পাঁচটি ‘বিষাক্ত ফুল’ যা হতে পারে মৃত্যুর কারণ

ফুল পছন্দ করে না বা ভালবাসে না এমন মানুষ হয়তো পৃথিবীতে খুঁজেই পাওয়া যাবে না। ফুলের মন মাতানো সৌন্দর্য ও সুগন্ধকে ভালোবাসে আমরা বাগানে ফুলের চাষ করি, ফুলদানিতে ফুল সাজিয়ে রাখি। ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষকে ফুল উপহার দেই। ফুলের উপর হাত বোলাই। কিন্তু আপনি হয়তো ভাবতেই পারবেন না যে, আমাদের চারপাশের এই সুন্দর ফুল গুলো কতটা বিষাক্ত হতে পারে। একটুখানি অসাবধানতা আপনার মৃত্যুর কারণ হতে পারে। চলুন তাহলে জেনে নেই এমন পাঁচটি বিষাক্ত ফুল সম্পর্কে।

অলেন্ডার:

অলেন্ডার- বিষাক্ত ফুল

অলেন্ডারকে হয়তো অনেকেই চিনে থাকবেন কারণ, অলেন্ডার ফুলটি তার মিষ্টি সুগন্ধের জন্য অনেক পরিচিত। দক্ষিণ এশিয়ার স্থানীয় উদ্ভিদ এই অলেন্ডার। সাধারণত চিরসবুজ এবং ঝোপ আকারে জন্মায় এই ফুল গাছ গুলো। সাদা, গোলাপি ও লাল এই তিন প্রজাতির ফুল ফোটে। থোকায় থোকায় ফোটা এই ফুলগুলোর ভারে গাছ গুলো নুয়ে ঝোপের মত আকার নেয়। সাধারণত বাগানের শোভাবর্ধন ও অলংকরণ এর জন্য লাগানো হয় এই গাছ গুলো।

অলেন্ডার ফুল গুলো দেখতে যতটা সুন্দর তার থেকেও কয়েক গুন বেশি বিষাক্ত। সাধারণত অন্যান্য উদ্ভিদের যে কোন একটা নির্দিষ্ট অংশ বিষাক্ত হয় কিন্তু অলেন্ডার গাছের সম্পুর্ন অংশই বিষাক্ত। এমনকি মৌমাছির মাধ্যমে সংগৃহীত মধুও বিষাক্ত।
এই গাছের আঠা অথবা ফুল ও পাতার রস যদি শরীরের কোথাও লাগে সেখানে জ্বালা হতে পারে ।

অলেন্ডার গাছটির কোনো অংশ যদি ভুল করে একবার খেয়ে ফেলেন তাহলে মৃত্যু নিকটে। কারণ এই বিষ সরাসরি আপনার রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। রক্তে বিষক্রিয়ার ফলে হৃদ-ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে।অনিয়ন্ত্রিত হৃৎস্পন্দনের কারণে রোগী দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে।বিষক্রিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে লালাক্ষরণ, বমি, খিঁচুনি শরীরে জ্বালা হতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে ।

এই ফুল টি এতটাই বিষাক্ত যে, আপনি যে ফুলদানিতে এটিকে সাজিয়ে রাখবেন তার পানিও আপনার মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই এই ফুল গুলো বাড়িতে বা বাড়ির আশেপাশে না রাখাই ভালো।

হাইড্রেনজিয়া:

হাইড্রেনজিয়া এর বৈজ্ঞানিক নাম Hydrangea Macrophylla, (হাইড্রেনজিয়া ম্যাক্রোফিলা)। হাইড্রেনজিয়া এশিয়া ও আমেরিকার স্থানীয় একটি ফুল। তবে কোরিয়া, চিন, জাপানে অনেক পরিচিত এই ফুলটি।

বাংলাদেশও এর কিছু প্রজাতি পাওয়া যায়। বেশিরভাগ গাছ গুলোই গুল্ম, সাধারণত ১-৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। কিছু কিছু আরো বড় হয়।হাইড্রেনজিয়া ফুল গুলো সাদা, নীল, গোলাপি ও বেগুনি রঙের হয়ে থাকে তবে সাদা রঙের ফুল গুলোই বেশি দেখা যায়। সাধারণত মাটির পি এইচ এর ভিন্নতার কারণে এই রঙের ভিন্নতা দেখা যায়।

আরও পড়ুনঃ বাঙালির স্ট্রিট ফুড সমাচারঃ স্ট্রিট ফুড বাঙালির ক্ষয়িষ্ণু কালচারের অংশ

বসন্তের শুরু থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত ফোটে এই ফুল গুলো। হাইড্রেনজিয়া ফুলগুলো থোকায় থোকায় জন্মে। রঙিন এই ফুল গুলো তার রঙের বাহারে মুগ্ধ করবে যেকাউকে। সাধারণত বাড়ির উঠানে অর্নামেন্ট ফুল গাছ হিসেবে জনপ্রিয়। কিন্তু হাইড্রনজিয়ার বাহ্যিক সৌন্দর্যে ভুললে অনেক বড় ভুল করবেন।

কারণ হাইড্রেনজিয়া দেখতে যতটা সুন্দর ঠিক ততটাই বিষাক্ত। ভুল করে যদি ফুল টি খেয়ে ফেলেন, তাহলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘাম ছেড়ে শরীর দূর্বল লাগতে শুরু করবে, বমি বমি ভাব, ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠা এবং শরীরে রক্ত পরিবহন ব্যবস্থার অবনতি ঘটতে পারে। দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা হলে রোগী কোমায় চলে যেতে পারে এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

যেহেতু আমাদের অনেকেই বাড়ির উঠোনে শখ করে এই গাছগুলোর রোপন করে থাকেন, তাই বাড়ির বাচ্চাদের হাইড্রেনজিয়া ফুলের নাগাল থেকে দূরে রাখা উচিত এবং নিজেদেরকেও সাবধান থাকতে হবে।

ফক্সগ্লোব:

ফক্সগ্লোব, এই ফুলটির বৈজ্ঞানিক নাম Digitalis Purpurea. মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ -পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর – পশ্চিম আফ্রিকার একটি স্থানীয় ও অধিক জনপ্রিয় ফুল এই ফক্সগ্লোব। বাংলাদেশের আবহাওয়া এটি টিকে থাকতে পারে না।ফক্সগ্লোব ফুল গাছ গুলো বহুবর্ষজীবী এবং অধিকাংশ সময়ই ঝোপ আকারে জন্মায়।প্রতিটি গাছ কয়েক মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।

এই ফক্সগ্লোব ফুলটির বিশ টিরও অধিক প্রজাতি রয়েছে। লম্বা স্পাইকের (ডাল) উপর সারি বদ্ধ ভাবে জন্মায় এই ফুল গুলো। ফুল গুলো নলাকার দেখতে অনেকটা ঝুমকার মতো।

সাধারণত বেগুনি, হালকা হলুদ, সাদা এবং গোলাপি এই চার রঙের প্রজাতির ফুল ফোটে,এবং ফুল গুলোর ভিতরের দিকে সাদা ও কালো রঙের কিছু স্পট থাকে যা এই ফুল গুলো কে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।তবে গোলাপি রঙের ফক্সগ্লোব ই বেশি দেখা যায়।

এই ফুলটির বাংলা নামার্থক হলো শেয়াল মোজা। এই ফুলটির এমন নাম করনের পেছনে একটি সুবিশাল পৌরাণিক কাহিনী আছে।বল হয়ে থাকে প্রাচীনকালে শিয়ালেরা তাদের চলাচলকে নিঃশব্দ করার জন্য পায়ে এই ফুল পরতো।

বাহারি রঙের এই ফুলটি বন্য পরিবেশে বেশি জন্মালেও শোভাবর্ধক উদ্ভিদ হিসেবে অনেকই বাগানে রোপণ করে থাকেন। ফক্সগ্লোব গাছের পাতা হৃদ রোগের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

তবে ফক্সগ্লোব এর মন মাতানো সৌন্দর্য ও ঔষধি গুনে একদম ভুলবেন না,কারণ এই ফুলটি খুবই বিষাক্ত। কোনভাবে গলাধঃকরণ করে ফেললে তৎক্ষনাত খিঁচুনি, কম্পন, ডায়রিয়া, বমি,ত্বক কুঁচকে যাওয়া,লালাক্ষরণ সহ হৃদকম্পন কমে গিয়ে রোগী মারা যেতে পারে।

তাই যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। বিষাক্ত এই গাছগুলো থেকে নিজে এবং বাড়ির সবাইকে দূরে রাখা উচিত।

লিলি অব দ্যা ভেলি:

লিলি অব দ্যা ভেলি অথবা উপত্যকার লিলি হয়তো অনেকরই পরিচিত। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Covallaria Majalis( কোভালারিয়া মাজালিস)।লিলি অব দ্যা ভেলি এশিয়া ও ইউরোপের শীতপ্রধান অঞ্চলের স্থানীয় ফুল। আকারে খুব একটা বড় হয় না এই গাছগুলো।

মাটির খুব কাছ থেকেই প্রধান শাখাটি থাকে এবং পাশ দিয়ে লম্বা লম্বা সবুজ পাতা বের হয়।ডালগুলো সাধারণত ৬-১২ ইঞ্চি বা তার কিছু লম্বা হয়।

লিলি অব দ্যা ভেলি সাধারণত গোলাপি ও সাদা এই দুই ধরনের হয়ে থাকে। তবে সাদা রঙের ফুল গুলোই বেশি দেখা যায়। সাদা রঙের এই ফুল গুলো ডালে রজনীগন্ধার মতো সারিবদ্ধ হয়ে ফোটে।

তবে ফুলগুলো দেখতে কানের দুল বা ঘন্টার মতো।এই গাছে ছোট ছোট বেরির মত এক ধরনের ফল হয়।ফল গুলো শুরুতে সবুজ রঙের হলেও পরে কমলা এবং সবশেষে বেরির মত লাল রঙ ধারণ করে।

লিলি অব দ্যা ভেলি ফুলটি তার মিষ্টি সুগন্ধের জন্য অধিক সমাদৃত। সুন্দর গন্ধ থাকায় এই ফুল দিয়ে পারফিউম এবং আতড় তৈরি করা হয়। এই ফুলের সুগন্ধ ও সৌন্দর্যে একে একদম বিশ্বাস করবেন না।অলেন্ডার ফুলের মত এই গাছের ও প্রতিটি অংশই বিষাক্ত।

এই গাছের বিভিন্ন অংশে অ্যামিনো এসিড ও কার্বোক্সিলিক এসিডের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর লাল রঙের বেরির মত ফলগুলো খুব সহজেই বাচ্চাদের আকৃষ্ট করে। এই ফুলটি অল্প পরিমাণে খেয়ে ফেললে হয়তো কিছুই হবে না।

কিন্তু বেশি পরিমানে খেয়ে ফললে বমি,বুকে ব্যথা,ত্বক ও মাংসপেশী কুঁচকে যাওয়া, মুখে জ্বালা করা ও হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক ভাবে কমে যেতে পারে। খুব দ্রুত বিষ নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করলে আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যেতে পারে।

বাগানের শোভাবর্ধক ও অর্নামেন্ট উদ্ভিদ হিসেবে অনেকেই বাগানে এই বিষাক্ত উদ্ভিদ টি রোপন করে থাকেন। এক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে যেন বাড়ির পোষা প্রাণী এবং ছোট বাচ্চারা এই ফুলের নাগাল থেকে দূরে থাকে। কারণ এর লাল ফল গুলো খুবই লোভনীয়।

ধুতরা ফুল:

ধুতরা আমাদের সবার পরিচিত একটি ফুল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Dutura metal (ধুতরা মেটাল )।এই ফুলটি বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশেই পাওয়া যায়। সাধারণত রাস্তার পাশে এবং ঝোপঝাড়ে অযত্নে বৃদ্ধি পায় এই গাছ গুলো। কিছু কিছু গাছ পাহাড়ের চূড়ায় ও টিকে থাকতে পারে।

এটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ, খুব একটা বড় হয় না বরং ঝোপের মতো আকার নেয়। গাছেটির গায়ে ছোট ছোট কাঁটা থাকে। এই ফুল গাছে সাদা,বেগুনি ও হালকা গোলাপি রঙের ফুল ফোটে।তবে সাদা ফুলের গাছ গুলোই বেশি দেখা যায়। সাধারণত বর্ষা থেকে হেমন্তকাল পর্যন্ত ধুতরা ফুল ফোটে।

ধুতরা গাছের পাতা, ফুল, শিকড়, বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহারকরা হয়। এর বীজ থেকে চেতনানাশক দ্রব্য তৈরি করা হয়। ধুতরা ফুলের অনেক গুলো প্রজাতি রয়েছে।সবকটি প্রজাতিই ভয়ংকর বিষাক্ত।

কোনোভাবে ফুলটি গলাধঃকরণ করে ফেললে কিছু সময়ের জন্য মানুষের হ্যালুসিনেসন বা মতিভ্রম হতে পারে এমনকি চিরতরে পাগল হয়েও যেতে পারে এছাড়া চোখে জ্বালা করা থেকে শুরু করে অন্ধত্ব । অধিক পরিমাণে খেয়ে ফেললে মৃত্যু নিশ্চিত।

আত্মহত্যা ও হত্যার কাজে এই ফুলের বিষ খুব জনপ্রিয়। এজন্য এই গাছের চাষ অথবা বিপণন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।তবে আশার কথা হচ্ছে মানুষ ও অবলা পশু -পাখি ও এই গাছটি থেকে দূরে থাকে।এই ভয়ংকর  বিষাক্ত ফুল এর  কবল থেকে বাঁচতে এর থেকে দূরে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।

Exit mobile version

Fatal error: Uncaught TypeError: fclose(): Argument #1 ($stream) must be of type resource, false given in /home/digilshq/public_html/wp-content/plugins/wp-super-cache/wp-cache-phase2.php:2381 Stack trace: #0 /home/digilshq/public_html/wp-content/plugins/wp-super-cache/wp-cache-phase2.php(2381): fclose(false) #1 /home/digilshq/public_html/wp-content/plugins/wp-super-cache/wp-cache-phase2.php(2141): wp_cache_get_ob('<!DOCTYPE html>...') #2 [internal function]: wp_cache_ob_callback('<!DOCTYPE html>...', 9) #3 /home/digilshq/public_html/wp-includes/functions.php(5464): ob_end_flush() #4 /home/digilshq/public_html/wp-includes/class-wp-hook.php(324): wp_ob_end_flush_all('') #5 /home/digilshq/public_html/wp-includes/class-wp-hook.php(348): WP_Hook->apply_filters('', Array) #6 /home/digilshq/public_html/wp-includes/plugin.php(517): WP_Hook->do_action(Array) #7 /home/digilshq/public_html/wp-includes/load.php(1279): do_action('shutdown') #8 [internal function]: shutdown_action_hook() #9 {main} thrown in /home/digilshq/public_html/wp-content/plugins/wp-super-cache/wp-cache-phase2.php on line 2381