গরমে রোদের তাপে ঘরের বাইরে থাকা অনেক কষ্টকর হয়ে দাড়াঁয়। ঘরের মধ্যে ফ্যান বা এসির নিচেই যা একটু স্বস্তি পাওয়া যায়। কিন্তু তাই বলে কি আর সারাদিন ঘরে বসে থাকা যায়। কাজের জন্য তো অবশ্যই বাইরে বের হতে হয়। কিন্তু এই প্রচন্ড গরমে বাইরে বের হলে অল্পতেই খুব ক্লান্ত হয়ে যাই।
এছাড়া অতিরিক্ত গরমে শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ঝরে। আর এই ঘামের কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ ও পানি বের হয়ে যায়। তাই প্রচন্ড গরমে আমাদের কী ধরনের পানীয় ও খাবার খাওয়া উচিত? এমন খাবারই খাওয়া উচিত, যাতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে।
শরীর গরম হয়ে গেলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শরীরকে সুস্থ -সবল, তরতাজা ও প্রানবন্ত রাখার জন্য আমাদের উচিত প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়া । পানির অভাবে মস্তিষ্ক ও কর্মক্ষমতা হারায়। যার ফলে মৃত্যুও হতে পারে । তাই এই পরিস্থিতিতে অন্তত প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে ভুলবেন না।
তবে হ্যাঁ পানির পাশাপাশি এমন কিছু খাবার আছে যা আমাদের শরীরকে ভিতর থেকে ঠাণ্ডা করে দিবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক গরমের যেসব পানীয় ও খাবার শরীরকে ঠান্ডা ও প্রাণবন্ত রাখবে সেগুলো সম্পর্কে-
ডাব
গরমের খাবার ও পানীয় এর তালিকায় শুরুতেই আমাদের ডাবকে রাখা উচিত। কারন ডাব আমাদের শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই আমাদের উচিত ডাবের পানি পান করা। ডাবের পানি হলো প্রাকৃতিক স্যালাইন।
প্রচন্ড গরমে শরীর প্রায়ই নিস্তেজ হয়ে আসে। এ সময় ডাবের পানি শরীরে স্বস্তি এনে দিতে পারে। গরমের সময়ে ডাবের পানি হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ, সুস্বাদু ও শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী।
ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে পানি, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। তাই ডাবের পানি খনিজের অভাব পূরণে সাহায্য করে।
যারা অনেক রোদে কাজ করেন অথবা সমুদ্রের আশেপাশে কাজ করেন তাদের দিনে ১-২ টা ডাব খাওয়া উচিত।
এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
তরমুজ
গরমের সময়ে বাজারে দেখা যায় অতি পরিচিত একটি ফল “তরমুজ”। এটি আকারে অনেক বড়, দেখতে সুন্দর ও খেতেও অনেক সুস্বাদু। তরমুজের অনেক গুনাগুন আছে।
গরমে ঘামের ফলে শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায় ।তরমুজে ৯২ % পানি আছে। যেহেতু তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি আছে তাই এটি শরীরে পানির ঘাটতি দূর করে।
তরমুজে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন -বি রয়েছে যা আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তরমুজ কিডনির জন্য উপকারী একটি ফল।
হজমশক্তি উন্নতি করতে সাহায্য করে। ত্বককে সজীব রাখতে ও চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
শসা
গরমের সময় শসা আমাদের অনেক আরাম দেয়। তাই গরমের সময় এটি বেশি খেতে হবে যা শরীরকে সব সময় ঠান্ডা ও সতেজ রাখবে। শসার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-
- শসায় ৯০% পানি থাকায় এটি শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে থাকে।
- শসাতে পাওয়া যায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফাইবার যা রক্তচাপের মাত্রা ঠিকঠাক রাখে।
- শসা ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনে।
- শসা শরীর থেকে সকল প্রকার টক্সিন বের করে দেয়।
- এই গরমে মন ও মাথা ঠিক রাখতে শসার বিকল্প নেই।
- হজমশক্তিতে সাহায্য করে।
টকদই
গরমে পেট ঠান্ডা রাখতে টকদই খাওয়া যায় । শুধু কি পেট ঠান্ডা করে এটা ছাড়াও টকদই এর বহু উপকারী দিক রয়েছে যা এই গরমের সময় আমাদের শরীরকে রাখবে সতেজ ও প্রাণবন্ত।
তাই গরমের সময় তো টকদই একটু খাওয়াই যায়। তবে আমরা কি জানি টকদই খেলে আরও কি কি স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। টকদই ব্রেইনকে Tyrosine সরবরাহ করে, যা মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং ক্লান্তি কমায়।
আরও পড়ুনঃ
সুস্বাস্থ্য গঠনে সঠিক খাদ্যাভাস এর গুরুত্ব
মধু -স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মধুর ১০টি উপকারিতা
রমজানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা: পবিত্র রমজানে স্বাস্থ্যকর কিছু খাদ্যাভ্যাস
গ্রীষ্মকালে টকদই খেলে ভালো আরাম পাওয়া যায় কারণ এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে। টকদইয়ে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন -ডি রয়েছে যা হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
পুদিনা পাতা
গরমে শরীর ঠান্ডা ও সতেজ রাখতে পুদিনা পাতার বিকল্প নেই। চলুন পুদিনা পাতার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-
গরমে ত্বকের জ্বালাপোড়া ও ফুসকুড়ি জনিত সমস্যা দেখা যায়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কয়েকটি পুদিনার পাতা চটকে গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করলে ভালো কাজ হবে।
- পুদিনা ত্বককে শীতল করে রাখে।
- পুদিনা পাতাতে রয়েছে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট। এতে করে শরীরে ঘামাচি ও এলার্জি হবে না।
- শ্বাস -প্রশ্বাসের কষ্ট এবং কাশির সমস্যায় পড়লে পুদিনা পাতার রস খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- গরমে কাজ করতে করতে আমরা অনেক সময় ক্লান্ত হয়ে যাই। আর এই ক্লান্ত ভাব দূর করতে পুদিনা পাতার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।
- পুদিনা পাতা রক্তে কলেস্টেরল জমতে বাঁধা প্রদান করে। যার ফলে আমাদের হার্ট সুস্থ থাকে। তাই বলা যায়, সুস্থ হার্টের জন্য
- পুদিনা পাতা অনেক উপকারী।
বাঙ্গি
শরীর ঠান্ডা রাখতে এই ফলটির জুড়ি নেই। অনেকেই হয়তো এই ফলটি চেনে না বা ফলটি খেতে পছন্দ করে না কিন্তু এই গরমে শরীর যদি ঠিক রাখতে চান তাহলে এই ফলটি খেতে পারেন। বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা গরমে শরীরকে ঠান্ডা ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে। এতি রয়েছে শর্করা, ক্যারোটিন ও ভিটামিন -সি। তাই এই গরমে আরামদায়ক ফল হিসেবে বাঙ্গির তুলনা হয় না। বাঙ্গি রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড থাকে।
ডালিম
ডালিম এমন একটি ফল যা ছোট -বড় সকলের প্রিয়। ডালিম দেখতে যেমন সুন্দর তেমনই খেতেও অনেক সুস্বাদু। এর রয়েছে নানা উপকারিতা। ডালিমের কিছু গুণাগুণ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডালিমে আছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখে ডালিম। ডালিমের রস খেলে মাথা ঠান্ডা ও চোখের জ্বালা কমে যায়। তাই গরমে ডালিমের রস খাওয়া উচিত। ডালিম পেটের যে কোন সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম। ডালিম খেলে রক্তনালী সুরক্ষিত থাকে ও রক্তে প্লেক জমতে দেয় না। এতে প্রচুর পরিমাণে লৌহ আছে যা রক্তবৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
লেবুপানি
গরমের খাবার ও পানীয় এর মধ্যে লেবুপানি অন্যতম। তৃষ্ণা মেটাতে কোল্ড ড্রিংকস এর পরিবর্তে লেবু পানি পান করতে পারেন। এই তপ্ত গরমে এটি শরীরকে রাখবে সতেজ ও প্রানবন্ত। লেবুতে আছে ভিটামিন সি যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
গরমের দিনে আমাদের শরীর প্রচণ্ড ঘেমে যায়। ফলে শরীরে ব্লাড সুগার লেভেল কমে যায় এবং আমরা ক্লান্ত হয়ে যাই। লেবু পানিতে চিনি মিশিয়ে পান করে নিলে ব্লাড সুগার লেভেল বেড়ে যায় এবং ক্লান্তিটা আর থাকে না।
এছাড়াও লেবুতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার প্রভাবে শরীরে কোনো রোগ জীবাণু সহজে বাসা বাঁধতে পারে না। তাই যেকোনো ধরনের ইনফেকশন বা অসুস্থতা এড়াতে লেবুর কোনো বিকল্প নেই।
লেবুতে আছে ভিটামিন সি যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও লেবুতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার প্রভাবে শরীরে কোনো রোগ জীবাণু সহজে বাসা বাঁধতে পারে না। তাই যেকোনো ধরনের ইনফেকশন বা অসুস্থতা এড়াতে লেবুর কোনো বিকল্প নেই।
সর্তকতা: কোন কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া যাদের এসব গরমের খাবার ও পানীয় -তে সমস্যা আছে বা আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে এইসব খাবার খাওয়ার আগে আপনি আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। তাই স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সদা-সর্বদা আমাদের সচেতন থাকা অতি জরুরী।