আজ যদি কাউকে বলা হয়, গাছের কি প্রাণ আছে? সে নিশ্চিত বলে দেবে হা, গাছেরও প্রাণ আছে। এই কথাটি বিজ্ঞানে প্রথম প্রমাণ করেন যিনি, তিনি আর কেও নন তিনি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ও পৃথিবীর অন্যতম বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু । শুধু কি তাই? এছাড়াও তিনি পৃথিবীকে অমূল্য সব তথ্য উপহার দিয়েছেন। তাইতো, আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, “ জগদীশ চন্দ্র যেসব অমূল্য তথ্য পৃথিবীকে উপহার দিয়েছেন, তার যে কোনটির জন্য বিজয় স্তম্ভ স্থাপন করা সম্ভব।”
জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়
জগদীশ চন্দ্র বসু ময়মনসিংহ জেলায় তার নানুর বাড়িতে ১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। তার প্রকৃত বাসস্থান মুন্সিগন্জ জেলার বিক্রমপুরে। তার বাবা ছিলেন তৎকালীন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, ভগবান চন্দ্র বসু, তার মাতার নাম বামা সুন্দরী দেবী। তার বাবা ১৮৫৩-১৮৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি ইংরেজ সরকারের একজন একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হওয়া সত্বেও সন্তানকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করাননি। তিনি চাইতেন তার সন্তান যেন প্রথমে বাংলাকে ভালভাবে আয়ত্ত করতে পারে। ১৮৮৭ সালেজগদীশ চন্দ্র বসু বিয়ের পিরিতে বসেন। তার স্ত্রী ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের বিখ্যাত সংস্কারক দুর্গা মোহন দাসের কন্যা, অবলাদেবী।
শিক্ষা জীবন
জগদীশ চন্দ্র বসুর স্কুল জীবন শুরু হয় ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে। তিনি ১৮৭৫ সালে প্রবেশিকা পরিক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন।
১৮৭৯ সালে বসু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে BSc ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৮৮০ সালে তিনি ডাক্তারী পড়ার জন্য লন্ডনে যান এবং মেডিকেল ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন। কিন্তু ১৮৮১ সালে জগদীশ চন্দ্র বসু লন্ডন ত্যাগ করেন এবং ক্যামব্রিজ এ যান।
১৮৮৪ সালে ক্যামব্রিজ ক্রাইস্ট কলেজ থেকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিষয়ে ট্রাইপস এবং ঐ বছরেই লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এস সি ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফেরেন।
কর্মজীবন ও আবিষ্কার সমূহ
১৮৮৫ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে Physics এর অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি তার কলেজে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে ছোট্ট একটা ঘরে তিনি গবেষণা চালিয়ে যান। তিনি ১ মে ইথার তরঙ্গ ও বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং ১ম সাফল্য হিসেবে তিনি বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গের সাহায্যে সংকেত প্রেরণে সম্ভাবনা আবিষ্কার করেন।
IEEE তাকে রেডিও বিজ্ঞানের জনক বলে অভিহিত করেন। ১৮৯৬ সালে তিনি মৌলিক গবেষণার জন্য DSc উপাধি প্রাপ্ত হন। একই বছর তিনি সায়েন্স ফিকশন রচনা করেন। তার লেখা ১ম সায়েন্স ফিকশন “নিরুদ্দেশের কাহিনী” তিনিই ১ম সায়েন্স ফিকশন লেখেন যার কারণে তাকে সায়েন্স ফিকশনের জনক বলা হয়।
আরও পড়ুনঃ সত্যেন্দ্রনাথ বসু -গল্পে গল্পে বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জীবন কল্প
স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর অর্থের প্রতি কোন লোভ ছিল না। তাই তো তিনি ১৯০১ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে একটি চিঠিতে লেখেন “ আমি যদি একবার টাকার মোহে পরে যাই, তাহলে আর কোন দিন বের হতে পারব না।” ক্রোসকোগ্রাফ নামক যন্ত্রের সাহায্যে দেখাতে সক্ষম হন যেন, উদ্ভিদের ও প্রাণ আছে।
১৯১৬ ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক তিনি “নাইট হুট” উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯১৭ সালে তিনি উদ্ভিদ-শারীর ত্বত্ত গবেষণার জন্য কলকাতায় “বসু মন্দির “ প্রতিষ্ঠা করেন।
এই মহান ব্যক্তি ১৯৩৭ সালে ২৩ শে নভেম্বর গিরিডিতে মারা যান।
উল্লেখযোগ্য রচনাবলী
- অব্যক্ত ( গ্রন্থ)
- Responses in the living and non living ( 1902)
- Plant Responses as a means of physiological investigations (1906)
- Comparative Electro physiology ( 1907)
- Physiology of photosynthesis (1924)
এছাড়াও আর ও অসংখ্য রচনাবলী রয়েছে।
১৯৭৭ সালে স্যার নেভিল মন্ট বলেন, “ জগদীশ চন্দ্র বসু তার সময়ের চেয়ে ৬০ বছর এগিয়ে ছিলেন।” নিজের কর্মফলকে পৃথিবীর মানুষের কল্যাণের জন্য রেখে গেছেন সত্যিই তা ইতিহাসে বিরল।