দ্য গ্রেট ব্লু হোল: সমুদ্রের বুকে এক বিশাল রহস্য

দ্য গ্রেট ব্লু হোল, নামটি যারা প্রথমবার শুনছেন তারা হয়তো একটু বিস্মিত হলেন। ভাবছেন “ব্লু হোল” এটা আবার কি? হয়তো  ভাবছেন  ব্লাক হোলের মতো খুব রহস্যময় কিছু এই ব্লু হোল।

আপনি যা ভাবছেন আসলে তা কিছুই না। দ্য গ্রেট ব্লু হোল পৃথিবীতেই অবস্থিত এবং ডুব সাঁতার বা স্কুবা ডাইভিং এর জন্য প্রসিদ্ধ একটি স্থান। তবে ব্লাক হোলের মতো জটিলতা না থাকলেও রহস্যের কমতি নেই এই ব্লু হোলে। চলুন তাহলে ডুব দেই এই দ্য-গ্রেট-ব্লু-হোল এর গভীরে।

আমাদের মহাবিশ্বে যেমন অসংখ্য রহস্য লুকিয়ে আছে তেমনি আমাদের পৃথিবীতেও লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। তার মধ্যে একটি হলো এই “দ্য গ্রেট ব্লু হোল”। মধ্য আমেরিকার পূর্বদিকে বেলিজ এর সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত এই ব্লু হোল, হলো সমুদ্র গর্ভস্থ একটি বিশাল গর্ত।

এটি বেলিজ সিটি থেকে প্রায় ৬০ মাইল দূরে উপকূলবর্তী বেরিয়ার রিফ রিজার্ভ সিস্টেমে অবস্থিত। এর আকৃতি প্রায় বৃত্তাকার, ব্যাসার্ধ ৩০০ মি. ( ৯৮৪ ফুট) এবং ১২৪ মিটার (৪০৭ ফুট) গভীর। এটি মূলত একটি বিশাল কেভ নেটওয়ার্ক এর প্রবেশদ্বার।বিশাল এই প্রবেশদ্বারকে ঘিরে আছে প্রবাল প্রাচীর।

দ্য গ্রেট ব্লু হোল

এই দ্য গ্রেট ব্লু হোলের পানি বেশ নীলাভ, যার কারণে সমুদ্রের সবুজাভ পানি থেকে এটিকে সহজেই আলাদা করা যায়। এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র গর্ত ধরা হয়।

১৯৯৬ সালে UNESCO ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়  বেরিয়ার রিফ রিজার্ভ সিস্টেমে অবস্থিত এই প্রবাল প্রাচীর গুলোকে। বেলিজে সাতটি বিখ্যাত প্রবাল প্রাচীর আছে। এর মধ্যে লাইটহাউজ প্রাচীরটির কেন্দ্রে ব্লু হোলের অবস্থান।

বলা হয়ে থাকে যে, ৬৫ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে যখন শেষ বারের মত বরফ জমেছিল, তখন পৃথিবীর সব পানি জমে জড়ো হয়েছিল মেরু অঞ্চলে। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠ ছিল এখনকার চেয়ে অনেক নিচুতে। বেলিজে তখন সমুদ্রপৃষ্ঠ ছিল এখনকার চেয়ে আরো প্রায় ১৫০ মিটার নিচুতে। তখন ক্যালসিয়াম কার্বনেট জাতীয় পদার্থ জমে তৈরি হয় পাথর।

আর পড়ুনঃ

শ্বেত গহ্বর বা হোয়াইট হোল কি? এটি কি শুধুই তাত্ত্বিক?

ব্ল্যাক হোল -মহাজাগতিক বস্তুর এক বিস্ময়কর জগৎ

সেই পাথর দিয়ে সৃষ্টি হয় এই কেভের বিশাল কাঠামো। কিন্তু পরবর্তীতে বরফ যখন আবার গলতে শুরু করে,সাগরের পানির উচ্চতাও বাড়তে শুরু করল। তখন পানির নিচে ডুবে যায় এই পাথরের কাঠামো। ধারণা করা হয়, আজ থেকে প্রায় ১৫ হাজার বছর আগে পুরো কেভ নেটওয়ার্ক ই পানির নিচে ডুবে যায়। আর তখন ই কয়েক জায়গার পাথর ভেঙে সৃষ্টি হয় এই ব্লু হোল।

বিজ্ঞানী দের মতে, এই ব্লু হোল পৃথিবীতে অদ্বিতীয়।সামুদ্রিক প্রবাল এবং জলজ উদ্ভিদ দ্বারা সন্নিবেশিত এই হোলটির জীববৈচিত্র্য অসাধারণ।যেন মনে হয় সমুদ্রের তলদেশে আরেকটি জগৎ লুকিয়ে আছে এই কেভ বা গুহার মধ্যে।এই কেভের মধ্যে দেখা মিলেছে অনেক জলজ প্রাণীর যারা অতল গভীরে থাকে। এছাড়াও কতিপর বিরল প্রজাতির প্রাণীর সন্ধান মিলেছে এই কেভে, যা শুধুমাত্র এই ব্লু হোল কেভের মধ্যে দেখা যায়।

২০১২ সালে ডিসকভারি চ্যানেলের বিশ্বের সবচেয়ে অভূতপূর্ব জায়গার তালিকায় প্রথম স্থান দখল করে নিয়েছে এই দ্য গ্রেট ব্লু হোল।প্রতি বছর অসংখ্য সমুদ্রপ্রেমী ঘুরতে যায় এই ব্লু হোলে। রহস্যে ঘেরা এই ব্লু হোল পরিদর্শনে যেতে চাইলে অবশ্যই সাহসী এবং সাঁতারে পটু হতে হবে। বিজ্ঞানীদের মতে এই ব্লু হোলের যত গভীরে যাওয়া যায় পানি ততই পরিস্কার হতে থাকে।চাইলে আপনিও সেখানে যেতে পারেন আপনার পরিবার বা বন্ধু বান্ধব দের নিয়ে ডুব সাঁতারের জন্য।

তবে দুঃখের বিষয় এই যে,বিজ্ঞানীরা এই ব্লু হোল নিয়ে গবেষণার সময় এই কেভের গভীরে প্লাস্টিক বোতলের সন্ধান পেয়েছে।তারা ধারণা করেন যে, প্লাস্টিকের কারনে যেভাবে আমাদের পৃথিবী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তেমনি ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সুন্দর এই দ্য গ্রেট ব্লু হোল।

Exit mobile version