন্টেন্ট এর মান চিনতে বাধ্য করেছে৷

পরিসংখ্যান, ডেটা, কাস্টমারের সহজাত প্রবৃত্তিকে কেন্দ্র করে গবেষনার মাধ্যমে লিখিত কন্টেন্ট অনলাইনে সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

কন্টেন্ট লেখকরা, যথাযথ গবেষণা এবং জ্ঞানের সাথে লক্ষ অনলাইন ইউজারের কাছে মূল্যবান এবং নির্ভরযোগ্য টপিক উপস্থাপন করে। যার কারণে, কন্টেন্ট রাইটিং জব ইন্ডাস্ট্রি বহুগুণে সমৃদ্ধ হচ্ছে।

বিল গেটস “কন্টেন্ট ইজ কিং” শিরোনামে ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাসে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন, যা মাইক্রোসফ্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছিল।

২৫ বছরেরও বেশি আগে প্রকাশিত হওয়া সত্ত্বেও, তার আর্টিকেলটি আজও প্রাসঙ্গিক। তিনি ইন্টারনেটের ভবিষ্যতকে “কন্টেন্ট মার্কেট” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

কন্টেন্ট এখন অনলাইনে যেকোন কাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ওয়েবে সাফল্য অনেকটাই উচ্চ মানের কন্টেন্টের উপর নির্ভর করে। অনলাইনে সফলতার সাথে কার্যক্রম পরিচালনা, ফ্রিল্যান্সিং, এফিলিয়েট মার্কেটিংসহ যেকোন ডিজিটাল ক্যারিয়ারে সফল হতে কন্টেন্ট রাইটিং শেখার কোন বিকল্প নেই।

কন্টেন্ট রাইটিং কী?

কোন নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য আমরা কোন বই, পত্রিকা, ম্যাগাজিন অথবা অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের লেখা বা টেক্সট, অডিও, ভিডিও, ইমেইজ পড়ি ও দেখি সেগুলো হচ্ছে কনটেন্ট। কন্টেন্ট অনলাইন বা অফলাইন দুই ধরনের হতে পারে। অনলাইন কন্টেন্টগুলোকে ডিজিটাল কন্টেন্টও বলা হয়।

কন্টেন্ট রাইটিং হলো কোন নির্দিস্ট বিষয় সম্পর্কে গবেষনা, পরিকল্পনা, লেখা, সম্পাদনা ও প্রকাশের যাবতীয় প্রক্রিয়া। এটি একটি ব্লগ পোস্ট, আর্টিকেল, ভিডিও স্ক্রিপ্ট, প্রোমোশন পেইজ, রিভিউ, বই বা অনলাইনে প্রকাশিত যেকোনো কিছু হতে পারে। এটি সাধারনত নন-ফিকশন ও তথ্যপূর্ণ প্রকৃতির। কন্টেন্ট সাধারনত নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে-

কন্টেন্ট রাইটার হলো ওয়েবসাইট, ব্লগ, ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম (আপওয়ার্ক, ফাইবার, ফ্রিল্যান্সার ইত্যাদি), ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, অনলাইন মিডিয়া, ইত্যাদির মতো বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের জন্য গবেষণা, পরিকল্পনা, লেখা, কন্টেন্ট সম্পাদনা ও প্রকাশ করার অনুশীলন যারা করেন। অর্থাৎ কন্টেন্ট লেখকদেরই কন্টেন্ট রাইটার বলা হয়।

আর্টিকেল রাইটিং, কপি রাইটিং, B2B কন্টেন্ট রাইটিং, ব্লগ, প্রবন্ধ, পণ্যের বিবরণ, সেলস পেইজ, প্রোমশন পেইজ, ট্রান্সসেলেশন, প্রোডাক্ট রিভিউ, ইত্যাদি কন্টেন্ট রাইটিং আওতায় আসা অনেক উদাহরণের মধ্যে কয়েকটি। অনলাইনে এসইও কন্টেন্ট এর ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নতুন করে কন্টেন্ট রাইটং জব পোষ্ট সৃষ্টি করা হচ্ছে, বাংলা কন্টেন্ট রাইটিং ইন্ডাস্ট্রিতেও এর প্রভাব লক্ষনীয়।

কন্টেন্ট রাইটিং শেখা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) কন্টেন্ট রাইটিং হল গ্যারান্টিযুক্ত উপায়, যেখানে ব্যবসাগুলি তাদের ব্র্যান্ড ইক্যুইটি এবং সুনাম প্রমোট করতে পারে। প্রায় সমস্ত শিল্প বা ব্যবসাই কন্টেন্ট রাইটিং এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

যেহেতু কন্টেন্ট অনলাইনে তথ্য উপস্থাপনের একটি প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে, যার কারনে প্রতিটি ব্যবসা আজ তাদের সামগ্রিক ক্রিয়াকলাপ বাড়ানোর জন্য কন্টেন্ট লেখার তাত্পর্য উপলব্ধি করছে।

কিছু বছর আগে, পেশা হিসেবে কন্টেন্ট লেখা এমন কিছু ছিল না, যা ক্যারিয়ারের জন্য একটি মূলধারার বিকল্প হিসাবে বিবেচনা করা যায়।

কিন্তু এখন আমাদের পৃথিবী ইন্টারনেটের সাথে অনেক এগিয়েছে, পেশার বিকল্প হিসাবে কন্টেন্ট লেখার জন্য সচেতনতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এমনকি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও খুব সম্প্রতি এটিকে একটি আনুষ্ঠানিক শিক্ষামূলক কোর্স হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সুতারাং, সকলেরই কন্টেন্ট রাইটিং শেখা প্রয়োজন।

সৃজনশীল দক্ষতা বৃদ্ধি

কোন বিষয়ে লিখতে গেলে লেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারনা থাকতে হয়। পর্যাপ্ত তথ্যানুসন্ধান, বিশ্লেষণ ও যুক্তিসঙ্গতভাবে কন্টেন্টকে উপস্থাপন করতে হয়। কন্টেন্ট রাইটিং অনুশীলন লেখককে বৃহৎ পরিসরে ভাবতে সাহায্য করে।

আপনি যখন কন্টেন্ট লেখা শিখবেন, তখন আপনি কীভাবে সৃজনশীল হতে হবে তাও শিখছেন। অর্থাৎ কিভাবে আকর্ষণীয় ও বিনোদন মূলক পদ্বতিতে লিখলে অনলাইনে পাঠকদের পুরো লেখা জুড়ে ধরে রাখা যায় তা শিখতে পারবেন।

সৃজনশীল দক্ষতা আপনাকে এমনভাবে আকর্ষণীয় তথ্য এবং পরিসংখ্যান সহকারে কন্টেন্ট তৈরিতে সাহায্য করে। যার ফলে পাঠক আপনার লেখাটি সম্পূর্ণভাবে পড়তে পেরে আনন্দিত হয়।

গবেষণায় দক্ষতা অর্জন

কন্টেন্ট রাইটিং শেখার অর্থ হল আপনি কীভাবে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করতে হয় তাও শিখছেন। যেহেতু আপনি কন্টেন্ট লিখবেন, এটা স্পষ্ট যে আপনি সেরা প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলো খুঁজবেন।

সুতরাং আপনি আপনার লেখার জন্য সঠিক এবং যাচাইযোগ্য তথ্য খুঁজে পেতে গুগলে প্রচুর সার্চ করবেন, গবেষনা করবেন ও ঐ বিষয় সম্পর্কে নতুন নতুন জ্ঞান অর্জন করবেন।

ব্যাপক গবেষণার ফলে আপনার সাধারণ জ্ঞানও বৃদ্ধি পায়। আপনি প্রতিদিন নতুন নতুন জিনিস শিখছেন। গবেষনায় দক্ষতা থাকরে নতুন কন্টেন্টের জন্য বিষয়গুলি খুঁজে পাওয়াও সহজ হবে।

শব্দভান্ডারের সমৃদ্ধি

লেখালেখি করতে গেলে প্রচুর গবেষনা করতে হয়। যার কারনে, আপনার শব্দভান্ডারে প্রতিদিন নতুন নতুন শব্দ যোগ হয়। ফলে, কন্টেন্টে উচ্চ মানের ভাষার ব্যবহার সহজ হয়।

এখানে আমি এমন উচ্চ ভাষা ব্যবহার করার কথা বলছি না, যা পাঠক একটি অভিধানের জন্য অনুসন্ধান করবে। সঠিক শব্দভান্ডার ব্যবহার করার অর্থ হল সম্ভাব্য সর্বাধিক শ্রোতাদের কাছে সহজতম ভাষায় কিছু ব্যাখ্যা করা।

কন্টেন্ট এত সহজ ভাষায় লেখা উচিত যে, একজন ১১ বছর বয়সী শিশু বা চতুর্থ গ্রেডের শিক্ষার্থীও বুঝতে পারে আপনি কী বলছেন।

কন্টেন্ট রাইটিং ও ফ্রিল্যান্সিং

আপনি ফুলটাইম বা খণ্ডকালীন বা একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে কাজ করেও অনলাইনে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন কন্টেন্ট রাইটিং -এ দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে । SalaryExpert.com এর তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে একজন কন্টেন্ট রাইটার বছরে $৫২,২৫৮ ডলার উপার্জন করেন।

Upwork.com, Freelancer.com, Fiver.com এবং Flexjobs.com -এর মতো ওয়েবসাইটগুলিতে যান। সারা বিশ্বের উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে কন্টেন্ট রাইটিং জব অফার দেখে আপনি অবাক হবেন।

আপনি যদি একটি ফুলটাইম চাকরি খুঁজেন, Glassdoor.com এবং Indeed.com এর মতো পোর্টালগুলি অনুসন্ধান করুন৷ এখানেও আপনি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে কন্টেন্ট রাইটার পদের জন্য অসংখ্য ফুলটাই জব অফার পাবেন।

এছাড়াও আপনি কন্টেন্ট রাইটিং শিখে বিভিন্ন অনলাই মিডিয়া, ব্লগ, ম্যাগজিনে লিখে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। আপনার নিজস্ব কোন ব্লগ বা ওয়েবসাইট থাকলে সেখানে লিখেও গুগল এ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে আয় করতে পারেন। বিশ্ব জুড়ে বহু ব্লগার রয়েছে (যেমন-Vaibhav Kakkar, Bhavik Sarkhedi, Neil Patel, Anuradha, Darren Rowse ) যারা কন্টেন্ট লেখার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বিখ্যাত হয়েছেন ও লক্ষ লক্ষ ডলার প্রতি মাসে আয় করছেন।

ডিজিটাল মার্কেটিং সহজ হয়ে ওঠে

আমরা জানি, ডিজিটাল মার্কেটিং অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং, পন্য বা ব্রান্ড প্রোমোটের জন্য একটি কার্যকরী মাধ্যম। আপনি যখন এসইও কন্টেন্ট লেখা শিখবেন তখন ডিজিটাল মার্কেটিং প্রক্রিয়াগুলি সম্পাদন করা অনেক সহজ হয়।

ডিজিটাল মার্কেটিং -এ কাস্টম এসইও কন্টেন্ট লিখতে হয়, যা পন্য অথবা ব্রান্ডগুলিকে তথ্য ও পরিসংখ্যানের সাথে ইন্টারনেট ইউজারদের কাছে উপস্থাপন করে। এ জন্য স্থানভিত্তিক সর্বাধিক সংখ্যক অনুসন্ধান করা হয়েছে এমন নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড এবং কীওয়ার্ড ফ্রেইজগুলো সার্চ করতে হয়।

কন্টেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে কিভাবে কন্টেন্টে এই কীওয়ার্ড এবং কীওয়ার্ড ফ্রেইজ সঠিক ভাবে এসইও অনুযায়ী ব্যবহার করতে হয় তা শিখানো হয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং শিখেন, তাহলে আপনি যে জিনিসগুলি শিখবেন তার মধ্যে একটি হলা অন-পেইজ সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান (SEO)।

অনুরূপভাবে, আপনি যখন কন্টেন্ট লেখা শিখবেন, তখন কীভবে এসইও ফ্রেইন্ডলি কন্টেন্ট লিখতে হয় তাও শিখবেন। কন্টেন্ট লেখার দক্ষতাকে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং -এ খুব সহজেই কাজে লাগাতে পারবেন।

শেষ কথাঃ

ইন্টানেটে কন্টেন্টের বহুমূখী চাহিদার কারনে কন্টেন্ট রাইটিং জব ইন্ডাস্ট্রি সমৃদ্ধ হচ্ছে। অনলাইনে নির্ভুল তথ্য ও পরিসংখ্যান সহকারে পন্য বা ব্রান্ড প্রমোটের প্রধান মাধ্যম হলো কন্টেন্ট।

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গুলোও কন্টেন্টের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারছে। যার কারনে, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে কন্টেন্ট রাইটিং জব প্রচুর পরিমানে লক্ষনীয়। প্রায় ২০ বছর আগে বিল গেটস ইন্টারনেটের ভবিষ্যতকে “কন্টেন্ট বাজার” হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাও খুব সম্প্রতি এটিকে একটি আনুষ্ঠানিক শিক্ষামূলক কোর্স হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সুতারাং, সকলেরই কন্টেন্ট রাইটিং শেখা প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ

বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট রাইটিং সম্পর্কে জানি? কন্টেন্ট রাইটিং ও ফ্রিল্যান্সিং পার্ট-২

আর্টিকেল রাইটিং কী? কীভাবে বাংলায় আর্টিকেল লিখে অনলাইনে আয় করবেন?

SEO ও পাঠক ফ্রেইন্ডলি আর্টিকেল রাইটিং টিপস এন্ড ট্রিকস

মাইক্রো জব: ঘরে বসে অনলাইনে অর্থ উপার্জন

রেফারেন্সঃ

Exit mobile version