রমজানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা: পবিত্র রমজানে স্বাস্থ্যকর কিছু খাদ্যাভ্যাস

রমজানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা

বিশ্বব্যাপী মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য পবিত্র রমজান মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টানা একমাস রোজা রাখার মাধ্যমে তারা মহান আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করে থাকে। স্বভাবতই এ সময়ে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। হঠাৎ করে দীর্ঘ সময়ের অভ্যাসের এ পরিবর্তন আমাদের শরীরের উপরও প্রভাব বিস্তার করে। তবে সঠিক খাদ্য যথাযথ পরিমাণে গ্রহণ করলে রমজানে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সহজ হয়।

রোজা রাখার সময়টাতে আমাদের শরীর সাধারণত এর পূর্বে গ্রহণ করা খাদ্য থেকে সংরক্ষিত শর্করা এবং চর্বির মাধ্যমে শক্তি জুগিয়ে থাকে। যে কারণে ইফতার এবং সেহেরিতে সঠিক খাদ্য গ্রহণ খুবই জরুরি। রমজানে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইফতার ও সেহরির খাদ্য তালিকাগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া প্রয়োজন।

রমজানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা

ইফতার:

১. দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার ফলে আমাদের শরীর বেশ দুর্বল হয়ে পরে। ইফতারের শুরুতে খেজুর হতে পারে এই দুর্বলতা কাটানোর অন্যতম মাধ্যম। কারণ খেজুরে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি, বিভিন্ন খনিজ যেমন, পটাশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ এবং ফাইবার। ধর্মীয়ভাবেও খেজুর খেয়ে রোজা ভঙ্গের কথা বলা হয়েছে।

২. পানি কিংবা পানি জাতীয় খাবার যথেষ্ট পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। সারাদিন পানির অভাবে ডিহাইড্রেশনের প্রবল সম্ভাবনা থাকে। যে কারণে কিছু সময় পরপর পানি, দুধ, স্মুদি বা ফলের রস খাওয়া স্বাস্থ্যকর।

৩. চেষ্টা করতে হবে অ্যাডেড সুগার না খাওয়ার। পানির সাথে কেবল লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া উপকারী। এছাড়াও ফলের জুস খেতে হবে আলাদা চিনি না মিশিয়ে।

৪. ইফতার মানেই ভাজাপোড়া খাওয়া, এমন ধারণা এবং অভ্যাস ত্যাগ করতে পারলে তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে। একেবারেই বাদ দিতে না চাইলে খুব অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। ডুবো তেলে ভাজার পরিবর্তে কিছুটা কম তেলে বেগুনি, আলুর চপ ইত্যাদি ভাজা উচিত।

৫. ইফতারের কিছু পরে রাতের খাবার হিসেবে ভাতের সাথে প্রচুর সবজি খাওয়া খুবই স্বাস্থ্যকর। সাথে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন, মাছ, মাংস ডিম অথবা মসুর ডাল খাওয়া যায়। ভাতের পরিবর্তে রুটিও খাওয়া যায়। হজমে সহায়তার জন্য দই খাওয়া যেতে পারে।

৬. বিভিন্ন রকম মিষ্টি কিংবা কেক খাওয়ার পরিবর্তে বিভিন্ন প্রকার ফল খাওয়া এ সময়ের জন্য খুবই উপকারী।

৭. এ সময়ে ক্যাফেইনের মাত্রা কমিয়ে দেয়া স্বাস্থ্যকর। অতিরিক্ত চা কফি এ সময়ে পানিশূণ্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

সেহেরি:

১. প্রচুর পরিমাণে পানি এবং পানি জাতীয় খাবার খেতে হবে। এতে করে সারাদিনের জন্য হাইড্রেটেড থাকা যায়।

২. শক্তি সঞ্চয়ের জন্য শর্করা জাতীয় খাবার খেতে হবে। সেই সাথে প্রচুর সবজি খেতে হবে।

৩. সেহেরিতে খুবই সাধারণ অথচ প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম মসুর ডাল খাওয়া যেতে পারে।

৪. সেহেরিতে দুধ খাওয়া যায়, যা সারাদিনের জন্য ভীষণ উপকারী হয়।

৫. সেহেরিতে পনির, দই কিংবা কলা মিষ্টি জাতীয় অন্যান্য খাবারের পরিবর্তে খাওয়া বেশি স্বাস্থ্যকর।

অন্যান্য করণীয়ঃ

১. সারাদিন কিছু না খাওয়ায় আমরা অনেকেই মনে করি ইফতারে খুব বেশি পরিমাণে খাওয়ার। কিন্তু দীর্ঘ সময় ব্যবধানে হঠাৎ করে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ আমাদের অস্বস্তির কারণ হয়। তাই এ ধরনের চিন্তাভাবনা ত্যাগ করা উচিত।

২. খুব দ্রুত খাওয়ার পরিবর্তে ধীরে ধীরে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

৩. ইফতার এবং সেহেরির পুরোটা সময়ে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পানের চেষ্টা করতে হবে।

৪. ইফতারের পর কিছুটা হাঁটাহাঁটি করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

৫. সেহেরি এবং ইফতার উভয় সময়ে আঁশযুক্ত খাবার রাখতে হবে।

৬. ভুনা জাতীয় খাবার কম খেয়ে অপেক্ষাকৃত কম মসলাদার খাবার গ্রহণ স্বাস্থ্যকর।

৭. ইফতারের খাবার একবারে সব না খেয়ে দুই সময়ে ভাগ করে খাওয়া ভালো।

৮. লবণ পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। কারণ এটি পিপাসা বৃদ্ধি করে থাকে।

আত্মশুদ্ধির এ মাস সারা বিশ্বের সকল মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইবাদতের এ মাসে সুস্থ থাকাও তাই কম জরুরি নয়। রমজানে হঠাৎ করে খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপক পরিবর্তন হওয়ায় তখন বিশেষ কিছু সচেতনতা অবলম্বন করতে পারলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

Exit mobile version