আমরা অনেকেই প্যারালাল ইউনিভার্স সম্পর্কে শুনেছি। এখন মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, এটা কি আসলেই সম্ভব! কোনো প্রমাণ আছে কি অথবা কোনো রেফারেন্স! জি হ্যাঁ, এখন আমরা এটা নিয়েই আলোচনা করবো।
আলোচনা শুরু করার আগে কিছু শব্দ সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো। এমনই একটা শব্দ হলো Deja Vue, যা একটি ফ্রেঞ্চ শব্দ। যার অর্থ এমন কিছু দেখা যা দেখে মনে হতে পারে আপনি পূর্বে তা দেখেছেন; কিন্তু সত্যি হলো আদৌ তা কখনো ঘটেইনি। আবার এমনটাও হতে পারে কিছু শুনে মনে হতে পারে যে আপনি তা আগে থেকেই জানেন কিন্তু সত্যি হলো আপনি এমন কিছু আগে কখনো শুনেনই নি।
১৯৯৮ সালে জন টিউটর একটা শব্দ আবিষ্কার করেন যার নাম অল্টারপাস; জিনিসটা অনেকটা টাইমট্রাভেল এর মতো; ধরুন আপনি ভবিষ্যতের কোনো একটা সময়ে গিয়ে নিজেকে বা অন্য কাউকে একটা মেসেজ দিয়ে আসলেন, এটাই অল্টারপাস। জিনিসটা কিছুটা আজগুবি মনে হতে পারে। চলুন তবে দুইটা ঘটনা শুনে আসা যাক।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
১২ই সেপ্টেম্বর ২০০৮, সময় বিকেল ৪টা বেজে ২২মিনিট। আমেরিকার লস এঞ্জেলসে মেট্রোলিন্ক কমিউটার ট্রেনের একটি মারাত্মক দূর্ঘটনা হয়; যাতে ২৬জন মানুষ মারা যায়। একটা দূর্গম জায়গায় দুর্ঘটনা-টা ঘটার ফলে এই এক্সিডেন্ট এর কথা কেউ-ই জানতো না।
সেদিন বিকাল ৫ টায় একজন মহিলা পুলিশের কাছে complain করে যে তার স্বামীর নম্বর থেকে অনবরত call আসছে কিন্তু call রিসিভ করলে কেউ কথা বলছে না, এমনকি কোনরকম শব্দও শোনা যাচ্চে না।
পুলিশ এবং উদ্ধার কর্মি মিলে ফোনকল ট্র্যাক করে প্রায় এগারো ঘন্টা পর ঘটনাস্থলে পৌছে যায় এবং ফোনকল ট্র্যাক করেই মহিলার স্বামীকে সনাক্ত করে।
রহস্য হলো ঐ ব্যাক্তি এগারো ঘন্টা আগেই মারা গিয়েছিলেন এবং আরো রহস্য হলো ফোনকল ট্র্যাক করে তাকে সনাক্ত করার পর সেই signal হারিয়ে যায় এবং অনেক খুজেও ঐ ফোনের অস্তিত্ব আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখন প্রশ্ন এটা থেকে যায় ফোন কলটি কি তাহলে প্যারালাল ইউনিভার্স এর অন্য পৃথিবীতে থাকা তার স্বামীর কাছ থেকে আসছিল?
মার্টিন নামের এক লোক দাবি করতেন তিনি ভবিষ্যতে গিয়েছিলেন কিন্তু কেউ প্রমাণ চাইলে চুপ হয়ে যেতেন। তার মৃত্যুর আগে আগে তিনি বলেন যে তার নাকি খুব Twin Pines Mall মোলে যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কেউ কোনদিন এরূপ কোন Mall এর নাম শুনেন-ই নাই তাই তারা এটাকে প্রলাপ বলেই ধরে নেন।
কিন্ত মার্টিনের মৃত্যুর এক বছর পরে তার আত্বীয়রা পত্রিকায় একদিন দেখতে পায় প্রতিবেশী দেশে এক Lone pine নামক একটি Mall নাম পরিবর্তন করে Twin pines mall নাম রেখেছেন।
আচ্ছা এবার চলে যাবো প্যারালাল ইউনিভার্স (Parallel Universe) সম্পর্কে। চলুন আরো দুটি ঘটনা বলি;
2008 সাল স্প্যান। লেরিনা গটসিয়া নামক একজন 41-বছর বয়সী মহিলা জানান যে তিনি সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান যে গত রাতে তিনি তার বিছানায় যে বেডশিট-টি দেখেছে সকালে তা পাল্টে গেছে।
তিনি এটা নিয়ে অতটা চিন্তা করলেন না। তার মাথায় সব ঠিক আছে।শুধু ২টা জিনিস পরিবর্তন হয়ে গেছে প্রথমত তার অফিস একদমই গায়েব হয়ে গেছে যেখানে তিনি ২০ বছর ধরে চাকরি করেছেন এমনকি সে অফিসের নাম কেউ কখনো শোনেনি এবং দ্বিতীয়ত তার প্রেমিক অপর একজন অপরিচিত মানুষ।
তিনি বিগত দু’বছর ধরে যার সাথে প্রেম করছিল তার নম্বরটিতে ফোন করলে সেই মানুষটি তাকে চিনছেই না।কারণ সেখানে তার প্রেমিকার পরিবর্তে অন্য একজন লোক ছিল এবং সেই লোকটির নামে নম্বর-টি রেজিস্ট্রার করা ছিল।
১৯৫৪ সাল টোকিওর বিমানবন্দরে একজন অদ্ভুত মানুষকে আটকে দিয়েছে কাস্টমস। লোকটা বলেছেন তিনি Taured নামক কোন এক দেশ থেকে এসেছে তবে পথিবীতে এই নামের দেশের কোন অস্তিত্ব-ই নেই তবে লোকটাকে ভন্ডও বলা চলে না। কারণ তার পাসপোর্ট-টা একদমই আসল। এমনকি তার কাছে ব্যাংকের স্টেটমেন্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং অনন্য জরুরি যা কিছু আছে তা সবকিছুতে Taured দেশের নাম এবং সরকারের সিল মারা আছে।
লোকটিকে জিজ্ঞাস করলে লোকটি বলে Taured একটি European country এবং দেশটির বয়স এক হাজার বছর। তাহলে যে দেশটির বয়স একহাজার বছর সেই দেশটি হটাৎ করে কোথায় হারিয়ে যেতে পারে? পুলিশ লোকটিকে একটি হোটেলে রাখে এবং খুব কড়া নজরে রাখেন। তার থেকে তার সকল কাগজপত্র নিয়ে একটি Locker রেখে দেওয়া হয় যার তথ্য পুলিশ বাদে অন্য কারো কাছে ছিলো না। কিন্তু সকাল বেলা দরজা ধাক্কাইলে কোন সারা না পেয়ে দরজা ভেঙ্গে ঢুকার পর লোকটির কোন অস্তিত্বই সেখানে পাওয়া যায় না। এমনকি Locker থেকে সকল কাগজেরও কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই জগতের মতো আরো অনেক জগৎ আছে আর আপনার মতো আরো অসংখ্য আপনি আছেন। এই জগতগুলো সমান্তরালে চলে; কেউ কারো উপর কখনো প্রভাব ফেলে না।
এই জগতে হয়তো আপনি আমার লেখা পড়ছেন আর অন্য জগতের আপনি হয়তো অনেক আগেই কোনো এক ঝগড়ার কারণে আমার সাথে সম্পর্ক চুকিয়ে নিয়েছেন।
এই জগতে হয়তো আপনি বিবাহিত, কিন্তু অন্য জগতে হয়তো এখনো আপনি অবিবাহিত। Nothing is impossible। মাঝে মাঝে দুটি জগৎ একে অপরকে ক্রস করে ফেলে, তখনই আমাদের Deja Vue বা অল্টারপাস ঘটে।
এখন হয়তো কিছুটা বুঝতে পারছেন। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই ক্রসিংয়ে সময়ের চাদরের একটা ছিদ্র হয়। এই ছিদ্র দিয়েই একজন মানুষ চুপিসারে এই জগৎ থেকে অন্য জগতে চলে যেতে পারেন। কেউ আবার মনে করেন অন্য জগতে যাওয়ার জন্য দরকার হয় Port Key।
এটি যেকোনো বস্তু বা প্রাণীই হতে পারে। এই Port Key এর ধ্বংস বা মৃত্যু হলে তাকে ফিরে আসতে হয় আবার আগের জগতে। কেননা কেবল এটিই পারে কাউকে এক জগৎ হতে অন্য জগতে নিয়ে যেতে। আর আপনিই যখন সেই Port Key হিসেবে নির্বাচিত হবেন তখন সহজেই দেখে আসতে পারবেন অন্য প্যারালাল ইউনিভার্স এর আপনি কে। Quantum Mechanics ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, অসংখ্য জগৎ থাকা আসলেই সম্ভব। এখন শুধু অপেক্ষা নিজে নিজেই প্রত্যক্ষ করার।
তথ্য সহায়তা:
মন্তব্য লিখুন