বেশকিছু বছর ধরে উন্নয়ন শ্লোগানে এগোচ্ছিলো দেশ। চারিদিকে উন্নয়ন আর উন্নয়ন। বুকের মাঝে যেন এক ধরনের সান্তনা নাড়া দিয়ে যায়। মানুষেরা ভুলে গিয়েছিল দেশ পরিচালনার চার নীতির এক, গনতন্ত্র। চোখ ধাঁধানো পরিবর্তন মানুষকে বেমালুম ভুলিয়ে রেখেছে। পদ্মা সেতু এক অসম্ভব কে সম্ভব করার মত মেগা প্রকল্প। সে সেতুর উদ্বোধনও হলো। মানুষেরা চলতে লাগলো এক্সপ্রেস ওয়েতে। কোথায় বাধা নেই, নেই সে ফেরীঘাটের অপেক্ষা। এমন আনন্দের সাগরে গা ভাসাতেই দেশে দেখা দিলো আর্থিক মন্দা।
নিমিষেই মানুষ উপলব্ধি করতে লাগলো উন্নয়নে দেশ যতটা দ্রুত চলছে তার পিছুটানও রয়েছে ঢের। শুরু হলো বিদ্যুৎ সংকট দিয়ে। ধীরে ধীরে বেড়ে চললো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মুল্য। অবস্থা এমন যে সপ্তাহে দু-দিন দফায় মূল্য বৃদ্ধি যেনো জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে।
অনেকের মন্তব্য শ্রীলঙ্কার দিকে যাচ্ছে দেশ। মূহুর্তে যেনো হাজারো উন্নয়নের গল্প ম্লান হয়ে গেলো। ডিজেল, অকটেনের, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি যেনো দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর অজুহাত কে কিছুটা উসকে দিল। নিত্য দিনের ব্যবহারের ডিমের ডজন হয়ে পড়লো ১৬৫ টাকা। ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড। ফার্মের মুরগী হলো প্রায় দু’শো টাকা কেজি।
মানুষের জীবন-মান উন্নত হলে মানুষ বেশি ব্যয় করে। নিজের প্রয়োজনে খুঁজতে থাকে ব্রান্ডেড আইটেম। আর সাধারন রেস্তোরাঁ পরিবর্তন করে চলে যান একটু দামী রেস্তোরাঁয়। এভাবে মানুষ তার নিজের উন্নয়নে কম ব্যয়ের জীবন ছেড়ে বেশি ব্যয়ের জীবন বেঁচে নেয়। ঠিক যখনই একটা রাষ্ট্র উন্নত হয়, তখন সে রাষ্ট্রের জনজীবনে ব্যয় এমনিতে বেড়ে যায়।
তবে উন্নয়ন শুধু ভোগবিলাসী হলে, উৎপাদন বিমুখ হলে জীবন যাপনের খরচ স্বয়ংক্রীয় ভাবে উর্ধ্ব গতি হয়ে পড়ে। তাছাড়া পদ্মা সেতু ও মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়ের ব্যয়ভার নিজেস্ব অর্থায়নে হওয়াতে এর প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। সাথে যোগ হলো বৈশ্বিক মন্দা। তাই রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে হয় সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে যেখানে আর্থিক মন্দা গ্রাস করবেনা বা এর সমূহ সম্ভাবনা থাকবে না।
মানুষেরা সেতুতে পদ্মা পাড় হলো, এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করলো। মহাসড়কে ফোর লাইন উপভোগ করছে। মেট্রোরেলে ঢাকা উত্তর থেকে দক্ষিণে সহজে কম সময়ে চলাচল করবে। অনেক ফ্লাইওভার ব্যবহার করবে গন্তব্যে যেতে। ডাবল লাইনের রেললাইনে চলাচল হবে ইন্টার সিটিতে। দেশের সব জেলায় নতুন নতুন প্রাশাসনিক ভবন ও আদালত ভবন, এত এত উন্নয়ন দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্ব গতিতে নিমিষেই সবকিছুতে সমালোচনা করতে মানুষ একচুলও ছাড়েনা।
মানুষেরা বড়ই অকৃতজ্ঞ। সু-সময়ের বন্ধু শুধু। তাই অসময়ের দায় কেউ নিতে চাই না, কেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়না। রাষ্ট্র সত্তা অনেকটা পরিবারের মত। পরিবারের উন্নয়নের জন্যে কেউ একজন আজীবন নিজেকে উৎসর্গ করলেন আর উৎসর্গকারী সামান্যতম ভুল করলে বা পরিকল্পনায় একটু ভুল হলেই কেউ ক্ষমা করতে চাই না।
একটা রাষ্ট্র ও এর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সত্তাও পরিবারের উৎসর্গকারীর মত। দুঃখের দায় শুধু একজনকে নিতে হয়, অথচ সুখের জন্যে নির্মিত হাজারো পরিকল্পনা ও অনেক সময়ের উৎসর্গ কেউ মূল্যায়ন করে না। ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবনের মত রাষ্ট্রীয় জীবনেও রয়েছে উত্থান-পতন। এ কথা ঠিক যে দেশের আর্থিক দৈন্য দশার পিছনে অনেকের ব্যক্তিগত স্বার্থ রয়েছে যারা দূর্নীতি করেছে হাজার হাজার কোটি টাকা, যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে।
সরকারের বড়ো দায় রয়েছে এখানে। দূর্নীতিবাজকে সনাক্তকরণ ও আইনের আওতায় আনা সরকারের কাজ। কারন এত এত দূর্নীতি না হলে দেশের এতটা দুরবস্থা তৈরি হত না। আর মেগা প্রকল্পে দূর্নীতি এ দেশ পিছিয়ে দেয়ার জন্যে অনেকাংশে দায়ী। তাছাড়া সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব ও অনেকগুলো মেগা প্রকল্প একসাথে শুরু করাও এক ধরনের দূরদর্শী ও দূরদৃষ্টির অভাবের কারনে সৃষ্ট।
আরও পড়ুনঃ
“খুশী করে কিছু দেন” -মোঃ মমতাজ হাসান
ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত -মোঃ মমতাজ হাসান
এ দেশের সব মানুষ আর্থিক সচ্ছলতা নেই। অন্তত ৭৫% মানুষ দিনে এনে দিনে খাওয়ার জীবন যাপন করে। আর্থিক বন্টন সুবিধা বৈষম্য এ দেশের এক শ্রেনীর মানুষকে যেমন অনেক সচ্ছলতার সুযোগ সৃষ্টি করেছে, ঠিক তেমনি অন্য শ্রেনীর মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে দাঁড় করিয়েছে। তাই দেশের সাধারণ মানুষের কথা ভেবে অন্তত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের কিছু আইটেমের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকা বাঞ্চনীয়। যেমন, চাল,ডাল, ডিম,আলু, বুটের ডাল।
তাহলে এই সংকটময় মূহুর্তে অন্তত মানুষ দিনাতিপাত করতে পারবে। নচেৎ জীবনের মৌলিক চাহিদা পুরনে মানুষেরা রাস্তা নেমে পড়বে অচিরেই। আর এই সুযোগ গ্রহন করবে সেসকল মহল যারা দেশকে শ্রীলঙ্কার মত দেখতে চাই। এ দৃশ্যই যেন আজ বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জোয়ার-ভাটা।
লেখাটি হুবহু সংগ্রহ করা হয়েছে সাজজাদুল ইসলাম রিপন স্যারের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে। স্যার কর্মজীবনে বর্তমানে একজন সম্মানিত এডভোকেট হিসেবে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, ঢাকা এবং তিনি ঢাকায় একটি সুনামধন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন অবিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়াও তিনি সমসাময়িক এবং জীবনঘনিষ্ঠ বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করতে পছন্দ করেন।
তথ্যসুত্রঃ
- www.facebook.com/Sazzad.2010