আত্মহত্যা হচ্ছে কোন ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া। ল্যাটিন ভাষায় সুই সেইডেয়ার থেকে আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে। চিকিৎসকগন আত্মহত্যার চেষ্টা করাকে মানসিক রোগ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিনদিন আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক দেশ একে অপরাধ বলেও গন্য করে। প্রতিবছর প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে। এক্ষেত্রে নারীদের তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বেশী। আর উঠতি বয়সি ছেলে-মেয়েদের ভিতর ও এর প্রবণতা বেশী দেখা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর মতে প্রতিবছর সারা বিশ্বে যে সব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে তার মধ্যে আত্মহত্যা ত্রয়োদশতম প্রধান কারণ।
আত্মহত্যার প্রধান কারণ সমূহ
- অধিকাংশ আত্মহত্যাকারীই দীর্ঘদিন মানসিক প্রেসার সহ্য করতে করতে যখন আর ধৈর্য্য ধারণ করতে পারেন না তখন বেছে নেন এ ঘৃন্য পথ।
- কেউ বা আবার প্রেমে ব্যর্থ হয়ে,কেউ বা পরকীয়ায়।
- অনেকে আবার বেকারত্ব বা প্রতিষ্ঠিত হতে না পেরে।
- কেউ ধর্ষণের শিকার হয়ে।
- কেউ বা আবার নিজের সম্পকে অতি উচ্চভিলাসী মনোভাব পোষণ করেন।আর যখনই তা পূরণে ব্যর্থ হন তখনই বেছে নেন এ পথ।
- পারিবারিক কলহের কারণে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমাদের করনীয়
- আমাদের কাছের মানুষের সাথে ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো শেয়ার করা।
- কোন কিছু নিয়ে মন খারাপ থাকলে লাইফের ইতিবাচক মুহূর্তের কথা মনে করা।
- নিজেকে কোন কাজে ব্যস্ত রাখা।
- খেলা-ধূলা বা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া।
- খারাপ কোন মুহূর্তের কথা মনে পড়ে কান্না আসলে কান্না করা। কারণ কান্নার সাথে আপনার স্ট্রেস হরমোন এবং টক্সিন শরীর থেকে বের হয়ে যায় এবং এন্ডরফিন হরমোন তৈরী হয় যা মনকে সতেজ করে। এর ফলে মানুষ খারাপ কোন ডিসিশন নেওয়া থেকে বিরত থাকে।
- আপনার কাছের মানুষের ভিতর কোন পরিবর্তন দেখা দিলে ব্যক্তিগত উদ্যাগে তার খোঁজ নেওয়া।
- ধর্মীয় বিধীবিধান মেনে চলা।
- অনুপ্রেরণামূলক বই পড়া।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কাউন্সেলিং এবং যথাযথ মানসিক চিকিৎসাই আত্মহত্যা প্রতিরোধেরর সবচেয়ে কার্যকর পন্থা। ১০ সেপ্টেম্বরকে আমরা বিশ্ব আত্মহত্যা দিবস হিসেবে পালন করি।কিন্তু শুধু এই দিনটিকে ঘটা করে পালন না করে আমাদের সকলের উচিত এ সম্পকে জনসচেতনতামূলক কাজ করা।
আরও পড়ুনঃ অবসরে বই পড়া -একটি ভাল বই জীবন বদলে দিতে পারে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, আত্মহত্যার ঘটনার দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০ম। ২০১১ সালেও আমাদের অবস্থান ছিল ৩৮ তম। এ থেকে বোঝা যায় সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে আত্মহত্যা প্রতিরোধ সম্ভব অনেকাংশেই।
এছাড়া ইতোমধ্যে যারা আত্মহত্যর পথ থেকে ফিরে এসেছে তারা কখনও আর এ পথে যেতে চান না। জীবন সংগ্রাম ময়। দুঃখ কষ্টের মিশ্রনই যার কাঠামো।আর এর ভিতর দিয়েই মানুষকে এগিয়ে যেতে হবে। “ঝড় থামার জন্য অপেক্ষা নয়,বাদলের মধ্যেই শিখতে হবে নাচ“-ভিভিয়ান গ্রিন।
অন্ধ মানুষ ও আশা করে পৃথিবী দেখার,বিকলঙ্গ মানুষও হাটতে চায়, বছরের পর বছর অসুস্থ মানুষও বাঁচতে চায় আর আপনি সুস্থ স্বাভাবিক মানষ হয়ে আত্মহত্যার কথা ভাবছেন? এটা রীতিমত হাস্যকর। তাই নিজেকে গন্ডি থেকে বের করুন। নিজের সুখের রাস্তা নিজেই তৈরি করুন। জীবনে টাকা পয়সার দরকার আছে কিন্তু তা সুখের একমাত্র উৎস না।
নিজের মেধাকে কাজে লাগান। নিজের জীবনকে নিজের মতত করে উপভোগ করুন।আবেগ তাড়িত না হয়ে বিবেকতাড়িত হোন। সকল পরিস্থিতে মনে রাখতে শিখুন,জীবনের বিকল্প কিছুনাই, জীবনের বিকল্প শুধুই জীবন।