মধু -স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মধুর ১০টি উপকারিতা

মধু -স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মধুর ১০টি উপকারিতা

প্রাচীনকাল থেকেই খাদ্য এবং ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে মধু। প্রাকৃতিক এ উপাদানটি প্রাচীন গ্রীক, ব্যবিলনীয়, মিশরীয় এবং আরও কিছু সভ্যতায় এর ওষধী গুণের জন্য বহুল পরিচিতি ছিল। তবে সরাসরি প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত মধুই কেবল স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে। আজকাল বাজারে পাওয়া যায় এমন বেশিরভাগ মধুই পাস্তুরিত হয়ে থাকে। এতে করে মধুতে প্রাকৃতিক ভাবে থাকা উপকারী জীবাণু অধিক তাপে মারা যায় যা মধুর গুণাবলি বিনষ্ট করে দেয়। যথাসম্ভব খাঁটি মধু ব্যবহার করলেই কেবল তার উপকারিতা লাভ করা যায়।

মধুর ১০টি উপকারিতা:

আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ভাবে সুস্থ রাখতে মধু কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মধুর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপকারি দিকে তুলে ধরা হলঃ

১. পুষ্টিগুণঃ

মৌমাছি বিভিন্ন ফুল থেকে নেক্টার নামক একটি রাসায়নিক সংগ্রহ করে মৌচাকে নিয়ে যায়। এরপর মৌমাছি এই নেক্টারকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে, হজম করে এবং সবশেষে পাকস্থলী থেকে উগরে দেয়। একেই আমরা মধু হিসেবে পেয়ে থাকি। এক টেবিল চামচ (২১ গ্রাম) মধুতে সাধারণত ৬৪ গ্রাম ক্যালরি এবং ১৭ গ্রাম চিনির পুষ্টিগুণ থাকে। এছাড়াও মধু থেকে ফ্রুকটোজ, গ্লুকোজ , মল্টোজ এবং সুক্রোজ পাওয়া যায়। এতে কোন ফ্যাট এবং ফাইবার নেই।

২. এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধঃ

মধুতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। বিশুদ্ধ মধুতে বেশ কয়েকটি উদ্ভিজ্জ রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা এন্টিঅক্সিডেন্টের ভূমিকা পালন করে। কিছু মধুতে ফল এবং সবজির সমপরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগের কবল থেকে নিরাপদ রাখতে এন্টিঅক্সিডেন্টের অবদান রয়েছে। হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতেও এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ইদুর এবং মানুষ উভয় শ্রেণীর উপর বিভিন্ন পরীক্ষা করে দেখা যায়, মধু খাওয়ার ফলে কিছুটা হলেও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

৩. ডায়াবেটিসে চিনির চাইতে বেশি নিরাপদঃ

ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য চিনি অপেক্ষা মধু বেশি নিরাপদ। যদিও এ তথ্যের সাপেক্ষে রয়েছে ভিন্ন মতবাদ। মধুও সুগার লেভেল বৃদ্ধি করে তবে সেটা চিনি অপেক্ষা কম। এছাড়াও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে সাধারণ হৃদরোগের প্রকোপ কমাতে মধু বেশ কার্যকরী।

৪. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণঃ

আমরা অনেকেই হয়তো জানি LDL কোলেস্টেরলের উচ্চমাত্রায় উপস্থিত থাকা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। কয়েকটি গবেষণা প্রমাণ করেছে মধু শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এটি একদিকে যেমন LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় অপরদিকে HDL কোলেস্টেরল যা আমদের জন্য উপকারী এর মাত্রা বাড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, ৫৫ জন মানুষের উপর একটি পরীক্ষা চালিয়ে জানা যায়, মধু ৫.৮% LDL কোলেস্টেরল কমায় এবং একই সাথে ৩.৩% HDL কোলেস্টেরল বাড়ায়।

৫. বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়ঃ

মধুতে প্রচুর পরিমাণে ফেনল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এসব পদার্থ হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে যা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও ধারণা করা হয়, বেশ কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও মধু কিছুটা সাহায্য করে। তবে এ তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে পর্যাপ্ত পরীক্ষা করা হয়নি। কয়েকজন চিকিৎসকের মতে চোখের সুস্থতায়ও বিশুদ্ধ মধু সাহায্য করতে পারে।

৬. ওজন কমাতে সহায়কঃ

ওজন কমাতে মধু খাওয়ার ধারণাটি বেশ প্রচলিত। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে কিছুটা লেবু কিংবা পুদিনা পাতার রস এবং এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রতিদিন এ নিয়ম পালন করলে ওজন হ্রাস পায়।

আরও পড়ুনঃ

নিম: স্বাস্থ্য থেকে সৌন্দর্য সবেতেই জাদুকারী সব ভেষজ ও আয়ুর্বেদ গুন সম্পন্ন

সুস্বাস্থ্য গঠনে সঠিক খাদ্যাভাস এর গুরুত্ব

ডিটক্স ওয়াটার: ফিট থাকার সিক্রেট পানীয়

৭. ক্ষত নিরাময়ে মধু:

প্রাচীন কালে ইজিপ্টে ক্ষত সারানোয় মধুর ব্যবহার প্রচলিত ছিল। বর্তমানেও পুড়ে যাওয়া স্থান কিংবা অন্য যেকোন ধরনের ক্ষত নিরাময়ে মধু ব্যবহার করা হয়। অপারেশনের পর ইনফেকশন জনিত ক্ষত নিরাময়ে মধু বেশ সহায়ক। এছাড়াও ডায়াবেটিস জনিত আলসারের ক্ষত নিরাময়েও একে সহায়ক বিবেচনা করা হয়। কিছু চর্মরোগের নিরাময় করতেও মধু ব্যবহার করা যায়। হাসপাতালগুলোতে মানুকা মধু ব্যবহৃত হয়ে থাকে পুড়ে যাওয়া স্থানের ক্ষত নিরাময় করতে। তবে ক্ষত নিরাময়ের উদ্দেশ্যে মধু ব্যবহার করতে চাইলে এর বিশুদ্ধতার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

৮. সর্দি কাশি উপশম করেঃ

ভাইরাসজনিত সর্দি নিরাময়ে মধু বেশ সহায়ক। গরম চায়ের সাথে লেবু ও মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও কাশি থেকে রেহাই পেতে মধু বহুল ব্যবহৃত হয়। কাশির উপশমের ওষুধগুলোতে বহুল ব্যবহৃত Dextromethorphan এবং মধু সমান কার্যকর। শুধু দুই চা-চামচ করে মধু খেলেই অনেক সময় উপকার পাওয়া যায়। এক গবেষণায় দেখা যায়, মধু দুটি সাধারণ কাশি নিরাময় করার ওষুধের চাইতেও বেশি কার্যকরী। তবে এক বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের মধু খাওয়ানো উচিত নয়। এক্ষেত্রেও সঠিক ফলাফল লাভ করতে চাইলে খাঁটি মধু গ্রহণ করতে হবে।

৯. এন্টিব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিফাংগালঃ

বিশুদ্ধ মধু অযাচিত বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং ফাংগাস মেরে ফেলতে পারে। মধুতে সাধারণত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থাকে যা এন্টিসেপ্টিকের কাজ করে। তবে সব মধু এন্টিব্যাকটেরিয়াল বা এন্টিফাংগাল সমৃদ্ধ হয়না।

১০. হজমে সহায়কঃ

ধারণা করা হয় মধু হজমে সহায়ক। হজম সংক্রান্ত বিভিন্ন অসুবিধা যেমন ডায়রিয়া প্রশমনে মধু কার্যকরী হতে পারে। যদিও এ বিষয়ে যথেষ্ট গবেষণা করা হয়নি বলে এ তথ্য কতখানি সঠিক জানা যায় নি। তবে জানা যায়, মধু আলসার প্রশমক এবং অন্ত্রে থাকা শরীরের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্য সহায়ক যা হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

মধুর নানাবিধ উপকারী দিক রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবদান রাখতে পারে। তবে আমাদেরও সচেতন হতে হবে। যেকোন মধু ব্যবহার করলেই হবে না। যথাসম্ভব বিশুদ্ধ মধুর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। নির্ভরযোগ্য মাধ্যম থেকে খাঁটি মধু সংগ্রহ করতে পারলে এবং পরিমিত ও সঠিক মাত্রায় গ্রহণ করলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে।

Exit mobile version

Fatal error: Uncaught TypeError: fclose(): Argument #1 ($stream) must be of type resource, false given in /home/digilshq/public_html/wp-content/plugins/wp-super-cache/wp-cache-phase2.php:2381 Stack trace: #0 /home/digilshq/public_html/wp-content/plugins/wp-super-cache/wp-cache-phase2.php(2381): fclose(false) #1 /home/digilshq/public_html/wp-content/plugins/wp-super-cache/wp-cache-phase2.php(2141): wp_cache_get_ob('<!DOCTYPE html>...') #2 [internal function]: wp_cache_ob_callback('<!DOCTYPE html>...', 9) #3 /home/digilshq/public_html/wp-includes/functions.php(5464): ob_end_flush() #4 /home/digilshq/public_html/wp-includes/class-wp-hook.php(324): wp_ob_end_flush_all('') #5 /home/digilshq/public_html/wp-includes/class-wp-hook.php(348): WP_Hook->apply_filters('', Array) #6 /home/digilshq/public_html/wp-includes/plugin.php(517): WP_Hook->do_action(Array) #7 /home/digilshq/public_html/wp-includes/load.php(1279): do_action('shutdown') #8 [internal function]: shutdown_action_hook() #9 {main} thrown in /home/digilshq/public_html/wp-content/plugins/wp-super-cache/wp-cache-phase2.php on line 2381