রোনালদিনহো নামটি শোনেন নি এমন ফুটবল প্রেমি খুজে পাওয়া দুস্কর। সর্বকালের সেরা ড্রিবলার ,অন্যতম সেরা এই ফুটবলার তার ক্যারিয়ারে প্রায় সবকিছুই জিতেছেন । কিন্তু জিততে পারতেন আরো অনেক কিছু , হতে পারতেন ইতিহাসের সেরা ।
সর্বদা হাস্যজ্জল মানুষটি নিজের খারাপ অভ্যাসের কারনে অল্প সময়েই হারিয়ে গিয়েছেন লাইম লাইট থেকে । সর্বশেষ ২০২০ সালে জেতে হয়েছে প্যারাগুইয়ান জেলেও। আজ লিখছি রোনালদিনহো গাউচো কে নিয়ে।
রোনালদিনহো ১৯৮০ সালের ২১শে মার্চ ব্রাজিলের পোরতো আলেগরে নামক শহরে জন্মগ্রহন করেন। ছোটবেলাথেকেই তিনি বিচফুটবল আর এরিনা সকার (ইন্ডোর ফুটবল ) এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। এখান থেকেই তার ফুটবলের প্রতি প্রেম শুরু বলা যায় ।
ফুটবল ক্যারিয়ারে খেলেছেন এটাকিং মিডফিল্ডার ও ফরওয়ার্ড হিসেবে। রোনালদিনহো প্রথম মিডিয়ার নজরে আসেন ১৩ বছর বয়সে যখন তিনি এক লোকাল টিমের সাথে একাই ২৩ টি গোল স্কোর করেন।
তিনি তার ইউথ ক্যারিয়ার কাটান গ্রেমিও (Gremio) নামক ক্লাবের সাথে । আর ১৯৯৮ সালে তার প্রোফেশনাল ফুটবল ক্যারিয়ার ও শুরু করেন গ্রেমিও (Gremio) এর সাথে ।
১৯৯৭ সালের ফিফা অনুর্ধ-১৭ বিশ্বকাপ এবং সাউথ আমেরিকান অনুর্ধ-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপ বিজয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি এবং এর মাধ্যমে বিশ্বকে জানিয়ে দেন তার আগমনী বার্তা।
২০০১ সালে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন (Paris Saint-Germain) এ পাড়ি জমিয়ে তার ইউরোপিয়ান ফুটবল ক্যারিয়ার এর শুরু করেন। রোনালদিনহো তার ক্যারিয়ার এর বেস্ট সময়টা কাটিয়েছেন ২০০২ থেকে ২০০৬ -এ ।
২০০২ বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্রাজিল দল ছিলো তারকায় ঠাসা তারপর ও ২০০২ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপ জয়ী দলের মূল তিন অস্ত্র ছিলো রোনালদিনহো , রোনালদো দি লিমা ও রিভালদো।
২০০৩ সালে যখন বার্সেলোনা (Barcelona) তাকে ৩০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে কিনে নিয়ে আসে ক্যাম্প ন্যুতে । তখন বারসেলোনার অবস্থা ছিলো ছন্ন ছাড়া । একই সাথে বার্সেলোনার কোচ থেকে লুইস ভন গালকে সড়িয়ে সেই বছরি দায়িত্ব দেওয়া হয় ফ্রাংক রাইকার্ডকে ।
বার্সেলোনায় আগমনের পর তিনি হয়ে যান রাইকারডের গেমপ্লানের মেইন ম্যান। তাকে কেন্দ্র করে সাজানো শুরু হয় বার্সেলোনা এটাক । রোনালদিনহো কে দেওয়া হয় পুরো স্বাধীনতা ।
এর মধ্যে সারা ফুটবল বিশ্বে পরিচিত হয়ে যান তার অসাধারন ড্রিবলিং, এজিলিটি আর বল কন্ট্রোলিংয়ের জন্য। ২০০৪-০৫ সিজনে বার্সেলোনা দলে ভেড়ায় ইতো, গুইলি, ডেকোর মতো প্লেয়ারদের । রোনালদিনহোর নৈপুণ্যে ৬ বছরের ট্রফি ক্ষরা কাটাতে সক্ষম হয় বার্সেলোনা। সে বছর নির্বাচিত হন ফিফা প্লেয়ার অফ দা ইয়ার হিসেবে ।
তার ক্যারিয়ারের সেরা বছর কেটেছে ২০০৫-২০০৬ মৌসুমে । ২০০৫ সালের কনফেডারেশন কাপ জেতে ব্রাজিল এবং টুর্ণামেন্ট এর যৌথভাবে টপ স্কোরার হন রোনালদিনহো।
আগের মৌসুমে শুধু লালিগা জিতলেও এই মৌসুমে রোনালদিনহো জেতান লালিগা আর চাম্পিয়ন্স লিগ দুটোই। ২০০৫-০৬ মৌসুমে বার্সেলোনা বনাম রিয়াল্ মাদ্রিদের এল ক্লাসিকোতে তার অমানবিক দক্ষতায় ৩-০ গোলে হারান বার্সেলোনার চির প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদকে । যেই রিয়াল মাদ্রিদ দল ছিলো তারকায় ঠাসা । সেই ম্যাচে রোনালদিনহো করেন অসাধারন ২ টি সলো গোল।
সেই ম্যাচে ইতিহাসে ম্যারাডোনার পর ২য় বার্সেলোনা প্লেয়ার হিসবে সান্তিয়াগো বারনাব্যু তে স্ট্যান্ডিং অভেশন পান এই গ্রেট ফুটবলার। পুরো সিজন ধরে অসাধারন পারফরমেন্স এর কারনে জীবনে প্রথম এবং শেষ বারের মতো জিতে নেন ফুটবলার দের ব্যাক্তিগত সবচেয়ে বড় অর্জন ব্যালন ডি অর এবং ২য় বারের মতো জেতেন ফিফা বেস্ট প্লেয়ার অফ দা ইয়ার এ্যাওয়ার্ড ।
সর্বদা হাস্যজ্জল সবার প্রিয় খেলোয়ারের এরপর থেকেই শুরু হয় তার ফর্ম হারানো , ২০০৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিল কোয়ারটার ফাইনালেই বাদ হয়ে যায় আর রোনালদিনহো ও আলো ছড়াতে পারেননি সেবার। এবার হারিয়ে যেতে থাকেন রোনালদিনহো ।
রোনালদিনহো অনেক পার্টি করতেন , মদ খেতেন এবং মেয়েদের প্রতি তার নেশাই ছিলো চরম । অনেকে এই কারন গুলোকে তার দ্রুত অধঃপতনের কারণ হিসবে দেখে থাকেন ।
২০০৮ সালে রাইকারডের পরিবর্তন হিসবে পেপ গারদিওলাকে কোচ হিসেবে আনে বারসেলোনা , ততদিনে রোনালদিনহো ফর্ম হারিয়ে নিজের ছায়া হয়ে খেলছেন ফুটবল । দায়িত্বে এসেই পেপ রোনালদিনহোকে এসিমিলানের কাছে বিক্রি করেদেন কারণ পেপ চাননি মেসি জাভি ইনিয়েস্তাদের উপর রোনালদিনহোর খারাপ লাইফস্টাইলের প্রভাব পড়ুক ।
আরও পড়ুনঃ লিওনেল মেসি ফুটবল যাদুকর এর জানা অজানা তথ্য
এসি মিলানে যেয়ে হারিয়ে খুজছেন নিজেকে তেমন নোটিসেবল কোনো পারফরমেন্সও পাওয়া যায় নি । ২০১০ সালে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লেমিঙ্গগোতে পাড়ি জমান । এরপর আরো কিছু ক্লাবে খেলেন তিনি যেমন এথলেটিকো মিনেইরো (২০১২-১৪), কুইয়েরতারো(২০১৪- ২০১৫)এবং ফ্লুমেন্সি (২০১৫)।
২০১৩ সালে ন্যাশনাল টিম হতে অবসরের আগে ৯৭ টি ম্যাচ খেলে ৩৩ টি গোল করছেন রোনালদিনহো । তার ক্লাব ক্যারিয়ারের মোট গোল সংখ্যা ২৮০। একটা মজার ব্যাপার হলো ইউটিউবে প্রথম ১ মিলিয়ন ভিউ ছাড়ানো ভিডিও টি হলো রোনালদিনহোর বার চেলেঞ্জ ।
রোনালদিনহো তার ছন্নছাড়া জীবন যাপনের জন্য হয়েছেন প্রায় ব্যাংক রাপ্টও। ২০২০ সালে পযারাগুয়েতে এক এনজিও এর প্রচারনায় যেয়ে জেলে গিয়েছেন জালি পাসপোর্ট ব্যবহার করার দায়ে ।পরে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন যদিও ।
ফুটবল প্রেমীরা এই গ্রেট ফুটবলারের সর্বোচ্চ লেভেলের খেলার সাক্ষী হয়েছেন অল্প কয়বছর, তবুও রোনালদিহোর হাসি এবং শৈল্পীক খেলা সবার কাছেই প্রিয় । বার্সেলোনার খারাপ ফ্যাজ থেকে বের করে আনার জন্য বার্সেলোনা ফ্যানরা রোনালদিনহোকে ক্লাব লিজেন্ড পর্যায়ে রেখেছে।
রোনালদিনহো যেনো তার আগামি দিনগুলা শান্তিতে কাটান এবং আবারো কোনো দিন কোনো মাঠে কোনো দলের কোচ হিসেবে ফিরে আসেন ।
মন্তব্য লিখুন