শরীর সুস্থ্য ও স্বাভাবিক রাখতে সারাদেহের কোষগুলো জীবিত থাকতে হবে।কোষগুলো জীবিত থাকার জন্য পুষ্টি ও অক্সিজেন যোগান দেবার কাজটি করে রক্ত। রক্তে রক্তরস ছাড়াও লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেতরক্তকণিকা ও অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেট বিদ্যমান। লোহিতরক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন নামক রঞ্জক পদার্থ থাকে যার ‘ হিম’ অংশ আয়রন বা লৌহ জাতীয় কম্পাউন্ড।
যখন রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ পুরুষদের প্রতি ডেসিলিটারে ১৩.৫-১৭.৫ গ্রাম এবং নারীদের প্রতি ডেসিলিটারে ১২ গ্রাম থেকে ১৫.৫ গ্রাম এর মধ্যে না থাকে বা কম থাকে, তখনই রক্তশূন্যতা বা রক্তাল্পতা দেখা দেয়। কারণ এটা হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি খাবার কিংবা পদ্ধতির মাধ্যমে এ রোগ প্রতিহত করা যায় ঘরে বসেই।
রক্তের লোহিতকণিকার হিমোগ্লোবিন প্রয়োজনের তুলনায় (পুরুষদের <১৩.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার এবং মহিলাদের <১২গ্রাম/ডেসিলিটার) কমে গেলে (বয়স ও লিঙ্গভেদে ) শরীরে রক্তশূন্যতা বা রক্তাল্পতা দেখা যায়। একে ‘এনিমিয়া’ বলে।
যে ব্যক্তির শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় কম হিমোগ্লোবিন রয়েছে,তিনি আয়রন বা লৌহ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে ঘাটতি পূরণ করতে পারে।হিমোগ্লোবিন উৎপাদনকে বহুগুণে বৃদ্ধি করতে আয়রন কাজ করে।যার পরিপ্রেক্ষিতে দেহে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যাও বেড়ে যায়।আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে-
হিমোগ্লোবিন তৈরীতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ফোলেইট।ফোলেইট হলো এক ধরনের ভিটামিন বি। ‘হিম’ তৈরী করার জন্য শরীর ফোলেইট ব্যবহার করে। এটি হিমোগ্লোবিনের অংশ যা অক্সিজেন বহন করতে সাহায্য করে। একজন মানুষের দেহ যদি পর্যাপ্ত ফোলেইট না পায়,লোহিত রক্তকণিকা যথেষ্ট পরিপক্ক হবে না।যার ফলশ্রুতিতে,ফোলেইটের অভাবে এনিমিয়া হতে পারে এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়।
ফোলেইটের উৎস:
আয়রনযুক্ত খাবার খেলেই তো হবে না,শরীর যেন সেটা শোষণ করে নিতে পারে তার ব্যবস্থাও তো করতে হবে।
(৩.১) ভিটামিন -সি যুক্ত খাবার মানবদেহে আয়রন বা লৌহ শোষণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ভিটামিন-সি বহুল খাবার হলো-
(৩.২) ভিটামিন-এ এবং বিটা ক্যারোটিন আয়রন শোষণে ও ব্যবহারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার হলো-
(৩.৩) হলুদ,কমলা ও লাল রঙের ফল,শাকসবজিতে মূলত বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায়।
কিন্তু এটা খেয়াল রাখা দরকার যে, অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন-এ খাবারের সাথে নিলে, হাইপারভিটামিনোসিস এ নামে রোগ হয়। এ রোগে হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা,প্রচন্ড মাথাব্যথা,মস্তিষ্কে প্রেসার বৃদ্ধি প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়।
শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বা মাত্রা খুব কম হলে,আয়রন সাপ্লিমেন্ট নেয়া যেতে পারে।কিন্তু আয়রনের পরিমাণ শরীরে মাত্রাতিরিক্ত যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।অতিরিক্ত আয়রন দেহে ‘হ্যামোক্রোমাটোসিস’ নামক রোগ সৃষ্টি করে।এতে লিভারের রোগ পর্যন্ত হতে পারে।পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্য,মাথা ঘোরানো,বমি প্রভৃতি দেখা যেতে পারে।সেজন্য ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ও নিয়মিত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা টেস্ট করে যাচাই করে নিতে হবে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আয়রন নেই তো শরীরে।
রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া একটি মারাত্মক রোগ যদিও এ রোগকে গুরুত্ব খুব কমই দেয়া হয়। যার কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ অকালে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে। পুষ্টিকর খাবারের দ্বারা ডায়েট মেইনটেন করে রক্তাল্পতাকে নিমিষেই যে কেউ দূর করতে পারে।
মন্তব্য লিখুন