পৃথিবীকে বিভিন্ন বহির্জাগতিক বিপদ এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য পৃথিবীর চতুর্দিকে মহান আল্লাহ তায়ালা কতকগুলাে আবরণ সৃষ্টি করেছন।জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে পৃথিবীর চতুর্দিকে এ প্রতিরক্ষামূলক আবরণের সুস্পষ্ট প্রমাণ দেখতে পেয়েছেন। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন যে, এ আবরণ না থাকলে এ পৃথিবীর কোনাে অস্তিত্বই থাকত না।
এখন আমরা বিজ্ঞানের গবেষনা ও পবিত্র কোরআন থেকে জানার চেষ্টা করব, ঠিক কীভাবে পৃথিবীর ওপর প্রাকৃতিক বা বহির্জাগতিক বিপদ আসছে ! আর কীভাবে আমরা তা থেকে রক্ষা পাচ্ছি?
একথা বলতেই হবে, এ প্রতিরক্ষামূলক সব আয়ােজন আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। বর্তমান বিজ্ঞান প্রমাণ করতে পেরেছে যে, পৃথিবীর চতুর্দিকে দশ হাজার কি.মি. মধ্যে অদৃশ্যমান গ্যাসের কয়েকটি স্তর রয়েছে,যা পাথরের চেয়েও কঠিন শক্তি নিয়ে একটি সামিয়ানার মতাে আচ্ছাদন তৈরি করে আছে।
আর এ গ্যাসীয় আবরণ পৃথিবীকে মেটিউরের আঘাত, ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাব থেকে রক্ষা করছে। এসব বহির্জাগতিক বিপদ যে কতটা ভয়ানক তা আমরা কল্পনাও করতে সক্ষম নই৷ এমনকি এর ক্ষতিকর প্রভাবের কারনে আমাদের অস্তিত্ব ছিল অকল্পনীয়।
[০১] মেটিওর, স্টেরয়েড থেকেঃ মহাবিশ্বে টেলিস্কোপ ও নভােযান প্রেরণের মাধ্যমে মানুষ আজ জানতে পেরেছে যে, সৌরমণ্ডল থেকে প্রতিদিন শত শত পাথরের চাঁই পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে। এগুলােকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন মেটিওর, স্টেরয়েড ইত্যাদি। তাদের ধারনা এই পাথর গুলোর ব্যাস কোনাে কোনােটি ৩ শত কি.মি. পর্যন্ত হতে পরে। পাথরের এ চাঁই যদি পৃথিবীর কোনাে একটি মহাসাগরে আঘাত হানে, তাহলে তার ঢেউয়ে উপকূলীয় শহরগুলাে ধ্বংস হয়ে যাবে।
অথবা তা যদি সরাসরি কোনাে শহরের উপর পতিত হয় তাহলে সে শহরের আর কোনাে অস্তিত্বই থাকবে না। অথচ মহান আল্লাহ রহমতে পৃথিবীর এই ১০ হাজার কি.মি গ্যাসীয় বলয়,সে পাথরগুলােকে শুষ্ক করে ধূলিকণায় পরিণত করে দেয়। এই গ্যাসীয় স্তরের মধ্যে তার গতি সীমিত হয়ে যায়। ফলে সেগুলো পৃথিবীকে আঘাত করতে পারে না। আজ বিজ্ঞানীরা এসব বহির্জাগতিক বিপদ গুলো আবিষ্কারতে সক্ষম হয়েছেন এবং তারা বিস্মিত হচ্ছেন।
মহাকাশ নভােচারীরা দেখেছেন যে, পৃথিবীর নিকটতম চাঁদের উপর অসংখ্য পাথরের আঘাত এবং এ আঘাত এতই ভয়ানক যে, আঘাতের ফলে চন্দ্রপৃষ্ঠে সে গুলাে এক একটি সুবৃহৎ গর্তের সৃষ্টি করেছে এবং তারা এগুলাে মেটিওর বা স্টরয়েড-এর আঘাত বলে নিশ্চিত হয়েছেন।
যেহেতু অধিকাংশ সময় পৃথিবী এবং চাঁদ একই সমান্তরালে আবস্থান করে। ফলে চাঁদ পৃথিবীর জন্য এমন বড় রকম আঘাত সহ্য করে গােটা পৃথিবীকে রক্ষা করছে।
[০২] সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকেঃ সূর্য থেকে যে আলাে পৃথিবীতে আসছে, তা যদি দশ হাজার কি.মি. এর গ্যাসীয় স্তর দিয়ে ফিল্টার হয়ে না আসত, তাহলে তার ক্ষতিকর প্রভাবে কোনাে মানুষ বা প্রাণীর এ পৃথিবীতে বাস করা সম্ভব হতো না। এভাবে ওজোন স্তর সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করছে।
[৩] মহাকাশের তীব্র শীত থেকেঃ বহির্জাগতিক বিপদ এর মধ্যে মহাকাশের তাপমাত্রা অন্যতম। মহাকাশে গড় তাপমাত্রা হচ্ছে মাইনাস ২৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু পৃথিবীর গ্যাসীয় স্তর অর্থাৎ বায়ুমন্ডল প্রয়ােজনীয় তাপ সংরক্ষণ করে সে তাপ পৃথিবীর গ্যাসীয় স্তরের মাধ্য দিয়ে এবং মেঘ ও বাতাসের মাধ্যমে প্রয়ােজনীয় মাত্রায় পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হচ্ছে।
ফলে পৃথিবীর বিষুবীয় রেখায় যেখানে সূর্যের তাপ বেশি সে অংশটিও মারাত্মক ভাবে গরম হচ্ছে না। আবার দক্ষিণ মেরু যেখানে বরফ, সেখানেও তাপমাত্রা ঠান্ডা হচ্ছে না। আর পৃথিবীর কোথাও মহাকাশের মতাে মাইনাস ২৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতাে তাপমাত্রা হচ্ছে না।
ফলশ্রুতিতে মানুষ ও প্রাণিজগৎ স্বাচ্ছন্দ্যে বাস করতে পারছে। এভাবেই তীব্র ঠান্ডা তাপমাত্রা থেকে রক্ষা করে অদৃশ্য এই গ্যাসীয় স্তরগুলো পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী করে তুলেছে। মূলত এই অদৃশ্য গ্যাসীয় স্তর গুলোই বহির্জাগতিক বিপদ থেকে পৃথিবীকে রক্ষার প্রধান ভুমিকা রাখে।
পৃথিবীর চারদিকে আরেকটি স্তর আছে, যা সূচিত হয়েছে পৃথিবীর ভেতর থাকা লােহার কারণে সৃষ্ট চৌম্বকীয় আবেশের ফলে একটি বেল্ট তৈরি হবার কারণে। এ বেল্ট মহাবিশ্ব থেকে আসা ভয়ংকর এক বহির্জাগতিক বিপদ প্লাজমা মেঘ থেকে এই পৃথিবী রক্ষা করছে। এ প্লাজমা মেঘ হিরােসিমাতে বিস্ফোরিত পারমাণবিক বােমার চেয়েও ১০০ বিলিয়ন বেশি শক্তিশালী ।
সূর্য থেকে আসা প্রােটন, ইলেকট্রন এবং রশ্মি সব মিলে ১.৫ বিলিয়ন কিলােমিটার বেগে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে। কিন্তু ৪০ হাজার কিলােমিটার দূরে ভ্যান এলেন বেল্ট, যা চৌম্বকীয় আবেশে সৃষ্ট তা সে প্রােটন ও ইলেকট্রন গুলােকে পৃথিবীতে আসতে বাধা সৃষ্টি করছে। আর এভাবেই আল্লাহ আমাদের পৃথিবীকে একটি সুরক্ষিত সামিয়ানার নিচে রেখে বহির্জাগতিক বিপদ থেকে রক্ষা করছেন।
মহাক্ষমতাধর আল্লাহ যদি এ করুণা না দেখাতেন, তাহলে এ দুনিয়ার মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব করার বিন্দু মাত্র শক্তি থাকত না। অথচ আজ সেই মানুষ অহংকার করে আল্লাহর প্রসংশাটুকু করতে ভুলে যাচ্ছে। মহান আল্লাহ এই সামিয়ানা বা ছাদ এর কথা পবিত্র কোরআনে বলেছেন!!
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
“আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ/ সামিয়ানা করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ নিদর্শনাবলি থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।” (সূরা আম্বিয়াঃ ৩২)
উক্ত আয়াতের মর্মার্থ ১৩০০ বছর আগে দুনিয়ার কারও পক্ষে বােঝা সহজ ছিল না, কিন্তু মানুষ যতই মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করছে, ততই পবিত্র কোরআনের আয়াতের সত্যতা সুস্পষ্ট হচ্ছে। মহান আল্লাহ পৃথিবীর এই অদৃশ্য গ্যাসীয় স্তরগুলো যদি সৃষ্টি না করতেন, তা হলে পৃথিবীকে এসব ভয়ংকর বহির্জাগতিক বিপদ থেকে রক্ষা করা সম্ভব ছিলনা।
মূলত মানুষ কোরআন নিয়ে যত গবেষণা করবে ততই বিজ্ঞানের আবিস্কারের প্রশস্ততা বেড়ে যাবে। মানুষ মহান আল্লাহর অসীম মহিমা ও নিয়ামত তত বেশি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। বস্তুত আল্লাহ বলেছেন তার সৃষ্টির রহস্য ও বিশালতা নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে। তবেই তো প্রকৃত অর্থে আল্লাহ পরিচয় খুজে পাওয়া যাবে।
প্রিয় পাঠকগণ, একটা কথা স্পষ্ট করে নিন সামান্য এই পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর কোনো কিছুর উপর নির্ভর করতে হয় না। এমনকি সুবিশাল এই মহাজগৎ নিয়ন্ত্রন করতে আল্লাহর সামান্য তম ক্লান্তি অনুভব হয় না। তিনি হলেন মহাপ্রক্রশালী সৃষ্টিকর্তা।
শুধু বহির্জাগতিক বিপদ এর কথাই নয়, মহা বিশ্বজগতে রয়েছ অসংখ্য অকল্পনীয় সৃষ্টি । মূলত মহান আল্লাহ তাঁর সুবিশাল এই মহাবিশ্বে আমাদের জন্য রেখেছেন জ্ঞানগর্ভ বিজ্ঞান ও তাঁর সৃষ্টির রহস্য। আল্লাহ তাই পবিত্র কোরআন কে ঘোষণা দিয়েছেন বিজ্ঞানের কিতার বলে।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে সূরা ইয়াসীনে বলেছেন, “বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ” অর্থাৎ আল্লাহ পবিত্র কোরআনকে বিজ্ঞানময় বলেছেন।”
মহান আল্লাহ পৃথিবীকে বিভিন্ন বহির্জাগতিক বিপদ থেকে কিভাবে রক্ষা করছেন। যা বিজ্ঞান আজ শতশত বছর অতিক্রম করে প্রমান করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ পবিত্র কোরআনে তা ১৩০০ বছর আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।
তাই বিজ্ঞান যত নতুন নতুন আবিষ্কার করবে। পবিত্র কোরআন বোঝা আমাদের জন্য তত সহজ হয়ে যাবে। কারন, পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহ সহস্রাধিক আয়াতে শুধু বিজ্ঞানের কথাই বলেছেন।
ছবিঃ সংগ্রহীত
মন্তব্য লিখুন