সবজি ক্ষেতের সাথে আমরা সবাই কমবেশী পরিচিত। কিন্তু ভাসমান সবজি ক্ষেত? একটু অবাক করার ব্যাপার। পানির উপর বেড বানিয়ে তার উপর যে সবজি চাষ করা হয় তাকেই ভাসমান সবজি ক্ষেত বলে।
বর্ষাকালে যখন চারিদিক পানিতে প্লাবিত তখন কৃষকদের আশার একমাত্র সম্বল এ ভাসমান সবজি ক্ষেত। এছাড়া জলাশয়ে এ ভাসমান সবজি ক্ষেত পিরোজপুর ও বরিশালের কৃষকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়।
মাটি ছাড়া পানিতে চাষাবাদের বিজ্ঞানীদের দেওয়া কেতাবী নাম হাইড্রোপনিক পদ্ধতি। এছাড়াও ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর এ ভাসমান সবজি ক্ষেতকে বিশ্ব কৃষি ঐতিহ্যভুক্ত করা হয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এ পদ্ধতিকে গ্লোবালি ইম্পট্যান্ট এগ্রিকালচারাল হেরিটেজ সিস্টেম বলে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।
ভাসমান সবজি ক্ষেত তৈরির পদ্ধতিঃ
জলজ জঞ্জাল, শ্যাওলা, ফ্যানা, খড়কুটা, নারকেলের ছোবড়া ও কচুরিপানা এর মিশ্রন দিয়ে এ ক্ষেত তৈরি করা হয়। ৬ হাতে ১ নল বলা হলে একটি বেড লম্বায় ১০ থেকে ১৫ নলের মধ্যেই থাকে।
অর্থাৎ এটি ৫০-৬০ মিটার লম্বা এবং দেড় মিটার চওড়া হয়। এটি পানির উপর ইচ্ছামত নাড়া চাড়া করা যায়। দক্ষিনাঞ্চলের কৃষকেরা দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় উদ্ভাবন করেছেন এ পদ্ধতি।
উৎপাদিত সবজি সমূহঃ
কৃষকেরা এ ভাসমান সবজি ক্ষেতে বানিজ্যিক ভাবে বিভিন্ন শাকসবজি, তরিতরকারীর চারা ও বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করেন।
যেমন-লাউ, শিম, কুমড়া, ফুলকপি, ওলকপি, বরবটি, করলা,পুঁইশাক, মিষ্টিকুমড়া ধনেপাতা, ডাঁটা, টমেটো, হলুদ, আদা, মরিচ, চিচিঙ্গা, পেঁপে।এছাড়াও এর উপর ধান চাষ করা যায়।
ভাসমান সবজি ক্ষেতের উপকারিতাঃ
১. আগে বর্ষাকালে কৃষকরা ক্ষেত প্লাবিত হলে কর্মহীন হয়ে বসে থাকত কিন্তু এখন আর তার সুযোগ নেই। এ পদ্ধতির মাধ্যমে তারা এ সময়ও চাষাবাদ করে সচল রাখছে পরিবারের আয়ের খাত।
২. কৃষি জমির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায় এ পদ্ধতি।
৩. দীর্ঘদিন পর্যন্ত একই বেডে ফসল ফলানো যায়।
৪. এটি পঁচে গেলে কম্পোস্ট সার হিসাবে তা ক্ষেতে ব্যবহার করা যায়।
৫. এটি পরিবারে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে।
৬. পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এখানে কাজ করতে পারে।
ভাসমান এ সবজি ক্ষেত দিনেদিনে আমাদের দেশে ব্যাপক ভাবে বিস্তৃতি লাভ করছে। এ ক্ষেতে একটি অংকুর রোপন করার ২০-২২ দিনের মধ্যে তা পূর্ণবয়স্ক চারা হয়ে উঠে।
১০ নলের একটি বেডে ১২শ লাউ, ৪ হাজার পেঁপে কিংবা ৪ হাজার মরিচের চারা লাগানো যায়। এতে করে বর্ষা মৌসুমে দেশের সর্বত্র শাকশবজির সংকট ঘুচবে। এছাড়া এতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার হয় না ফলে এটি হয় স্বাস্থ্যসম্মত।
তাই আমরা আশা করতে পারি এটি আমাদের আগামী দিনের জন্য সুফল বয়ে আনবে। এছাড়া আমাদের যুবসমাজ এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে ঘুচাতে পারে বেকারত্বের অভিশাপ।
আরও পড়ুনঃ ড্রাগন ফল এর উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি