ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত -মোঃ মমতাজ হাসান

ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত -মোঃ মমতাজ হাসান

ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত

ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত এর ঘটনাগুলো বড় উদ্বেগের বিষয়। একটির রেশ মিলিয়ে যেতে না যেতেই আরেকটি এসে হাজির হচ্ছে। এ পর্যন্ত ঘটা সর্বশেষ সিরিয়ালটা শুরু করেন ভারতীয় জনতা পার্টির সাবেক মুখপাত্র নুপুর শর্ম। জুন (২০২২) মাসের গোড়ার দিকে এক টেলিভিশন বিতর্কে তিনি মহানবীকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা একজনের কাছ থেকে এমন মন্তব্য প্রত্যাশিত ছিলনা।

তার বক্তব্যের পর মুসলিম বিশ্বে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত এর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এরপর নড়ে চড়ে বসে বিজেপি; নুপুর শর্মাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। নুপুর শর্মা-কান্ডের জেরে আজমীর শরীফের এক খাদেম সলমান চিশতিকে গত ৫ জুলাই রাতে গ্রেফতার করে রাজস্থান পুলিশ।

সলমান চিশতির বক্তব্য -কেউ নুপুর শর্মার মাথা এনে দিতে পারলে তাকে তাঁর নিজের বাড়ীটাই লিখে দেবেন -ভাইরাল হয়। আজমীর শরীফের মত একটি বৃহৎ ও সম্মানিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের খাদেম হয়ে তিনি কীভাবে এ রকম বক্তব্য দিলেন সে-ও এক বিস্ময়।

এরপর জুলাই এর মাঝামাঝিতে নড়াইলে, লোহাগাড়ার সাহাপাড়ায় এক তরুণ মহানবী সম্পর্কে কুটুক্তি করেন যা মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানে । তা নিয়ে সেখানে অনেক হানাহানি লুটতরাজ ভাংচুর হয়। সাংসদ মাশরাফী বিন মর্তুজা বলেছেন, এমন নড়াইল তিনি কখনো দেখেননি। ঠাকুরগাঁওয়ের শিবগঞ্জে এক তরুণ বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে একই ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছেন।

সেখানে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানার ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। অবস্থাটা হয়েছে এমন যে, যার যেমন খুশী মন্তব্য করে মনের খায়েস বা ঝাল মেটাচ্ছেন। নিজের অবস্থান ও মর্যাদার প্রতি দৃষ্টি থাকেনা। জনমানসে পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার বিষয়টিও মনে ঠাঁই হয়না।

এইসব দেখে মনে হয় যুগটা যেন জোস হুজুগ ধান্দাবাজী আর লুটতরাজের। সুযোগ পেলেই মানুষকে আক্রমণ করে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে। সমাজের বর্তমান দশার নিরিখে বলা যায় অঘটনগুলো আগে যেমন ঘটেছে ভবিষ্যতেও তেমনি ঘটবে। এর হাত থেকে সহসা রেহাই পাওয়া যাবেনা।

ঘটনাগুলো ঘটছে কেন তার ব্যাখ্যা দীর্ঘ। এর সংগে জড়িত অনেক বিষয় যা সবাই কমবেশী অবহিত। তবে প্রয়োজনের সময়ে তেমন কারো ভুমিকা দেখা যায়না। যেভাবে সমাজকে নিস্ক্রিয় করে অসামাজিক বিষয়গুলিকে তান্ডব চালানোর সুযোগ দেয়া হয়েছে তাতে এমনটাই ঘটার কথা। পথ এখন অনেকটাই খোলা।

সমাজের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নষ্ট, বিবেকবান মানুুষেরা পিছিয়ে। সমাজে নানা কাজে নানা রকম দল বা গোষ্ঠী আছেন তবে এসব বন্ধ করার জন্য কেউ নেই। পরিবেশ নিরাপদ। তাই রাজনৈতিক অন্ধের দল, ধর্মান্ধ গোষ্ঠী, আধিপত্য প্রভাব ও দখলী মানসিকতার লোকজন মিলে প্রস্তুত। এরপর ফেসবুকের কল্যাণে বা মুখে মুখে একটা খবর ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় অভিযান।

অবস্থার এতটা অবনতি হয়তঃ প্রত্যাশিত ছিলনা। কিন্তু যখন তা হয়েই গেল তখন সকলে হা করে তাকিয়ে। কেবল আফসোস করা আর আয়নায় নিজের মুখ দেখা ছাড়া কিছু করার নাই।

কারণ খোঁজার আগে এসব হানাহানি লুটতরাজ ভাংচুর বন্ধ হওয়া জরুরী; জরুরী ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা। কীভাবে তা সম্ভব তার আলোচনা চলতে পারে। আমরা এর আগে সম্প্রীতি সভা গঠনের কথা বলেছিলাম। সে রকম হলে লোহাগাড়া ও শিবগঞ্জের ঘটনা এড়ানো যেত। আরও অনেক সম্ভাব্য ঘটনার মুখে তালা পড়ত।

এখানে সম্প্রীতি সভা বিষয়ক বক্তব্যের কিঞ্চিত পুনরাবৃত্তিঃ প্রত্যেক এলাকায় সব ধর্মের অগ্রগণ্য মুরুব্বীদের নিয়ে সম্প্রীতি সভা গঠন করতে হবে। সম্প্রদায়গত বা ধর্ম বিষয়ে কোন রকম বিরোধ-বিবাদ দেখা দিলে তা তৎক্ষণাৎ সভার গোচরে আনতে হবে। কেউ কোনভাবে সভার বাইরে গিয়ে বা সভাকে এড়িয়ে কিছু করতে পারবেন না বা করতে যাবেন না। যদি কেউ তা করেন তবে তিনি হবেন প্রথম আসামী। এতে করে প্রথমেই বিষয়টাকে উত্তেজনার মাঠ থেকে তুলে আলোচনার টেবিলে পাঠানো যাবে। তারপর আলোচনার টেবিলেই নিস্পত্তির ব্যবস্থা। এই সমাধান সাময়িক। স্থায়ী সমাধানের পথ আলাদা।

স্থায়ী সমাধানে যেতে হলে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলোর চরিত্র ও কারণ জানা প্রয়োজন। নিশ্চই এগুলো সর্বত্র একই রকম নয়। ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণ চিত্র হল লোকজন খুব দ্রুত উত্তেজিত হয়, লাঠিসোটা হাতে জ্ঞানশুন্য হয়ে ছোটে, লুটপাট ও ভাংচুর করে এবং কখনও কখনও বিশেষ সাম্প্রদায়িক শ্লোগান দেয়।

লোহাগাড়ার ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার বিউটি রাণী মন্ডল বিবিসি বাংলাকে বলেন,“ শুক্রবার (ক্যালেন্ডারের অনুযায়ী তারিখ ১৬ জুলাই ২০২২) বিকেলে মুখে মুখে ফেসবুক পোস্টে ইসলাম অবমাননার বা ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত আনার অভিযোগ ছড়ানো হয়। এর অল্প সময় পর সন্ধ্যায় সাত-আটশো লোক এসে হামলা করে।

হামলাকারীদের মধ্যে অনেক তরুণ এবং মাদ্রাসা ছাত্র ছিল ; অনেক বয়স্ক মানুষও ছিল….”। এভাবে দ্রুত সময়ে বহুলোকের জমায়েত হওয়া এবং ছুটে যাওয়া পুর্বপরিকল্পনা ছাড়া হঠাৎ করে সম্ভব নয়। সাম্প্রতিক সময়ে যত ঘটনা ঘটেছে সবখানেই এভাবে একদল মানুষকে দেশীয় অস্ত্রসহ ছুটে যেতে দেখা গেছে। মনে হয় কোন মহল সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি ও তা দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন সহ অর্থ-সম্পদ হাতানোর জন্য তৈরী থাকেন।

এরপর কেবল একটা টোকা দেয়ার অপেক্ষা। এই ছোট কাজটা করে ফেসবুক, মুখে মুখেও হয়। এরপর থামার বা কারো কথায় কর্ণপাত করার অবকাশ থাকেনা। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একটা প্রাথমিক কাজ হল এইসব পুর্ব পরিকল্পনাকারী ও গ্রাউন্ড ওয়ার্ক কর্মীদের খুঁজে বের করা। জানা দরকার এসব করার পেছনে এদের উদ্দেশ্য কী। আমরা সাধারণভাবে যা জানি বিশেষভাবে খুঁজলে হয়তঃ এর বাইরেও আরো নানা কারণ পাওয়া যেতে পারে।

অধুনা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার ঘটনাগুলোই ঘটছে বেশী। এর শুরু অতীতে, ’৪৭ এ দেশভাগের পুর্ববর্তী কালে। এখন চলছে তার ফুলে ফেঁপে ওঠা প্রবাহ। দেশভাগের সময়ের অর্বাচীন ক্ষমতালোলুপ ধুরন্ধর সামন্ত চেতনার নেতারা এর স্রষ্টা। তখন থেকে উভয় ভাগে সংখ্যাগুরুরা সুবিধাভোগী বিপরীতে সংখ্যালুঘুরা নিপীড়িত ও অবাঞ্চিত। এই নিয়তি চলমান।

দীর্ঘ পচাঁত্তর বছর ধরে এরসংগে যুক্ত হয়েছে -আইস বলের ন্যায়-ক্রমে অধিকতর বিষাক্ত হয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, লুটপাটের ধারা, অবিকশিত ও উদ্ভট ( মাঝখানে শুরু হয়েছিল খেলাফত আন্দোলন) সামন্ত চেতনার চা। এই ধারা দুপক্ষ এখনও লালন করে চলেছেন । জোস তাই কমেনি। কেউ ভাংগে মসজিদ কেউ মন্দির। কথা যেমনই হোক এর সমাধান সহজ নয়।

গোত্রপাপে ভারী হয়ে ওঠা পক্ষগুলিকে হাল্কা বানিয়ে সমাধান করা খুব কঠিন। দৃশ্যতঃ কতকটা সমাধান হলেও অন্তরে পাপের প্রদীপ জ্বলতেই থাকবে। প্রয়োজন শুদ্ধ রাজনীতির; তার আগে কুটিল, স্বার্থ-ধান্দায় ভরা অগ্রসর সমাজের মাথাগুলো পরিষ্কার হওয়া দরকার। যে মাথাপচা রোগ ৪৭এ ছিল তা এখনও আছে।

দেশভাগের কোন প্রয়োজন ছিলনা। গোলমালটা ছিল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যকার ; সেটা দেশ নিয়ে নয়, কতক সুযোগ সুবিধা নিয়ে। একপক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন। কোথায় সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠে মহামিলনের উদ্যোগ নেবেন তা না করে স্বপক্ষের লোকজনকে ক্ষেপিয়ে দেয়া হল। আর যায় কোথায়! অবশ্যম্ভবী হয়ে পড়ল ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ। তখনকার ন্যায় এখনও একদল আরেক দলকে পিটিয়ে দেশছাড়া করতে চান। দুর ভবিষ্যতেও এই ধারা বন্ধ হবে কিনা সন্দেহ।

নিজ শক্তি বলে এসব সমস্যা দুর করতে সক্ষম হবে এমন একটি সবল সমাজের দরকার। এরকম সমাজ আকাশ হতে নেমে আসবেনা, নির্মাণ করতে হবে। ভাবতে কষ্ট হয় স্বাধীনতার পর দেশ অর্ধশতকেরও বেশী সময় পার করল এখনও সমাজ বিনির্মাণের ধারা খুব দুর্বল।

কখনো মনে হয় এরকম কোন কিছুর অস্তিত্ত্বই নাই। একটি সুস্থ সবল সমাজ ছাড়া একটি দেশের পক্ষে কীভাবে কালের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব। চেতনা ও ধারণা অগভীর হওয়ায় অধিকাংশের ধৈর্য্য অনুভুতি সহনশীলতা -এসবের অবস্থাও নাজুক।

উস্কানীগুলো সহজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে অপকর্মগুলো করে যায়, বিবেকে বাধেনা (না থাকলে বাধবে কীভাবে)। আমরা বই পড়ি পরীক্ষা পাশের জন্য। বইয়ে ভাল ভাল কথাবার্তা লেখা থাকে বাস্তবে যেগুলোর কোন ভুমিকা নেই।

আরও পড়ুনঃ

বিদ্যাকে বাস্তব জীবনে অনুশীলনের কোন ব্যবস্থা সমাজ বা রাষ্ট্রে নেই। সহজেই চোখে পড়ে এমন কোন নজীরও স্থাপন হয়নি। একটি দেশে প্রধান বিষয় মানুষ। তার প্রতি দৃষ্টি না দিলে রাষ্ট্রের আর প্রয়োজন কি! স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্মকে গড়ে নেবার বিষয়টি সম্পর্কে কিছু না বলাই ভাল। যারা গড়বেন তারা নিজেরাই আছেন শুন্যের তাজমহলে।

সাময়িক ব্যবস্থাগুলির পাশাপাশি বোধ হয় এখন অনেক কিছুই নতুন করে শুরু করা উচিৎ। অসাম্প্রদায়িক সমাজ নির্মাণ শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো সমাজের একটি অভ্যন্তরীণ শক্ত অবকাঠামো নির্মাণের কাজে হাত লাগানো দরকার।

প্রসাশন ও আইন শৃংখলা বাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়। কারণ সমস্যাটা প্রসাশনিক বা আইন শৃংখলার নয়, রাজনৈতিক সামাজিক সাম্প্রদায়িক ও সাংষ্কৃতিক। এর সংগে যুক্ত ক্ষমতা লোভ-লালসা ও আধিপত্যবিস্তার। এই বিষয়গুলোর ভেতরে প্রবেশ করে নিরসনের চেষ্টা করতে হবে।

বিশেষ দুশ্চিন্তার কারণ হল দাংগাগুলিতে দেখা যায় যে, শিক্ষার্থী শিশু-কিশোররাও লাঠি হাতে বিশেষ শ্লোগান দিতে দিতে ধাবিত হচ্ছে। এদেরকে কী শেখানো হয়! যদি এটাই তাদের শিক্ষা হয় তবে ভবিষ্যৎ কি! দেশের অনেক জায়গায় কিশোর গ্যাং আছে। তারা হয়তঃ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে জড়ায় না তবে অন্য প্রকার সংঘর্ষে নেমে পড়ে। এই দুইপথ শিশুদের একই দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় তারা ক্রমে নিজেরাই একটি শক্তিশালী সম্প্রদায়ে পরিণত হবে যারা সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলোর মধ্যেও চ্যালেঞ্জ ও রোমাঞ্চ খুঁজে ফিরবে। তখন কী হবে! মাদ্রাসায় শিশুদের ধর্মীয় বিষয় পড়ানো হয়। তাদেরকে কি মানব ধর্ম শেখানো হয়! যদি হয় তবে তারা লাঠি নিয়ে ছোটে কেন?

আর যদি তা না হয় তাহলে তারা মানুষ হবে কীভাবে। প্রকৃত মানুষ হতে হলে মানবতার শিক্ষা অপরিহার্য্য। শিক্ষার পাশাপাশি অনুসরণ করার জন্য সমাজে বাস্তব দৃষ্টান্ত প্রয়োজন। বর্তমানে এক্ষেত্রে দশা খুবই বেহাল। টাউট বাটপারদের প্রশ্নবিদ্ধ লোকদেরকে যেভাবে অগ্রভাগে দেখা যায় তাতে কেবল নিরাশার বাতিটাই চোখে পড়ে। মানব ধর্ম অবশ্য কোথাও তেমনভাবে শেখানো হয়না। ‘মানব ধর্ম’ কথাটাই হয়তঃ অনেকে জানেনা। অধঃপতনের পেছনে এ এক বড় কারণ। ধর্ম বিষয়ে প্রচলিত শিক্ষার ধারণা অসম্পুর্ণ। ধর্ম সম্পুর্ণতঃ একটি বিশ্বাস নির্ভর প্রথা। যিনি যেমন বিশ্বাস করেন তাঁর ধর্ম তেমন।

তাই দেশে দেশে অঞ্চলে অঞ্চলে বিশ্বাস অনুসারে বহু ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছে এবং টিকে আছে,কেউ কাউকে হঠাতে পারেনি। মর্মে গাঁথা বিশ্বাসকে হঠানো কঠিন সে ছোট হোক আর বড় হোক। গ্যালিলীও সহ কোন কোন মনীষি ক্ষেত্রভিত্তিক চেষ্টা করেছিলেন; সফল হননি। সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনেক পরে।

বিশ্বাসসভিত্তিক ধর্ম সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য, অন্যদের উপরে এটা আরোপ করা যায়না। কিন্তু যে ধর্ম সবার উপরে আরোপ করা যায় তার নাম মানব ধর্ম। মানব ধর্মের স্থান তাই সব ধর্মের উপরে। এর একটি প্রধান কাজ ভেদাভেদহীনভাবে সবার মধ্যে সমন্বয় সাধন করা, সকলকে মহান ও সুন্দরের পথের অভিযাত্রী করা। বিশ্বাসসভিত্তিক ও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য হওয়ায় ধর্মকে রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট সাংষ্কৃতিক পরিধির মধ্যে। যে যার সংষ্কৃতি অনুযায়ী ধর্ম পালন করবেন। অন্যের পরিধিতে প্রবেশ করবেন না।

অপরপক্ষে রাষ্ট্র সমাজ রাজনীতি ক্ষমতা -এসব সার্বজনীন বা সবার জন্য। তাই সম্প্রদায় বিশেষের জন্য প্রযোজ্য বিষয়কে এসব থেকে দুরে রাখা দরকার। অন্যথায় সংঘাত অনিবার্য্য। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কি কখনো শিশুদের এবং বড়দেরও এসব শেখায়, অনুসরণ করতে বলে! না শেখালে শিশুরা সমন্বয়বাদী হবে কীভাবে। আর তা না হলে এরা তো অন্যদের তাড়াতে চাইবেই। মনে হয় খুব সুচারু প্রক্রিয়ায় দেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রের পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

Exit mobile version