মর্নিং ওয়াক (Morning Walk) এর নিয়ম, গুরুত্ব ও উপকারিতা

মর্নিং ওয়াক (Morning Walk) এর নিয়ম, গুরুত্ব ও উপকারিতা

মর্নিং ওয়াক অর্থ্যাৎ প্রাতঃ ভ্রমণ বলতে বোঝায় খুব সকালে নিরিবিলি পরিবেশে সূর্যের প্রথম কিরণ উপভোগ করতে করতে হাঁটা। অনেকে হাঁটার পাশাপাশি জগিং ও করে থাকেন। হাঁটা হল সব ধরনের ব্যায়ামের মধ্যে সবচেয়ে উপকারী একটি ব্যায়াম।

প্রতিদিন সকালে অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট টানা হাঁটার অভ্যাস আছে অনেকেরই। আর যাদের এই অভ্যাস নেই তাদেরও এই অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। কারণ প্রতিদিন সকালে মাত্র ২০-৩০ মিনিট হাঁটলে স্বাস্থ্য ভালো ও সুস্থ থাকবেন।

ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও পরমানু বিজ্ঞানী এপিজে আবুল কালাম আজাদ তাঁর “মাই জার্নিঃ ট্রান্সফর্মিং ড্রিমস ইনটু একশনস” বইতে তাঁর বাবার প্রাতঃভ্রমণের ব্যপারে আলোকপাত করেন। তিনি সেখানে দেখান তাঁর বাবা প্রাতঃভ্রমণের ফলে নিজের মধ্যে উন্নত ব্যক্তিত্ত্ব গড়ে তুলেন। সেই উন্নত ব্যক্তিত্ত্বের প্রতিফলন অনেকাংশেই তাঁর উপর প্রভাব ফেলে। সুতরাং,ব্যক্তিত্ত্ব গঠনে মর্নিং ওয়াক তথা প্রাতঃভ্রমণের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

মর্নিং ওয়াকের নিয়মঃ

মর্নিং ওয়াকের জন্য কিছু সাধারণ নিয়ম রয়েছে। এগুলো ঠিক বাধ্যতামূলক নিয়ম নয় তবে আপনার জন্য ভালো ফলাফল দিতে সক্ষম অবশ্যই এসব নিয়ম।

১. ঢিলেঢালা ট্রাউজার ব্যবহার করুন। টাইট ট্রাউজার বা অন্য কোনো কাপড় হলে অস্বস্তি বোধ হতে পারে এবং মর্নিং ওয়াকের স্পৃহা কমে যেতে পারে।

২. সাধারণ ঢিলে ঢালা সুতির গেঞ্জি ব্যবহার করুন।মর্নিং ওয়াকের সময় ঘেমে গেলে কটন ছাড়া অন্য কোনো গেঞ্জি বা অন্য যেকোনো কাপড় বেশ কষ্ট দিবে আপনাকে।

৩. স্নিকার্স বা কেডস ব্যবহার করুন।পায়ের সাথে মানানসই সাইজ ছাড়া কখনোই ছোটো বড় সাইজ ব্যবহার করবেননা।লোফার ব্যবহার না করাই ভালো।

৪. পাতলা ধরণের মোজা ব্যবহার করুন।

৫. সাথে পানির বোতল কিংবা স্যালাইনের বোতল রাখুন।এটি আপনাকে ডিহাইড্রেশন হওয়া থেকে মুক্তি দিবে।

৬. অনেকে বলে থাকেন গান শুনতে শুনতে মর্নিং ওয়াক করা ঠিক না। তবে,এটা সার্বজনীন একটা নিয়ম এবং ফ্যাশন বললেও ভুল হবেনা। কানে ইয়ারফোন গুঁজে মিষ্টি গান শুনতে শুনতে মর্নিং ওয়াকের মজাই আলাদা।

মর্নিং ওয়াকের ফলে শারীরবৃত্তীয় নানাবিধ সমস্যা দূরীভুত হয়ে যায় এবং প্রফুল্ল মন ও শরীর অর্জন করা যায়। আপনি নিম্নোক্ত শারীরবৃত্তীয় জটিলতাসমূহ হতে দূরে থাকতে পারবেন নিয়মিত মর্নিং ওয়াকের মাধ্যমে।

১. ডায়াবেটিসঃ

বর্তমান সময়ে জীবনযাত্রার ধরন এতটাই খারাপ যে ডায়াবেটিস কোনো সুনির্দিষ্ট বয়স মানছে না। ৩০ বছরের যুবক বা ৫০ বছরের মানুষ –সবাই ডায়াবেটিসের কবলে পড়ে। যাদের ইতোমধ্যে ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে, তাদের রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণ করাই একমাত্র লক্ষ্য। রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে হাঁটাহাটির কোন বিকল্প নেই। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা নিয়মিত হাঁটাহাটি করেন তাদের ইনসুলিনের আর প্রয়োজন হচ্ছে না।

ইনসুলিন হলো মূলত এক ধরণের শর্করা।ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত ইনসুলিন গ্রহণ করতে হয় এবং এর ফলে বিপুল অর্থ অপচয় হয়।মর্নিং ওয়াক করে যদি ডায়াবেটিসের মত মরণব্যধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়,তাহলে কেনো নিয়মিত মর্নিং ওয়াক নয়?

২. কোলেস্টেরল:

মাত্র নিয়মিত ৩০ মিনিটের মর্নিং ওয়াক কমাতে পারে ট্রাইগ্লিসারইড এর সমস্যা। মানবদেহের রক্তে দুই ধরণের লিপোপ্রোটিন বিদ্যমান। যথা:LDL (Low Density Lipoprotein) এবং HDL (High Density Lipoprotein). কোলেস্টরলের ফলে রক্তে LDL এর মাত্রা বেড়ে যায়। মানব শরীরের জন্য LDL মারাত্মক ক্ষতিকর।

মর্নিং ওয়াক করলে বেড়ে যায় HDL এর মাত্রা ও কমে যায় LDL এর মাত্রা। ফলে, আপনার কোলেস্টেরল নিয়ে বাড়তি কোন চাপ থাকে না। মর্নিং ওয়াক করে অতিরিক্ত কোলেস্টরল এর চাপ হতে সহজেই মুক্ত হতে পারেন।

৩. ব্লাড প্রেশার:

বর্তমান সময়ে উচ্চরক্তচাপে (Hypertension) ভুগছেন না এমন মানুষের সংখ্যা হাতে গোণা কয়েকজন হয়তো পাওয়া যাবে।অধিকাংশ মানুষের দেহেই এটি সুপ্ত অবস্থায় বিরাজ করে। উচ্চরক্তচাপ কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে মর্নিং ওয়াকের কোন বিকল্প নেই। প্রতিদিন যদি নিয়মিত ৩০ মিনিট হাঁটা অভ্যাস করা হয়, তবে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ আমাদের একদম হাতের মুঠোয়।

ব্লাড প্রেশার মাপা হয় স্ফিগমোম্যানোমিটার যন্ত্র দিয়ে।স্ফিগমোম্যানোমিটারের রিডিং এ ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিক অবস্থায় ১২০/৮০ থাকা উচিত। এর চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত বেশি হলে সেটাকে উচ্চ রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেশার বলা হয়।নিয়মিত মর্নিং ওয়াকের ফলে শরীরের চলমান পেশিগুলোর দারুণ এক্সারসাইজ হয়।ফলে,রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিক থাকে।

৪.ওজন:

বর্তমান সময়ে গোটা বিশ্বে একটা চরম সমস্যা হল শরীর মোটা হয়ে যাওয়া। অর্থ্যাৎ,দেহের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বহুগুণে বেড়ে যাওয়া।যার ফলে বেড়ে যাচ্ছে দৈহিক নানাবিধ সমস্যা এবং মৃত্যুঝুঁকি।

দেহের ওজন বেড়ে যাওয়ার ২৫% ক্ষেত্রে দায়ী হল আমাদের অলস জীবনযাপন।আমরা সাধারণত বেশিরভাগ মানুষই বাধ্য না হলে তেমন কোনো কায়িক পরিশ্রম করিনা এবং অলস জীবন কাটাতেই পছন্দ করি। আর বাকি ৭৫% ক্ষেত্রে দায়ী মাত্রারিক্ত খাদ্যগ্রহণ।পরিমিত খাদ্যগ্রহণ এবং তেল-মশলাযুক্ত খাবার পরিহার স্থূলতা হতে মুক্তি দিতে পারে খুব সহজেই।

যাদের খুব ওজন বেড়ে গেছে তারা রোজ নিয়মিত ৩০-৪০ মিনিট মর্নিং ওয়াক করুন। সেই সাথে খাওয়াদাওয়ার দিকেও নজর দিন।ডায়েট চার্ট ফলো করুন।বর্দমান সময়ে মেদ কমানোর জন্য বহুল প্রচলিত “কিটো ডায়েট” ফলো করতে পারেন।

মর্নিং ওয়াক করলে আমরা কি কি শারীরবৃত্তীয় জটিলতা হতে দূরে থাকতে পারবো সে বিষয়ে আমরা জানলাম।এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক মর্নিং ওয়াকের আরো কিছু উপকারী দিক যা সরাসরি আপনার শরীরে প্রভাব বিস্তার করবে।

মর্নিং ওয়াকের কিছু উপকারী দিকসমূহঃ

১. স্মরণশক্তি বৃদ্ধি:

গবেষণায় দেখা গিয়েছে সকালের দিকের বাতাস সাধারণত দুলনামূলক বেশি বিশুদ্ধ হয়।সকালে প্রতিদিন কিছুক্ষণ হাঁটলে ফুসফুসে শুদ্ধ বাতাস প্রবেশ করার সুযোগ পায়। এই বাতাস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করে হৃৎপিণ্ড রক্তকে বিশুদ্ধ করে এবং অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত মস্তিষ্কে সরবরাহ করে। ফলে মস্তিষ্ক সচল থাকে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

২. দীর্ঘজীবীতা লাভঃ

নিয়মিত সকালে মর্নিং ওয়ার্কের সময় বিশুদ্ধ বাতাস ও সুন্দর পরিবেশ আপনার হৃৎপিণ্ড ও মনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। হাঁটার সময় হৃৎপিণ্ড শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করে। ফলে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ ও সচল থাকে এবং মানুষ দীর্ঘজীবী হয়।

এছাড়া মর্নিং ওয়াকের ফলে আপনার হাত এবং পা বিশেষ করে সচল থাকে এবং প্যারালাইজড হওয়ার সম্ভাবনা বহুলাংশে কমে যায়।ফলে,সুস্থ এবং নিরোগ দেহ লাভ করতে সক্ষম হবেন এবং দীর্ঘজীবী হয়ে উঠবেন।

৩. রক্তচাপের উপর নিয়ন্ত্রণ লাভঃ

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালে নিয়মিত হাঁটলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত সকালে হাঁটলে রক্তের লোহিত কণিকাগুলো থেকে চর্বি ঝরে যায়।ফলে,ফ্যাটের পরিমাণ কমে যায়।এ ছাড়াও হাঁটার সময় রক্তের ইনসুলিন ও গ্লুকোজ ক্ষয় হয়। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে।

৪. ত্বক ভালো করেঃ

প্রতিদিন সকালে হাঁটলে প্রচুর পরিমাণে ঘাম হয়। ফলে ত্বকের লোমকূপগুলো খুলে যায় এবং শরীরের দূষিত পদার্থগুলো ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। ফলে ত্বক উজ্জ্বল ও লাবন্যময় দেখায়।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ঘামের ফলে প্রচুর দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।তাদের জন্য পরামর্শ থাকবে মর্নিং ওয়াকের পর ঘাম না শুকিয়ে সরাসরি গোসল করে পরিস্কার হয়ে নেওয়ার।

৫. মানসিক চাপ হ্রাসঃ

প্রতিদিন হাঁটতে বেরিয়ে সকালের সুন্দর স্নিগ্ধতা উপভোগ করতে কার না ভালো লাগে?প্রকৃতির অপার সৃষ্টি আর সবুজের কোলাহলের ভিড়ে হারানোর প্রশান্তিই সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতিদিন সকালের সুন্দর পরিবেশ ও কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি আপনার মন ভালো করে দিতে পারে নিমেষেই। প্রতিদিন সকালে কিছুক্ষণ হেঁটে আসলে সারাদিন কাজের উৎসাহ বাড়ে এবং মানসিক চাপ কমে যায়।

৬. দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিঃ

গবেষণা বলে মর্নিং ওয়াকে গেলে চোঅের নার্ভগুলোর যথেষ্ট উপকার সাধন হয়।সারারাত ঘুমিয়ে সকালে মর্নিং ওয়াকের ফলে চোখের নার্ভে দিনের প্রথম প্রহরের আলো প্রবেশ করে।প্রতিদিন কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাজ করতে গিয়ে চোখের বারোটা বেজে যাচ্ছে? চোখকে কিছুটা আরাম দিতে এবং চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিন সকালে হাঁটার বিকল্প নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে।

পরিশেষে বলতে চাই, দৈহিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার উন্নয়ন থেকে শুরু করে সার্বিক দিক বিবেচনায় মর্নিং ওয়াকের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই আসুন, নিয়মিত মর্নিং ওয়াক এর অভ্যাস গড়ে তুলি এবং সুস্থ শরীর নিয়ে জীবন যাপন করি।

ছবিঃ সংগৃহীত

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া এবং গুগল।

Exit mobile version

Fatal error: Uncaught TypeError: fclose(): Argument #1 ($stream) must be of type resource, false given in /home/digilshq/public_html/wp-content/plugins/wp-super-cache/wp-cache-phase2.php:2381 Stack trace: #0 /home/digilshq/public_html/wp-content/plugins/wp-super-cache/wp-cache-phase2.php(2381): fclose(false) #1 /home/digilshq/public_html/wp-content/plugins/wp-super-cache/wp-cache-phase2.php(2141): wp_cache_get_ob('<!DOCTYPE html>...') #2 [internal function]: wp_cache_ob_callback('<!DOCTYPE html>...', 9) #3 /home/digilshq/public_html/wp-includes/functions.php(5464): ob_end_flush() #4 /home/digilshq/public_html/wp-includes/class-wp-hook.php(324): wp_ob_end_flush_all('') #5 /home/digilshq/public_html/wp-includes/class-wp-hook.php(348): WP_Hook->apply_filters('', Array) #6 /home/digilshq/public_html/wp-includes/plugin.php(517): WP_Hook->do_action(Array) #7 /home/digilshq/public_html/wp-includes/load.php(1279): do_action('shutdown') #8 [internal function]: shutdown_action_hook() #9 {main} thrown in /home/digilshq/public_html/wp-content/plugins/wp-super-cache/wp-cache-phase2.php on line 2381