ফেসবুকের নিউজ ফিড দেখছিলাম, এমন সময় চোখে পড়ল বিশ্বাস যেন বিস্ময়কর এক অভিব্যক্তি শিরোনামের একটি আর্টিকেল। আগ্রহ নিয়ে পড়তে থাকি। পড়ার আগ্রহটা একটু বেশি ছিল কেননা কন্টেন্টটি লিখেছিলেন প্রিয় স্যার এভোকেট সাজজাদুল ইসলাম রিপন। আজ স্যারের লেখা চমৎকার সেই কন্টেন্টটি তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সংগ্রহ করে হুবহু শেয়ার করছি আপনাদের সাথে।
স্যার লিখছেন, ‘বিশ্বাস’ শব্দটি অনেকটা ছোট হলেও এর ব্যাপ্তি অনেক বড়। এমনকি গুনবাচক এ শব্দে রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যান। পার্থিব জীবনে মানুষে মানুষে পরস্পর বিশ্বাস স্থাপন করে। এমন বিশ্বাসে যেমনি মানুষ সম্পর্কের পিলার স্থাপন করে। তেমনি বিশ্বাসভঙ্গ, মনুষ্য জীবনকে দূর্বিষহ করে তোলে।
জীবন চলার পথে কখনো কখনো মানুষকে বিশ্বাস স্থাপন করতেই হয়। এ বিশ্বাসের কারনে কেউ কল্যানের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করে, আর কেউ সর্বোচ্চ শিখর থেকে ছিটকে পরে অতল গহ্বরে।
মানুষের জীবনে বিশ্বাস স্থাপন করার তাগিদ সরাসরি ধর্মীয় গ্রন্থে লিপিবদ্ধ। কারন স্রষ্টার সাথে মানুষের পরিচয়ের মূল ভিত্তি হলো বিশ্বাস স্থাপন করা। তাই যিনি বিশ্বাস স্থাপন করেনি, তাকে আমরা বলি ‘তার ঈমান নেই’। স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস, মানুষের বিশ্বাসের চূড়ান্ত পর্যায় যা একেবারে ঝুঁকিমুক্ত। মুসলমানের ধর্মীয় গ্রন্থে (আল-কোরআন) বেশকিছু বিশ্বাসের তাগিদ রয়েছে আর এগুলোর উপর বিশ্বাস স্থাপন করাই হলো মহান আল্লাহর উপর ঈমান আন। আর ঈমানের এমন দাবী পূরণে মানুষের পরকালীন ও ইহকালীন মুক্তি।
এ জীবনে মানুষ জীবন চলতে অন্যের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। এমন বিশ্বাস অনেক সময় অবচেতন মনে সৃষ্টি হলেও এর পিছনে কিছু পার্থিব স্বার্থ সাধারণত জড়িত থাকে। যখন এমন পার্থিব স্বার্থ বিশ্বাসের মূল কারন হয় তখনই বিশ্বাসের বিপর্যয় মানুষ দেখতে থাকে অনায়াসে। এমন মানুষকে মানুষের বিশ্বাস সাধারণত ক্ষনস্থায়ী ধরনের হয়। আবার স্বভাবত মানুষ জন্মের পর থেকে বিশ্বাস স্থাপন করার মানসে থাকে এবং জীবন চলতে ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতায় বিশ্বাস স্থাপনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
কথায় আছে, “বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর”। বাক্যটি কিছুটা বিশ্বাস স্থাপনের গুনকৃর্তিতে ভরপুর। ক্ষনস্থায়ী এ জীবনে মানুষকে বিশ্বাস করতে হয় অনেককিছু। এটা যে সবসময় সাগ্রহে হয় এমনও নয়, অনেক সময় বাধ্য হয়ে মানুষকে বিশ্বাস করতে হয়। আর সম্পর্কগুলো তৈরি হয় বিশ্বাস থেকে। হউক তা ব্যবসায়িক, ব্যাক্তিগত, পারিবারিক বা রাজনৈতিক সম্পর্ক। মানুষের জীবনে মানুষ হাজারো অভিজ্ঞতায় অন্তত বিশ্বাস ভঙ্গের দরুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এমন অভিজ্ঞতা নিশ্চয় কম নয়। আসলেই বিশ্বাস যেন বিস্ময়কর একটি শব্দ।
“মানুষ চিনতে ভুল করেছি”। এই কথাটা অনেকের মুখে শুনেছি। আসলেই অমানুষগুলো ঠিক মানুষের মত। তাই এমন অনুশোচনার বাক্য মানুষ প্রায় বললেও মূলত বিশ্বাসঘাতকতার কারনে এই কথাগুলো বলেন। তাই বিশ্বাস করার আগে ভাবতে হবে বার বার।
কারন আপনার বিশ্বাসটি অন্যে বহন করবে যতক্ষণ তার স্বার্থ সংরক্ষিত হয়, এরপর সে আর বিশ্বাস রক্ষা করবে না। তাই যেকোনো সম্পর্কে বিশ্বাস করে পুরোটা ডুবে যাওয়ার আগে নিজের অস্তিত্বের কথা ভাবাই জ্ঞানীদের কাজ।
স্যারের মূল্যবান এ সংক্ষিপ্ত বক্তব্যই প্রমাণ করে আসলেই মানবজীবনে বিশ্বাস যেন বিস্ময়কর এক অভিব্যক্তির নাম। সাজজাদুল ইসলাম রিপন স্যার কর্মজীবনে বর্তমানে একজন এডভোকেট হিসেবে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, ঢাকা এবং তিনি “বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা” একজন অবিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে পেশায় নিয়োজিত আছেন। এছাড়াও তিনি সমসাময়িক এবং জীবনঘনিষ্ঠ বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করতে পছন্দ করেন।
তথ্যসুত্রঃ
- www.facebook.com/Sazzad.2010