টেলিভিশনে খেলা দেখছেন, হটাৎ বোলার এত দ্রুত বল করলো যে বল নিমিষেই কিভাবে গেলো বুঝতেই পারলেন না। আপনি যা ভাবছেন সেটাই। বলছি রাজকীয় খেলা ক্রিকেটের ফাস্ট বোলারদের কথা। এ নিয়ে বলা শুরু করলে গতি দানব ডেনিস লিলি, ব্রেট লি, শেন বন্ড, ম্যালকম মার্শাল, অ্যালান ডোনাল্ড ,ওয়াকার ইউনুস সহ বিশ্বখ্যাত অনেক পেস বোলারদের নাম উঠে আসবে। কিন্তু ক্রিকেটের ইতিহাসে স্বর্ণালী অক্ষরে লেখা বল হাতে সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলার হবার রেকর্ডটি পাকিস্তানের স্পিডস্টার শোয়েব আখতার এর দখলে। ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস‘ নামে অধিক পরিচিত এ পেসারকে ক্যারিয়ায়ের প্রথম দিকে গতি বাড়ানোর জন্য ড্রাগ নেবার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো বলে স্বীকার করেছেন। তো চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
শোয়েব আখতার এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়
পাকিস্তানের সাবেক ডানহাতি ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার ১৯৭৫ সালের ১৩ আগষ্ট পান্ঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডির কাছে মরগা শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শোয়েব আখতার এর টেস্টে অভিষেক হয় ১৯৯৭ সালের ২৯ নভেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বোলিংয়ের মধ্য দিয়ে (ক্যাপ ১৫০)। অন্যদিকে, ওয়ানডে ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৯৯৮ সালের ২৩ মার্চ (ক্যাপ ১২৩)।
শেষবারের মতো তিনি টেস্ট ক্রিকেট খেলেন ২০০৭ সালের ৮ ডিসেম্বর (পাকিস্তান বনাম ভারত)। অপরপক্ষে, ওডিআইতে যাত্রার সমাপ্তি ঘটান ২০১১ সালের ৮ মার্চ (নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে)। বর্তমানে তিনি স্টার স্পোর্টসের হিন্দি ধারাভাষ্যকার।
শোয়েব আখতার এর রেকর্ড ও সাফল্য
ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ গতিতে বল করার অর্জনটি শোয়েব আখতারের।এছাড়া ঘন্টায় ১০০ মাইলের বেশি গতিতে বল করা বিশ্বরেকর্ড করা প্রথম ফাস্টবোলারও তিনিই।
২০০২ সালের ২৭ এপ্রিল কিউই ব্যাটসম্যান ক্রেইগ ম্যাকমিলানকে স্পিডোমিটারে ঘন্টায় ১০০.০৪ মাইল গতিসম্পন্ন বলটি করেন তিনি।এটি ছিলো লাহোরে অনুষ্ঠিত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ।
আমরা মাঝে মধ্যে একটা কথা শুনতে পাই : ‘নিজের সাথে যুদ্ধ করো,প্রতিযোগিতা করো’।এ কথাটিকে অক্ষরে অক্ষরে যেন মেনে চলেছেন এ গতি তারকা।তাঁর এই সাফল্যের পরে যেন তিনি নিজের সাথে নিজে লড়ার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছিলেন।
পরবর্তীতে তিনি নিজের করা বিশ্বরেকর্ড নিজেই ভেঙে নতুন রেকর্ড করেছিলেন।এখানে উল্লেখ্য যে ,ফাস্টবোলিংয়ের ক্ষেত্রে তাঁর পূর্বের রেকর্ডটি ছিলো অস্ট্রেলিয়ার পেস বোলার জেফ টমসনের।
জেফ টমসন রেকর্ডটি করেছিলেন ১৯৭৫ সালে যা ছিলো ঘন্টায় ৯৯.৮ মাইলে বল করার কীর্তি। এই রেকর্ড ভাঙতে বেশিদিন সময় নেন নি এই ফাস্টম্যান।
এক বছরের মাথায় ২০০৩ সালে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে তিনি তাঁর ক্রিকেট জীবনের সবচেয়ে গতিসম্পন্ন বলটি করেন।দক্ষিণ আফ্রিকার নিউল্যান্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে করা বলটির গতি ছিলো ঘন্টায় ১৬১.৩৭ কিলোমিটার।
তাঁর এই রেকর্ড আজ অবধি কেউ ভাঙতে পারে নি যা মাইলে হিসাব করলে ছিলো ঘন্টায় ১০০.২ মাইল।এছাড়াও ঘন্টায় ১৫৯.৩ কিলোমিটার, ১৬০ কিলোমিটার, ১৫৯ কিলোমিটার, ১৫৮.৪ কিলোমিটার গতিতে বল করার কৃতিত্ব তাঁর রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ
মাহেন্দ্র সিং ধোনি: ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা কিংবদন্তী
লিওনেল মেসি ফুটবল যাদুকর এর জানা অজানা তথ্য
বিশ্বজয়ী সর্বকালের সেরা ৫ দাবাড়ু
বোলিংয়ের কিছু পরিসংখ্যান
তিনি টেস্ট ক্রিকেটে ৮,১৪৩ টি বল করেছেন যেখানে উইকেট নিতে পেরেছিলেন ১৭৮ টি (বোলিং গড়:২৫.৬৯)।অন্যদিকে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৭৭৬৪ টি বল করে বিপরীতে ২৪৭ টি উইকেট লাভ করেছিলেন যেখানে বোলিং গড় ২৪.৯৭।
টি২০ তে ৩১৮ বলের ক্যারিয়ারে ১৯ টি উইকেট পান (বোলিং গড়:২২.৭৩)।টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর সেরা বোলিং ৬-১১ লাহোরে হওয়া পাকিস্তান বনাম নিউজিল্যান্ডের ম্যাচে (২০০২)।
যেটা ওয়ানডের ক্ষেত্রে ৬-১৬ যা একই বছরে একই দলের বিপক্ষে করাচীতে করেছিলেন।টি২০ তে তাঁর সেরা অর্জনটি দেখা যায় ২০০৮ সালের অন্টারিওতে পাকিস্তান বনাম কানাডার ম্যাচে (২-১১)।
শোয়েব আখতার এর সাম্প্রতিক তথ্য
শোয়েব আখতার প্রধান অতিথি হিসেবে পাকিস্তানের মাদকবিরোধী বাহিনীর (এ.এন.এফ)বার্ষিক মাদক বা ড্রাগ ধ্বংসকরণ অনুষ্ঠানে যান। সেখানে তিনি মাদক বিষয়ে তাঁর জীবনের ঘটনার কথা স্বীকার করেন।
তিনি যখন ক্রিকেটে অভিষেক করেন ,তখন তাকে দ্রুতগতির বল করার জন্য ড্রাগ বা মাদক গ্রহণের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয় বলে জানান।কিন্তু এই প্রস্তাবে তিনি সাড়া দেননি বলেও উল্লেখ করেন।
কোনরকম ওষুধ বা মাদকের ব্যবহার ছাড়াই বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ফাস্ট বোলার হবার মাইলস্টন ছুঁতে পেরেছিলেন তিনি।
পাকিস্তানের এক ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার ধ্বংসের কারণ ছিলো মাদক।
যদিও সেই ক্রিকেটার বা বোলারের নাম তিনি বলেন নি কিন্তু পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ আসিফের দিকেই ইশারা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এক পর্যায়ে কথার প্রসঙ্গে ফিট থাকার জন্য পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক,ইমরান খানকে তরুণ সমাজকে অনুসরণ করতে বলেছেন।
ইমরান খানের মতো নিয়মিত ব্যায়াম,সকালে উঠে ভ্রমণে বের হওয়া ইত্যাদি করার পরামর্শ দিয়েছেন। দ্রুত কাজে সাফল্য অর্জনের জন্য অনেক সময় অনৈতিক পথে হাঁটতে শুরু করে অনেকে।কিন্তু সে পথে দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য অর্জন করা যায় না।
এই নীতিবাক্যটিই শিখিয়েছেন রেকর্ডধারী ফাস্টবোলার শোয়েব আখতার । এটি শুধু ক্রিকেটের মাঠের জন্য নয় বরং জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ছবিঃ সংগৃহীত