আপনার কাছে কি পড়াশোনা কঠিন লাগে? আপনি ভাবছেন আপনি বুঝি একা এ ফাঁকিবাজ রাজ্যের বাসিন্দা? কিন্তু না, অধিকাংশ শিক্ষার্থী এমন কি টপাররাও এ রাজ্যের অধিবাসী। প্রবাদ আছে, “নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নি:শ্বাস, ওপারেতে সকল সুখ এ আমার বিশ্বাস।” সেটাই ঘটেছে এখানে। তাই যদি হবে, তবে টপাররা এত ভালো করে কিভাবে ?
উত্তরটা একটা শব্দের মধ্যে নিহিত “মোটিভেশন”। মোটিভেশনের জোরে তারা এমনিতেও পড়ে যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের পড়ার টার্গেট পূর্ণ না হয়। ফলস্বরুপ তারা অনেক বেশি জ্ঞান আহরণ করে, স্কিলের যত্ন নেয় এবং খুব ভালো ফলাফল অর্জন করে। আপনিও যদি তাদের মতো হতে চান, তাহলে এ লেখাটি আপনার জন্য।
এখানে পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখার ৯টি গোপন টিপস এন্ড ট্রিকস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যার মাধ্যমে আপনি নিজেকে মোটিভেটেড করার মাধ্যমে নিয়মিত পড়তে বসবেন।
নিজের জন্য মুগ্ধকর/লোভনীয় পুরষ্কার নির্ধারণ
পুরষ্কার পেতে কি আপনার ভালো লাগে? উত্তরটা অবশ্যই, হ্যা হবে। আপনার প্রিয় গেম বা বাস্তব জীবনে পুরষ্কার পাবার নিছক ধারণা আপনাকে উত্তেজিত করে তোলে। ঠিক একইভাবে আপনি পুরষ্কারকে ব্যবহার করে নিজেকে পড়ার প্রেরণা দিতে পারেন।
এটা করতে আপনি একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক পড়ার টার্গেট পূরণ করলে নিজেকে পুরষ্কৃত করার নিয়ম করতে পারেন। আধা ঘণ্টা গেইমিং সেশন থেকে শুরু করে প্রিয় খাবার খাওয়া কিংবা একটু সময়ের জন্য বিশ্রাম নেয়া-প্রতিটাই একেকটা পুরষ্কার হতে পারে। কঠোরভাবে নিয়মগুলো মেনে চলতে নিজেকে উদ্বুগ্ধ করুন।
মোটিভেশনের স্পেস তৈরী
নিজেকে একটি ঘরে কল্পনা করুন যেখানে আপনার স্বপ্নের জীবনযাপন করছেন আপনি, অনুভূতিটা কেমন হবে? আপনার স্বপ্নীল জীবনকে বাস্তবায়িত করতে কাজ করুন,পড়ুন।
পড়ার জন্য মোটিভেশনের স্পেস তৈরী করে নিজেকে পড়তে প্রেরণা যোগাতে পারেন। এর জন্য আপনার পড়ার রুমকে প্রিয় উক্তি, অনুপ্রেরণীয় ম্যাসেজ কিংবা স্বপ্নীল জীবনের ছবি দিয়ে সাজাতে পারেন।
পড়ার প্রেসারের কথা নিজেকে মনে করিয়ে দেন
ধরুন, আপনার আগামীকাল পরীক্ষা এবং তার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আপনার কাছে রাত জেগে পড়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। এটাতে আপনি পাস তো করতে পারবেন কিন্তু প্রচুর প্রেসারও আপনাকে ধাওয়া করবে যা আপনাকে দূশ্চিন্তায় ফেলবে।
এটা এ পর্যন্তই থাকতে পারতো কিন্তু দূশ্চিন্তা আপনার শারীরিক সমস্যা যেমন: মাথা ব্যথা, বুকে ব্যথার কারণ হতে পারে। এটাই রাত জেগে পড়ার চিত্র! ভয়ানক, তাই না? আমি নিশ্চিত যে এটা আপনার জীবনেও ঘটেছে। কিন্তু এমন চিন্তাযুক্ত ভয়াবহ দিন আপনাকে পার করতে হবে না যদি আপনি কেবল প্রেসারটার কথা নিজেকে বার বার স্মরণ করিয়ে পড়তে উৎসাহিত করেন।
যতবার আপনি রাত জেগে পড়ার চাপ, চিন্তার কথা ভাববেন, ততবার আপনি ঐ পরিস্থিতি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পড়বেন। এখন থেকে যখনই পড়তে মন না চাইবে, তখনই রাত জেগে পড়ার প্রেসারের কথা নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিন।
ছোট ছোট পড়ার টার্গেট নির্ধারণ
নিজেকে পড়াশোনায় উদ্বুগ্ধ করতে আপনার পড়াশোনাকে সহজ করে তুলতে হবে। আপনাকে বড় বড় টার্গেটের পরিবর্তে পড়ার ছোট টার্গেট নির্ধারণ করতে হবে। বড় টার্গেটগুলো এটা বিশ্বাস করাতে বাধ্য করে যে তা অর্জন করা খুব কঠিন।
ফলস্বরুপ, আপনার মোটিভেশন লেভেল কমে যায়। অপরপক্ষে, আপনি যদি ছোট ছোট পড়ার টার্গেট নির্ণয় করেন তাহলে আপনার মস্তিষ্ক তা সম্পন্ন করা সহজ মনে করে। এটা আপনার পড়াশোনায় মনোযোগ -কে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। তাই যখনই আপনি পড়ার টার্গেট নির্ধারণ করেন, তাদেরকে ছোট রাখতে ভুলবেন না যেন।
বন্ধুদের সাথে পড়ার প্রতিযোগিতা
এটা অনস্বীকার্য যে, আমরা আমাদের বন্ধুদের সাথে থাকতে, সময় কাটাতে, কথা বলতে, খেলতে ভালোবাসি। পড়াশোনার ক্ষেত্রে কেন নয়? তাদের সাথে একসাথে পড়লে কি পড়াটা উপভোগ্য হবে না? অবশ্যই হবে।
এরপর থেকে পড়তে অনুপ্রেরণা না পেলে, বন্ধুদের সাথে গ্রুপ স্টাডি শুরু করুন। তাছাড়া গ্রুপ স্টাডিতে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে এটাকে আরও বেশি উপভোগ করতে পারেন। কোনকিছু শিখতে হলে, শেখার কন্টেস্ট করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ
খান একাডেমি –অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম
ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্ব সেরা, নেই হোম ওয়ার্ক ও পরীক্ষা
এর জন্য আপনাকে একটা সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে যার মধ্যে আপনাকে নির্দিষ্ট কোন একটা বিষয় বা কনসেপ্ট সম্পর্কে জানতে হবে। সময় শেষ হয়ে গেলে, সবাইকে বিষয়টা সম্পর্কে বলতে হবে। যার পড়া সবচেয়ে বেশি মনে থাকবে সে জয়ী হবে। এভাবে পড়াশোনাকে উপভোগ্য করে পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি করতে পারেন।
পড়াশোনাই স্বপ্ন জয়ের পাথেয়
আপনি যদি নিজের মনে খোঁজ নেন, অনেকগুলো স্বপ্নের বসবাস দেখতে পাবেন। এ স্বপ্নগুলো আপনার, সেটা উপলব্ধি ও বাস্তবায়ন করতে চান কি? অবশ্যই হ্যা।
এটা ঘটুক তেমনটা চাইলে, এখনই পড়াশোনা শুরু করেন। আপনি যত বেশি গড়িমসি করবেন, তত বেশি আপনি আপনার স্বপ্নের থেকে দূরে সরে যাবেন। প্রতিদিন সকালে এটা নিজেকে উপলব্ধি করানোর মাধ্যমে আপনার পড়ার গতিকে সচল করতে পারেন। ঘুম থেকে জেগেই নিজের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে পড়া শুরু করে দেন।
সাফল্যকে কল্পনা
সাফল্য একটি খুব বড় অনুপ্রেরণাদায়ক নাম। সেজন্য সাফল্যকে কল্পনা করে নিজেকে পড়তে উৎসাহিত করতে পারেন। যখনই পড়তে আগ্রহ সৃষ্টি হবে না, তখনই মনের চোখে দেখুন পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার চিত্রটি। তারপর নিজেকে জিজ্ঞেস করুন যতটুকু চেষ্টা করা উচিত সফল হবার জন্য ততটুকু করছেন কি? যে মুহুর্তে আপনি প্রশ্নটি করবেন, সে সময়ই আপনার বিবেক জাগ্রত হয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করবে।
কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগান
কল্পনাশক্তি একটা শক্তিশালী কৌশল নিজের ইচ্ছাশক্তিকে বাড়ানোর। প্রায়সময় দেহ বাস্তবে ঘটা অবস্থার মতো কল্পনাকৃত অবস্থাতেও একইভাবে সাড়া দেয়। আপনি যদি নিজেকে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবার বিষয়টা কল্পনা করেন, আপনি সেটাকে বাস্তবে রুপদান করতে উদ্যমী হবেন। এভাবে কল্পনাকে কাজে লাগিয়ে নিয়মিত পড়ার অভ্যাস গড়তে পারেন।
ঘুমান যখন খুব বেশি চাপে আছেন
স্ট্রেস বা প্রচন্ড মানসিক চাপ পড়ার আগ্রহ ,ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। স্ট্রেসযুক্ত থাকলে আপনি স্বভাবগত কাজগুলো শুরু করেন যা ভালো ও মন্দ দুটোই হতে পারে। স্ট্রেসযুক্ত থাকলে নিজেকে চাপমুক্ত রেখে কিছু সময় বিশ্রাম নিন।
আপনি মানসিক চাপের সময় যত ঘুমের সময় বাড়াবেন, তত বেশি পড়ার সময় সক্রিয় থাকতে পারবেন। আপনার স্ট্রেসের কারণ যদি মানসিক আঘাত বা ভাঙন হয়, একজন কাউন্সিলরের শরণাপন্ন হতে পারেন।
আমাদের মস্তিষ্ক বিলম্বিত পুরস্কারের চেয়ে তৎক্ষণাৎ তৃপ্তি বা পুরস্কার পাওয়াকে বেশি গুরুত্ব দেয়, পুরস্কারটা যতই ছোট বা বড় হোক না কেন। ব্রেন সম্পর্কে এ তথ্যটি, প্রলোভনকে প্রতিরোধ ও নিজেকে পড়ার প্রতি ধাবিত করতে সাহায্য করে।
বিশাল লক্ষ্যকে যদি ছোট ছোট গোলে পরিণত করে, সেসব অর্জনের বিপরীতে নিজেকে পুরস্কৃত করতে পারেন তাহলে পড়াশোনায় মনোযোগ বহুগুণে বেড়ে যাবে। এভাবে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে নিজেকে নিয়মিত পড়তে অনুপ্রাণিত করা যায়।