মাইক্রোসফট অফিস বা এম.এস অফিস এর আদ্যোপান্ত

Microsoft-Office

মাইক্রোসফট অফিস (এম.এস অফিস)- বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এর জুড়ি নেই। অফিস কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সুপার শপ কিংবা গার্মেন্টস সব জায়গায় মাইক্রোসফট অফিসের কোনো না কোনো সফটওয়্যারের ব্যবহার রয়েছে। শুধু ব্যবহার রয়েছে বললে ভুল হবে, মাইক্রোসফট অফিস ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক কাজ করা রীতিমত অসম্ভব।

মাইক্রোসফট অফিস একটি অফিস স্যুট যেটি মূলত যাত্রা শুরু করে ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে। এটি মাইক্রোসফট উইন্ডোজ সার্ভার ও পরিষেবা এবং ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমের একটি অফিস স্যুট। এটির প্রথম ঘোষণা দেন মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিল গেটস। ১লা আগস্ট, ১৯৮৮ সালে লাস ভেগাসে প্রথম অফিসিয়ালি লঞ্চ করা হয়। প্রথমে এটি মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফট এক্সেল ও মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট এর একটি সম্মিলিত বান্ডেল হিসাবে ছিল।

এটি সি++ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে বিনির্মিত হয়েছে। এটি ১০২ টি ভাষা উপলব্ধির সক্ষমতা রাখে যার মধ্যে ৪০ টি স্থায়ী ভাষা অন্তর্ভূক্ত।

চলুন, আজ কথা বলা যাক মাইক্রোসফট বা এম.এস অফিস এর অন্তর্ভূক্ত সফটওয়্যার এবং সেসবের কাজ নিয়ে।

১. মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট (MS PowerPoint)

মাইক্রোসফটের অন্যতম জনপ্রিয় একটি এপ্লিকেশন সফটওয়্যার মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট। মূলত মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট মাইক্রোসফট কোম্পানির তৈরি একটি স্লাইড শো উপস্থাপনা প্রোগ্রাম। মাইক্রোসফট অফিস স্যুটের অংশ হিসাবে এটি চালু হয় ২২ মে, ১৯৯০।

দ্রুত কোনো স্লাইড তৈরী করতে এর জুড়ি নেই। মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট ব্যবহার করে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এ অফিসিয়াল এক্টিভিটি স্লাইড আকারে শেয়ার, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেজেন্টেশন তৈরী- সব কিছুই খুব সহজে করা সম্ভব।

এম.এস পাওয়ার পয়েন্ট সফটওয়্যারটিতে অসংখ্য কাস্টমাইজ করা ফিচার রয়েছে। রেডিমেট অসংখ্য স্লাইড টেমপ্লেট আছে। সেসব টেমপ্লেট ব্যবহার করে খুব সহজেই মোটামোটি দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনা তৈরী করা সম্ভব।

মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্টের ফাইল এক্সটেনশন হলো .pptx । অর্থ্যাৎ, একটা পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইডের ফাইলটি পিপিটিএক্স ফাইল হিসেবে সেভ থাকে। কাজ করতে করতে কখনো বিরতির প্রয়োজন হলে ফাইল সেভ করে পরবর্তীতে এডিটের সুযোগ রয়েছে।

ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখে মাইক্রোসফট তাদের মহামূল্যবান এই সফটওয়্যারটি এন্ড্রয়েড এপ্লিকেশন ডাউনলোডের জনপ্রিয় প্লাটফর্ম প্লেস্টোরেও আপলোড করেছে। মোবাইল ফোনেও সীমিত কিছু ফিচার ব্যবহার করে এই অ্যাপটি চালাতে পারবেন ব্যবহারকারীরা।

২. মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ( ‍MS Word)

মাইক্রোসফট ওয়ার্ড (ইংরেজি: Microsoft Word) মাইক্রোসফটের তৈরি করা একটি ওয়ার্ড প্রসেসর। এটি ১৯৮৩ সালে জেনিক্স সিস্টেমের জন্য মাল্টি-টুল ওয়ার্ড নামে বাজারে ছাড়া হয়।

পরবর্তীকালে আইবিএমসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মের জন্য ছাড়া হয় যেমন: ডস (১৯৮৩) অ্যাপল ম্যাকিন্টশ-এর ম্যাক ওএস (১৯৮৫), এটিএন্ডটি ইউনিক্স পিসি (১৯৮৫) ইত্যাদি এবং মাইক্রোসফট উইন্ডোজ (১৯৮৯)। বাণিজ্যিকভাবে স্বতন্ত্র পণ্য বা মাইক্রোসফট অফিস এর সঙ্গে মুক্তি পায়। সীমিত বৈশিষ্ট্য নিয়ে অফিস ভিউয়ার এবং অফিস অনলাইন চালু আছে।

মাইক্রোসফট ওয়ার্ড-এ তিন ধরনের পাসওয়ার্ড সুবিধা আছে-

১. ডকুমেন্ট খোলার জন্য পাসওয়ার্ড
২. ডকুমেন্ট পরিবর্তনের জন্য পাসওয়ার্ড
৩. ডকুমেন্ট বিন্যাস এবং সম্পাদনার পাসওয়ার্ড

মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ব্যবহার ছাড়া ওয়ার্ড ফাইল তৈরী করা সম্ভব নয়। এর মূল সুবিধা হলো পাওয়ারপয়েন্টের মত অসংখ্য ইন বিল্ট ফিচার রয়েছে এই সফটওয়্যারটিতে। এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে চটজলদি কোনো দরকারি তথ্য ফাইল আকারে সেভ করে রাখা যায়। দরকারি সময়ে দ্রুত খুঁজে পেতেও এর জুড়ি নেই।

মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের এক্সেনশন হলো .docx। অর্থ্যাৎ কোনো ওয়ার্ড ফাইলের রিনেম যদি “File-1” করা হয়, তাহলে সেটা “Fille-1.docx” এই নামে ফাইল এক্সটেনশন সহ সেভ হবে।

বিভিন্ন শর্ট নোট তৈরী, অফিসিয়াল স্টেটমেন্ট তৈরী, বড় লেখা কম ফাইল সাইজে শেয়ার করার জন্য এবং নানা রকম ফন্ট, ডিজাইন ব্যবহার করে সুবিধা পাওয়ার দিক দিয়ে এই সফওয়্যারটির বিকল্প নেই।

মাইক্রোসফট এই সফটওয়্যারটিরও জনপ্রিয়তা এবং ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখে এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলার জন্য প্লেস্টোরে এই সফটওয়্যারটি বিনামূল্যে ডাউনলোডের সুযোগ করে দিয়েছে।

৩. মাইক্রোসফট এক্সেল (MS Excel)

মাইক্রোসফট এক্সেল (ইংরেজি: Microsoft Excel) মাইক্রোসফটের উন্নয়ন করা একটি স্প্রেডশিট প্রোগ্রাম। এর ম্যাকওএস, উইন্ডোজ এবং মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম আইওএস ও অ্যানড্রয়েড সংস্করণ রয়েছে। সফটওয়্যারটি বিশাল একটি ব্যবহারকারী ভীত রয়েছে।

এক্সেলে হিসাব-নিকাশ, চিত্রায়নের হাতিয়ার, পিভট টেবিল, ম্যাক্রো প্রোগ্রামিং ভাষাসহ বেশ অনেক সুবিধা রয়েছে। এক্সেল সবগুলো প্ল্যাটফর্মেই বিস্তৃতভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে ১৯৯৩ সালে ৫ম সংস্করণ থেকে এক্সেল তৎকালীন ইন্ডাস্ট্রি প্রামাণিক লোটাস ১-২-৩ এর জায়গা দখল করে নেয়। এক্সেল মাইক্রোসফটের অফিস স্যুটের অংশ।

আরও পড়ুনঃ ছাত্রজীবন থেকেই শুরু হোক ফ্রিল্যান্সিং

মাইক্রোসফট এক্সেলের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয় বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কর্মীদের আয় ব্যয়ের যাবতীয় হিসাব, বেতন ভাতার হিসাব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের রেজাল্টের শিট তৈরী, সেসব সংরক্ষণ এরকম নানাবিধ কাজে সফটওয়্যারটি দানবীয় ভূমিকা পালন করে।

মাইক্রোসফট এক্সেলে বিভিন্ন সূত্র রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে শর্ট কাটে বিভিন্ন কাজ স্বল্প সময়ে করা সম্ভব।শুধু তাই নয়, এক্সেল ব্যবহার করে সহজেই বিশাল ডাটা ভান্ডার থেকে কোনো প্রয়োজনীয় ডাটা নিমিষেই বের করে ফেলা সম্ভব। চিরায়ত পদ্ধতিতে ফাইল ঘেটে তথ্য বের করার যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য মানব সমাজের পক্ষ থেকে মাইক্রোসফট এক্সেলকে একটা ধন্যবাদ দেওয়াই যায়।

মাইক্রোসফট এক্সেলেরও এন্ড্রয়েড অপারেটিং প্লাটফর্মের বিশ্বস্ত ডাউনলোড ফোরাম প্লেস্টোরে অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। ব্যবহারকারীরা তাদের মোবাইলে সহজেই ব্যবহার করে টুকটাক কাজ সম্পন্ন করতে পারেন।

৪. মাইক্রোসফট ওয়াননোট (Microsoft Onenote)

মাইক্রোসফট ওয়াননোট একটি বিনামূল্যের নোট গ্রহণ প্রোগ্রাম। এটা নোট (হাতে লেখা বা টাইপ করা), অঙ্কন, সংবাদপত্রের কেটে রাখা অংশ এবং অডিও কমেন্ট্রি ধারণ করে। সেভ করা নোট ইন্টারনেট বা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্য ওয়াননোট ব্যবহারকারীদের সাথে ভাগ করা যেতে পারে।

এই সফটওয়্যারটি বহুমাত্রিক কাজে কাজের ভিন্নতার উপর নির্ভর করে ব্যবহার করা যায়। মাইক্রোসফট অফিসের অন্যান্য সফটওয়্যারগুলোর তুলনায় কিছুটা অপরিচিত এই সফটওয়্যারটিও বেশ কাজের।

৫. মাইক্রোসফট আউটলুক (Microsoft Outlook)

মাইক্রোসফট আউটলুক (আউটলুক এক্সপ্রেসের সঙ্গে বিভ্রান্ত করা যাবে না) একটি ব্যক্তিগত তথ্য ম্যানেজার। উইন্ডোজ ম্যাসেজিং, মাইক্রোসফট মেইল এবং শিডিউল ++ এর প্রতিস্থাপক হিসেবে অফিস ৯৭ ভার্সন থেকে এর যাত্রা শুরু হয়। এতে ই- মেইল ক্লায়েন্ট, ক্যালেন্ডার, টাস্ক ম্যানেজার এবং এড্রেস বুক অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মাইক্রোসফট আউটলুকের একাউন্ট খোলার সময় আপনি চাইলে এক্সটেনশনে আউটলুকের জায়গায় হটমেইলও ইউজ করতে পারবেন।

Example: abc@outlook.com এর জায়গায় abc@hotmail.com ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

এটিও মাইক্রোসফট ওয়াননোটের মত তেমন জনপ্রিয় না হলেও খুবই ইউজার ফ্রেন্ডলি একটি সফটওয়্যার এবং গ্রাহক সন্তুষ্টির তুঙ্গে উঠার প্রেক্ষিতে এর জুড়ি নেই।

যাই হোক, মোটামোটি মাইক্রোসফট অফিসের খুঁটিনাটি এবং সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার এবং তাদের কাজ নিয়ে আমরা জানলাম। বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এবং ভালো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হতে হলে এসব অফিস সফটওয়্যার সম্পর্কে স্বচ্ছ জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক। আমাদের সবার উচিত মাইক্রোসফট অফিসের আদ্যোপান্ত জেনে যারা এখনো এর সফটওয়্যারগুলোর ব্যবহার জানেননা, তাদের স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবহার শিখে ফেলা উচিত।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া (Wikipedia) এবং কোরা (Quora)

Exit mobile version