বিশ্ব জগতে মহান আল্লাহ তায়ালার সকল সৃষ্টি এক একটি নিদর্শন, মহীমা ও নিয়ামত। মহান আল্লাহর সকল নিয়ামতের মধ্যে ভাষা একটি বিস্ময়কর নিদর্শন। মানুষ্য পরিচয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য বহন করে ভাষা। তাই পৃথিবীর সকল প্রকার ভাষাই সৃষ্টির প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালার বিশেষ দান ও কুদরতের অপার সৌন্দর্যের প্রতীক।
আর সেই স্রষ্টার একমাত্র মনোনীত শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনার দাবি রাখবে এবিষয়ে কোন সংশয় নেই। কিন্তু আমাদের জ্ঞানের সল্পতা ও প্রবন্ধের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের রয়েছে। তাই আজ আমরা ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব নিয়ে সংক্ষিপ্ত কিছু উপস্থাপন করার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।
ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব, মর্যাদা ও তাৎপর্যঃ
বিশ্ব জাহানের সকল ভাষা একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালার দান ও নিয়ামত। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন বিস্ময়কর সব বৈশিষ্ট্য দিয়ে।পৃথিবীতে যেমন রয়েছে সাদা-কালো ও বিভিন্ন বর্ণের মানুষ৷ তেমনি রয়েছে অগণিত সব প্রানের বসবাস ও অস্তিত্ব। কিন্তু এ কি বিস্ময়কর এক নিদর্শন! প্রত্যেক জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের যেমন রয়েছে আলাদা আলাদা বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য। ঠিক তেমনি রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি ও মাতৃভাষা।
আর এসব জাতি বা সংস্কৃতির মানবসমাজ একমাত্র মাতৃভাষায় তার মনোভাব যতো স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রকাশ করতে পারে, অন্য কোনো ভাষায় তা কখনোই সেভাবে প্রকাশ করতে পারে না। তাই প্রত্যেক জাতি-ই তার মাতৃভাষাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম ও পরিপূর্ণ জীবনবিধান হিসেবে ইসলামেও মাতৃভাষার গুরুত্ব অসীম। মহান আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতি সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের বিশেষ ভাষাও দান করেছেন। তাই সকল ভাষার স্রষ্টা হিসেবে আল্লাহর কাছে প্রত্যেক জাতির ভাষাই গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানের।
(০১) পবিত্র কোরআনে মাতৃভাষার গরুত্ব ও তাৎপর্যঃ
পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা বিচিত্র সব জাতি ও সভ্যতা সৃষ্টি করেছেন। যারা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে লালন করে বেড়ে উঠছে। প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ভাষা ও বৈচিত্র্যের কথা উল্লেখ করে, পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন-
“আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।” [সূরা রুম, আয়াত: ২২,২১]
ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ও হাদিসে অসংখ্য আয়াত বর্ণিত হয়েছে। তবে প্রত্যেক জাতিকে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন ভাষা দান করে পৃথককরণ করেননি বরং এটা তাদের নিজস্ব পরিচয়ের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার একটি বিশেষ নিদর্শন ও বিচিত্র । যেমন, পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত যত মানুষের জন্ম হয়েছে, প্রত্যেক মানুষ এক আদম ও হাওয়া থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তাই সকল মানুষ একটি সুক্ষ্ম বন্ধনে আবদ্ব অর্থাৎ সবাই একই পিতামাতার সন্তান। সকল মানুষের আদি পিতা হযরত আদম (আ.) এবং আদি মাতা হযরত হাওয়া (আ.)। উৎপত্তির শিকর থেকে আমরা প্রত্যেকে একে অপরের ভাই-ভাই বা ভাই-বোন।
মানুষ জাতিকে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন অতি যত্নেরসহীত এবং দিয়েছেন বিভিন্ন আকৃতি বা গঠন। যেমন কেউ সাদা-কালো, কেউবা লম্বা-খাটো সবই আল্লাহর সৃষ্টি। তবে প্রত্যেক জাতির গোত্র, বর্ণ, ভাষা এবং ভৌগোলিক ও নৃতাত্ত্বিক পার্থক্য মানুষের মাঝে কোনো ভেদাভেদ সৃষ্টির উপলক্ষ নয়। পবিত্র কোরআনে কারীমে মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন-
“হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, এরপর তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তিই বেশি মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকি। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব খবর রাখেন।” [সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১৩]
সুতরাং মহান আল্লাহর তা’য়ালা ভাষার মাধ্যমে কোনো জাতি বা গোত্রকে বিভক্ত করেননি। বরং প্রত্যেক মাতৃভাষাই আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য ও মর্যাদা সম্পন্ন। আর আল্লাহর কাছে অতি উত্তম হলো সেই ব্যক্তি যিনি প্রত্যেক জাতির মধ্যে অধিক তাকওয়াবান ও মুত্তাকি।
ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদা বর্ণনায় বলতে পারি মাতৃভাষার গুরুত্বের একটি অনন্য প্রমান হচ্ছে, মহান আল্লাহ তায়ালা সকল জাতি ও সম্প্রদায়ের কাছে যুগের পর যুগ তাদের বোধগম্য ভাষায় নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। যেমনটি পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
“আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যেন তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে তাঁরা ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারে।” [সূরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪]
মহান আল্লাহর তা’য়ালা পৃথিবীতে প্রায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার বা ২ লক্ষ ২৪ হাজার নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন মানুষের হিদায়তের জন্য। যদিও নবী ও রাসূলের প্রকৃত সংখ্যা অসংখ্য যা একমাত্র আল্লাহই সঠিক জানেন। তবে প্রত্যেক রাসূলগণকে তাঁর জাতির বোধগম্য ভাষায় প্রেরণ করেছেন। যেন মহান আল্লাহর বানী তাঁরা খুব সহজে সে জাতিকে বুঝাতে পারেন ও দাওয়াত দিতে পারেন।
(০২) হাদিসের বৈচিত্র্যে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও তাৎপর্যঃ
ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্মান মর্যাদা ঠিক তেমনি, যেমনটি গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র কোরআনের ভাষা। মহান আল্লাহ তা’য়ালা আপনার জন্য আরবীকে মাতৃভাষা হিসেবে দান করেননি এটা দুঃখজনক নয়৷ কারন একজন আরবী ভাষাভাষী মানুষের গুরুত্ব আল্লাহর কাছে যেমন, ঠিক তেমনি গুরুত্বপূর্ণ আপনি ও আপনার মাতৃভাষা।
বিদায় হজের ভাষণে রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মাহর সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন-
“কালোর ওপর সাদার প্রাধান্য নেই, অনারবের ওপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই।” [সহিহ বুখারি]
সুতরাং পৃথিবীর কোনো ভাষাকে হেয় প্রতিপন্ন করা কখনোই যাবে না। যেকোন জাতির নিজস্ব ভাষাভাষী বা বর্ণকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা এবং অবহেলা করা কোন ক্রমেই ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা পৃথিবীর সকল ভাষা একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালা দান ও নিয়ামত। তাঁর সৃষ্টির অবমূল্যায়ন করার চেষ্টা করা, স্বয়ং আল্লাহর প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করার নামান্তর নয় কি?
আমরা ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব বা তাৎপর্য বর্ণনায় আগেই উল্লেখ করেছি, মহান আল্লাহ তা’আলা মানুষের হিদায়াতের জন্য পৃথিবীতে অগণিত নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাঁদের জন্য আল্লাহর বাণী প্রচারের প্রধান মাধ্যম ছিল দাওয়াত অর্থাৎ মহাসত্যে পথে আহ্বান করা। আর এই দাওয়াতের জন্য প্রত্যেক জাতির কাছে তাদের নিজস্ব ভাষার কোনো বিকল্প ছিল না। কিন্তু আরবি ভাষা পরকালের ভাষা হওয়া সত্ত্বেও মহান আল্লাহর সব নবী-রাসুলগণ আরবি ভাষাভাষী ছিলেন না। এমনকি ১০৪ খানা আসমানি কিতাবের সবগুলো আরবি ভাষায় লেখা হয়নি।
আমরা জানি- আসমানী কিতাবের প্রধান চারখানার মধ্যে তাওরাত কিতাব ইবরানি ভাষায় নাজিল করা হয় হযরত মুসা (আ.)-এর উপর। যাবূর কিতাব ইউনানি ভাষায় হযরত দাউদ (আ.)-এর উপর নাজিল করা হয়েছে। ইঞ্জিল কিতাব সুরিয়ানি ভাষায় হযরত ঈসা (আ.) এর উপরে নাজিল করা হয়। সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.) উপর আরবি ভাষায় নাজিল করা হয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব আল-কোরআন।
ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাপক বর্ণনামূলক। যেমন, সর্বশ্রেষ্ঠ মহাগ্রন্থ আল-কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল করা সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা ব্যাখ্যা করে বলেন-
“ইহা আমি অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায়, যাতে তোমরা সহজে বুঝতে পারো।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ২]
অর্থাৎ আরব জাতির কাছে তাদের নিজস্ব মাতৃভাষায়, আরবি কিতাব আল-কোরআন নাজিল করা হয়েছে। কেননা অনারবি ভাষায় যদি রাসূল ও কিতাব নাজিল করা হতো, তাহলে আরবদের তা বুঝতে ও অনুসরণ করতে কষ্ট হতো। ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব বা তাৎপর্য না হয় বুঝলাম। কিন্তু এখন একটি প্রশ্ন মনের মাঝে হতেই পারে পবিত্র কোরআন তো বিশ্ব জাহানের সকলের জন্য প্রেরন করা হয়েছে। শুধু তো আরব জতির জন্য আল-কোরআন নয়, তাহলে কেন আরবি ভাষায় নাজিল হয়েছে?
এ প্রশ্বের একটি উত্তরই যথেষ্ট, পবিত্র কোরআন আরবী ভাষায় নাজিল করে মহান আল্লাহ বিশ্বকল্যাণ নিশ্চিত করেছেন এবং সকল জাতির জন্য সহজ করেছেন? কারণ হিসেব বলা যায়, একটি পবিত্র ধর্ম প্রচারে শুদ্ধ, মাধুর্য ও অলংকারপূর্ণ সুন্দর বর্ণনার প্রভাব অনস্বীকার্য। প্রিয় রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন ‘আফছাহুল আরব’ তথা আরবের শ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধভাষী। তাই বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলাও নবীজি (সা.)-এর একটি সুন্নত।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন-
“তিন কারণে তোমরা আরবিকে ভালোবেসো; যেহেতু আমি আরবি ভাষায় কথা বলি, কোরআন আরবি ভাষায় লেখা এবং জান্নাতের ভাষাও হবে আরবি।” *
*যদিও অধিকাংশ মুহাদ্দিস এই হাদিসটি বানোয়াট বলেছেন। আবার কেউ কেউ দূর্বল বা যয়ীফ হিসেবে গন্য করেছেন। এখানে দেখুন..।
তবে আরবি ভাষার একটি বিশেষত্ব হচ্ছে আরবিতে অল্প শব্দে ব্যাপক অর্থ বোধক বাক্য প্রকাশ করা যায়। পৃথিবীতে যতগুলো ভাষা আল্লাহ প্রদান করেছেন, তার মধ্যে আরবি ভাষা সবচেয়ে উচ্চমানের ব্যাকরণ সমৃদ্ধ। যেহেতু পবিত্র কোরআন বিশ্ব জাহানের সকল ভাষাভাষীর জন্য নাজিল করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ
ইসলামে কারাগারের ইতিহাস এবং পরিচালনার সঠিক পন্থা!
কোরআনের দৃষ্টিতে অশ্লীলতা বা পর্নোগ্রাফি আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়
ভালোবাসা দিবসের প্রকৃত ইতিহাস ও ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি
আরবি ভাষায় নাজিলের অন্যতম একটি কারণ হতে পারে- আরবি ভাষা প্রত্যেক জাতির জন্য রপ্ত করা ও উচ্চারণ করা অন্যসব ভাষা থেকে সহজতর। এর একটি বাস্তব নমুনা রাসূল (সা.) ও সাহাবিদের পর পৃথিবী শ্রেষ্ঠ সব ইসলামি গবেষক ও মুহাদ্দিসের অধিকাংশের মাতৃভাষা আরবি ছিল না। অথচ তাঁরা আরবি ভাষায় উচ্চ জ্ঞান রাখতেন। যেমন বুখারী ও মুসলিম শরীফের মত হাদিসের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থের রচয়িতা কারোরই মাতৃভাষা আরবী ছিল না।
ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব বলতে শুধু আরবী ভাষাকেই বোঝানো হয়নি। বরং প্রত্যেক জাতির নিজস্ব মতৃভাষার মর্যাদা ও তাৎপর্য বোঝানো হয়েছে। পাশাপাশি আরবি বোঝা ও আয়ত্ত করা আল্লাহ তায়ালা সবচেয়ে সহজ করে দিয়েছেন। তাই আরবিতে পবিত্র কোরআন নজিল করে মহান আল্লাহর তা’আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি ইনসাফ ও কল্যান নিশ্চিত করেছেন।
একটি বাস্তব উদাহরণ দেখুন আমাদের মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্যেও আমাদের জন্য কুরআন রপ্ত ও উচ্চারণ করা অনেক বেশি সহজ। শুধু তাই নয় বরং আমরা বাঙালিরা আরবি ভাষা অন্য সকল ভাষার চেয়ে ভালো উচ্চারণ করতে সক্ষম। তাই তো প্রতি বছর বিশ্বে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতায় বাঙালি ছেলেরা প্রথম স্থানে অর্জন করে থাকে। আলহামদুলিল্লাহ।
এছাড়া পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’য়ালা হযরত মুসা (আ.) এর মাধ্যমে আমাদের দোয়া শিখিয়েছেন। সুন্দর ভাবে কথা বলার সক্ষমতা অর্জনে জন্য পবিত্র কোরআনে মূসা (আ.) এর দোয়া আল্লাহর বর্ননা করেন এভাবে-
“হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন এবং আমার কর্ম সহজ করে দিন। আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।” [সূরা তহা,আয়াত: ২৫-২৮]
যদিও ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব বা তাৎপর্য অনেক ব্যাপক। আর দু একটি কথায় শেষ করছি, দেখুন ভাষার মাধুর্যতা ও স্পষ্ট ভাষী হওয়ার জন্য আমরা মূসা (আ.) এর এই দোয়া স্বরণ করতে পারি। আমরা জানি মুসা (আ.) এর মুখে সামান্য জড়তা ছিল। ফলে তিনি স্পষ্ট ভাবে যেন তাঁর ঐ জাতির মাতৃভাষায় দাওয়াত দিতে সক্ষম হন, তাই তিনি আল্লাহর কাছে এই দোয়াটি করেন এবং আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর জড়তা দূর করে দেন৷ ফলে তিনি ঐ জাতির মাতৃভাষায় দাওয়াতি কাজ প্রচারে স্পষ্ট ভাষা অর্জন করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও আমাদের এই দোয়া পাঠে উদ্ভুদ্ধ করেছেন, যেন আমরাও সুন্দর ভাবে স্পষ্ট কথা বলতে পারি।
আমাদের হৃদয়ের ভাষা বাংলার গুরুত্ব ও মর্যাদাঃ
প্রত্যেক মুসলিমের ধর্মীয় অনুভূতি ও বিশ্বাসের পাশাপাশি স্বাধীনতা, স্বদেশপ্রেম ও মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থাকা আবশ্যক। নিজস্ব মাতৃভাষা ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে কখনোই কোন পার্থক্য, বিভেদ বা বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করে না। বরং মাতৃভাষায় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা অতি জরুরী। কেননা মাতৃভাষায় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করলে আমরা ইসলাম সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে সক্ষম হবো এবং পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যা খুব সহজে বুঝতে পারবো।
প্রসিদ্ধ সকল ইসলামি স্কলারগণ মাতৃভাষায় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের বিশেষ গুরুত্ব ও উৎসাহ প্রদান করেছেন। আল্লাহ বিশেষ নিয়ামত হিসাবে আমরাও সর্বদা মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছি। কেননা পবিত্র কোরআনে ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব বর্ণনায় প্রত্যেক ভাষাকে সম্মান করতে শিখিয়েছে।
কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য, ইসলামের দোহাই দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিদের একদল শোষকগোষ্ঠী আমাদের মাতৃভাষায় আঘাত হেনেছিল। কিন্তু মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও অসীম ভালোবাসায় এ দেশের জনগণ তা মানতে কঠোর ভাবে অস্বীকৃতি জানায়।
তাই ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় জীবন দিতে হয় নিরস্ত্র বাঙালি ছাত্র–জনতাকে। প্রকৃত অর্থে একদল শোষক পাকিস্তানিরা ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব কতটুকু তা উপলব্ধি করতে সক্ষম ছিল না।
পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র আমরাই বাঙালি জাতি যারা মাতৃভাষার জন্য রক্ত ও জীবন দিয়েছি। তাই ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি আমাদের জীবনে যেমনি কষ্টের, তেমনি আনন্দ ও বিজয়ের। সেই থেকে ২১ ফেব্রুয়ারী আমাদের ‘ভাষাশহীদ দিবস’ এবং বর্তমানে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে সমগ্র বিশ্বে স্বরণ করা হচ্ছে।
মহান আল্লাহর কাছে হৃদয়ে গহীন থেকে প্রার্থনা করছি, “হে আল্লাহ্ আমাদের ভাষাশহীদের সকলের শাহাদাত আপনি কবুল করুন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসে তাঁদের উচ্চমর্যাদায় আসীন করুন।
ইয়া আল্লাহ, আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী রাখুন। আপনার দেওয়া নিয়ামত ও ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদা সকলকে বুঝার ও হৃদয়ে লালন কারার তৌফিক দান করুন। মাতৃভাষার যথাযথ সুমিষ্ট ব্যবহারের মাধ্যমে সত্য ও ন্যায়ের পথে দাওয়াতের তৌফিক দান করুন।” আমিন।