পদ্মা সেতু: যে নতুন অধ্যায়ে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ

পদ্মা সেতু

“পদ্মা” শুনলেই আমাদের কল্পনায় ভেসে ওঠে প্রবল স্রোতে পরিপূর্ণ একটি বিশাল নদীর কথা। “পদ্মার ইলিশ” কথার সাথে আমরা প্রায় সকলেই পরিচিত। যে তিনটি প্রধান নদী বাংলাদেশকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা, তার মধ্যে পদ্মা অন্যতম।

বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ২১টি জেলা নদীটির ওপারে। বলা যায় দক্ষিন অঞ্চল এর সবকিছুর সাথে পদ্মা নদীর সম্পর্ক ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। তাই এই নদীর উপরে পদ্মা সেতু নির্মাণ অনেক জরুরি ছিলো। অবশেষে ২০১৪ সালের ৭ই ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয় সেতু তৈরির কাজ, যা এখন প্রায় শেষের দিকে। আশা করা যায়, খুব শীঘ্রই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হবে। সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে, পদ্মা সেতু হবে বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার এক অনুপম নিদর্শন।

পদ্মা সেতুর অবস্থান:

পৃথিবীতে আমাজন নদীর পরে সবচেয়ে দীর্ঘতম এবং খরস্রোতা নদী হচ্ছে পদ্মা নদী। যার একটি অংশ ভারতে এবং অনেক বিশাল একটা অংশ বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে।

পদ্মা নদীর গভীরতা ৯৬৮ ফুট তথা ২৯৫ মিটার। বাংলাদেশ এ পদ্মা নদীর দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ  সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার প্রায়।

বাংলাদেশ সরকার পদ্মা নদীর উপর দুইটা সেতু তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে প্রথম পদ্মা সেতু এর অবস্থান মুন্সিগঞ্জ জেলার মাওয়া প্রান্ত এবং শরিয়তপুর জেলার জাজিরা প্রান্তের মাঝে। ২য় পদ্মা সেতুটি মানিকগঞ্জ এবং রাজবাড়ী জেলার মাঝামাঝি নির্মাণ করা হবে।

সেতুর গঠন এবং আকৃতি:

এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম সেতু হতে যাচ্ছে আমাদের পদ্মা সেতু। যার দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। সেতুটি দ্বিতলবিশিষ্ট। যেখানে নিচ দিয়ে চলবে রেল গাড়ি এবং উপরে রয়েছে চার লেন বিশিষ্ট মহাসড়ক। অন্যান্য যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থাও রয়েছে। পদ্মা সেতুর আকৃতি ইংরেজি বর্ন “এস” এর মতো।

কতটা গুরুত্বপূর্ণ পদ্মা সেতু?

পদ্মা সেতুর ফলে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যে কোনো ধরনের যোগাযোগ হবে অত্যন্ত সহজ এবং দ্রুততর। গ্যাস, বিদ্যুৎ,অপটিক ফাইবার ইত্যাদি পরিবহন এর ক্ষেত্রে ঘটবে অভাবনীয় পরিবর্তন। রেল ও মহাসড়ক এর মাধ্যমে পরিবহন যোগাযোগ অত্যন্ত দ্রুত হবে।

আমরা জানি যে, দেশের দক্ষিণ অঞ্চল এর মাটি উর্বর বেশি। তাই সেখানে খাদ্যশস্য উৎপাদনও হয় প্রচুর। এর ফলে, সেতুর মাধ্যমে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন, শাক-সবজি, মাছ ইত্যাদি পরিবহন খুব দ্রুত হবে।

পদ্মা সেতুর ফলে, দেশের দক্ষিণ অঞ্চল এর সাথে রাজধানী ঢাকার গড় দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত কমে আসবে। যাত্রীরা চরম ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে। নদী পার হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় বাঁচানো যাবে। মালামাল এর ক্ষতি কম হবে ।

আরও পড়ুনঃ

কমলা হ্যারিস: যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী উপরাষ্ট্রপতি

যুক্তরা‌ষ্ট্রের নির্বাচন: যেভাবে নির্বাচিত হয় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট

ব্যবসা-বানিজ্য এর ক্ষেত্রেও ব্যাপক উন্নয়ন হবে। পদ্মা সেতু এর মাধ্যমে, মংলা সমুদ্র বন্দর, পায়রা সমুদ্র বন্দর, বেনাপোল স্থলবন্দর এর সাথে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব অনেক কমে আসবে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন খুব দ্রুত চোখে পড়বে।

চীন এবং সিঙ্গাপুর এর আদলে, সেতুর দুই প্রান্তেই শিল্প কল-কারখানা তৈরি হতে যাচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন শহরায়ন ঘটবে এবং একই সাথে অনেক মানুষের কাজ এর ক্ষেত্র তৈরি হবে।

সেতুটিকে কেন্দ্র করে অনেক দর্শনীয় স্থান এবং বিনোদন এর জন্য পার্ক গড়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশের সামগ্রিক জিডিপি এবং প্রবৃদ্ধিও বৃদ্ধি পাবে।

জাতীয় উন্নয়নে পদ্মা সেতু:

পদ্মা সেতুর ফলে দেশের সকল মানুষই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে উপকৃত হবে। সমগ্র মানুষ অর্থনৈতিক সুফল ভোগ করতে সক্ষম হবে। দেশের সামগ্রিক উন্নতি চোখে পড়ার মতো হবে। পরিশেষে বলা যায়, আমাদের দেশের উন্নয়ন এর ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে এক বিস্ময়কর মাইলফলক।

ছবিঃ সংগৃহীত

Exit mobile version