আধুনিক বিশ্বে কথিত নারী অধিকার জাগরণের ইতিহাস আমরা কম বেশি হয়তো অনেকেই জানি৷ কিন্তু ইসলামে নারী জাতির অধিকার সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? বর্তমানে বিশ্বে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনেক সংগঠন ও সংস্থার জন্ম হয়েছে। তাদের দাবি, ইসলাম ধর্মের নামে নারীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে গৃহে বন্দি করে রেখেছে।
কিন্তু তারা নারীর অধিকার, নিরাপত্তা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় প্রকৃত ভুমিকা কতটুকু পালন করতে পেয়েছে! তা এই সভ্যতার অন্তরালে দিবালোকের মত স্পষ্ট। তাই আজ আমরা ইসলামে নারী জাতির অধিকার নিরাপত্তা সম্মান ও মর্যাদা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত করে কিছু জানার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
ইসলামে নারী জাতির অধিকার সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জেনে নেওয়া প্রয়োজন বর্তমানে কথিত নারী অধিকার সূচনা কখন শুরু হয়েছিল।
বিশ্বের ইতিহাসের দিকে তাকালে আপনি দেখতে পাবেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আগমনের পূর্বে নারী জাতির অধিকার প্রসঙ্গে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা পর্যন্ত ছিল না। আধুনিক এই সভ্যতার দাবিদার ইহুদী-খৃস্টান ধর্মের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলেও পিতা, সন্তান বা স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর কোন অধিকার দেওয়া হয় নি।
যদি কোনাে পিতার পুত্র সন্তান না থাকে, তবেই তার সম্পত্তি কন্যারা লাভ করার নিয়ম ছিল। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও বিশেষ কিছু শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
যেমন- যদি কোনো কন্যা পিতার বংশের বাইরের কাউকে বিবাহ করে, তবে সে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ, এতে এক বংশের সম্পত্তি অন্য বংশে চলে যাবে! তাই নারীদের পছন্দের অন্য বংশে কাউকে বিবাহ পর্যন্ত করতে দেওয়া হতো না৷
এমনকি ইসলামে নারী জাতির অধিকার দেওয়ার পূর্বে, নারীর নিজের পক্ষ থেকে কোনো সম্পদ অর্জনের অধিকারও ছিল না। মাত্র ১৫০ বৎসর আগেও ইহুদী ও খৃস্টান জগতের একটি আইন ছিল, যে বিবাহের সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীর সকল সম্পত্তি স্বামীর মালিকানা হয়ে যাবে। আর স্বামী তার নিজের ইচ্ছামত তা ব্যবহার বা বিক্রয় করতে পারবে।
নারী জাতিকে তাদের কর্মের ক্ষেত্রে, চাকুরীর ক্ষেত্রে, সম্পত্তি অর্জনের ক্ষেত্রে, উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে, বিবাহ করা বা না করার ক্ষেত্রে। নারীদের রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও নেতৃত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে ও অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে নারীদের তেমন কোনো কোনাে অধিকারই তখন ছিল না।
এমনকি কোনাে কোনাে ধর্মে তাে স্বামীর মৃত্যুর সাথেই স্ত্রীর বেঁচে থাকার অধিকারও পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হত। তাই স্বামীর সাথে নারী কে চিতায় জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে আত্মাহুতি দেওয়াই ছিল তখনকার নিয়তি। ইতিহাসে যা সতীদাহপ্রথা নামেও পরিচিত।
ইসলামে নারী জাতির অধিকার দেওয়ার পূর্ব সময়ে নারীদের মূলতো কোনো অধিকারই ছিল না। ইতিহাস পর্যালোচনায় নারীর উপর চালানো সেই নির্মম নির্যাতন ও বর্বরতার কথা স্পষ্ট হয়ে যায়৷
তখন পূর্ব জাহিলিয়াতে এমন কোনো বর্বরতা ছিল না, যা নারীদের উপর করা হয়নি৷ কন্যা শিশুকে জীবন্ত মাটি চাপা দেওয়া, নারী দেহ ভোগ বিলাসিতার জন্য নারীদের বাজারে পন্যের মত বিক্রি করা হতো। এককথায় তখন নারী মানেই একটি বোঝা ও ভোগের বস্তু মনে করা হতো।
ইসলামে নারী জাতির অধিকার তো প্রায় ১৪৫০ বছর আগেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আর বর্তমান নারী অধিকার তো মাত্র সেদিনের যাত্রা, অথচ সেই নারীরা আজ ইসলামের উপর দোষ দিচ্ছে। কি আশ্চর্যই না তাদের অকৃতজ্ঞ!
উনবিংশ শতক থেকে নারী অধিকার সম্পর্কে আইন পাস হওয়া শুরু হয়। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে নিউ ইয়র্ক স্টেটে “the Women’s Property Act” নামে একটি আইন পাস করা হয়। তখন থেকে বিবাহিত নারীদের স্বতন্ত্রভাবে সম্পদ অর্জনের অধিকার দেওয়া শুরু হয়। আর তখনই সর্বপ্রথম স্বীকার করে নেওয়া হয় যে, নারীদেরও স্বতন্ত্র আইনগত সত্ত্বা বা পরিচয় রয়েছে।
বস্তুত এরই ধারাবাহিকথায় গত উনবিংশ শতক থেকে নারীদের অধিকারের বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জোরালাে দাবি-দাওয়া ও আন্দোলন শুরু হয়। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, এ বিষয়ে নানা রকমের আইনকানুন তৈরি করতে বাধ্য হয়।
যেহেতু তখন নারী জাতির কোনো অধিকার-ই ছিল না, সেহেতু অনেক কিছু দাবি শুরু করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আন্দোলনের ফলস্বরূপ মানবীয় জ্ঞানবুদ্ধি ও বিবেচনার মাধ্যমে নারী জাতি কে পুরুষের সমান অধিকার দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মানবীয় জ্ঞানবুদ্ধি ও স্বার্থচিন্তার সীমাবদ্ধতার কারণে থেকে যায় অনেক সমস্যা।
আপাতদৃষ্টিতে ইসলামে নারী ও পুরুষের অধিকারে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে৷ কেননা এই পার্থক্য টুকু না থাকতে কোনো জাতি সভ্যতার চুড়ান্ত পর্যায়ে কখনোই পৌঁছাতে সক্ষম হবে না৷
নারী ও পুরুষ উভয় জাতিকে মহান আল্লাহ তায়ালা অনেক যত্ন করে সৃষ্টি করেছেন। তাই সৃষ্টিগত ভাবেই নারী ও পুরুষের মধ্যে কিছু বৈষম্য বা পার্থক্যও তিনি করেছেন। কেননা এ বৈষম্য বা পার্থক্য-ই হলো মানব সভ্যতার টিকে থাকার মূল ভিত্তি।
নারী ও পুরুষের মাধ্যমেই পৃথিবীতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানুষের আগমন হয়ে থাকে। মূলত এখানেই আসল রহস্য, নবাগত শিশুদের কে পরিপূর্ণ স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে লালন করা। শিশুদের মধ্যে মানবীয় মূল্যবােধ বিকশিত করা এবং ভবিষ্যৎ মানব সভ্যতার প্রতি নারী ও পুরুষের প্রধান দায়িত্ব।
সুতরাং এই দায়িত্ব পরিপূর্ণ ভাবে পালন করার জন্য নারী ও পুরুষের মধ্যে প্রকৃতিগতভাবে কিছু বৈষম্য বা পার্থক্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এর বিলােপ সাধন হলে ভবিষ্যৎ মানব সভ্যতা ধ্বংস হতে বাধ্য থাকবে।
ইসলামে নারী জাতির অধিকার-এর মূলনীতি হলাে, সৃষ্টিগত এই বৈষম্যকে পুঁজি করে নারী জাতিকে যেন তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা না হয়। আর এই সমান্য বৈষম্য দূরীকরণ বা সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার করার নামে প্রাকৃতিক ভারসাম্যও যেন বিনষ্ট করা না হয়।
ঠিক এ জন্যই ইসলামে নারী ও পুরুষের অধিকার প্রদান করার ক্ষেত্রে, নারী-পুরুষের মূল দায়িত্ব ও প্রাকৃতিগত কিছু পার্থক্যের দিকে বিশেষ লক্ষ্য করা হয়েছে। কিন্তু এ কারণে নারী হিসেবে তাকে অধিকার থেকে বঞ্চিত, বৈষম্য বা অবহেলা করা হয় নি।
পক্ষান্তরে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে নারী জাতিকে পুরুষের মত সমান দায়িত্ব দিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্যও নষ্ট করা হয়নি।
যদিও ইসলামে নারী জাতির অধিকার সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। তারপরও নারী ও পুরুষ নিজের অধিকার নিয়ে আফসোস প্রকাশ করে থাকে৷ মূলত এটা তাদের নিজেদের অজ্ঞতা ও মূর্খতার কারন ছাড়া আর কিছুই নয়।
নারী বলে, কেন আমি পুরুষ হলাম না!! নারী জন্মই পাপ। আর পুরুষ বলে, কেন আমি নারী হলাম না!! নারীদের কত সুবিধা। এসকল অযৌক্তিক ও অমানবিক কথা ব্যক্তি জীবনে ও সমাজে বিভেদ- কষ্ট বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোনো কাজেই আসে না৷
বরং নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে সকলের দায়িত্ব হচ্ছে, নিজের প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতা ও সুযােগের মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করা। পাশাপাশি তাদের উচিৎ সঠিক অধিকার বুঝে নেওয়া এবং ভবিষ্যতে আরাে উন্নতি, শান্তি, বরকত লাভের জন্য মহান আল্লাহর অনুগ্রহের প্রার্থনা করা।
মানব জাতির ইতিহাসে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যে নারী জাতিকে করা হতো অবমাননা, অত্যাচার ও নির্যাতন। ঠিক সেই সময় নারী জাতির সর্বোচ্চ মর্যাদা-সম্মান ও মুক্তির পয়গাম নিয়ে এসেছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। ইসলাম নারীদের যে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে সমগ্র জাতি ও ধর্ম কেউ তা কখনো কল্পনাও করেনি।
শুধু রাসূল (সা.) এর হাদিস নয় বরং নারী জাতির অধিকার সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে অসংখ্য আয়াত নাজিল করেছেন।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
“স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করার আগে এবং কোনো মোহর সাব্যস্ত করার আগে যদি তালাক দিয়ে দাও, তবে তাতেও তোমাদের কোনো পাপ নেই। তবে তাদেরকে কিছু খরচ দেবে। আর সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এবং কম সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সাধ্য অনুযায়ী। যে খরচ প্রচলিত রয়েছে তা সৎকর্মশীলদের উপর দায়িত্ব।” (সুরা বাকারা: ২৩৬)
অর্থাৎ বিবাহ হয়েছে কিন্তু স্ত্রীকে স্পর্শ করার পূর্বেই তালাক বা বিহাহ বিচ্ছেদ ঘটালে। স্ত্রীকে সাধ্যমত মহোরনার কিছু অংশ দিয়ে দিতে নির্দেশ করা হয়েছে। কারণ, বিবাহ বিচ্ছেদ এটা নারীর জন্য কষ্টেরও হতে পারে। তাই তার সম্মানে তাকে কিছু খরচ দিতে বলা হয়েছে। যদিও স্ত্রীকে স্পর্শ করা হয়নি।
পবিত্র কুরআন কারীমে মহান আল্লাহ আরো ইরশাদ করেন-
“আল্লাহ যা দিয়ে তােমাদের কাউকে কারাে উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তােমরা তার লালসা করাে না। পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ । আর তােমরা আল্লাহর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর । আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।”(সূরা নিসাঃ৩২)
অর্থাৎ নারী-পুরুষ কিন্বা স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেকে তার নিজের প্রাপ্ত বা অর্জিত সম্পদের মালিক সে নিজেই থাকবে।
সম্মানিত পাঠকগণকে অনুরোধ করবো আয়াতের তাফসীরে গুলো পড়ে নিবেন। দেখবেন খুবই সুন্দর ভাবে তাফসীরে ব্যাখ্যাগুলো স্পষ্ট করা হয়েছে। ফলে ভুল বুঝে থাকলেও তা সংশোধন হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
ইসলাম নারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে মা হিসেবে। রাসূল (সা.) বলেন, “মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত”।
এ কথার অর্থ সুক্ষ্ম ভাবে বুঝে নিতে হবে। এর মানে এই নয়, যে প্রত্যেক মায়ের পায়ের নিচে তার সন্তানের জান্নাত। বরং এই কথার মাধ্যমে সন্তানের জান্নাত বা জাহান্নাম যাওয়ার সাথে মায়ের সম্পর্ক স্থাপন এবং মায়ের সর্বোচ্চ মর্যাদা ও গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন-
“একবার এক লোক মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবারও তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। চতুর্থ বারে রাসূল (সা.) বললেন তোমার পিতার।” (সহিহ বুখারি, মুসলিম)
একজন সন্তান জন্মদানে মায়ের কষ্টের কথা উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
“মাতা তাকে বড় কষ্টে গর্ভ ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে, আর তাকে গর্ভে ধারণ করা ও দুধ ছাড়ানো ত্রিশ মাস। (সূরা লোকমান :১৪)
এমনকি মহান আল্লাহ তায়ালা ইসলামে নারীর অধিকার সম্মান ও মর্যাদার বর্ননা করতে গিয়ে, পবিত্র কোরআনে “নিসা অর্থাৎ নারী” নামে গোটা একটি সূরা নাজিল করেছেন। সুবহানাল্লাহ।
ইসলাম নারীদের স্ত্রী হিসেবেও সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে৷ ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ হলো একে অন্যের পরিপূরক। স্ত্রী হিসেবে নারীর মর্যাদা সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের কয়েকটি বক্তব্য আসুন জেনে নেই-
১. পবিত্র কোরআনে রয়েছে, “তারা (স্ত্রী) তোমাদের আবরণস্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।” (বাকারাঃ১৮৭)
২. স্ত্রীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, “উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক।”(সহিহ মুসলিম)।
৩. রাসূল (সা.) আরও বলেন, “তোমাদের মধ্যে সে–ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।”(তিরমিজি)।
৪. পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।” (সূরা- নিসাঃ১৯)
৫.পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট করে আরো বলা হয়েছে,
“নারীদের ওপর যেমন অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর অধিকার।” (সূরা বাকারাঃ ২২৮)
যদিও মহাগ্রন্থ আল কোরআন ও হাদিসে ইসলামে নারী জাতির অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে এভাবে অসংখ্য আয়াত ও বিস্তৃত বর্ননা হাদিসে রয়েছে। যা এতো সংক্ষেপে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়।
নিজ নিজ ধর্মপালন করা মানুষের জন্মগত অধিকার। তাতে সে ইসলাম ধর্মপালন করুক বা অন্য কোনো ধর্ম। প্রত্যেকের নিজ নিজ অধিকার রয়েছে স্রষ্টাকে স্মরণ করার। স্রষ্টার প্রার্থনা করা বা স্বরণ করা ইত্যাদির মাধ্যমে তার নিজের অশান্ত হৃদয়কে শান্ত করার। তার আত্মিক প্রশান্তি, পরিতৃপ্তি লাভ এবং আখিরাতের পুরস্কার অর্জন করার চেষ্টা করা প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার৷
পৃথিবীতে অনেক ধর্ম রয়েছে যেখানে জাতি, বংশ, বর্ণ বা লিঙ্গের কারণে অনেক মানুষকে তার জন্মগত ধর্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ ইহুদী ও খৃস্টান ধর্ম। তাদের বর্তমান কিতাব, যা তারা স্রষ্টার বানী বলে প্রচার করে থাকে। যদি তাও অধ্যায়ন করা হয়, তবে এ বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ থাকবে না।
বর্তমানে প্রচলিত ‘বিকৃত’ বাইবেলের বক্তব্য অনুসারে ‘হাওয়া‘ প্রথম নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ করেছিল এবং আদমকে তা ভক্ষণ করতে প্ররােচিত করেছিল। শুধু এ কারণে ইহুদী ও খৃস্টান ধর্মে মানব জাতির পতনের জন্য, নারী জাতিকে প্রধান দায়ি করা হয়েছে। বর্তমান বাইবেলের এ কাহিনি কে নারী ও পুরুষের মধ্যে ধর্মীয় ও অন্যান্য বৈষম্য প্রতিষ্ঠার মূল যুক্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
খৃস্টধর্মের বর্তমান বাইবেলে আরো উল্লেখ করা হয়েছে-
“আমি উপদেশ দিবার কিম্বা পুরুষের উপরে কর্তৃত্ব করিবার অনুমতি নারীকে দেই না, কিন্তু মৌনভাবে থাকিতে বলি। কারণ প্রথমে আদমকে, পরে হবাকে (হাওয়াকে) নির্মাণ করা হইয়াছিল। আর আদম প্রবঞ্চিত হইলেন না, কিন্তু নারী প্রবঞ্চিতা হইয়া অপরাধে পতিত হইলেন।” (বাইবেল)
শুধু এভাবে একটি অপ্রাসঙ্গিক কাহিনীর উপর ভিত্তি করে নারীকে তার ধর্মীয় ও সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আর নারীকে জন্মগতভাবেই পাপী ও অপরাধী বলে চিত্রিত করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে কারীম কখনােই প্রচলিত বাইবেলের এ গল্প সমর্থন করেনি বা এ জন্য হাওয়া (আ.) কে দায়িও করা হয়নি। বরং কুরআন মাজীদে সর্বদা আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) কে সমভাবে দায়ি করা হয়েছে।
ইসলামে নারী জাতির অধিকার-এ এরূপ বিষয়কে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্যের বাহন কখনোই বানানাে হয়নি। বরং সকল ধর্মীয় বিষয়ে নারী ও পুরুষকে সমান অধিকার প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু নারী জাতিকে সমান দায়িত্ব কখনোই দেওয়া হয়নি। নামায, রােযা, হজ্জ, যাকাত এ সকল ক্ষেত্রেই নারীরা সমান অধিকার ভােগ করতে পারেন।
নারীকে প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলার জন্য তার ‘দায়িত্ব’ কিছুটা হাল্কা করা হয়েছে। যেমন পুরুষের জন্য জামাতে নামায আদায় করা জরুরী দায়িত্ব। কিন্তু নারীর জন্য তা জরুরী দায়িত্ব নয়, তাদের সুযােগ মাত্র তারা জামাতে যেতে পারবে।
সহিহ একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন-
“তােমাদের নারীগণ মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তাদেরকে নিষেধ করবে না, তাদেরকে অনুমতি দিবে। (অন্য বর্ণনায় তাদেরকে মসজিদে গমনের সুযােগ থেকে বঞ্চিত করবে না, আল্লাহর বান্দীদের মসজিতে নামায পড়তে নিষেধ করবে না) তবে তাদের বাড়িতে নামায পড়াই তাদের জন্য উত্তম।”
নারীর মাতৃত্ব, দুগ্ধদান, পর্দা পালন ও অন্যান্য দায়িত্বের সাথে সঙ্গতি রেখেই, তাদের জন্য ইসলামে এই বিধান দেওয়া হয়েছে। ইসলামে সকল প্রকার ইবাদতের ক্ষেত্রেই, নারী জাতিকে এভাবে সমান অধিকার ও সুযােগ দেওয়া হয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষের মত সমান দায়িত্ব, নারী জাতিকে কখনোই দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ নারীর অধিকারে কমতি করা হয়নি, কিন্তু দায়িত্ব অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রিয় পাঠকগণ, ইসলামে নারী জাতির অধিকার, নিরাপত্তা, সম্মান ও মর্যাদা এতো সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা সম্ভব নয়। তাই আপনাদের কাছে বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি, উল্লেখিত সকল আয়াতের তাফসীর ও হাদিসের ব্যাখ্যা গুলো আরো ভালো করে জেনে নিবেন। ইসলামে নারী জাতির অধিকার নিয়ে আজ এতোটুকু প্রথম অংশ হিসেবে রেখে দিচ্ছি। আমরা দ্বিতীয় অংশে নারীর আরো কয়েকটি অধিকার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে দ্বীনের সহিহ বুঝ দান করুক। আমিন।
ছবিঃ সংগ্রহীত
মন্তব্য লিখুন