প্রতারণা ভিক্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও জাহিলিয়াতের ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত সেই জাতির কথা বলছি, যখন পাপ-পঙ্কিলতাময় এ বসুন্ধরায় সকল অন্যায়-অত্যাচার, অবিচার-অশান্তি এবং অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড প্রকট আকার ধারণ করেছিল। অতীতে নাজিল হওয়া আল্লাহর বাণী ও নবী-রাসূলদের দিক-নির্দেশনা মানুষ ভুলে গিয়ে শিরক ও কুফরিতে গোটা আরব জাতি সহ পৃথিবীর সকল মানুষেরা নিমজ্জিত ছিল।
বিশেষ করে মানব নিষ্পেষণ ও সমাজ বিধ্বংসী অন্যতম মাইন সূদ, ঘুষ, লটারী ও মজুতদারী প্রভৃতি তিরোহিত অত্যন্ত ভয়ংকর রূপ হয়ে উঠেছিল।
যখন কারুন, হামান, আবু জাহেল, উতবা-শায়বা, উবাই ইবনে খালফ প্রমুখ কাফির মুশরিকরা ধোঁকা, প্রতারণামূলক সূদভিত্তিক হারাম ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে সমাজ ও রাষ্ট্রে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। তখন সূদ ও প্রতারণা ভিক্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল মানুষের মুনফার লাভের বৈশিষ্ট্য।
এমন এক জাহিলিয়াতে নিষ্পেষিত জাতিকে মহান আল্লাহ তাআ’লা হেদায়েতের আলোকিত পথ দেখানোর জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে।
তখন থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানবজাতিকে একটি সুষ্ঠু সুন্দর সমাজ বিনির্মানের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উপর নাজিল করা হয় সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব আল-কুরআন। যা ইসলামের একমাত্র শাশ্বত, সার্বজনীন ও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এ কিতাবে সৃষ্টি জগতে এমন কোন দিক ও বিভাগ নেই, যেখানে ইসলাম নিখুঁত ও স্বচ্ছ দিক-নির্দেশনা প্রদান করেনি।
মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
“আমরা এ কিতাবে কোন কিছুই অবর্ণিত রাখিনি” [মায়েদাহ: ৫/৩৮ ]
অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক সে জাতিকে মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ অহি-র আলোকে হালাল ও সুন্দর ব্যবসা-বাণিজ্য ভিত্তিক একটি সর্বোত্তম, অভূতপূর্ব আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ করেছিলেন। প্রকৃত অর্থে ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, এক কথায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইসলামের রয়েছে সঠিক কল্যাণকামী দিক সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা।
যেমন ব্যবসা-বাণিজ্য কোন উপায়ে হবে? কিভাবে হবে? কোন পদ্ধতিতে হলে তা হালাল? সমাজ বিনির্মানে কার্যকরী এবং অস্থিতিশীল অর্থনৈতিকতা রূখে দিয়ে সুন্দর সুষ্ঠু একটি অর্থনৈতিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব সবকিছু রাসূল (সাঃ) আমাদের পবিত্র কুরআনের আলোকে বিস্তারিত জানিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের বিশাল একটি অংশ শুধু মাত্র এ অর্থনৈতিক বিষয়াবলী সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে। এ বিষয়টির তাফসীর বা ব্যাখ্যা এতোটাই বিস্তৃত যে ইসলামী শিক্ষায় অর্থনীতি একটি বিশাল অধ্যায়। যা ছোট্ট এই প্রবন্ধে আলোচনা করা একেবারেই অসম্ভব। আমরা চেষ্টা করব পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ব্যবসাহিক লেনদেনে নীতি-নৈতিকতা চার্চায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দিক নির্দেশনাগুলো অতি সংক্ষিপ্ত পরিসরে মূল কয়েকটি পয়েন্টে আলোচনা করার, ইন শা আল্লাহ।
প্রথমত, সূদকে হারাম ও ব্যবসাকে হালাল ঘোষণা করা হয়েছেঃ
মহান আল্লাহ তাআ’লা ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে কারীমে বলেছেন-
“যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে, তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতই। অথচ আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।” [সূরা বাকারাহ: ২৭৫]
সুদের পরিচয়: সুদের আরবি হল- ‘রিবা’ যার অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া, অতিরিক্ত। উদ্দেশ্য হল যা মূলধনের অতিরিক্ত গ্রহণ করা হয়।
শরীয়তের পরিভাষায় সুদ:
প্রধানত সুদ দু’প্রকারে হয়-
(১) বাকীতে সুদ ঋণগ্রহীতা থেকে ঋণদাতা সময়ের তারতম্যে মূলধনের অতিরিক্ত যা গ্রহণ করে থাকে। যেমন এক টাকায় এক বছর পর দুই টাকা গ্রহণ করা।
(২) একই জাতীয় দ্রব্য বা পণ্য লেনদেনে কম-বেশি করা যদিও দ্রব্য বা পণ্যের মানে তারতম্য হয়। যেমন এক কেজি চাউলের বিনিময়ে দু’কেজি চাউল গ্রহণ করা।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে খায়বারের কর্মচারী নিয়োগ দিলেন। সে ভাল ভাল খেজুর নিয়ে আসল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: খায়বারের সব খেজুর কি এরূপ? সে বলল: না, দু’সা‘ (এক সা‘ প্রায় আড়াই কেজি) নিম্নমানের খেজুরের বিনিময়ে এক সা‘ ভাল খেজুর গ্রহণ করি, আবার তিন সা‘ নিম্নমানের খেজুরের বিনিময়ে দু’সা‘ ভাল খেজুর গ্রহণ করি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: এরূপ করো না, (নিম্নমানের খেজুর) সব দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে তারপর দিরহাম দ্বারা ভাল খেজুর ক্রয় কর।” [সহীহ বুখারী ]
“আয়াতের প্রথমেই আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন সুদখোরদের ভয়ানক অবস্থা ও লাঞ্ছনা-বঞ্ছনার একটি উপমা তুলে ধরেছেন।
যারা সুদ খায় তারা হাশরের দিন কবর থেকে ঐ ব্যক্তির মত উঠবে যে ব্যক্তিকে কোন শয়তান-জিন আছর করে উন্মাদ ও পাগল করে দেয়। তাদের এ ভয়ানক ও লাঞ্ছনার কারণ হলো, তারা সুদকে ব্যবসা-বাণিজ্য এর মত হালাল মনে করে।
তাদের বক্তব্য হলো ব্যবসায় যেমন হালাল, ব্যবসা করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায় তেমনি সুদ সম্পদ বৃদ্ধি করে, তাই ব্যবসার মত সুদও হালাল, উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।
এখান থেকে জানা গেল, জিন ও শয়তানের আছরের ফলে মানুষ অজ্ঞান কিংবা উন্মাদ হতে পারে। এর বাস্তবতা রয়েছে, চিকিৎসাবিদ ও দার্শনিকরাও স্বীকার করেন।” [তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ]
হযরত আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: সুদ সম্পর্কে সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের নিকট তা পাঠ করে শোনালেন। তারপর সুদের ব্যবসা নিষিদ্ধ করে দিলেন। [সহীহ বুখারী হা: ৪৫৪০]
সুদখোরদের শাস্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার বাণী ছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
যেমন নবীজী (সাঃ) বলেন-
“সুদের ৭০টি অপরাধ রয়েছে আর সর্বনিম্ন অপরাধ হল সুদখোর যেন তার মাকে বিবাহ করল।” [সহীহুত তারগীব হা: ১৮৫৮]
রাসূলুল্লাহ আরো (সাঃ) বলেন:
“আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন সুদ গ্রহণকারী, প্রদানকারী, সাক্ষ্য দানকারী ও লেখকের প্রতি। [নাসাঈ হা: ৫০১৪, সহীহ]
যে সাতটি কারণে জাতির ধ্বংস অনিবার্য তার অন্যতম একটি হল সুদ। [সহীহ বুখারী হা: ২৭৬৬]
‘আল্লাহ তা‘আলা সুদকে মিটিয়ে দেন’ অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে সুদী লেন-দেন করে যতই লাভ আসুক, পরিমাণে যতই বেশি দেখা যাক প্রকৃতপক্ষে তা বেশি না, তাতে কোন বরকত নেই। আল্লাহ তা‘আলা তার অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক করে দিবেন।
মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের সম্পদবৃদ্ধি পাবে এ আশায় যা কিছু তোমরা সুদ ভিত্তিক দিয়ে থাক, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না।” [সূরা রূম ৩০:৩৯]
মহান আল্লাহ তাআ’লা ব্যবসা-বাণিজ্যকে হালাল করেছেন তবে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে কুরআনের অপর এক দৃষ্টিভঙ্গিতে একে নিষিদ্ধ না বললেও বিষয়টি স্পষ্ট জানা যায় যে, ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যে এরূপ কিছু বিষয় আছে যা মুমিনদেরকে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত তথা ছালাত আদায় হ’তে বিরত রাখতে পারে।
এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে বর্ণিত হয়েছে-
“সেসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং ছালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সেদিনকে যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।” [সূরা নূর: ৩৭]
মানুষের জীবন ধারণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্ব আদিকাল থেকেই স্বীকৃত। তবে জীবনের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে এরূপ ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে নিজেদের রক্ষা করা মুমিনদের কর্তব্য। এজন্য জুম‘আর ছালাতের সময় ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রাখতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
মহন আল্লাহ তাআ’লা বলেন-
“হে ঈমানদারগণ! জুম‘আর দিনে যখন ছালাতের জন্য আহবান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি কর। আর ছালাত সমাপ্ত হ’লে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও’ [ সূরা জুম‘আ:৯-১০]
পবিত্র কুরআনে উপরোক্ত আয়াতগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে।
হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “নিজ হাতে কাজ করা এবং হালাল পথে ব্যবসা করে যে উপার্জন করা হয় তাই সর্বোত্তম।” [মিশকাত হা/২৭৮৩, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬০৭]
যেসকল নিয়মে ব্যবসা-বাণিজ্য হালাল :
পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে নিম্নোক্ত পাঁচটি পদ্ধতিতে ব্যবসা করলে যেকোনো ব্যবসা তা হালাল হিসাবে ইসলামী শরী‘আত কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
(১) বায়‘উ মুরাবাহ : লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে নগদ মূল্যে ক্রয়-বিক্রয়ের একক ব্যবসা।
(২) বায়‘উ মুয়াজ্জাল : ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোন সময়ে এক সাথে অথবা কিস্তিতে উভয় পক্ষের সম্মতিতে মূল্য পরিশোধের শর্তে ক্রয়-বিক্রয়।
(৩) বায়‘উস সালাম : ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোন সময়ে সরবরাহের শর্তে এবং তাৎক্ষণিক উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরী‘আত অনুমোদিত পণ্য সামগ্রীর অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়।
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন-
“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন মদীনায় আসলেন তখন লোকেরা (ফল-ফসলের জন্য) অগ্রিমমূল্য প্রদান করত। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি অগ্রিম মূল্য প্রদান করবে সে যেন তা সুনির্দিষ্ট মাপের পাত্রের দ্বারা ও সুনির্দিষ্ট ওজনে প্রদান করে”। [সহীহ বুখারী হা/২২৩৯; মুসলিম হা/১৬০৪]
(৪) বায়‘উ মুযারাবা : এক পক্ষের মূলধন এবং অপরপক্ষের দৈহিক ও বুদ্ধিভিত্তিক শ্রমের সমন্বয়ে যৌথ ব্যবসা। এ পদ্ধতিতে লভ্যাংশ তাদের মাঝে চুক্তিহারে বণ্টিত হবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও খাদীজা (রাঃ)-এর মূলধন দ্বারা এরূপ যৌথ ব্যবসা করেছিলেন। সাহাবায়ে কেরাম অনেকেই এ পদ্ধতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন।
দ্বিতীয়ত, হালাল ব্যবসা-বাণিজ্য লেনদেনে ইসলামে কতিপয় নির্দেশনাঃ
আমরা জানি, মানবজীবনের অপরিহার্য একটি বিষয় হলো জীবিকা উপার্জন করা । আর এ জন্য মানুষ মাত্রই নানা পেশার সাথে জড়িত। ঈমানদাররা হালাল জীবিকা উপার্জনের জন্য কৃষিকাজ, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করায় নিয়োজিত থাকেন। তবে ব্যবসায়-বাণিজ্যের লেনদেনের ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর পবিত্র হাদিস কতগুলো সুনির্দিষ্ট নীতি ও নৈতিকতার বিধান নির্দিষ্ট করে দিয়েছে।
যেমন ব্যবসা-বাণিজ্য বা আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সততা, স্বচ্ছতা, অঙ্গীকার পূরণ করা, যাকাত দেয়ার ওপর ইসলাম সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছে । ব্যবসা-বাণিজ্যের মাঝে ধোঁকা, প্রতারণা, মজুদদারি, ভেজাল, মাপে কম দেয়া, মিথ্যা শপথ করা, সুদ, জুয়া ইত্যাদি বিষয়কে আল্লাহ তাআ’লা তাঁর রাসূলের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছেন। আর্থিক লেনদেন ও ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনের আলোকে রাসূল (সাঃ) এর সেসব নীতি অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছেন তার কয়েকটি নিচে উল্লেখ করছি।
১. লেনদেনের ক্ষেত্রে উদার ও কোমল হওয়া:
বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সাঃ) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন সকল ক্ষেত্রে সরলতা, কোমলতা ও উদারতা প্রদর্শনের । ইসলাম সকল প্রকার জটিলতা ও সঙ্কীর্ণতা পরিহার করতে উৎসাহিত করে। তাই ব্যবসায-বাণিজ্য এর ক্ষেত্রেও পবিত্র কুরআন ও হাদিস একই নীতি আমাদের বাতলে দিয়েছে। যেমন লেনদেনে উদারতা ও কোমলতা প্রদর্শন করা, ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে পারস্পরিক ভালো ও উত্তম আচরণ করা, অযথা কারো ওপর কষ্ট বা সঙ্কট চাপিয়ে না দেয়া ইত্যাদি।
পবিত্র কুরআনে মাজীদে বলা হয়েছে-
“আল্লাহর অনুগ্রহের ফলেই আপনি তাদের প্রতি নম্র হয়েছেন। পক্ষান্তরে আপনি যদি রূঢ় ও কঠিন হৃদয়ের অধিকারী হতেন, তা হলে তারা আপনার চারপাশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। সুতরাং আপনি তাদের মার্জনা করুন, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজকর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন”। [সূরা আলে-ইমরান : ১৫৯]
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি রহমত বর্ষণ করেন যে নম্রতার সাথে ক্রয়-বিক্রয় করে ও পাওনা ফিরিয়ে চায়।” [সহিহ বুখারী: ২০৭৬]
ব্যবসা-বাণিজ্য ও কেনাবেচায় সরলতা ও সততা প্রদর্শনকারীর জন্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) আমাদের সুসংবাদ প্রদান করে আরো বলেছেন, “কেনাবেচায় যে লোক সহজ-সরল নীতি অবলম্বন করে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন”। [ইবনে মাজাহ:২২০২]
২. অন্যায়ভাবে সম্পদ অর্জন করা নিষিদ্ধঃ
ব্যবসা-বাণিজ্য করায় মিথ্যা শপথ, প্রতারণা, ছলচাতুরি, কথার মারপ্যাঁচ, সুদ, ঘুষ, জুয়া, দুর্নীতি, চুরি-ডাকাতি ইত্যাদি অনৈতিক উপায়ে সম্পদ অর্জন করাকে ইসলাম সম্পূর্ণভাবে হারাম ঘোষণা করেছে।
মহান আল্লাহ তাআ’লা যারা ধোঁকাবাজি, মিথ্যার আশ্রয়, প্রতারণা ইত্যাদি অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন ও ভোগ করে তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি নির্ধারণ করে রেখেছেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন-
“আর তোমরা নিজদের মধ্যে তোমাদের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না এবং তা বিচারকদেরকে (ঘুষ হিসেবে) প্রদান করো না। যাতে মানুষের সম্পদের কোন অংশ পাপের মাধ্যমে জেনে বুঝে খেয়ে ফেলতে পার।” [সূরা বাকারা : ১৮৮]
হাফেয ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেন: এখানে ঐ সব ব্যক্তিদের আলোচনা করা হচ্ছে, যাদের কাছে অপরের কোন প্রাপ্য থাকে কিন্তু প্রাপকের নিকট তার প্রাপ্য অধিকারের কোন প্রমাণ থাকে না, ফলে এ দুবর্লতার সুযোগ গ্রহণ করে সে আদালতের আশ্রয় নিয়ে বিচারকের মাধ্যমে নিজের পক্ষে ফায়সালা করিয়ে নেয় এবং এভাবে সে প্রাপকের অধিকার হরণ করে। এটা জুলুম ও হারাম। আদালতের ফায়সালা জুলুম ও হারামকে বৈধ ও হালাল করে দিতে পারে না। আদালত কেবল বাহ্যিক দিক অবলোকন করে বিচার করে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিদায় হজ্জে বলেন, “একজন মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের মান-সম্মান, রক্ত, সম্পদ সব কিছু হারাম।” [সহীহ বুখারী: ৬৮, সহীহ মুসলিম :১৬৭৯]
মহানবী (সাঃ) আরো বলেছেন-
“আমার উম্মতের মধ্যে নিঃস্ব সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের ময়দানে সালাত, সাওম, জাকাতসহ অনেক নেক আমল নিয়ে হাজির হবে; কিন্তু সে হয়তো কাউকে গালি দিয়েছে বা কারো ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে বা কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে বা কাউকে খুন করেছে অথবা কাউকে আঘাত করেছে। ফলে প্রত্যেককে তার হক অনুযায়ী এই ব্যক্তির নেক আমল থেকে দিয়ে দেয়া হবে। যদি কারো হক বাকি থেকে যায় আর এই ব্যক্তির নেক আমল শেষ হয়ে যায় তাহলে হকদার ব্যক্তির পাপ পাওনা অনুসারে এই ব্যক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হবে। ফলে সে এই পাপের বোঝা নিয়ে জাহান্নামে যাবে”। [সহিহ মুসলিম: ২৫৮১, তিরমিজি: ২৪১৮]
৩. ব্যবসা-বাণিজ্য এর মধ্যে প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি নিষিদ্ধ:
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেনে প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। তাই পণ্যদ্রব্যে ভেজাল, ভালো পণ্যের সাথে খারাপ পণ্য মেশানো, পণ্যের দোষত্রুটি গোপন করা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে হারাম । নবী করিম (সাঃ) কেনাবেচার ক্ষেত্রে পণ্যের বিবরণ, মূল্য, মূল্য পরিশোধের সময় সুস্পষ্ট করতে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে লেনদেনের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা না দেয় এবং ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে যেন মতদ্বৈধতা ও বিরোধ সৃষ্টি হতে না পারে ।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
“এবং যদি তুমি কোনো সম্প্রদায় থেকে খিয়ানতের (চুক্তি ভঙ্গের) আশঙ্কা করো, তা হলে তুমিও একইভাবে তাদের দিকে (চুক্তি) নিক্ষেপ করো। নিশ্চয় আল্লাহ খিয়ানতকারীদের ভালোবাসেন না”। [সূরা আনফাল : ৫৮]
আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,
“তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, পরস্পর ধোঁকাবাজি করো না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অন্যের পেছনে শত্রুতা করো না, একে অন্যের ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্টা করো না।” [সহিহ মুসলিম: ২৫৬৪]
একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারে গিয়ে একজন খাদ্য বিক্রেতার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তিনি খাদ্যের ভিতরে হাত প্রবেশ করে দেখলেন ভিতরের খাদ্যগুলো ভিজা বা নিম্নমানের। এ অবস্থা দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে খাবারের পন্যের মালিক এটা কী? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল, এতে বৃষ্টি পড়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সেটাকে খাবারের উপরে রাখলে না কেন; যাতে লোকেরা দেখতে পেত? “যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মত নয়”। [ সহীহ মুসলিম: ১০২]
৪. ওজনে কমবেশি করা যাবে নাঃ
ব্যবসায়-বাণিজ্যে ওজনে কম দেওয়া মারাত্মক গুনাহের কাজ । ক্রেতার অধিকার হলো সঠিক ওজনে পণ্য লাভ করা। বিক্রেতার দায়িত্ব ক্রেতার হক যথাযথ ভাবে দিয়ে দেওয়া। তাই পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহে ওজনে কম দেয়াকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, নিন্দনীয় ও পরকালীন দুর্ভোগের কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন-
“যারা মাপে কম দেয়, তাদের জন্য দুর্ভোগ। এরা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণমাত্রায় নেয় এবং যখন মানুষকে মেপে দেয় তখন কম করে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে? সেই মহাদিবসে যেদিন মানুষ দাঁড়াবে বিশ্ব প্রতিপালকের সামনে।” [সূরা মুতাফফিফিন : ১-৬]
সুতরাং কেউ যখন কাউকে কিছু বিক্রির উদ্দেশ্যে দেবে তখন কম দিতে পারবে না। রাসূল (সাঃ) উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন এভাবে, যে কাজটি তোমার নিজের জন্য পছন্দ করো না, তা অন্যের জন্য কীভাবে পছন্দ কর? তুমি যখন নিজের জন্য নাও তখনতো তোমাকে মাপে কম দিলে তুমি রাজি হবে না।
হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-
“তুমি তোমার নিজের জন্য যা ভালোবাসো তা অন্যের জন্যও ভালোবাসার আগ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না”। [সহীহ বুখারী: ১৩]
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআ’লা বলেন-
“যারা মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং ওজন করবে সঠিক দাঁড়িপাল্লায়, এটাই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্ট।” [সূরা বনি ইসরাইল : ৩৫]
সম্মানিত নবী শু‘আইব আলাইহিস সালাম তাঁর কওমকে ওজনে কম দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। পবিত্র কুরআনে তা তুলে ধরা হয়েছে এভাবে-
“হে আমার কাওম! আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো মা‘বুদ নাই। আর পরিমাপে ও ওজনে কম দিও না”। [সূরা সূরা হূদ, আয়াত: ৮৪]
অন্য আয়াতে এভাবে এসেছে-
“আর হে আমার জাতি! ন্যায় নিষ্ঠার সাথে ঠিকভাবে পরিমাপ কর ও ওজন দাও এবং লোকদের জিনিসপত্রে কোনোরূপ ক্ষতি করো না”। [সূরা হূদ, আয়াত: ৮৫]
পবিত্র কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
“মেপে দেওয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং সঠিক পাল্লায় ওজন করবে। এটি উত্তম, এর পরিণাম শুভ”। [সূরা বনী ঈসরাইল, আয়াত: ৩৫]
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
“রাসূল (সাঃ) বলেন, “…যখন কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা ওজনে বা মাপে কম দেয়, তখন শাস্তিস্বরূপ তাদের খাদ্য-শস্য উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং দুর্ভিক্ষ তাদের গ্রাস করে”।[ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব: ৭৮৫]
অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, “…যে জাতি মাপে ও ওজনে কম দেয়, তাদের রিযিক উঠিয়ে নেওয়া হয়…”। [ মুয়াত্তা মালেক: ৫৩৭০]
ইবনে মাজাহ এক হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, “যখনই কোনো জনগোষ্ঠী মাপ ও ওজনে কম দেয়, তখনই তাদেরকে দুর্ভিক্ষ, খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি ও অত্যাচারী শাসকের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হয়।”
তিরমিজির হাদীসে এসেছে তিনি (সাঃ) আরো বলেন, “কম মাপা ও কম ওজন করার কারণে পূর্ববর্তী উম্মতসমূহ ধ্বংস হয়েছে।”
আমাদের মনে রাখতে হবে, সালাত, সাওম ইত্যাদি নেক আমলে ত্রুটি হলে আল্লাহ তাআ’লা হয়তো তা তার নিজের অনুগ্রহে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু মানুষকে সামান্য অণু পরিমাণ ঠকানো হলে বা অণু পরিমাণ মানুষের হক নষ্ট করলে, এ দায়ভার কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআ’লা নিবেন না।
তাই কিয়ামতের দিন প্রতারিত ক্রেতাকে ডেকে আল্লাহ তাআ’লা ওই প্রতারকের আমলনামা থেকে সমপরিমাণ সাওয়াব তাকে দিয়ে দেবেন। প্রতারকের সাওয়াব যদি শেষ হয়ে যায় বা কোন সাওয়াব না থাকে, তবে প্রতারিতদের গোনাহ তাঁর কাঁধের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। সেদিন কাঁদতে কাঁদতে যদি শরীরের প্রতিটি লোমকূপ থেকে রক্তও প্রবাহিত হতে থাকে, তাতেও কোন কাজ হবে না। সেদিন এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআ’লা কোনক্রমেই ক্ষমা করবে না, যদি প্রতারিত ব্যক্তি তাকে ক্ষমা না করেন। আল্লাহ তাআ’লা আমাদের বান্দার হকের ব্যপারে সতর্ক হওয়ার তৌফিক দান করুন।
৫. পণ্যে ভেজাল মেশানো সম্পূর্ণ নিষেধঃ
বর্তমান বিশ্বে খাদ্যে ভেজাল দেওয়া খুবই ভয়ংকর রূপধারণ করেছে। আমাদের দেশে যার ভয়াবহতা এতোটাই বেশি যে, ভেজাল মুক্ত খাবার খুঁজে পাওয়া যেন ভাগ্যের ব্যাপার। ইসলামের দৃষ্টিতে খাদ্য ও পানীয়তে ভেজাল মেশানো একটি মারাত্মক অপরাধ। যে খাদ্য ও পানীয় ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না, সেই খাদ্যে যারা ভেজাল মেশায় তাদের কঠিন শাস্তি পেতে হবে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
পবিত্র আল-কুরআনে আল্লাহ তাআ’লা বলেন-
“মানুষকে পরিমাপে কম বা খারাপ দ্রব্য কিংবা ত্রুটিযুক্ত জিনিস দিয়ো না”। [সূরা শোয়ারা : ১৮৩]
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উম্মতকে সতর্ক করেছেন তারা যেন পণ্যের দোষত্রুটি গোপন না রাখে।
এক হাদিসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “কোনো ব্যবসায়ীর জন্য উচিত নয় কোনো জিনিস বিক্রি করা এবং তার ভেতরের দোষত্রুটির কথা বর্ণনা না করা।” [মুসনাদে আহমাদ: ১৭, ৪৫১]
৬. পণ্য বিক্রির জন্য মিথ্যা শপথ করা যাবে নাঃ
মিথ্যা মানবতাবোধকে লোপ করে দেয়, নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় ঘটায়। মিথ্যাবাদীর উপর তাই আল্লাহর অভিশাপ। আর মিথ্যা বলে বা মিথ্যা শপথ করে পণ্য বিক্রি করার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ।
হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন-
“কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তিন ব্যক্তির সাথে কোনো ধরনের কথা বলবেন না, তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। তাদের একজন- যে তার ব্যবসায়িক পণ্যকে মিথ্যা কসম খেয়ে বিক্রি করে”।[ সহীহ মুসলিম: ১০৬]
অপর একটি হাদীসে এ দৃষ্টান্ত এভাবে তুলে ধরা হয়েছে-
“এক ব্যক্তি আসরের পর তার পণ্য সম্পর্কে কসম খেয়ে বলে, তাকে পণ্যটি এত এত মূল্যে দেওয়া হয়েছে। তার কথা ক্রেতা বিশ্বাস করল, অথচ সে মিথ্যুক”। [আবু দাউদ: ৩৪৭৪, নাসায়ী: ৪৪৬২]
যারা এ ধরনের ব্যবসায়ী তাদের জন্য উল্লিখিত হাদীসে অত্যন্ত কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ আমাদের হেদায়েত করুন।
উপসংহারঃ
মহান আল্লাহ তাআ’লা মানুষের মুক্তির জন্য, মানবজাতিকে সঠিক ও সুন্দর সুষ্ঠ পথ নির্দেশনার জন্য প্রেরণ করেছিলেন মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে। এ জন্য তাঁর উপর অবতীর্ণ করা হয় সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব আল-কুরআন। আল্লাহর কিতাবের আলোকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের আল্লাহর বিধিমালা ও নীতি নৈতিকতার শিক্ষা দিয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠিত করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে।
তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর নির্দেশনা বাস্তববায়নের চেষ্টা করা আমাদের একমাত্র কর্তব্য। ব্যবসা-বাণিজ্য করার ক্ষেত্রেও একমাত্র তাঁর নির্দেশিত পথেই রয়েছে আল্লাহর রহমত ও বরকত। উল্লেখিত প্রবন্ধে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আমরা সেসকল নির্দেশনা বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি।
এখন আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব ব্যক্তি জীবনে সেসকল নির্দেশনা মেনে চলা এবং সুষ্ঠু ও সুন্দর একটি সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য প্রত্যেক ব্যবসায়িকে পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে রাসূল (সাঃ)-এর এসকল নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া, তাদের কাছে এ বার্তা পৌঁছে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। তবেই তো দুর্নীতি ও সুদ মুক্ত ব্যবসা-বাণিজ্য ভিক্তিক একটি সুন্দর সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মানে আমরা এগিয়ে যাব। ইন শা আল্লাহ।
তথ্য সহায়তাঃ
- তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
- https://at-tahreek.com/article_details/6072
- https://www.hadithbd.com/books/detail/?book=77§ion=1077
- https://www.dailynayadiganta.com/diganta-islami-jobon/621090/আর্থিক-লেনদেন-ও-ব্যবসায়-নৈতিকতা