ইট, কাঠ,পাথর দিয়ে আষ্টে পৃষ্ঠে মোড়ানো আমাদের শহর গুলি। সেখানে কেবল যান্ত্রিকতার ছোয়া, সেখানে সবুজ নেই, ছাদ বাগান নেই, খোলা বাতাসে প্রান ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ নেই, সেখানে প্রান নেই। কিন্তু আমরা যে চির সবুজে অভ্যস্ত ।
গ্রাম বাংলার ছোয়া নগরজীবনে তুলে আনতেই মূলত ছাদ বাগান গড়ে তোলার প্রয়াস। আগে ছাদ কেবলই হাঁটাহাঁটি বা সামান্য কাজ করার জায়গা ছিল কিন্তু এখন সচেতন মানুষেরা ছাদের জায়গাটুকু ব্যবহার করছে নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে একখন্ড সবুজের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার তাগিদে।
ছাদ বাগান বিভিন্ন আঙ্গিকের হতে পারে এবং তা সম্পূর্ন নির্ভর করে ব্যাক্তির রুচি বা পছন্দের উপর। কেউ কেউ ছাদে কেবল ফুল গাছ রোপন করেন, কেউ কেউ ফলের চাষ করেন আবার কেউ কেউ ফুল ফল সবজি সহ সব ধরনের উদ্ভিদ নিয়েই গড়ে তোলেন ছাদ বাগান।
ছাদ বাগান এখন শুধু শৌখিনতায় সীমাবদ্ধ নয় এখন একে প্রয়োজন ও বলা চলে । একটি ছাদ বাগান থেকে একটি পরিবারের সবজি বা ফলের জোগান দেওয়া সম্ভব ।
তাই যেসব মানুষ সচেতন তারা বাহিরের ভেজাল যুক্ত সবজি বা ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য হলেও একান্ত ব্যাক্তিগত উদ্যোগে নিজের ছাদেই শুরু করেছেন কৃষিকাজ।
সারাদিন ব্যয় করার দরকার হয়না ছাদ বাগানে, কেবল নিজের অবসর সময়টুকু সঠিক ব্যবহার করাই যথেষ্ট। ব্যাক্তির পছন্দ অনুযায়ী ড্রাম , বালতি , টব বা ট্রেতে রোপন করা হয় নানা ধরনের গাছ।
আবার অনেকে পরিকল্পনা মাফিক ছাদে চারা রোপনের স্থায়ী বেড তৈরি করে নেন । পানি নিষ্কাশনের সু ব্যাবস্থাও রাখা হয়। যদিও আমাদের দেশে এখনও ছাদ বাগান তৈরির জন্য তেমন কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা বা পরিকল্পনা নেই।
ছাদ বাগান তৈরির আগে ছাদের মাপ অনুযায়ী গাছ লাগানোর একটা খসড়া করে নেয়া ভাল এতে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে ছাদ কোনভাবে ড্যাম্প না হয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ ড্রাগন ফল এর উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি
ছাদকে স্যাঁতস্যাঁতে হওয়ার থেকে রক্ষা করতে টব বা ড্রাম গুলো ইটের উপর রাখা যেতে পারে বা ছাদে নেট ফিনিশিং দেয়া যেতে পারে । গাছের পাতা যেন ছাদে জমা না হয়ে থাকে সেদিকেও বিশেষ খেয়াল রাখা জরুরি ।
গাছের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার পেছনে যা সবথেকে বেশি দরকার তা হল উপযুক্ত মাটি । তাই ছাদ বাগানের জন্য প্রথমেই মাটিকে উপযুক্ত করে নিতে হবে । টব বা ড্রামের তলায় কিছু টুকরো ইট বিছিয়ে দেয়া ভাল।
সমপরিমান দোয়াঁশ মাটি ও গোবর মিশিয়ে তাতে প্রয়োজনীয় সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিতে হবে। এই মাটির সাথে সামান্য পরিমান বালি এবং কোকো পিট ও ব্যবহার করা যায় । মাটি তৈরি করার অন্তত ১০-১২ দিন পর এই মাটিতে গাছ লাগানো যেতে পারে ।
যে পাত্রে গাছ লাগানো হবে তার নিচে যেন অবশ্যই ৩-৪ টি ছট ছিদ্র থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে নাহলে অতিরিক্ত পানি বের হওয়ার সুযোগ থাকবে না ফলে গাছের মুল পচেঁ যাবে।
ছাদ বাগান গড়ে তুলতে কিছু যন্ত্রপাতি সংরক্ষন করা জরুরি যেমন – স্প্রে মেশিন , কোদাল , কাঁচি , নিড়ানি , ঝুড়ি বা খুপড়ি , ঝরনা , বালতি ইত্যাদি ।
আম, আমড়া, পেঁপে, মালটা, সফেদা, আনারস, শসা, লেবু, ডালিম ইত্যাদি।
লালশাক, পুঁইশাক, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, মরিচ, বেগুন, টমেটো, ঝিঙে, করলা ইত্যাদি
গাছের রোগবালাই দমনে পরিচর্যা আবশ্যক তার সাথে কিছু কিটনাশক ও ব্যবহার করা ভাল। নগরায়ন বাড়ছে সারা বিশ্বে । এখন সবুজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ছাগ বাগানের ভুমিকা অনস্বিকার্য ।
তাছাড়া একটি ছাদ বাগান ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে এবং মনকেও সতেজ রাখায় গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখে । তাই আমাদের জনসচেতনতা সৃষ্টি করে প্রত্যেককে নিজের অপ্রয়জনীয় জায়গাকে সঠিক কাজে ব্যবহার করতে আগ্রহী করে তুলতে হবে ।
ছবিঃ সংগৃহীত
মন্তব্য লিখুন