গতির রাজা বিশ্বের দ্রুততম মানব উসাইন বোল্ট । শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অন্যতম মাধ্যম খেলাধুলা । খেলাধুলা আজ দখল করেছে বিশ্ব ব্যাপী জনপ্রিয়তার শীর্ষ স্থান। বিখ্যাত খেলোয়ারদের জীবন বৃতান্তের ব্যাখা বিশ্লেষণ আজ হয়ে দাড়িয়েছে সাধারন মানুষের বিনোদনের চাহিদা মেটানো আর আধুনিকতা বহিঃপ্রকাশের শীর্ষ বস্তু।
উসাইন বোল্ট যার নাম শুনতে চোখের সামনে ভেসে আসে উওেজনায় পরিপূর্ণ রানার ট্র্যাক। সমাজের মানুষকে দেওয়া তার অনুপ্রেরণা ও শক্তিকে সফলতার চূড়ায় পরিনত করার অভিপ্রায় নিয়েই সাজানো এ অনুচ্ছেদ।
উসাইন বোল্টের জন্ম ও পরিবারঃ
২১ আগস্ট, সালটা ১৯৮৬ জ্যামাইকার ছোট্ট শহর ট্রিলনিতে এক জ্যামাইক্যান দম্পতি ওয়েলেসলি ও জেনিফার কোল জুড়ে আসে এক পুত্র সন্তান। যিনিই আজ পরিচিত উসাইন বোল্ট নামে । উসাইন বোল্টের পুরো নাম উসাইন সেন্ট লিও বোল্ড। তার বাবা একজন মুদি দোকানদার ছিলেন। বোল্ট পিতা মাতার সাথে দোকানে কাজ করত। তিনি ছোট বেলা থেকে ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করত। তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ওয়েস্টইন্ডিজের ক্রিকেটার হবেন।
বোল্টের দৌড়বিদ হওয়ার পিছনের গল্পটাও বেশ মজার। প্রাইমারি স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় খেলার ছলেই অংশগ্রহন করেন বোল্ট। তাতেই তিনি জিতে নেন সেরা পুরষ্কারটি। সেসময় বোল্ট নজরে আসেন অলেম্পিকের সাবেক এক স্প্রিন্টারের। তিনিই বোল্টকে পরামর্শ দেন এ্যাথলেটিক্সের। তখন থেকেই বোল্টের এ্যাথলেটিক্সের যাত্রা শুরু।
দৌড়ের ট্র্যাকে বোনা যার সপ্ন, হৃদয় স্পন্দনে যার স্প্রিন্ট তার সাফল্যের মালা গলায় আহরোণ তো অতি স্বাভাবিকের মতই স্বাভাবিক। জ্যামাইকার সাধারণ ছেলেটির অসাধারণ হয়ে ওঠার পেছনের গল্পে জড়িয়ে রয়েছে রেসার্স ট্র্যাক ক্লাব নামটি।
আরও পড়ুনঃ রোনালদিনহো গাউচো ইতিহাসের সেরা ড্রিবলার ফুটবল জাদুকর
রেসার্স ট্র্যাক ক্লাবটি বোল্টের প্রতিভা ও আন্তবিশ্বাসকে একসাথে গেঁথেছে দৌড়ের ট্র্যাকে ট্র্যাকে। সেরা রেকর্ড এ বলতে গেলে পরিপূর্ণ বোল্টের ক্যারিয়ার। ১০০ মিটার মাত্র ৯.৫৮ সেকেন্ডে ক্রস করে গড়েন বিশ্ব রেকর্ড প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয় বার্লিনে ২০০৯ সালে। একই বছরে ১৫০ মিটার ১৪.৩৫ সেকেন্ডে ক্রস করে বিশ্ব রেকর্ড টি গড়েন ম্যানচেস্টার এর মাটিতে। কিংস্টনে ২০০৭ সালে ৪০০ মিটার ৪৫.২৮ সেকেন্ডে ক্রস করে গড়েন আরও এক অনন্য রেকর্ড।
সাফল্য ও সম্মাননাঃ
অলিম্পিক গেমসে জ্যামাইকার পতাকার জ্বলজ্বলে রূপের দীপ্তি বিশ্বব্যাপী ছড়ানোর প্রধান ভূমিকায় উইসান বোল্টের অবদান অনস্বীকার্য।
অলিম্পিকে প্রাপ্ত খেতাব সমূহঃ
- ২০০৮ সালে বেইজিং এ ১০০ মিটার দৌড়ে
- ২০০৮ সালে বেইজিং এ ২০০ মিটার দৌড়ে
- ২০০৮ সালে বেইজিং এ ৪০০ মিটার দৌড়ে
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ও অন্য খেলার অর্জনঃ
- ২০১১ সালে দ্যাগু ২০০ মিটার রিলে
- ২০১১ সালে দ্যাগু ৪০০ মিটার রিলে
- ২০০৯ সালে বার্লিনে ১০০ মিটার রিলে
- ২০০৯ সালে বার্লিনে ২০০মিটার রিলে
- ২০০৯ সালে বার্লিনে ৪০০ মিটার রিলে
ওসাকা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপঃ
- ২০০৭ সালে ২০০ মিটার রিলে
- ২০০৭ সালে ৪০০ মিটার রিলে
ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিক ফাইনালেঃ
- ২০০৯ সালে থিসালোনিকিতে ২০০ মিটার রিলে
সিএসি চ্যাম্পিয়নশিপঃ
- ২০০৫ সালে ২০০ মিটার রিলে
বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশীপঃ
- ২০০২ সালে কিংস্টনে ৪*১০০ মিটার রিলে
- ২০০২ সালে কিংস্টনে ৪*৪০০ মিটার রিলে
প্যান অমেরিকান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশীপঃ
- ২০০৩ সালে ব্রিডগেটাউনে ২০০ মিটার দৌড়ে
- ২০০৩ সালে ব্রিডগেটাউনে ৪০০ মিটার দৌড়ে।
কারিফটা গেমস জুনিয়রঃ
- ২০০৪ সালে হ্যামিলটনে ২০০ মিটার দৌড়ে
- ২০০৪ সালে হ্যামিলটনে ৪*১০০ মিটার দৌড়ে
- ২০০৪ সালে হ্যামিলটনে ৪*৪০০ মিটার দৌড়ে
- ২০০৩ সালে স্পেনের পোর্ট ২০০ মিটার দৌড়ে
- ২০০৩ সালে স্পেনের পোর্ট ৪০০ মিটার দৌড়ে
- ২০০৩ সালে স্পেনের পোর্ট ৪*৪০০ মিটার রিলে
বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশীপঃ
- ২০০২ সালে ব্রিডগেটাউনে ২০০ মিটার রিলে
- ২০০২ সালে ব্রিডগেটাউনে ৪০০ মিটার রিলে
- ২০০২ সালে ব্রিডগেটাউনে ৪*১০০ মিটার রিলে
- ২০০২ সালে ব্রিডগেটাউনে ৪*৪০০ মিটার রিলে
কারিফটা যুবঃ
- ২০০২ সালে ন্যাসে ২০০ মিটার রিলে
- ২০০২ সালে ন্যাসে ৪০০ মিটার রিলে
- ২০০২ সালে ন্যাসে ৪*৪০০ মিটার রিলে
- ২০০১ সালে ব্রিডগেটাউনে ২০০ মিটার রিলে
- ২০০১ সালে ব্রিডগেটাউনে ৪০০ মিটার রিলে
আমেরিকার অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বোল্ট।
বোল্ট নক্ষত্রের বিদায়কালঃ
ব্যক্তিগত পাঁচটি স্বর্নের আদলে পরিপূর্ণ করেছেন বোল্ট তার সন্মাননার ঝুড়ি। বোল্ট বোল্ট জয় জয় কারে মুখরিত করেছেন বিশ্বের কোটি মানুষের হৃদয়। ২০০ মিটার স্প্রিন্টে পরপর তিনবার জয়ী প্রথম অ্যাথলেট বোল্ট। পরপর দুবার ১০০ ও ২০০ মিটার রিলে ডাবল জয়ের রেকর্ড ধারী প্রতিযোগী ও উসাইন বোল্ট।
বিদায়ের স্বাদ সেরাদের সেরা যারা তাদেরও গ্রহন করতে হয় বোল্ট তার ব্যাতিক্রম নয়। ২০১৭ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ শেষবারের মত ট্র্যাকে দাড়ান উসাইন বোল্ট। শত শত ভক্তের চিৎকারে মুখরিত বোল্টের শেষটা যেন ছিল হতাশার বেড়াজালে ঘেরা। ভাগ্য সহয় হয়নি তার শেষ বারের মত ট্র্যাকে ক্রস লাইন অতিক্রম করতে পারেননি বোল্ট।
ট্র্যাকের ক্রস লাইন অতিক্রামের পূর্বেই আহত হন বোল্ট। শেষবারের মত শেষটা সাফল্য গাঁথা না হলেও বোল্টের ভক্তদের হৃদয়ের মনিতে খচিত রয়েছে উসাইন বোল্ট এর নাম। ট্র্যাকে স্প্রিন্টে আর রিলে ধারা ভাষ্যকরদের উচ্চারণ আর কোটি মানুষের হৃদয়ে আজও বোল্ট বোল্ট জয়জয়কার যা রয়ে যাবে অনন্তকাল।