বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতি কথাটা শুনলে আমাদের মনে প্রথম যে কথাটা আসে তা হলো এরা হয়ত অনেক ধনী। ঠিক কতটা ধনী তা হয়ত আন্দাজ করতে পারি না অনেকে। কেননা বিলিয়নিয়ার শব্দটার সাথে অনেকের পরিচিতি না থাকলেও কোটিপতি শব্দটার সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। ১০০০ মিলিয়ন =১বিলিয়ন। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন বিলিয়নিয়াররা কত শত কোটি টাকার মালিক। এরা সকলে কিন্তু আবার ১ বিলিয়নের মালিক নন। কারণ ভালোর যেমন কোন শেষ নেই ঠিক তেমনি ধনীদের টাকার পাহাড় গড়ারও কোন শেষ নেই। আর এমন অনেক ধনী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আমাদের পুরো বিশ্বে।
তবে শত কোটিপতির দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে চীনের বেইজিং শহর, বর্তমানে ১০০জন শতকোটিপতি বসবাস করেন এই শহরে। ২য় অবস্থানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউওর্য়াক শহর। ৯৯ জন শতকোটিপতি বাস করেন নিউওয়ার্কে। চলুন জেনে নেয়া যাক শত কোটিপতির শহর চীনের বেইজিং সম্পর্কে।
বিশ্বের অন্য সব শহরের চেয়ে চীনের বেইজিং শহরে এখন সবচেয়ে বেশী বিলিয়নিয়ার বসবাস করে। যুক্তরাষ্ট্রেরর বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস ৩৫তম বার্ষিক বিলিয়নিয়ারদের তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকা থেকে দেখা যাচ্ছে বেইজিং শহরে নতুন করে ৩৩ জন শত কোটিপতি হয়েছেন।
বর্তমানে ১০০ জন শত কোটিপতির বাস এ শহরে। গত বছরের তুলনায় ২০২১ সালে বিশ্বে বিলিয়নিয়ার বেড়েছে ৬৬০ জন। একবছরে এতজন এই শতকোটি ডলারের ক্লাবে এর আগে কখনো ঢুকতে পারে নি। ৬৬০ জন বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে ৪৯৩ জনই প্রথম বারের মতো বিলিয়নিয়ার হয়েছেন। অর্থাৎ বিশ্বে প্রতি ১৭ ঘন্টায় একজন ব্যক্তি বিলিয়নিয়ার হয়েছেন। আর গোটা দুনিয়ায় বিলিয়নিয়ারেরর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৭৫৫ জনে উন্নীত হয়েছে। তাদের সম্মিলিত সম্পদের নিট মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন বা ১৩ লাখ ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
এ করোনা মহামারির ভিতর ও বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রশ্নে বিশেষজ্ঞরা বলেন,করোনা মহামারি বিশ্বব্যাপী ব্যবসা বানিজ্যসহ অর্থনীতিকে ওলটপালট করে দিলেও অতিধনীদের বা বিলিয়নিয়ারদের কিছুই হয়নি। মহামারি চলাকালে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্ট কোম্পানিগুলো আরও বড় হয়েছে। এখন বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষের কেনাকাটা জীবন অনলাইননির্ভর হয়ে পড়েছে। যা এই ধনীদের আরও ধনী করেছে।
শতকোটিপতির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে সমাজে তার কী প্রভাব পড়ছে সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। একটি পক্ষ জোর দিয়ে বলছে এর ফলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেনির মানুষের আয়ের বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার নৈতিকতার দিকটির ওপর।
বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ক্যারেলিন ফ্রয়েন্ড ২০১৬ সালে একটি বই লিখেছেন, ধনী ব্যক্তি:গরিব দেশ নামে।
বিবিসিকে তিনি বলেছেন, সব ধনী ব্যক্তিকে একই চোখে দেখলে হবে না। একটা প্রবণতা আছে যে বিত্তশালীরা সম্পদের অপব্যবহার করে থাকেন। নানাভাবেই সম্পদ গড়ে তোলা যায়। আর সেই সম্পদ কী ধরণের তার ওপরেও নির্ভর করে সমাজে তার কী প্রভাব পড়তে পারে।
তিনি আরও বলেন, যে সব বিলিয়নিয়ার নিজের চেষ্টায় ধনী হয়েছেন যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, তাদের কাছ থেকে অন্যরা লাভবান হয়ে থাকেন। কিন্তু যারা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ব্যক্তি মালিকানার মাধ্যমে ধনী হয়েছেন তাদের মাধ্যমে সমাজে খুব একটা কোন উপকার আসে না।
বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, চীনে ২০১৬ সালে মাত্র এক শতাংশ মানুষের কাছে যত সম্পদ ছিল তার পরিমাণ দেশটির মোট সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ। ২৫ শতাংশ দরিদ্র মানুষের কাছে ছিল মাত্র ১ শতাংশ সম্পদ।
বিশ্বের অন্য যে কোন বড় দেশের তুলনায় চীন দ্রুত করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রন করতে পেরেছে। সেই সঙ্গে প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর উন্নতি ও শেয়ারবাজারের উত্থান তাদের এই শীর্সস্থানে নিয়ে এসেছে। এ থেকে বোঝা যায় পরিশ্রম করলে যে কোন পরিস্তিতিতেই উন্নতি করা সম্ভব।
সমাজে ধনী ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে জীবননযাত্রার মানেরও উন্নতি ঘটে। তবে খেয়াল রাখতে হবে উন্নয়নটা যেন হয় সৎ পথে। বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সমাজের অন্য মানুষের উপর যেনো কোন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সে দিকেও নজর দিতে হবে। তাহলেই এই উন্নতি সমাজ তথা দেশের জন্যও মঙ্গলকর হবে।
মন্তব্য লিখুন