বুদ্ধির খেলা হিসেবে বেশ জনপ্রিয় ও সুপরিচিত দাবা। ভারতীয়দের আবিষ্কৃত এই খেলা কেবল ভারতবর্ষেই সীমাবদ্ধ থাকে নি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ দাবায় পারদর্শী হয়ে উঠেছে। দাবা নিয়ে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন দেশের মানুষের অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। এমনকি দাবা নিয়ে রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নানান আয়োজন। প্রধান প্রতিযোগিতা হিসেবে অনুষ্ঠিত হয় World Chess Championship. এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন তুখোড় খেলোয়াড়েরা সেরার মুকুট অর্জন করেছেন। সেরকমই ৫ জন বিশ্বসেরা দাবাড়ু নিয়েই এই প্রতিবেদন।
ম্যাগনাস কার্লসেনঃ
বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দাবাড়ু ম্যাগনাস কার্লসেন। ১৯৯০ সালের ৩০ নভেম্বর নরওয়েতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ২০০২ সালে World U12 Chess Championship এ দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন কার্লসেন।
২০০৪ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই গ্র্যান্ডমাস্টার হন তিনি। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে নরওয়ের জাতীয় পর্যায়ের দাবা প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ২৮০০ নাম্বার নিয়ে FIDE তে প্রথম স্থানে পৌঁছে যান কার্লসেন।
২০১৩ সালে World Chess Championship এ সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। ১৯ বছর বয়সী ম্যাগনাস কার্লসেন সেবছর বিশ্বনাথন আনন্দকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হন। পরের বছর একইসাথে World Rapid Championship এবং World Blitz Championship এ জয়লাভ করেন তিনি। একইসাথে ৩টি ক্যাটাগরিতে সেরা হওয়া প্রথম খেলোয়াড় কার্লসেন।
২০১৯ সালেও তিনি একইসাথে ৩টি টাইটেল অর্জন করেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে আক্রমণাত্মক খেলার জন্য পরিচিত হলেও ধীরে ধীরে তিনি প্রায় সব রকমের কৌশল অবলম্বন করতে থাকেন। একেক সময় একেক ওপেনিং ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করে দেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন Middlegame তার সবচেয়ে বেশি পছন্দের।
World Chess Championship এ ২০১৩ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ম্যাগনাস কার্লসেন চ্যাম্পিয়ন। তার PIDE রেটিং ২৮৬২ এবং সর্বোচ্চ রেটিং ২৮৮২।
গ্যারি ক্যাসপারোভঃ
রাশিয়ান এই দাবাড়ু জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৬৩ সালের ১৩ এপ্রিল। ১৯৮০ সালে গ্র্যান্ডমাস্টার হন তিনি। ১৯৮৫ সালে ২২ বছর বয়সে প্রথমবারের মত তিনি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হন। ১৮৮৫ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত অবিতর্কিত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ছিলেন গ্যারি।
১৯৯৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ছিলেন ক্লাসিক চেজের চ্যাম্পিয়ন। ১৯৯৭ সালে IBM এর সুপার কম্পিউটার Deep Blue এর কাছে দাবায় পরাজিত হয়ে ক্লাসিকাল চ্যাম্পিয়নের খেতাব হারান।
২০০৫ সালে পেশাদারি দাবা থেকে অবসর নেন সর্বোচ্চ রেটিংসহ। এরপর রাজনীতি ও লেখালেখি শুরু করেন গ্যারি ক্যাসপারোভ। তার FIDE রেটিং ২৮১২ এবং সর্বোচ্চ রেটিং ২৮৫১।
ববি ফিশারঃ
আমেরিকান দাবাড়ু ববি ফিশারের জন্ম ১৯৪৩ সালের ৯ মার্চ। ১৯৫৮ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৩ বছর বয়সে তার উল্লেখযোগ্য একটি জয়ের রেকর্ড রয়েছে যা The Game of the Century নামে পরিচিত।
US Chess Championship এ সেসময়ের সর্বকনিষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন তিনি। সেসময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। ১৯৬৩-৬৪ সালের US Championship এ ১১টি খেলার সবগুলোতে জয়ী হন তিনি যা US Championship এর ইতিহাসের Perfect Score নামে পরিচিত ।
১৯৭২ সালে আমেরিকা ও রাশিয়ার (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে World Chess Championship এ রাশিয়ান খেলোয়াড় Boriss Spassky কে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হন তিনি। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি এই খেতাব বজায় রাখেন। তার সর্বোচ্চ রেটিং ২৭৮৫। ২০০৮ সালের ১৭ জানুয়ারি ৬৪ বছর বয়সে মারা যান ববি ফিশার।
বিশ্বনাথন আনন্দঃ
ভারতীয় দাবাড়ু বিশ্বনাথন আনন্দ ১৯৬৯ সালের ১১ ডিসেম্বর চেন্নাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালে গ্র্যান্ডমাস্টার হন। ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।
২০১৩ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে ম্যাগনাস কার্লসেনের কাছে পরাজিত হন তিনি। ক্যারিয়ারের শুরুতে অসাধারণ দ্রুততার সাথে দাবা খেলার জন্য তাকে Lightning Kid বলা হত। তিনি তার সময়ের সেরা Rapid Chess Player হিসেবে স্বীকৃত।
২০০০ সালে জয় করেছিলেন World Blitz Cup. ১৯৯১-৯২ সালে তিনিই প্রথম Rajiv Gandhi Khel Ratna পুরস্কার লাভ করেন যা ভারতের খেলাধুলা বিভাগের সর্বোচ্চ পুরস্কার। এছাড়াও ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদক পদ্মবিভূষণ জয়ী প্রথম খেলোয়াড়ও বিশ্বনাথন। তার FIDE রেটিং ২৭৫৩ এবং সর্বোচ্চ রেটিং ২৮১৭।
আনাতলি কারপোভঃ
রাশিয়ান এই দাবাড়ুর জন্ম ১৯৫১ সালের ২৩ মে। তিনি গ্র্যান্ডমাস্টার হন ১৯৭০ সালে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ছিলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ১৬০টিরও বেশি খেলা অসাধারণ ভাবে শেষ করার জন্য তার বেশ পরিচিতি রয়েছে। আনাতলি কারপোভের FIDE রেটিং ২৬১৭ এবং সর্বোচ্চ রেটিং ২৭৮০।
আরও পড়ুনঃ উসাইন বোল্ট: বিশ্বের সেরা দৌড়বিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী
ছবিঃ সংগৃহীত
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া