স্বপ্ন ( Dream) মানুষের একটি মানসিক অবস্থা, যাতে মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় বিভিন্ন কাল্পনিক ঘটনা অবচেতনভাবে অনুভব করে থাকে। ঘটনাগুলি কাল্পনিক হলেও স্বপ্ন দেখার সময় সত্যি বলে মনে হয়। অধিকাংশ সময় দ্রষ্টা নিজে সেই ঘটনায় অংশগ্রহণ করছে বলে মনে করতে থাকে।
অনেক সময়ই পুরনো অভিজ্ঞতার টুকরো টুকরো স্মৃতি কল্পনায় বিভিন্নভাবে জুড়ে ও পরিবর্তিত হয়ে সম্ভব অসম্ভব সব ঘটনার রূপ নেয়। স্বপ্ন সম্বন্ধে অনেক দর্শন,বিজ্ঞান, কাহিনী ইত্যাদি আছে। স্বপ্নবিজ্ঞানের ইংরেজি নাম Oneirology।
কিছু স্বপ্নবিজ্ঞানীর মতে নিদ্রার যে পর্যায়ে কেবল আক্ষিগোলক দ্রুত নড়াচড়া করে কিন্তু বাকি শরীর শিথিল (সাময়িকভাবে প্রায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত) হয়ে যায় সেই REM (Rapid eye movement, দ্রুত চক্ষু আন্দোলন) দশায় মানুষ স্বপ্ন দেখে। কিন্তু এই বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে।
স্বপ্ন হল ধারাবাহিক কতগুলো ছবি ও আবেগের সমষ্টি যা ঘুমের সময় মানুষের মনের মধ্যে আসে। এগুলো কল্পনা হতে পারে, অবচেতন মনের কথা হতে পারে, বা অন্য কিছুও হতে পারে, শ্রেণীবিন্যাস করা বেশ কষ্টকর। সাধারনত মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখে, তবে সবগুলো মনে রাখতে পারে না।
ঘুমে প্রায়ই আমরা উপর থেকে নিচে পড়ে যাওয়ার অনুভূতি পাই। আবার কখনো চোখ খোলা রেখেও এক চুল পরিমাণ নড়তে পারিনা। কেন? কী তার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ? তা নিয়েই আমার এই লেখা।
তবে একটা কথা বলে রাখি, এগুলো কোন রোগ নয়। মানুষমাত্রই এসবের শিকার হতে পারে। আমার নিজেরও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকবার।
যেমন ধরুন, আপনি আজ রাতে ঘুমাতে গেলেন। বাতি নিভালেন, নরম বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন, অল্প অল্প তন্দ্রা লেগে এলো, হঠাৎ মনে হলো আপনি অনেক উঁচু থেকে নিচে পড়ে যাচ্ছেন। চমকে উঠলেন আপনি।
আবার হয়তো একদিন আপনি আরামেই ঘুমিয়ে আছেন। হটাৎ ঘুমটা একটু পাতলা হতে লাগলো আর আপনি দেখলেন যে আপনি আর নড়াচড়া করতে পারছেন না। মনে হচ্ছে কেউ আপনাকে চেপে ধরে আছে। আপনি প্রাণপনে চিৎকার করতে চাইছেন কিন্তু গলা দিয়ে কোন স্বর বের হচ্ছে না। একটা আঙ্গুলও নাড়াতে পারছেন না আপনি।
কিছুক্ষন পর ঘেমে উঠলেন আপনি। স্বাভাবিক হয়ে আসলো সবকিছু। উপরের ঘটনা দুটি জীবনে ঘটেনি এমন মানুষ পাওয়া বিরল। তাছাড়াও আপনি ঘুমের মধ্যে কথা বলা, নাক ডাকা বা ঘুমের মধ্যে হাঁটা কোনটাই বিচিত্র না! এবার আসুন জেনে নেই কেন এমন হয় এবং কি তার সম্ভাব্য প্রতিকার-
ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মনে হয় যে উপর থেকে পড়ে যাচ্ছি। একে বলে হাইপনিক জার্ক। আমরা যখন ঘুমিয়ে পড়ি আমাদের সারা শরীর আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে আসে, মাংসপেশীগুলো শিথিল হয়ে আসে। কিন্তু যদি সে সময়ের মধ্যে আমাদের মস্তিষ্ক ততটুকু বুঝতে না পারে; তবে মস্তিষ্ক একে উপর থেকে শরীর পড়ে যাচ্ছে এটা বলে ভুল করে।
সেক্ষেত্রে সে শরীরকে সে সময়ের জন্য প্রস্তুত করতে হাত-পা শক্ত করে ফেলে সেই আসন্ন বিপদ মোকাবেলা করার জন্য আর তাই আমরা ঝাকি দিয়ে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠি। এটা আসলে সে সময় হয় যদি আমরা অনেকক্ষণ ধরে ব্রেনকে রেস্ট না দেই।
যেমন আমি ঘুমের ঘোরেও মুভি দেখি,ঘুরি,খাই আবার অনেকে একটানা পড়াশুনা বা অফিসের কাজ বা কোন গবেষনা… এসব চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে এবং আমাদের ঘুমের মধ্যেও যদি এসব চিন্তা চলতে থাকে তবে তখনই এ ঘটনা ঘটে।
বোবায় ধরার ঘটনাকে অনেকে কুসংস্কারের বশে বোবা ভুত ধরা বলে। যার আসল নাম হচ্ছে স্লিপ প্যারালাইসিস কিংবা Hypnagogic Paralysis. এ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু জটিল আর তা হচ্ছে আমাদের ঘুমের মধ্যে ২টা পর্যায় আছে।
এগুলো হল- REM (Rapid Eye Movement) ও Non REM (Non Rapid Eye Movement) ঘুমের মধ্যে এ দুটি চক্র পর্যায়ক্রমে আমাদের মাঝে আসে। আমরা যদি কোনভাবে এই দুটি চক্রের মাঝের সময়ে জেগে যাই তখনই আমরা হাত-পা নাড়তে পারি না। কথা বলতে পারিনা। কারন আমাদের এই জেগে থাকা সম্পর্কে মস্তিষ্ক অবগত থাকেনা।
এ ক্ষেত্রে কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আর ঘুমের মধ্যে এ সময়কে অনেক সময় বলে মনে হয়,আর আমরা জেগে আছি বুঝতে পারলে পুনরায় হাত পা নাড়াতে পারি এবং জেগে উঠি।
আরও পড়ুনঃ একটি আত্মহত্যা ও কয়েকটি জীবনের যবনিকাপাত
এ সময়ে অনেকে ভূত প্রেত দেখে,আবার কেউ কেউ গন্ধ পায়। এটা অস্বাভাবিক কিছু না মস্তিষ্ক তখন স্বপ্নের ন্যায় দৃশ্য তৈরি করে। আর এগুলো সব হয় মস্তিষ্কে যখন অক্সিজেন এর অভাব হয় তখন।
অনেক সময় এমন হয় যে,আমরা স্বপ্নে এমন ব্যক্তিকে দেখি আসলে বাস্তবে চিনি না বা কখনো দেখি নি বলে মনে হয়। এর ব্যাখ্যা হলো আমাদের মস্তিষ্ক কোন চেহারা তৈরী করতে পারে না। অর্থাৎ আমরা স্বপ্নে যাদের দেখি তাদের সবাইকে জীবনে কোন না কোন সময় দেখেছি।
কথাটার ব্যাখ্যা হবে এমন, আমরা পথে ঘাটে চলার সময় অসংথ্য চেহারা দেখি যা মনে রাখতে পারি না। কিন্তু আমাদের সাবসেন্স মাইন্ড তা ধরে রাখে এবং পরবর্তীতে স্বপ্নে দেখায়। আবার সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে কিন্তু আমরা আর মনে রাখতে পারিনা যে রাত্রে কাকে দেখেছি ঘুমনোর সময়।
আমরা একটি স্বপ্ন দেখার ৫ মিনিটের মধ্যে তার প্রায় ৫০ শতাংশ ভুলে যাই, আর পরবর্তী ১০ মিনিটের মধ্যে ভুলে যাই প্রায় ৯০ শতাংশ। এজন্যই আমরা রাতে যে স্বপ্ন সকালে ভুলে যাই। বিজ্ঞানীদের মতে বছরে একজন মানুষ গড়ে ১৪৬০ টি স্বপ্ন দেখে,দৈনিক দাঁড়ায় ৪ টি। তাই খারাপ স্বপ্ন দেখলে বিচলিত হবার কিছু নেই।
Very informative. Please carry on with your precious writing skill. Allah bless you.