পারকিনসন রোগ (Parkinson’s disease) হল এক প্রকারের নিউরো-ডিজেনারাটিভ বা স্নায়বিক রোগ বা স্নায়ুু অধঃপতনজনিত রোগ। ফলে মস্তিষ্কের স্নায়ু ক্ষয়ে যায়। এ রোগটি বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন: পারকিনসোনিসম বা প্যারালাইসিস এজিট্যান্স বা শেকিং পালসি। এটি সবচেয়ে পরিচিত নিউরো-ডিজেনারাটিভ রোগের মধ্যে দ্বিতীয়।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
পারকিনসন রোগের কারণ অজানা তবে গবেষকরা ধারণা করছেন যে জেনেটিক এবং পরিবেশগত উভয় উপাদান জড়িত। তবে শরীরে ডোপামিন হ্রাস পেলেও এ রোগ হতে পারে। তাছাড়া মস্তিষ্ক কোষের মধ্যে নিদিষ্ট পদার্থের ক্ল্যাম্পগুলি পারকিনসন রোগের মাইক্রোস্কোপিক মার্কার। এই গুলিকে Lewy Bodies বলা হয় এবং গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে এই Lewy body গুলি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পারকিনসন রোগের কারণ হিসেবে।
এই রোগ নির্ণয়ের জন্য নির্দিস্ট কোন পরীক্ষা না থাকলে ও লক্ষণেরর উপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করার জন্য কয়েক ধরণের রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি বেশ কিছু স্নায়বিক এবং শারীরিক পরীক্ষাও করা যায়। উল্লেখ্য ৬০ বছরের উর্ধ্বে বয়স্ক মানুষের এ রোগ হতে পারে। এবং এ রোগে পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
ওষুধ পারকিনসন রোগের নিরাময় করতে না পারলেও রোগ নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে প্রতিদিনের জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনা লাগতে পারে। যেমন-নিয়মিত অ্যারোবিক ব্যায়ামের অভ্যাস।ফিজিক্যাল থেরাপি। যা শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।
এছাড়া কথা বলার সমস্যা সমাধানের জন্য স্পিচ-ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথোলজিস্টের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া ও ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে হাঁটটা,নড়াচড়া এবং কাঁপুনির সমস্যা সমাধান করা যায়। এই ওষুধগুলো ডোপামাইনের বিকল্প হতে পারে।
ডোপামাইন এগোনিস্ট ডোপামাইনে পরিবর্তিত হবার বদলদলে মস্তিষ্কে ডোপামাইনের কার্যকারিতাকে অনুসরণ করে। ডোপামাইন এগোনিস্টের মধ্যে রোটিগোটিন,রোপিনিরোল এবং প্রামিপেক্রোল প্রধান।
পারকিনসন রোগের সাথে জড়িত কম্পন বা শিহরণকে নিয়ন্ত্রিত করবার জন্য বহুপূর্বে থেকে এ ওষুধ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ট্রিহেক্মাইফেনিড্রিল বা বেঞ্জট্রোপাইনসহ অসংখ্য অ্যান্টিকোলিনারজিক্ম ওষুধ পাওয়া যায়।
এই বিভাগের প্রাইমারি ওষুধ হল এন্টাক্যাপোন, যা ডোপামাইনকে ভেঙে দেওয়া এনজাইমকে আটকে দিয়ে লেভোডোপা থেরাপিতে অল্প হলেও সাহায্য করে।
পারকিনসন রোগের সবচেয়ে কার্যকারি ওষুধ সম্ভবত লেভোডোপা।এটি মস্তিষ্কের মধ্যে গিয়ে ডোপামাইন হিসেবে রুপান্তরিত হয়।
এই ওষুধের মধ্যে সেলেজিলাইন এবং রাসোজিলাইন অন্যতম।এটি মস্তিষ্কের মোনোঅ্যামাইন অক্মিডেজ বি এনজাইমকে দমন করে ব্রেন ডোপামাইনের ভেঙে যাওয়া প্রতিরোধ করার পাশাপাশি এটি ব্রেন ডোপামাইনকে মেটাবলাইজ করায়।
ডিপ ব্রেন সিমুলেশন:ডিপব্রেন সিমুলেশান বা ডিবিএসে, সার্জেন আমাদের মস্তিষ্কের একটা নির্দিষ্ট অংশে ইলেক্ট্রোডস স্থাপন করে। এই ইলেক্ট্রোডস কন্ঠার হাড়ের কাছে বুকের ওপর লাগানো জেনারেটরের সাথে যোগ করা হয়, যা মস্তিষ্কে তড়িৎ কম্পন পাঠায় এববং রোগের সমস্যা কমার সম্ভবনা থাকে।
২০১৫ সালে, পৃথিবীর ৬২ মিলিয়ন মানুষকে আক্রান্ত করেছিল এবং বিশ্বব্যাপী প্রায় ১১৭, ৪০০ জনের মৃত্যু ঘটিয়েছিল এ পারকিনসন রোগ। এটি একটি নিরবঘাতক।
প্রথম স্টেপেই এর সব লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এ জন্য রোগ শনাক্ত করতেও সমস্যার সৃষ্টি হয়। তবে এ রোগ ৬০ উর্ধ্ব মানুষের হয়ে থাকে। বিভিন্ন পারিপাশ্বিক সমস্যা, জিনগত সমস্যারর কারণেও হয় তবে আক্রান্ত হবার সবচেয়ে বড় কারণ শরীরে ডোপামিন হ্রাস পাওয়া। তাই শরীরে যেন ডোপামিন হ্রাস না পায় সে দিকে নজর দিতে হবে সকলের।তবেই আমরা এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি।
মন্তব্য লিখুন