যাতায়াতের বিভিন্ন মাধ্যমের মধ্যে বিমান যাত্রা অত্যন্ত রোমাঞ্চকর। একই সাথে ব্যতিক্রম ধরনেরও বটে। বিমানে ভ্রমণ এর সময় বিমানের জানালা দিয়ে মেঘের দল দেখা যায় খুব কাছ থেকে। যারা এখনো বিমান যাত্রা করিনি, তাদেরও বিমান ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করার সুপ্ত বাসনা রয়েছে। কিন্ত কখনোও কী আমাদের এই চিন্তা এসেছে যে, বিমানের জানালা গোলাকার কেন হয়? হ্যাঁ, আজ আমরা এ সম্পর্কে জানতে পারবো-
রাইট ভ্রাতৃদ্বয় সর্বপ্রথম মানুষবহন যোগ্য বিমান আবিষ্কার করেন ১৯০৩ সালে। প্রথম সময় এর দিকে বিমানের জানালা গুলো চারকোনা আকারের ছিলো। সাধারণ বিমানে, জানালা সম্পর্কিত তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। পরবর্তীতে অনেক উঁচু এবং দ্রুত গতির বাহন হিসেবে জেট বিমান খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে।
এরপর প্রায় ৫০ বছর চলে যায়। ১৯৫০ দশকের ঘটনা, তখন জেট বিমান গুলো খুব আকর্ষণীয় করার জন্য বিমানের জানালার আকৃতি বিভিন্ন জ্যামিতিক আকারের তৈরি করা হচ্ছিলো। আয়তাকার এবং বর্গাকার আকৃতির বানানো হচ্ছিলো। এতে উড়োজাহাজের গতিও আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল।
১৯৫৩ সালে চারকোনা আকারের, বর্গাকৃতির জানালা সম্বলিত জেট বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হয়। একবার না বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে পরপর দুবার। সেই ভয়াবহ রকমের দুর্ঘটনায় যাত্রী মারা গিয়েছিল ৫৬ জন।
এরপর সারাবিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়। কেন বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে? বিমান প্রকৌশলীগণ কারণ অনুসন্ধান করতে থাকেন। গবেষক যারা ছিলেন তারাও গবেষণা করতে থাকেন। অবশেষে প্রমাণিত হয় যে, বিমানের জানালার চতুর্ভুজ আকৃতির জ্যামিতিক নকশাই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
বিমান যেহেতু আকাশ পথে চলে। ভূপৃষ্ঠ এবং বায়ুমন্ডলের যে স্তরে বিমান চলাচল করে, অর্থাৎ ট্রপোমণ্ডলে বায়ুর চাপে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।
সাধারণত বিমান অনেক উঁচুতে চলাচল করে। সুন্দরভাবে চলাচলের জন্য অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক বায়ুর চাপকে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে হয়।
বিমানের অভ্যন্তরে যখন বাতাসের চাপ বেশি, আর যদি গতি আরও বাড়ানো হয়, তখন চাপ আরো বৃদ্ধি পায়। চারকোনা আকারের জানালা থাকলে, ঐ নির্দিষ্ট চারটি কোনায় বায়ুর চাপ অত্যাধিক পরিমাণে পড়ে। অল্প সময় বা স্বল্প দূরত্ব কোনো প্রভাব না ফেললেও, বেশি দুরত্বে এক সময় বিমানের ভিতর আর বাইরের বায়ুর চাপ সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে না। কেবিনের অভ্যন্তরে প্রচুর পরিমাণে চাপ তৈরি হয়। ফলে, ঐ নির্দিষ্ট চারটি কোনা একসময় ভঙ্গুর হয়ে যায়। যার দরুন বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হয়।
অপরদিকে গবেষণার ফলে জানা যায়, কেবিনের ভিতরে যে চাপ সৃষ্টি হয়, তা গোলাকার জানালাতে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। কেননা, বাতাসের চাপ কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থারে বেশি পড়ে না। বরং বায়ুর চাপ গোলাকার জানালার সব জায়গায় সমানভাবে পড়ে। এতে বিমান দুর্ঘটনায়ও পতিত হবার সম্ভবনা অন্ত্যন্ত কম।