কৃষ্ণ কুমারী -মৌসুমী পাল

কৃষ্ণ কুমারী -মৌসুমী পাল

কৃষ্ণ কুমারী

–মৌসুমী পাল

 

প্রথম যেদিন আমাকে দেখতে এসেছিল!

বাড়িতে প্রায় বিয়ের ধূম পড়ে যায়,

ছোটো-খাটো একটা বিয়ের আয়োজনও বলা চলে।

কিন্তু তখনও বুঝতে পারি নি, আমি যে কৃষ্ণ কুমারী ।

গায়ের বর্ণ আমার শ্রাবণের অমাবস্যার রাত।

ছেলে পক্ষ সে বার বলে গেল পরে জানাবে,

কিন্তু তাদের সেই পরে জানানোর দিন আজও এলো না।

 

এভাবে ছেলে পক্ষ আসে আর যায়

আর তাদের দেওয়া দিনের জন্য প্রহর গুনতে থাকে আমার কন্যাদ্বায় গ্রস্থ পিতা।

একটা সময় আসল যখন পাড়াপ্রতিবেশীরাও বলতে শুরু করল ও মেয়ের আর বিয়ে হবে না।

মানুষ অমন কালা হয় জন্মে দেখিনি বাপু।

অবশেষে একটা ব্যবস্থা হলো।।

 

অনেক টাকা পনে একপক্ষ রাজি হলেন।

বাবা আমার তাও খুশি! সে যে কন্যাদ্বায়গ্রস্থ।

এত কিছুর পর আমি পর্দাপন করলাম নতুন জীবনে।

মোটামুটি খুশিই ছিলাম বলা যায়,

কিন্তু শাশুড়ি স্বামীর ব্যবহার যেন দিনদিন আমার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল

কারণ আমার বাবার দেওয়া পনের টাকা যে ফুরিয়ে আসছে।

 

বৌ সুন্দরী হলে অন্য কথা

কিন্তু তারা তো কারো কালো মেয়েকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে না।

বারবার আমাকে চাপ দিতে থাকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য।

আমার ছাফ কথা, আমি পারব না।

এর জন্য অনেক অত্যাচার ও মুখ বুঝে সহ্য করেছি।

 

তারপর একদিন আমার কোলজুড়ে এলো আমার মেয়ে,

ভাবলাম এবার বুঝি সব ঠিক হবে।

কিন্তু বিধিবাম, স্বামীর মুখের দিকে তাকানো যায় না

উঠতে বসতে শাশুড়ির কটুকথা, একটা ছেলে জম্ম দেবার সাধ্যিও হলো নে।

তারপরও সন্তানের মুখ চেয়ে কোন প্রতিবাদ করিনি,

আমি যে মা।

 

দ্বিতীয় বার আমি যখন আবার সন্তান সম্ভাবা

আমার শাশুড়ির এক কথা-

পরিক্ষে করে দেখো বাপু ছেলে না মেয়ে

মেয়ে হলে ওসব রাখা-টাখা চলবে না

ফেলে দিতে হবে।

স্বামী আমার মায়ের উপর কথা বলেন না।

কিন্তু আমি বাধ সাধলাম,

না, ছেলে-মেয়ে যাই হোক আমি ওসব করতে পারব না

ছেলে-মেয়ে সব সমান আমার কাছে,

আর আমার সন্তান ছেলে না মেয়ে সে দ্বায় আমার না।

তারপর একদিন পরীক্ষা করা হলো,

উত্তর বসল মেয়ে।

অনেক বলেও আমি তাদের বুঝাতে পারলাম না।

 

একটা সময় মনে হলো-

আমি মনে হয় আর পারলাম না রক্ষা করতে আমার পৃথিবীর আলো না দেখা সন্তানকে!

এমনি কালো বৌ, তার উপর বছর বছর কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়া ওরা কিছুতেই মানতে রাজি না।

তাই আমিও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম

এমনই এক অমাবস্যা তিথীতে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেলাম রাত্রির কালো আধারের সাথে।

অবশিষ্ট রইল শুধু আমার কৃষ্ণবর্নের অস্তিভস্র ছাই আর আমার অবুঝ শিশুর কান্না।

আরও পড়ুনঃ বাষ্পীভূত ভালবাসা -মোঃ আতিকুর রহমান

Exit mobile version