অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে যেভাবে আয় করবেন

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে যেভাবে আয় করবেন

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing) হলো কমিশনের বিনিময়ে কোন ব্রান্ড বা ই-কমার্স সাইটের পন্য প্রচার করে এবং বিক্রয় বৃদ্ধিতে অবদান রেখে আয় করার একটি চমৎকার মাধ্যম। এক্ষেত্রে ক্রেতাদের প্রয়োজনীয়তা, ক্রয় মানসিকতা বুঝতে পারা এবং বিশ্বস্ততা অর্জন করাটা মূখ্য বিষয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ সালের বিখ্যত এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক কোম্পানি AWIN এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে কন্টেন্ট এবং ব্লগ ব্যবহার করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কনসেপ্টে ৪০ শতাংশের বেশি বিক্রয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে বিক্রয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এফিলিয়েট কন্টেন্ট সবসময় এক রকম হয় না। কিছু কিছু কন্টেন্ট সারাবছর কাজ করে আবার কিছু মৌসুম অনুযায়ী সীমিত সময়ের জন্য কাজ করে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করার জন্য এফিলিয়েট মার্কেটিং কন্টেন্টের উপর স্বচ্ছ ধারনা থাকতে হবে। অনেক আগে থেকেই আপনি হয়তো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ঘরে আয় করার কথা ভাবছেন। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়তে হবে। পেয়ে যেতে পারেন কাঙ্খিত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং আইডিয়া যেটা আপনি দীর্ঘ দিন ধরে খুঁজছেন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জনপ্রিয় কন্টেন্ট আইডিয়াঃ

বিভিন্ন পন্যের রিভিউ

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম পণ্যের রিভিউ করা। অনলাইন রিভিউগুলি এমন ইউজারদের জন্য যারা পন্যটির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। এবং উপযুক্ত পন্যটি খুঁজছে।

প্রায় ৯৭% ভোক্তা কেনাকাটা করার আগে অনলাইন রিভিউ চেক করেন। তবে একটি রিভিউ লেখার সময় মনে রাখতে হবে যে সততার দ্বারা বিশ্বাস তৈরি করতে পারলে একজন দীর্ঘমেয়াদি ক্রেতা পাওয়া যায়।

যেহেতু কোনো পণ্যই নিখুঁত নয়, তাই মিথ্যে আবরন দিয়ে বিক্রি করলে সেটা কোম্পানির জন্য নেতিবাচক হতে পারে।

কন্টেন্ট এর মধ্যে একটি বিভাগ রাখা উচিৎ যেখান থেকে পণ্যের সম্ভাব্য ত্রুটি সম্পর্কে গ্রাহকদের পরামর্শ দেয়া যায়।

আপনি যে পণ্যটি রিভিউ করবেন তার বিকল্প পন্য অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করবেন। কোনো একক পণ্য সবার জন্য উপযুক্ত নয়।

এছাড়াও পাঠকের অজানা বিকল্পগুলি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। রিভিউর সাথে আপনি আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংক যুক্ত করে ক্লিক অপশন রাখতে পারেন এবং উপার্জন করতে পারেন।

একাধিক পন্যের তুলনা

পণ্যের তুলনা যাকে আমরা এই যুগে Comparison বললে দ্রুত বুঝতে পারি। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর আরেকটি চমৎকার উপায় এই পন্যের তুলনা করা। অনুরূপ পণ্য পাশাপাশি রেখে প্রতিটির সুবিধা, অসুবিধা এবং পার্থক্যগুলি একটা মানদণ্ডে রেখে ক্রেতার সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলা হয়। এটার জন্য ব্লগ বা ওয়েবসাইট বিল্ডিং করা যেতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি কম্পিউটারের তুলনা করেন তাহলে অবশ্যই স্টোরেজ, ব্যাটারি লাইফ ইত্যাদি বিষয় গুলো নিয়েই আলোকপাত করবেন। প্রস্তুতকারকের ওয়েবসাইটে সেলস পেইজে পন্যের যাবতীয় তথ্য দেয়া থাকে। চাইলে Amazon-এ পণ্যগুলোর সেলস পেইজে কী কী মেট্রিক্স অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তা দেখতে পারেন।

পণ্যের তুলনা তুলনামূলকভাবে সহজবোধ্য হওয়া উচিত কারণ পাঠকরা ক্রয় সিদ্ধান্তের শেষ পর্যায়ে এসে এই ধরনের তুলনাগুলো যাচাই করে। তারা ইতোমধ্যেই জানে যে তাদের কী প্রয়োজন এবং কেন প্রয়োজন। আপনি কেবল ভোক্তাদরে চূড়ান্ত মূল্যায়ন করতে সহায়তা করতে পারেন।

দুইয়ের অধিক পন্য পাশাপাশি তুলনা করার চেষ্টা করুন এবং আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংক যুক্ত করুন। বিক্রয় হলে অবশ্যই কমিশন পাবেন।

পন্যের রাউন্ডআপ

পণ্য একত্রীকরণ বা রাউন্ডআপ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর কার্যকর একটা উপায়। যেখানে অনেকগুলো পন্য একত্রে উপস্থাপন করা হয় এবং পাঠকের সামনে হাইলাইট করে তার আকর্ষন বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো হয়।

পণ্য রাউন্ডআপ এবং পণ্য তুলনার মধ্যে অনেকটা সামঞ্জস্য আছে। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন পন্যের গুনাগুনের পার্থক্যের ফলে একই রুব্রিক এ তাদের মূল্যায়ন করা সম্ভব হয় না। পাশাপাশি তুলনা করা কঠিন হয়ে যায়।

তাই পন্যের তুলনা করার পরিবর্তে একটি রাউন্ডআপ করলে দ্রুত ক্রেতার বোধগম্য হয় এবং ক্রয় সিদ্ধান্ত নিতে আরেক ধাপ এগিয়ে যায়।

এখানে মাইনক্রাফ্ট হোস্টিং সার্ভারগুলির রাউন্ডআপের উদাহরণ দিতেই পারি। তারা ব্যবহারকারীকে সহায়তা করে থাকে তাদের পছন্দের সার্ভারটি বাছাই করতে। তবে সেক্ষেত্রে প্রচুর রিসার্চ করতে হয় চাহিদা সম্পন্ন কীওয়ার্ডগুলো সনাক্ত করতে। যেগুলো পরবর্তীতে শিরোনামে ব্যবহার করলে ফলপ্রসূ হওয়া যায়।

পন্য রাউন্ডআপ শিরোনাম এমন হতে পারেঃ
১. ২০২১ সালের সেরা ৫ টি অ্যান্ড্রয়েড ফোন
২. আপনার ছোট ব্যবসা শুরু করতে সাহায্য করার জন্য ৮ টি সফ্টওয়্যার
৩. পরবর্তী শীতের ছুটিতে প্যাক করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ১০টি পোশাক

রাউন্ডআপ কন্টেন্ট এর মধ্যেই রেখে দিতে পারেন আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংকটি। যা আপনার কমিশনের

ইমেইল মার্কেটিং

প্রথমেই বলে নেয়া ভালো সব ব্রান্ড সরাসরি ইমেইলে অ্যাফিলিয়েট লিংক শেয়ার করার অনুমতি দেয় না। উদাহরণ হিসেবে আমরা অ্যামাজনের কথাই বলতে পারি।

অবশ্যই যাদের পন্যের প্রচারাভিযান করবেন তাদের কাছ থেকে ইমেইল মার্কেটিং এর বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে । এক্ষেত্রে আপনার নিউজলেটারের মধ্যে ব্লগ বা ল্যান্ডিং পৃষ্ঠার লিঙ্ক অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ হবে।

ডিল এবং সীমিত সময়ের অফার প্রচার করার জন্য ইমেইল একটি চমৎকার মাধ্যম। পুনরাবৃত্তি বিক্রয় পাওয়ার জন্য এটি সবচেয়ে কার্যকর।

রিসোর্স পেইজ

রিসোর্স পেইজে নির্দিষ্ট টপিকের উপর সমস্ত তথ্য এবং লিঙ্ক একত্রিত করা হয়। যাতে পাঠক তার কাঙ্ক্ষিত তথ্য একনজরে এক স্থানে পেতে পারে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য রিসোর্স পেইজ অনেকটা কার্যকরী। কেননা মানুষ গোছানো জিনিস পছন্দ করে।

রিসোর্স পেইজে পাঠককে প্ররোচিত করার জন্য খুব বেশি জায়গা নেই। তাই আপনি কাদের উদ্দেশ্যে বলছেন এবং তারা কী খুঁজছে তা সঠিকভাবে গুছিয়ে বর্ননা করবেন।

তবে ধরে নিন সব ব্যবহারকারীরা আপনার রিসোর্স পেইজে ক্রয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে আসবে না। যদিও এটি আপনার সমস্ত লিঙ্ক এক জায়গায় পাওয়ার একটি দুর্দান্ত উপায়, তবে পাঠক থেকে ক্রেতায় রূপান্তর হার তত বেশি নাও হতে পারে।

টিউটোরিয়াল কন্টেন্ট

এই অংশটা শুরুর আগে প্রথমেই একটা গল্প বলি। প্রবাসী মামা দেশের আসার সময় একটা ট্রিমার নিয়ে এসেছেন। তিনি নিজেও এর ব্যবহার জানেন না এবং আমরাও কেউ জানি না।

যে যার মত পেরেছে বাটন প্রেস করেছে। ব্লেড কিভাবে খোলা যায়, কিভাবে সেট করা যায় কিছুই বুঝতে পারছে না। তখনি আমরা দারস্থ হলাম ইউটিউবের। প্রোডাক্ট টিউটোরিয়াল দেখলাম এবং সুন্দর ভাবে শিখে গেলাম ব্যবহার বিধি।

টিউটোরিয়াল এমন একটা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর উদাহরণ যা ভোক্তার পণ্য কেনার প্রতি ঝোঁক বাড়িয়ে দেয়। কেননা তারা পন্যের ব্যবহার বিধি এবং কার্যক্ষমতা স্বচক্ষে দেখতে পারেন।

এতে বিশ্বস্ততা বৃদ্ধি পায়। সাধারণত, টিউটোরিয়াল একটি পণ্যের সাথে জড়িত সকল সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে।

ভিডিওর সাথে অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক জুড়ে দিলে বিক্রয়ের সম্ভাবনা অনেক গুন বেড়ে যেতে পারে।

গিফট সাজেশন

জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী কিংবা বিয়ে বাড়ি উপহার ছাড়া খালি হাতে যাওয়ার কথা চিন্তাও করা যায় না।

কিন্তু উপহার বাছাই করাটাই ক্লান্তিকর। আবার অনেক সময় অনুষ্ঠান, সম্পর্কের ধরন, বাজেট বা অন্যান্য বিষয় মাথায় রেখে কি উপহার দেয়া যায় সেটা ভাবনার বিষয়। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে গিফট সাজেশন ক্যাম্পেইন করতে পারেন।

উদাহরণস্বরূপ, “ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে ৫০০০ টাকার কম মূল্যের ১৫টি উপহারের ধারণা” এটি একটি ব্রান্ডের সাময়িক অফার প্যাকেজ হতে পারে। তারা নিখুঁত উপহার খোজার ঝামেলা দূর করে।

এতে ক্রেতার উপহার নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজ হয়। মূল্য, মাত্রা বা রেটিং এর মতো মূল তথ্য সরাসরি পন্যের সাথে অন্তর্ভুক্ত থাকলে ক্রেতার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়।

মূলত ক্রেতারা তাদের সিদ্ধান্তের শেষ পর্যায়ে এসেই এই অফারগুলো খুজে থাকে। সুতরাং পাঠক থেকে ক্রেতায় রুপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। এখানে অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক যুক্ত করাই যায়। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ফলপ্রসূ ধারনা হতে পারে গিফট সাজেশন।

সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট

২০২২ সালে এসে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা সবাই কম বেশি যুক্ত আছি, যুক্ত না থাকাটাই বরঞ্চ অদ্ভুত।

বিশ্বব্যাপী ৩ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখিত টেক্সট, ফটোগ্রাফ, ভিডিও, ইনফোগ্রাফিক্স ইত্যাদি জিনিসগুলোর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

এই জিনিসগুলো উপযুক্ত ব্যবহার জানলে সোশ্যাল মিডিয়া হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর কিং।

সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলি অনুসারীদের দরকারী তথ্য জানানোর এবং বিশ্বাস তৈরি করার বহুমুখী হাতিয়ার ৷ যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্ম রয়েছে, সেহেতু সেগুলোর ব্যবহার বিধিও আলাদা।

ইনস্টাগ্রামের ফিচার কিংবা লিঙ্কডইন (Linkedin) এর ফিচার কখনোই এক হবে না। তাই টার্গেট অডিয়েন্স কোথায় থাকে এবং কোন প্ল্যাটফর্ম আপনার কন্টেন্টের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হবে তা খুঁজে বের করুন এবং কাজে লেগে যান। দ্রুত ট্রাফিক বৃদ্ধি করতে সোশ্যাল মিডিয়ার বিকল্প নেই।

আপনি ক্রেতাদের সাজেশন দেবেন মানে আপনাকে ইন্টারনেট ঘাটতে হবে, পরীক্ষা করতে হবে এবং পণ্যগুলি বিক্রয়ের চেষ্টা করতে হবে। ক্রেতাদের জন্য সেরা বিকল্পগুলিকে রাউন্ডআপ করতে হবে। প্রতিটি আইটেমের জন্য আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অন্তর্ভুক্ত করতে এবং আপনার প্রিয় আইটেমটিকে সুস্পষ্ট করতে কার্পণ্য করবেন না।

এতক্ষন আমরা বিভিন্ন ধরনের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কন্টেন্ট সম্পর্কে জানলাম। এখন আপনার প্রয়োজন জনপ্রিয় ও বিশ্বাসযোগ্য এফিলিয়েট সাইটে রেজিস্ট্রেশন করে কাজ শুরু করা।

কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করবেন, কীভাবে এফিলিয়েট লিংক তৈরি করবেন এই টপিক গুলো নিয়ে ইউটিউবে অসংখ্য টিউটোরিয়াল রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই টিউটোরিয়াল দেখে শুরু করা যেতে পারে। নিচে জনপ্রিয় কিছু অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সাইটের লিংক দেয়া হলো।

জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সাইটঃ

Amazon Associates, CJ Affiliate, Fiverr Affiliates, Ali Express, Moment Affiliate Program, eBay Partner Network, ClickBank, Envato Affiliate, FlexOffers, Shopify, Namecheap, SEMrush etc.

Daraz Affiliate, Bdshop, Walcart, Repto, Bohubrihi etc.

তথ্যসূত্রঃ

Exit mobile version