সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলার আধুনিক রূপ আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকার শেখ হাসিনা, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশেকে একটি আধুনিক ও ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে বাংলাদেশ তথ্য -প্রযুক্তির দিক থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল। গত এক যুগে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” বিনির্মাণে যে বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদিত তার পিছনে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী এবং তার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সুযোগ্য সন্তান জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়। চলুন আজকে আমরা জানবো শেখ হাসিনার সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মূল কারিগর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। পিতা-মাতার ৫ সন্তানের মধ্যে তিনি জেষ্ঠ্য। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকেই জননেত্রী শেখ হাসিনা অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন।
রাজনৈতিক কারণে জেল -জুলুম হুলিয়া ছিল পিতা বঙ্গবন্ধুর নিত্য সহচর ফলে পিতার সান্নিধ্য কম পেলেও টুঙ্গিপাড়ার গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের মাঝেই কেটেছে তার শৈশব- কৈশোর।
শেখ হাসিনার শিক্ষা জীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়।পরবর্তীতে ঢাকায় ১৯৫৬ সালে ভর্তি হন নারী শিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উওীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে ঢাকার বকশী বাজারে পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গর্ভমেন্টস গার্লস কলেজ থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) পাশ করে সে বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন।
ছাত্র জীবন থেকেই শেখ হাসিনা রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৬২ সালে স্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থায় আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৬৬ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় কলেজ ইউনিয়ন এর সহ-সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবনের পথ চলা শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তিনি অংশ -গ্রহণ করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে রোকেয়া হলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার সময় শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা জার্মানিতে অবস্থান করেন পরে সেখান থেকে দিল্লিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন। ১৯৮১ সালে তার অনুপস্থিতিতেই সর্বসম্মতিক্রমে
তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচন করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি ঢাকায় আসেন এবং লক্ষ লক্ষ জনগণ তাকে অর্ভ্যথনা জানান। এরপর তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তার দল আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করা সহ অনেক খাতে দেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়।
২০০৮ সালে জনগণের বিপুল ভোটে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।২০১৪ সালে তৃতীয় বারের মত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে ৪র্থ বারের মত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। বর্তমানে বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় তিনি ৩৯তম।
বর্তমানে বাংলাদেশের ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা ও জেলায় ৫ হাজার ২৭৫ টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে জনগণকে ২০০ রকমের সেবা দেওয়া হচ্ছে। ই গর্ভন্যান্স বাস্তবায়ন অনেকটাই সম্পন্ন হয়েছে।
১৯৯৬ সালে দেশরত্ন শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন কম্পিউটার ও এর যন্ত্রাংশের উপর আমদানি শুল্ক ও কর তুলে দিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে এখন কম্পিউটার ব্যবহার এত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালে এমপিআর দেওয়া শুরু হয়েছিল।
শুধু তাই নয় আগে আইটিখাত থেকে রপ্তানি আয় ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল, যা বর্তমানে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে ই পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে যা বাংলাদেশকে ডিজিটাল জগতে এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে।
প্রায় সাড়ে তিন হাজার ইউনিয়নে সাবমেরিন কেবল পৌঁছে গেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন করা হয়েছে। এর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৫ ভাগে উন্নীত হয়েছে। দরিদ্রের হার ২০ ভাগে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। মূলত ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত এবং উন্নত সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে বদ্ধ পরিকর জননেত্রী শেখ হাসিনা।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধু সেরা রাজনীতিবিদ ই নন তিনি বিভিন্ন গ্রন্থ ও সম্পদনা করেছেন। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলো হচ্ছেঃ
১. “ভ্যাকসিন হিরো ” টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতা অর্জনের জন্য তাকে GAVI এই পুরস্কার দেন।
২. Life time contribution for women empowerment award বাংলাদেশে নারী জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য তিনি এই পুরস্কার লাভ করেন।
৩. রোহিঙ্গা ইস্যুতে দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্য “Ips international achievement award” পান তিনি।
৪. ইউএন উইমেন থেকে “প্ল্যানেট ৫০-৫০চ্যাম্পিয়ান” এ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
৫.গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম থেকে “এজেন্ট অব চেঞ্জ” পদক পান তিনি।
৬.সর্বভারতীয় শান্তি সংঘ থেকে “মাদার তেরেসা ” পুরস্কার লাভ করেন।
৭. খাদ্য ও কৃষি সংস্থা থেকে “চেরেস পদক ” লাভ করেন।
৮. “ইন্দিরা গান্ধী ” পুরস্কার লাভ করেন।
৯.রোটারি ফাউন্ডেশন কতৃক “পল হ্যারিস ফেলো” পুরস্কার লাভ করেন।
১০.বাংলা একাডেমি থেকে সম্মান সূচক ফেলোশিপ লাভ করেন।
১১. ইউনেস্কো শান্তি বৃক্ষ পুরস্কার ও তিনি পেয়েছেন।
১২. জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায়” চ্যাম্পিয়ান অব দা আর্থ” পুরস্কার পেয়েছেন।
১৩. সমুদ্র সীমা জয়ের জন্য “সাউথ সাউথ ” পুরস্কার লাভ করেছেন।
১৪. ইউনেস্কো তাকে ” হুপ বোয়ানি” শান্তি পুরস্কার দিয়েছে।
এছাড়াও তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট ডিগ্রি অর্জন করেন।
শেখ হাসিনা এমন একজন বলিষ্ঠ নেতা যিনি ৩৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছেন। তার শাসনামলে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল দৃশ্যমান। পরিশেষে বলতে পারি, ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপায়নে তার অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ছবিঃ সংগৃহীত
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, প্রথমআলো ও বিবিসি বাংলা
মন্তব্য লিখুন