যখন মানুষের শিক্ষা, সঙ্গ আর পরিবেশ তার “সুপারইগো” এর থেকে “ইড” এর প্রাধান্য বেশি দেয় তখন তার মধ্যে মানবিকতার অবক্ষয় হয় অর্থাৎ “সুপারইগো” দুর্বল হয়ে পড়ে। ঠিক সেই অবস্থায় একজন মানুষ জৈবিক চাহিদা (খাদ্য, যৌন) পুরনের লক্ষ্যে পশুর মত আচরন করে চুরি, ছিনতাই, খুন এবং ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধগুলো করে থাকে। অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকা মানুষগুলো তাদের এই কর্মকাণ্ড গুলোকে অসামাজিক মনে করে না। কারণ অস্বাভাবিকতায় থাকতে থাকতে কুকর্মগুলো তাদের কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। “ধর্ষণের জন্য কি ধর্ষক বেশি দায়ী নাকি ধর্ষক হয়ে ওঠার কারণ গুলো?” এই বিষয়ের উপর লিখেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী -তানবিন কাজী।
প্রত্যেক মানুষের মধ্যে তিনটি সত্তা কাজ করে ইড (id), ইগো (ego) ,সুপারইগো (suparego)। আবার এই তিনটা সত্তাকে তিনটা অবস্থা চালনা করে আর তা হচ্ছে শিক্ষা, সঙ্গ এবং পরিবেশ।
“ইড” মানুষসহ যেকোনো প্রাণির মধ্যেই সমানভাবে বিরাজমান। “ইড” সত্তার পুরোটাই লোভ-লালসা ও কাম চাহিদায় ভরপুর। “ইড” মানুষকে যে কোন অসামাজিক অপরাধ থেকে শুরু করে, ভোগ বিলাসের জন্য খুন-ধর্ষণ পর্যন্ত করতে প্ররোচিত করে। এককথায় মানুষের ভেতরে পশুতুল্য চিন্তাভাবনাই “ইড”।
“সুপারইগো” হচ্ছে ‘ইড” এর ঠিক বিপরীত। “সুপারইগোতে” মনুষ্যত্ব বিরাজ করে। “ইড” যখন জৈবিক কামনা বাসনা পুরণ করতে উদ্দীপ্ত করে, তখন “সুপারইগো” একে বাধা দেয়।
আর “ইগো” এই দুটিকে ব্যালেন্স করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, দোকানে চিপ্সের প্যাকেট ঝোলানো থাকতে দেখলে “ইড” বলে এখনি প্যাকেট ছিড়ে খেতে আর “সুপারইগো” বাধা দিয়ে বলে, না খেতে। কিন্তু “ইগো” ব্যাপারটাকে ব্যালেন্স করে বলে, টাকা দিয়ে কিনে খেতে।
ইড” বলে, মেয়েটি সুন্দরী, অতএব ওকে ইভটিজিং বা রেইপ করা যায়, অপরদিকে “সুপারইগো” বাধা দিয়ে বলে, ইভটিজিং অপরাধ, অতএব করা যাবে না।
কিন্তু “ইগো” ব্যাপারটাকে ব্যালেন্স করে বলে,মেয়েটির সাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করো, সম্ভব হলে প্রেমের প্রস্তাব দাও, মন পাওয়ার চেষ্টা করো, মন পেলে শরীর কোন এক সময় পাবে।
এটাই হচ্ছে মানুষের মধ্যকার তিনটি সত্তা কাজ করে ইড (id) ইগো (ego) সুপারইগো (suparego)।
যখন মানুষের শিক্ষা, সঙ্গ আর পরিবেশ তার “সুপারইগো” এর থেকে “ইড” এর প্রাধান্য বেশি দেয় তখন তার মধ্যে মানবিকতার অবক্ষয় হয় অর্থাৎ “সুপারইগো” দুর্বল হয়ে পড়ে।
ঠিক সেই অবস্থায় একজন মানুষ জৈবিক চাহিদা (খাদ্য, যৌন) পুরনের লক্ষ্যে পশুর মত আচরন করে চুরি, ছিনতাই, খুন এবং ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধগুলো করে থাকে।
অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকা মানুষগুলো তাদের এই কর্মকাণ্ড গুলোকে অসামাজিক মনে করে না। কারণ অস্বাভাবিকতায় থাকতে থাকতে কুকর্মগুলো তাদের কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
আরও পড়ুনঃ রক্তদান -রক্তদানের আগে যে বিষয়গুলো অবশ্যই জানতে হবে
বিজ্ঞানি পাভলভ যে কুকুরের লালা ঝরার যে পরীক্ষা করেছিলেন তা হয় তো সবার মনে আছে। যেখানে কুকুরের খাবার খাওয়ার সময় যে পরিমান লালা ঝরতো ধীরেধীরে তিনি লক্ষ করলেন খাবারের পাত্র, যে খাবার দেয় তাকে আসতে দেখে, এমনকি সে যদি খাবারহীনও থাকে তবুও কুকুরের লালা ঝরতে থাকে একই পরিমান।
আমাদের দেশের ধর্ষকদের অবস্থা ঠিক একইরকম। তাদের মস্তিষ্ক এতোটাই বিকৃত হয়ে গেছে যে, ছয় বছরের শিশু, আপাদমস্তক বোরখা পরা অথবা ষাট বছরের বুড়ি পর্যন্ত এই সব বিবেকহীন ধর্ষকদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
তবে একটা ছেলের ধর্ষক হয়ে ওঠার পেছনে কিছু প্রকাশ্য কারণ সমাজে প্রচালিত আছে। নারী সম্পর্কে কি ধরণের ধারনা নিয়ে সে বড় হচ্ছে সেগুলোর কিছুটা আভাস পাওয়া যায়। যেমনঃ
নারী সম্পর্কে এসব ধারনা এমন শিক্ষা নিয়ে সে বড় হয়েছে আর বড় হয়ে সে তার আশেপাশে এমন সঙ্গ বেছে নিয়েছে যে ঠিক তারমত মাদকাসক্ত, মিথ্যাবাদী, প্রতারক, যৌন কামনাকারী।
প্রেক্ষাপট এমন হয়ে দাঁড়ায় যে তাদের চিন্তা-ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি ও আলোচনার বিষয়বস্তু সবই একজন নারী কেন্দ্রিক।
যা তাদের আরো বেশি নারী লোভী করে তলে আর এক পর্যায়ে নারীর কাঁচা মাংসের স্বাদ নিতে তারা পাগল হয়ে যায়। সমাজ, শিক্ষা কোনো কিছুই তাদের আর ফেরাতে পারেনা। মনুষ্যত্বের অবক্ষয় তাদের পশুতে পরিনত করে।
সংবিধান যদি ধর্ষকদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়ে থাকে তাহলে সেখানে নিষ্ঠুরতার কিছু দেখিনা। মেডিকেল সাইন্স অনুযায়ি প্রত্যেক ধর্ষকই বিকৃত মস্তিষ্ক নিয়ে বেঁচে আছে।
আর বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ গুলো অনেক বড় ধরনের ধাক্কা না পেলে স্বাভাবিক চিন্তাশক্তিতে ফিরে আসতে পারে না।
এক কথায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা তাদের পক্ষে এক প্রকার অসম্ভব। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে না এলে সে দেশ ও জাতীর জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারবে না বরং দেশ ও জাতির কাল হয়ে দাঁড়াবে।
তাকে বাঁচিয়ে রাখলে সমাজের কনো উপকার হবে না।
তাই এই ধর্ষকদেরকে আইনের অনুশাসনের আওতাভুক্ত করা গেলে এদের পথের পথিক যারা হতে যাচ্ছে তারাও পা বাড়াবার আগেই ফিরে আসবে। যেটা দেশ ও জাতির সকলের কাম্য।
মন্তব্য লিখুন