পেঁপে চাষ বর্তমানে আমাদের দেশে অর্থ উপার্জনের একটি অন্যতম মাধ্যম। বানিজ্যিক ভিত্তিতে পেঁপে চাষ এর জন্য খুব বেশি বিনেয়োগের প্রয়োজন হয় না। যার ফলে এখানে ঝুকির পরিমানও অনেক কম। তাছাড়া বানিজ্যিক ভাবে পেঁপে চাষ করলে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি পারিবারিক চাহিদাও মেটানো সম্ভব।
পেঁপেকে আমরা একটি অতিপরিচিত সুস্বাদু ফল হিসেবে জানি। পেঁপে গাছ ৩-১০ ফিট লম্বা হয়ে থাকে, তবে কখনও কখনও এর থেকে বেশি লম্বা হতে পারে। পেঁপে গাছের পাতা বেশ বড়, ছত্রাকার ও সবুজ রং এর হয়ে থাকে।
পেঁপের কাঁচা ফল সবুজ ও পাকা ফল হলুদ বর্ণের হয়। পেঁপে একটি ভটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ ফল। কাচা পেঁপেতে অনেক পেপেইন নামক হজমকারী দ্রব্য থাকে। যা কৃমি, আলসর, ত্বকে ঘা, কিডনি ও ক্যান্সার প্রতিশেধকের কাজ করে।
পেঁপে কাচা ও পাকা সময় খাওয়া যায়, তবে পাকা সময় ফল ও কাচা সময় সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। পেঁপেকে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় অর্থকারী ফষলও বলা হয়।
জলবায়ু অনুসারে বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালের ফষলের মধ্যে পেঁপে অন্যতম ও চাষাবাদের জন্য এ সময়টা সবচেয়ে ভাল । পেঁপে গাছ জমিতে অধিক পরিষরে বা বাড়ির আঙিনায় লাগাতেও পারেন। আমাদের দেশে পেঁপে চাষের জন্য দোঁয়াশ বা বেলে-দোঁয়াশ মাটি বেশ উপযোগী।
বাংলাদেশে পেঁপের অনেক জাত পাওয়া যায়, তবে তার মধ্যে ভাল পেঁপের জাত গুলো হচ্ছ যেমনঃ কাশিমপুরী পেঁপে, যশোরী পেঁপে, রাচি পেঁপে, নউন ইউ পেঁপে, হানি পেঁপে, ছোট পেঁপে, বড় পেঁপে, শাহী পেঁপে।
পেঁপে চাষের মাটি নির্বাচনঃ
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তবে পেঁপে চাষের জন্য দোঁয়াশ ও বেলে-দোঁয়াশ মাটি বেশি উপযোগী।
পেঁপে চাষের আইল পদ্ধতিঃ
পেঁপে চাষের জন্য আইল পদ্বতি বেশ জনপ্রিয় ও কার্যকরী। পেঁপে চাষের আইলের দৈর্ঘ্য ২২ মিটার বা তার চেয়ে বেশি, প্রস্থ ৪৫-৫০ সেন্টিমিটার। উচু-চওড়া আইল পেঁপে চাষের জন্য নির্বাচন করা উত্তম। মাদা থেকে মাদার দূরত্ব হবে ২.৫ মিটার ও মাদার আয়তন হবে ৩০*৩০*৩০ সেন্টিমিটার রাখতে হবে।
চারা রোপনের সময়ঃ
এপ্রিল মাস পেঁপে চারা রোপনের উপযুক্ত সময়। তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে পেঁপে চারা রোপন করা যায়।
সেচ প্রদানঃ
পেঁপে গাছের জন্য শীতকালে প্রতি ১০-১১ দিন পর পর এবং গ্রীস্মকালে ৫-৬ দির পর পর সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয়। মনে রাখতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি না জমে। তার জন্য নালা কেটে সেচ দিতে হবে।
পেঁপে গাছে সার প্রয়োগঃ
শুরুর দিকে প্রতিটি গাছে যে পরিমান সার দিতে হবে তাহালো- ৫৫০ গ্রাম টিএসপি সার, ১৫ কেজি জৈব সার, ৫৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ৫৫০ গ্রাম এমওপি সার, ২৫০ গ্রাম জিপসাম সার, ২৫ গ্রাম বোরাক্স সার এবং ২০ গ্রাম জিংক সালফেট ইত্যাদি ভালভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সার ছাড়া সব সার গর্ত তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। গাছে নতুন পাতা আসলে ইউরিয়া ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি ১ মাস পর পর প্রয়োগ করতে হয়। গাছে ফুল আসলে এ মাত্রা দ্বিগুণ করতে হবে।
গাছের রোগবালাইঃ
পেঁপে গাছে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই হয়ে থাকে যেমনঃ পেঁপে ঢলে পরা, গাছ মরা, জীবানুর আক্রমনে বর্ষা মৌসুমে গাছের কান্ড পচা, পিথিয়াম এ্যাফানিডারমাটাম নামক ছত্রাকের আক্রমন। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে বা সেচের পানিতে এ রোগের জীবানু বেশি ছরায়।
আরও পড়ুনঃ বাউকুল চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হউন
প্রতিকারঃ
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা, ২ গ্রাম নোইন বা কারজিম ব্যবহার, আক্রান্ত গাছ উঠিয়ে পুড়ে ফেলা। এর পরেয় পোকা দমন না হলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
পেঁপে গাছের পরিচর্যাঃ
ফল সংগ্রহঃ
সাধারনত একটি পেঁপে গাছে বছরে প্রায় ৫০ থেকে ৭০ টি পেঁপে হয়ে থাকে। যা কৃষকের জন্য অনেক লাভজনক। পেঁপে ফল সাধারনত দুই সময় সংগ্রহ করা হয়।
প্রথমে ফলের গায়ের কষ যখন পানি আকার ধারন করে তখন সেটাকে আমরা কাচা পেঁপে হিসেবে সংগ্রহ করতে পারি। দ্বিতীয়, ফলের গায়ের রং যখন হলদে আকার ধারন করবে তখন সেটাকে আমরা পাকা পেঁপে হিসেবে সংগ্রহ করতে পারি।
পেঁপে একটি জনপ্রিয় কৃষিজাত ফল। বাংলাদেশে প্রায় সব অঞ্চলই পেঁপে চাষের উপযোগী। তাই বানিজ্যিক ভিত্তিতে পেঁপে চাষ, পারিবারিক চাহিদা ও পুষ্টি পূরণের পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনে বড় ভুমিকা পালন করে। যা কিনা একজন কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মন্তব্য লিখুন